### বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার ঘোষনা দেয়ায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত জামায়াত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কোন প্রার্থী দেয়নি। স্থানীয়ভাবে একাধিক নেতা মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কারসহ নানামুখী চাপ ও হুমকির পরেও বিএনপি-জামায়াতের ১২নেতা কেসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাদেরকে কোনভাবেই আটকাতে পারেনি বিএনপি ও জামায়াত। শুক্রবার এ সকল কাউন্সিরর প্রার্থীরা প্রতিক বরাদ্ধ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারনার মাঠে নেমে পড়েছেন। ফলে এই ১২ কাউন্সিলর প্রার্থীকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব। বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, কেসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলীয় কোন পদ-পদবী না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যেই কাউন্সিলর প্রার্থী এসব বিএনপির সাবেক নেতাদেরকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০দফা দাবীতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি-জামায়াত জোট খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার ঘোষণা দেয়। তবে তৃণমূলে তাদের সে সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলের নেতারা। কেসিসি নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মেয়র পদে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। তবে দলের পক্ষ থেকে হুশিয়ারী ও হুমকির মধ্যেও বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক ১২ নেতাকর্মী প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তারা নিজেদের বিজয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন।
জানা গেছে, আগামী ১২জুন অনুষ্ঠিতব্য কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে ৯নং ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাজী ফজলুল কবির টিটো, ৫নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ আহসান তোতন, সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডের মাজেদা বেগম, ২২নং ওয়ার্ডে মাহাবুব কায়সার, ১৯নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান কাকন, ২৪নং ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের আলী মিন্টু, ৩০নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ আমান। তবে ২৪নং ওয়ার্ডে শমসের আলী মিন্টুর প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেছে রিটার্নিং অফিসার মো: আলাউদ্দিন ও আপীল কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন তিনি। বিএনপির এসব কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলে পদ-পদবী না থাকার কারণে অনেকের বহিষ্কার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে নেতারা। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির নেতারা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় গনমানুষের অনুরোধে তারা সরে দাড়াননি বলে জানিয়েছেন।
খুলনা বিএনপির একাধিক নেতারা জানান, কেসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীদের নিবৃত করা যাচ্ছে না। এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারাও অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করছেন৷ তারা আরও জানান, গাজীপুরে নির্বাচনে বিএনপির যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু খুলনায় অংশ নেওয়া নেতাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সেজন্য স্থানীয় নেতারাই সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় রয়েছেন। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। একই সাথে কেউ দীলয় সিদ্ধান্ত উপেক্সা করে নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষনাও দেয়া হয়।স্থানীয়ভাবে দলের সবা করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের সবাইকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে, বিএনপি ছাড়াও জোটভুক্ত জামায়াতেরও ৫জন নেতা এবারের কেসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছে। তারমধ্যে নগরীর ০১ নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান স্বপন, ১৮ নম্বরে ওয়ার্ডের আমির মশিউর রহমান রমজান, ১২নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল প্রার্থী হয়েছেন। তবে মশিউর রহমান রমজান ছাড়া অপর চার কাউন্সিলর প্রার্থী ২০১৩ ও ২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল ২০১৩ সালে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল বলেন, দলের নেতারা যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা কেউই দলীয় ব্যানারে বা দলীয় পরিচযয়ে নির্বাচন করছেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সবাই নির্বাচন করছি। এরআগেও ৩১নং ওয়ার্ডের আমি কাউন্সিলর ছিলাম। এলাকাবাসীর চাহিদা ও অনুরোধে এবারও প্রার্থী হয়েছি। এছাড়াও ১নম্বর ওয়ার্ড, ১২ ওয়ার্ড, ১৮ ওয়ার্ড ও ১৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে ৪ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় কোনো সাপোর্ট কেউই নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, দল থেকে এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। দলীয় কোন সিদ্ধান্ত হলে সে বিসয়ে পরে বিবেচনা করে দেখা হবে।
কেসিসি নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডের ১৩৬ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। ভোটার রয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। ##