১০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পাতালভেদী রাজার’ বাড়ির পুরাকীর্তির অনুসন্ধান

###  নড়াইল জেলার নয়াবাড়ি গ্রামে ‘পাতালভেদী রাজার’ বাড়ির পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে প্রথমবারের মত খনন কাজও শুরু করেছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।খননে ইটের আকার, কারুকার্য, স্থান এবং আশেপার্শের ভৌগোলিক কাঠামো দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন এটি আদি ঐতিহাসিক মুসলিম যুগের নিদর্শনের কোনো প্রত্নস্থান ছিল।

নড়াইল শহর হতে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে নবগঙ্গা নদীর তীরে সদর উপজেলার হবখালী ইউনিয়নে নয়াবাড়ি গ্রাম অবস্থিত। এ গ্রামেই বসবাস করতেন কিংবদন্তি বিখ্যাত এক রাজা। এ রাজা সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্নস্থানের খনন কাজ দেখতে আশে পাশের কয়েক গ্রামের অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। ওই রাজার বাড়ির উঁচু ডিবি এবং তার চারপার্শ্বে মেহগনি ও কলা গাছের চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ডিবির নীচে ও চারপাশের দীঘি-পুকুরের সমস্ত জায়গা এখন ভরাট হয়ে গেছে এবং স্থানীয় মানুষ নিজেদের জায়গা দাবি করে সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন । নয়াবাড়ি গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মিকাইল মোল্যা ও শাহীনুর মোল্যা জানান, আমরা ৪০-৪৫ বছর আগেও দেখেছি এসব জায়গা ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। রাতের বেলায় ভয়ে এখানে কেউ আসতো না। এখানে বিশাল বিশাল গাছ ছিল। অনেক জায়গা জুড়ে বিশাল একটি আম গাছ ছিল। আমরা সে গাছ থেকে আম পেড়ে খেয়েছি। এ রাজবাড়ি থেকে এ গ্রামের মানুষ ইচ্ছামতো ইট নিয়ে ব্যবহার করেছে। এর চারপাশে দীঘি ছিল, যা আমরা দেখেছি। বাবা-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, এ রাজার রাজপ্রাসাদ শত্রুমুক্ত রাখতে চারপাশে ছিল বিশাল দীঘি। এখানে একটি গভীর পুকুর ছিল, যার নাম ছিল দুধপুকুর। রাজা তার ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন সময় দুধ দিয়ে গোছল করাতেন। এ দুধ পুকুরের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল। রাজা ও তার পরিবার বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দূর্গবাড়ির পূর্বে নবগঙ্গা নদীর ঘাট পর্যন্ত আধা কিলোমিটার চুনসুড়কির গাথুনি বিশিষ্ট ইটের খিলান দ্বারা ভূগর্ভস্থ এক সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করেছিলেন, যে পথ দিয়ে তারা যাতায়াত করতেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক খনন কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম ফেরদৌস জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেজেট অনুয়ায়ী ১৬ একর জায়গার ওপর গত ১ এপ্রিল (শনিবার) থেকে এখানে খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন শুরুর সময় ১৭জন শ্রমিক কাজ করলেও এখন প্রতিদিন ১৩জন শ্রমিক ৪টি স্পটে খনন কাজ করছেন। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে খনন কাজ চলবে।এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটের ধরণ ও চারপাশের্র ভৌগোলিক কাঠামো দেখে মনে হচ্ছে এটি আদি ঐতিহাসিক মুসলিম যুগের নিদর্শনের প্রত্নস্থান ছিল এবং এর যথেষ্ট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম অবস্থায় খনন কাজের ইটের আকার ও কারুকার্য দেখে মনে হয়েছে এটা সুলতানী বা মোঘল মুসলিম আমলের। তবে আরও খনন করলে বোঝা যাবে এর আগে অন্য কোনো আমলের স্থাপত্য ও রাজত্ব ছিল কিনা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমীন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের জরিপে এখানে পাতালভেদী রাজার বিভিন্ন তথ্য পাওযা যায়।বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।স্বল্পসময়ের পরীক্ষামূলক খননকালে অনেকটা বোঝা যাচ্ছে এখানে পুরাকীর্তি লুকায়িত আছে।এখানকার পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে অনুমানের চেয়ে বাস্তবতা অনেক বেশি বলে জানান তিনি।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

‘পাতালভেদী রাজার’ বাড়ির পুরাকীর্তির অনুসন্ধান

প্রকাশিত সময় : ০২:২৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

###  নড়াইল জেলার নয়াবাড়ি গ্রামে ‘পাতালভেদী রাজার’ বাড়ির পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে প্রথমবারের মত খনন কাজও শুরু করেছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।খননে ইটের আকার, কারুকার্য, স্থান এবং আশেপার্শের ভৌগোলিক কাঠামো দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন এটি আদি ঐতিহাসিক মুসলিম যুগের নিদর্শনের কোনো প্রত্নস্থান ছিল।

নড়াইল শহর হতে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে নবগঙ্গা নদীর তীরে সদর উপজেলার হবখালী ইউনিয়নে নয়াবাড়ি গ্রাম অবস্থিত। এ গ্রামেই বসবাস করতেন কিংবদন্তি বিখ্যাত এক রাজা। এ রাজা সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্নস্থানের খনন কাজ দেখতে আশে পাশের কয়েক গ্রামের অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। ওই রাজার বাড়ির উঁচু ডিবি এবং তার চারপার্শ্বে মেহগনি ও কলা গাছের চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ডিবির নীচে ও চারপাশের দীঘি-পুকুরের সমস্ত জায়গা এখন ভরাট হয়ে গেছে এবং স্থানীয় মানুষ নিজেদের জায়গা দাবি করে সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন । নয়াবাড়ি গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মিকাইল মোল্যা ও শাহীনুর মোল্যা জানান, আমরা ৪০-৪৫ বছর আগেও দেখেছি এসব জায়গা ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। রাতের বেলায় ভয়ে এখানে কেউ আসতো না। এখানে বিশাল বিশাল গাছ ছিল। অনেক জায়গা জুড়ে বিশাল একটি আম গাছ ছিল। আমরা সে গাছ থেকে আম পেড়ে খেয়েছি। এ রাজবাড়ি থেকে এ গ্রামের মানুষ ইচ্ছামতো ইট নিয়ে ব্যবহার করেছে। এর চারপাশে দীঘি ছিল, যা আমরা দেখেছি। বাবা-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, এ রাজার রাজপ্রাসাদ শত্রুমুক্ত রাখতে চারপাশে ছিল বিশাল দীঘি। এখানে একটি গভীর পুকুর ছিল, যার নাম ছিল দুধপুকুর। রাজা তার ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন সময় দুধ দিয়ে গোছল করাতেন। এ দুধ পুকুরের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল। রাজা ও তার পরিবার বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দূর্গবাড়ির পূর্বে নবগঙ্গা নদীর ঘাট পর্যন্ত আধা কিলোমিটার চুনসুড়কির গাথুনি বিশিষ্ট ইটের খিলান দ্বারা ভূগর্ভস্থ এক সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করেছিলেন, যে পথ দিয়ে তারা যাতায়াত করতেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক খনন কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম ফেরদৌস জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেজেট অনুয়ায়ী ১৬ একর জায়গার ওপর গত ১ এপ্রিল (শনিবার) থেকে এখানে খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন শুরুর সময় ১৭জন শ্রমিক কাজ করলেও এখন প্রতিদিন ১৩জন শ্রমিক ৪টি স্পটে খনন কাজ করছেন। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে খনন কাজ চলবে।এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটের ধরণ ও চারপাশের্র ভৌগোলিক কাঠামো দেখে মনে হচ্ছে এটি আদি ঐতিহাসিক মুসলিম যুগের নিদর্শনের প্রত্নস্থান ছিল এবং এর যথেষ্ট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম অবস্থায় খনন কাজের ইটের আকার ও কারুকার্য দেখে মনে হয়েছে এটা সুলতানী বা মোঘল মুসলিম আমলের। তবে আরও খনন করলে বোঝা যাবে এর আগে অন্য কোনো আমলের স্থাপত্য ও রাজত্ব ছিল কিনা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমীন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের জরিপে এখানে পাতালভেদী রাজার বিভিন্ন তথ্য পাওযা যায়।বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।স্বল্পসময়ের পরীক্ষামূলক খননকালে অনেকটা বোঝা যাচ্ছে এখানে পুরাকীর্তি লুকায়িত আছে।এখানকার পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে অনুমানের চেয়ে বাস্তবতা অনেক বেশি বলে জানান তিনি।##