০৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুয়েটে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অর্ধশতাধিক আহত

####

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পযর্ন্ত কুয়েটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নগরীর রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের কুয়েটে মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা চিকিৎসা হয়েছে। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এক গ্রুপ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ও অপর গ্রুপ ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে। ঘটনার পর সেনা  ও নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেনজার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রচারণা চলছিল। সোমবার ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এ সময় উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। তারা  ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌছালে তাদের সামনে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা কুয়েটের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর দুইটার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভিতর ফেলে দেয়। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্রদের ভেতর চরম ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী একজোট হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় কুয়েট সংলগ্ন রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা  ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে বলে শিক্ষর্থীরা অভিযোগ করেন।  আহতদের কুয়েটের হাসপাতালে এবং আশপাশের ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কুয়েট শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্চিত করে। আমরা ভিসির কাছে এ ঘটনার বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন জানান, বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝড়িয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে ১০টা কোপ দিয়েছে,  জেলার আহ্বায়ক তাসনিম  ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলে পা ইট দিয়ে থেকলে দিয়েছে। অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেব আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ##

ট্যাগ :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

sunil Dhash

জনপ্রিয়

নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে পাইকগাছায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কুয়েটে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অর্ধশতাধিক আহত

আপডেট সময় : ০৩:২৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

####

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পযর্ন্ত কুয়েটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নগরীর রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের কুয়েটে মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা চিকিৎসা হয়েছে। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এক গ্রুপ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ও অপর গ্রুপ ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে। ঘটনার পর সেনা  ও নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেনজার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রচারণা চলছিল। সোমবার ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এ সময় উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। তারা  ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌছালে তাদের সামনে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা কুয়েটের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর দুইটার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভিতর ফেলে দেয়। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্রদের ভেতর চরম ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী একজোট হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় কুয়েট সংলগ্ন রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা  ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে বলে শিক্ষর্থীরা অভিযোগ করেন।  আহতদের কুয়েটের হাসপাতালে এবং আশপাশের ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কুয়েট শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্চিত করে। আমরা ভিসির কাছে এ ঘটনার বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন জানান, বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝড়িয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে ১০টা কোপ দিয়েছে,  জেলার আহ্বায়ক তাসনিম  ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলে পা ইট দিয়ে থেকলে দিয়েছে। অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেব আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ##