১০:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুমুরিয়ায় রংপুর গণহত্যা দিবস আজ

###       খুলনার ডুমুরিয়ায় রংপুর গণহত্যা দিবস আজ । ১৯৭১ সালের(১৩৭৮ বঙ্গাব্দ) পহেলা বৈশাখ  হ’তে প্রতি বছর রংপুর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে   । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে রাজধানী ঢাকায় যে বর্বরোচিত হত্যাযোগ্য শুরু হয়, ধীরে-ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।পহেলা বৈশাখের সকালবেলা হিন্দু- অধ্যুষিত ডুমুরিয়ার রংপুর-অঞ্চলবাসী  ভগবতী পূজা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। হঠাৎ পাক-হানাদার বাহিনী এবং দেশীয় দালালরা দলবদ্ধভাবে শলুয়া বাজার এবং ঘোনামান্দারডাঙার মাঝামাঝিতে অবস্থান নিয়ে রংপুরের দিকে তাক করে মেশিনগানে গুলি ছোড়ে, তারপর রাস্তা থেকে নেমে তিল ক্ষেতের মধ্য দিয়ে বড়ো খালের (৮০ ফুট) পাশ দিয়ে তারা অগ্রসর হতে থাকলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। শিশু এবং বৃদ্ধরা ছাড়া সবাই বাড়ি-ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। তৎকালীন রংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার খোদাবক্স চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গকে আশ্বস্ত  করে যে, তারা বশিরাবাদে ঘটে যাওয়া লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আসছে। কিন্তু হলো উল্টো , সেদিকে না গিয়ে  নন্দনকাননের পশ্চিম দিক দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সত্তরোর্ধ ভোণ্ডলকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পূর্ব দিকে বিশ্বাস বাড়িতে ঢুকতেই  লোকজন চতুর্দিকে ছুটাছুটি করতে থাকে। একপর্যায়ে মিলিটারিরা গুলি করলে প্রবোধ বিশ্বাসের (ন’দে বিশ্বাস) কপাল ছুঁয়ে গুলি চলে যায়। সে তখন দৌড়ে পালায়। বিশ্বাস বাড়ি এবং আশপাশের বহুলোক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তৎকালীন মেম্বর এবং রংপুর কালীতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাণ্ডারি ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের দালানের  ভিতর আশ্রয় নেয় এবং আরো অনেক লোকজন পাশের খাল পার হ’য়ে ওপারে আশ্রয় নেয়। মিলিটারিরা প্রথমে ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের দালানের দরজা ভেঙে ফেলে এবং ইন্দু বাবুকে সহ অনেককে আটকে ফেলে। এরপর গ্রামের ‘ বড়বাবু ‘ প্রফুল্লকুমার বিশ্বাসের বাড়িতে ঢোকে। রংপুর-অঞ্চলের (প্রথম বি,এ,বি,টি, পাশ) আত্মনিবেদিত কাণ্ডারী,  সাবেক চেয়ারম্যান এবং রংপুর কালীবাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বড়বাবু মিলিটারিদের সামনে এসে বললেন ” বি সিটেড্।”কে কার কথা শোনে ; সাথে সাথেই খাল ঘাটে নিয়ে নরপিশাচরা  তাঁকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর আটককৃতদের নিয়ে জোদ্দরবাড়িতে ঢোকে এবং আরো অনেককে ধরে নিয়ে দক্ষিণ দিকের বিলের মধ্যে নিয়ে যায়। সবাইকে লাইনে শুইয়ে দিয়ে ব্যয়নেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করে। একপর্যায়ে শিবপদ ঢালী এ মর্মান্তিক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে পালানোর চেষ্টা করে। ঘাতকেরা গুলি চালালে তাঁর ডান  পায়ের হাটুর নিচে লাগে এবং মৃতের মতো শুয়ে, এভাবে তিনি বেঁচে যান। এখানে মারা যান ইন্দুভূষণ বিশ্বাস, লালচাঁদ বিশ্বাস, অমূল্য জোদ্দার এবং অমূল্য মণ্ডল। এখানেই ঘাতকেরা ক্ষান্ত হয়নি, বিলের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ডাঙায় (শিমুল তলায়) গিয়ে রাইচরণ মণ্ডল, মথুর ঢালী এবং মহেন্দ্রনাথ ঢালীকে হত্যা করে। এছাড়া ঐদিন রতন ঢালী এবং নীহার ঢালীকে সাতক্ষীরা রোডে আটক করে, পরে তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়াও পরবর্তীতে শহিদ হন চণ্ডীরাম মণ্ডল, নির্মল ঢালী এবং বিশ্বনাথ কাবরা। এহেন নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আহত হয় ২২ জন নিরীহ  সাধারণ মানুষ।এইদিনটি আঞ্চলিক শহিদ দিবস হিসাবে পালিত হয়।  ইতোমধ্যে  ড. সন্দীপক মল্লিক ‘ স্মৃতিময় কথকতা ‘ নামক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন। এদিনটি রংপুর-অঞ্চলের জন্য বিষাদের, ক্রন্দনের।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

ডুমুরিয়ায় রংপুর গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত সময় : ০৮:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

###       খুলনার ডুমুরিয়ায় রংপুর গণহত্যা দিবস আজ । ১৯৭১ সালের(১৩৭৮ বঙ্গাব্দ) পহেলা বৈশাখ  হ’তে প্রতি বছর রংপুর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে   । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে রাজধানী ঢাকায় যে বর্বরোচিত হত্যাযোগ্য শুরু হয়, ধীরে-ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।পহেলা বৈশাখের সকালবেলা হিন্দু- অধ্যুষিত ডুমুরিয়ার রংপুর-অঞ্চলবাসী  ভগবতী পূজা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। হঠাৎ পাক-হানাদার বাহিনী এবং দেশীয় দালালরা দলবদ্ধভাবে শলুয়া বাজার এবং ঘোনামান্দারডাঙার মাঝামাঝিতে অবস্থান নিয়ে রংপুরের দিকে তাক করে মেশিনগানে গুলি ছোড়ে, তারপর রাস্তা থেকে নেমে তিল ক্ষেতের মধ্য দিয়ে বড়ো খালের (৮০ ফুট) পাশ দিয়ে তারা অগ্রসর হতে থাকলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। শিশু এবং বৃদ্ধরা ছাড়া সবাই বাড়ি-ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। তৎকালীন রংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার খোদাবক্স চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গকে আশ্বস্ত  করে যে, তারা বশিরাবাদে ঘটে যাওয়া লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আসছে। কিন্তু হলো উল্টো , সেদিকে না গিয়ে  নন্দনকাননের পশ্চিম দিক দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সত্তরোর্ধ ভোণ্ডলকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পূর্ব দিকে বিশ্বাস বাড়িতে ঢুকতেই  লোকজন চতুর্দিকে ছুটাছুটি করতে থাকে। একপর্যায়ে মিলিটারিরা গুলি করলে প্রবোধ বিশ্বাসের (ন’দে বিশ্বাস) কপাল ছুঁয়ে গুলি চলে যায়। সে তখন দৌড়ে পালায়। বিশ্বাস বাড়ি এবং আশপাশের বহুলোক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তৎকালীন মেম্বর এবং রংপুর কালীতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাণ্ডারি ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের দালানের  ভিতর আশ্রয় নেয় এবং আরো অনেক লোকজন পাশের খাল পার হ’য়ে ওপারে আশ্রয় নেয়। মিলিটারিরা প্রথমে ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের দালানের দরজা ভেঙে ফেলে এবং ইন্দু বাবুকে সহ অনেককে আটকে ফেলে। এরপর গ্রামের ‘ বড়বাবু ‘ প্রফুল্লকুমার বিশ্বাসের বাড়িতে ঢোকে। রংপুর-অঞ্চলের (প্রথম বি,এ,বি,টি, পাশ) আত্মনিবেদিত কাণ্ডারী,  সাবেক চেয়ারম্যান এবং রংপুর কালীবাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বড়বাবু মিলিটারিদের সামনে এসে বললেন ” বি সিটেড্।”কে কার কথা শোনে ; সাথে সাথেই খাল ঘাটে নিয়ে নরপিশাচরা  তাঁকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর আটককৃতদের নিয়ে জোদ্দরবাড়িতে ঢোকে এবং আরো অনেককে ধরে নিয়ে দক্ষিণ দিকের বিলের মধ্যে নিয়ে যায়। সবাইকে লাইনে শুইয়ে দিয়ে ব্যয়নেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করে। একপর্যায়ে শিবপদ ঢালী এ মর্মান্তিক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে পালানোর চেষ্টা করে। ঘাতকেরা গুলি চালালে তাঁর ডান  পায়ের হাটুর নিচে লাগে এবং মৃতের মতো শুয়ে, এভাবে তিনি বেঁচে যান। এখানে মারা যান ইন্দুভূষণ বিশ্বাস, লালচাঁদ বিশ্বাস, অমূল্য জোদ্দার এবং অমূল্য মণ্ডল। এখানেই ঘাতকেরা ক্ষান্ত হয়নি, বিলের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ডাঙায় (শিমুল তলায়) গিয়ে রাইচরণ মণ্ডল, মথুর ঢালী এবং মহেন্দ্রনাথ ঢালীকে হত্যা করে। এছাড়া ঐদিন রতন ঢালী এবং নীহার ঢালীকে সাতক্ষীরা রোডে আটক করে, পরে তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়াও পরবর্তীতে শহিদ হন চণ্ডীরাম মণ্ডল, নির্মল ঢালী এবং বিশ্বনাথ কাবরা। এহেন নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আহত হয় ২২ জন নিরীহ  সাধারণ মানুষ।এইদিনটি আঞ্চলিক শহিদ দিবস হিসাবে পালিত হয়।  ইতোমধ্যে  ড. সন্দীপক মল্লিক ‘ স্মৃতিময় কথকতা ‘ নামক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন। এদিনটি রংপুর-অঞ্চলের জন্য বিষাদের, ক্রন্দনের।##