
####
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের সবকিছু ধ্বংস করে স্বৈরাচার পালিয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছিলেন যে এই স্বৈরাচার সবকিছু ধ্বংস করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। তার(খালেদা জিয়া) বহু বছর আগের বলা সেই কথা আজ পরতে পরতে সত্য হয়েছে। স্বৈরাচার লুটপাট করে পালিয়ে গেছে, দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের কথা বলছি কিন্তু সংস্কার নিয়ে যদি প্রতিনিয়ত অবান্তর আলোচনা করতে থাকি তাহলে আমাদের যে মূল কাজগুলো অর্থাৎ দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করা সেটা হবে না। সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার কিংবা দেশের ভালো যারা চায় না, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। কাজেই সংস্কার নিয়ে অযাচিত আলোচনা না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আজ আমরা দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, আমাদের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে, বিভিন্ন গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে কেন? সেই একটি কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন বলতে পারেন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে কী হবে? দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলে দলের ভিত্তি যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি দল পরিচালনার দায়িত্ব যখন ধীরে ধীরে সঠিক ব্যক্তিদের কাছে ফিরে যাবে তারা দলকে নেতৃত্ব দিলে দল সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। ঠিক একইভাবে দেশের ভেতরে যদি আমরা গণতান্ত্রিক চর্চা করি, ভোটের চর্চা করি তাহলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের কথা বলবে, দেশের সমস্যার কথা বলবে। গণতন্ত্র যত প্রাক্টিস হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কি হয়েছে আমরা দেখেছি, কীভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে। আমাদের বহু সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে আমরা দেখেছি কীভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে। কীভাবে ১৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন আজকের এই মুক্ত পরিবেশ উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবে না, সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সকলকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে খাদের কিনারে চলে গেছে সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার সিন্ডিকেটের দিকে নজর দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজগুলো যদি না করি তাহলে এই দেশকে রক্ষা করা যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেল নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী করবেন তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত উঠিয়ে ধানের শীষে ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনিন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুল ইসলাম শামীম, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কাজী মিজানুর রহমান, কে এম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল প্রমুখ।
সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পড়ে শোনান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পড়ে শোনান সৈয়দা রেহানা ঈসা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ সম্মেলনে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে রঙ বেরঙয়ের ক্যাপ-টি শার্ট পরে ও প্লাকার্ড হাতে আসেন নেতাকর্মীরা।
বিকালে জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল অধিবেশনে বিকেল সাড়ে পাচটায় ভোট গ্রহন শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাতটায় শেষ হয়। ভোট গননা শেষে ৫০৫জন কাউন্সিলরের ভোটে এ্যাড. শফিকুল আলম মনা সভাপতি ও শফিকুল ইসলাম তুহিন সাধারণ নিবার্চিত হয়েছেন। সভাপতি পদে মনা ২৯৯ ভোট পেয়ে নিবার্চিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি তরিকুল ইসলাম জহির পেয়েছেন ১৮৯ভোট। সাধারণ সম্পাদক পতে তুহিন পেয়েছেন ২৮৮ভোট ও তার প্রতিদ্বন্দ্বি নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর পেয়েছেন ২০৩ভোট। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর। আর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর গঠিত হয়েছিল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি। ##