১০:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দ্রুত দখল উচ্ছেদ ও বিচারের দাবী

খুলনায় সরকারী স্কুলের জায়গা দখল করে বিএনপি নেতার বসতবাড়ি, নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্র-শিক্ষক

####

 

খুলনায় হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা ও তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম। স্কুলের জমি দখলকারী এ বিএনপি নেতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করেছেন। স্কুলের জমি অবৈধভাবে দখল করে বাড়ী নির্মাণকারী ফরিদ আহমেদ মোল্লা খুলনা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। কয়েকবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রাথী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। প্রভাবশালী এ বিএনপি নেতার দখলবাজীর বিরুদ্ধে টুশব্দ করতেও সাহস পাচ্ছে স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবকরা। এমনকি এ বিএনপি নেতার বাহিনী ও ক্ষমতার প্রভাবের কাছে অসহায় খুলনার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। স্কুলের জায়গা দখল করে বিএনপি নেতা অট্টালিকা নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। দ্রুত স্কুলের জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও যথাযথ বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সূত্র মতে, নগরীর সদর থানার ২১নং ওয়ার্ডে স্টেশন রোডে ১৯১০ সালে হ্যানী রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুল বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৬.৫ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের জমির মধ্যে একটি ভবন নির্মাণ করে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু একতলা ভবনটি ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় সরকারীভাবে ১৯৯২ সালে নতুন একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ভবনের পূর্ব পাশের প্রায় ২ শতক জমি বিএনপি নেতা মোল্লা ফরিদ আহম্মেদ পরিবার অবৈধভাবে দখল করে নিজের পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রী স্কুলের জমিতে বাড়ি করে দখলে রেখেছেন। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টির সভাপতি থাকায় অবৈধ দখল পাকাপোক্ত করেন। সে সময়ে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটিও তার দখলে ছিলো। যেটাকে তিনি নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবেও দীর্ঘদিন ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার বিকল্প রাস্তা থাকলেও বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে তিনি ও তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী মিছিল-মিটিং ও সমাবেশের লোকজন নিয়ে অহরহ চলাচল করে থাকে। এতে করে বিদ্যালয়টির পাঠদান যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির নিরপত্তাও। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ফরিদ আহমেদকে মৌখিকভাবে বিভিন্ন সময় একাধিকবার বললেও তিনি কর্ণপাত না করে জমি দখলে রেখেছেন।

অন্যদিকে, ফরিদ আহমেদ মোল্লা যে বাড়িটিতে বসবাস করেন তা তিনি ও তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ রেলওয়ের নিকট থেকে বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিয়েছেন। ফরিদ মোল্লা রেলওয়ের  পাকশি স্টেট বিভাগের জ ১নং ৩২৯২৫৫ লাইসেন্স মোতাবেক বাৎসরিক ১৬ হাজার ৮শত টাকায় ২০০ বর্গফুট এবং স্ত্রী তাহমিনা আহমেদ রেলওয়ের পাকশি স্টেট বিভাগের জ ১নং ৩২৯২৫০ লাইসেন্স মোতাবেক বাৎসরিক ২৮ হাজার ৫৬০ টাকায় ৩৪০ বর্গফুট জায়গা বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দের নিয়মনীতি না মেনে তারা অবৈধভাবে ছাদসহ বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে। যা রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাদের বরাদ্দ নেয়া জমি ছাড়াও তারা হ্যানে রেলওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধ দখল করে বসতবাড়ী নির্মাণ করেছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার স্কুলের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেয়া ও রেলওয়ের নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা ভবন অপসারণের নোটিশ দিলেও তিনি ক্ষমতা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে এখনও দখল রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বর্তমান সরকারের সময় কিভাবে বিএনপির একজন নেতা সরকারী স্কুলের জায়গা বছরে পর বছর দখলে রেখেছে তা বিস্ময়ের ব্যাপার। একই সাথে স্কুলের জায়গায় বসবাস এবং স্কুলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড করায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনেক কমে গেছে। স্কুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জায়গা অবৈধ দখল থেকে অবমুক্ত ও দখলকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বেগম বলেন, স্কুলের জমি দখল করে বসতঘর নির্মান করার বিষয়টি নিয়ে তিনি তেমন কিছুই জানতেন না। বিষয়টি জানার পর নানান কারনে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তবে এটা নিয়ে কথা উঠলে গত এপ্রিল মাসে তিনি সদর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলামকে অবহিত করেছেন।এছাড়া স্কুল পরিচালনা কমিটির নতুন সভাপতি খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানার নজরে এনেছেন বলেও তিনি জানান। বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এমরানুল হক বাবু জানান, স্কুলের জমির দখল করে নিজের বসতভিটা নির্মাণ করা অবশ্যই একটি অপরাধ। স্কুলের শিক্ষক বা অন্য যেই হোক না কেন দীর্ঘদিন ধরে জায়গা দখলে রাখায় তিনি অন্যায় করেছেন। অবশ্যই যে কোন মূল্যে স্কুলের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা জানান, “ আমার শ্বশুর হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন পাশের রেলওয়ের জমি বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন যাবত আমরা সেই বাড়ীতে বসবাস করে আসছি। আমি স্কুলের ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। স্থানীয় ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছি। রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্কুলের জমির কিছু অংশে বাউন্ডারী ওয়ালসহ ঘর নির্মাণ ও সিসি ক্যামারে স্থাপন করেছি। ইতিপূর্বে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা পরিচালনা পরিষদ কখনও জায়গা ছেড়ে দেয়ার কথা বলেনি। সেজন্য আগে থেকে যেভাবে আছে সেভাবে বসবাস করছি। তবে স্কুলের জায়গায় ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ সঠিক হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।”

রেলওয়ের খুলনার ১৮নং কাচারীর কানুনগো মো. মনোয়ার হোসেন জানান, স্কুলের জায়গা দখলকারী বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লাকে মৌখিকভাবে দখলকৃত জায়গা অবমুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। ফরিদ মোল্লা স্থাপনা ভেঙ্গে অবৈধ দখলে রাখা স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম জানান, তিনি মাত্র কয়েকদিন পূর্বে খুলনায় যোগদান করেছেন। হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। তবে স্কুলের সরকারী জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে সুষ্ঠু লেখাপড়ার পরিবেশ রাখতে আইনগত সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। হ্যানে রেলওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নতুন সভাপতি এমডিএ বাবুল রানা জানান, বর্তমান সরকার দেশের ভবিষ্যত কর্ণধর শিশুদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে অনেক উন্নয়নমূখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে সরকারী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা কেউ দখল করে থাকলে অবশ্যই সেটা দখলমুক্ত করা উচিত। তিনি স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, সরকারী স্কুলের জায়গায় যদি কেউ ব্যক্তিগত বসতবাড়ী নির্মাণ করে থাকলে সেটা অবশ্যই আইন বহির্ভূত। সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি অবহিত করেননি। তারা বিষয়টি অবহিত করলে বা কোন অভিযোগ পেলে জেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে দখল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, একটি সরকারী স্কুলের জায়গা দখল করে বসত ঘর নির্মান করে তিনি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। তবে এ বিষয়ে স্কুল কতৃর্পক্ষ ও শিক্ষা বিভাগ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদেরও  দায় রয়েছে। দ্রুত স্কুলের জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং একই সাথে ভোগদখলের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব আদায় করার ব্যবস্থার দাবীও জানান তিনি। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

দ্রুত দখল উচ্ছেদ ও বিচারের দাবী

খুলনায় সরকারী স্কুলের জায়গা দখল করে বিএনপি নেতার বসতবাড়ি, নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্র-শিক্ষক

প্রকাশিত সময় : ০৯:০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩

####

 

খুলনায় হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা ও তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম। স্কুলের জমি দখলকারী এ বিএনপি নেতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করেছেন। স্কুলের জমি অবৈধভাবে দখল করে বাড়ী নির্মাণকারী ফরিদ আহমেদ মোল্লা খুলনা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। কয়েকবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রাথী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। প্রভাবশালী এ বিএনপি নেতার দখলবাজীর বিরুদ্ধে টুশব্দ করতেও সাহস পাচ্ছে স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবকরা। এমনকি এ বিএনপি নেতার বাহিনী ও ক্ষমতার প্রভাবের কাছে অসহায় খুলনার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। স্কুলের জায়গা দখল করে বিএনপি নেতা অট্টালিকা নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। দ্রুত স্কুলের জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও যথাযথ বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সূত্র মতে, নগরীর সদর থানার ২১নং ওয়ার্ডে স্টেশন রোডে ১৯১০ সালে হ্যানী রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুল বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৬.৫ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের জমির মধ্যে একটি ভবন নির্মাণ করে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু একতলা ভবনটি ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় সরকারীভাবে ১৯৯২ সালে নতুন একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ভবনের পূর্ব পাশের প্রায় ২ শতক জমি বিএনপি নেতা মোল্লা ফরিদ আহম্মেদ পরিবার অবৈধভাবে দখল করে নিজের পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রী স্কুলের জমিতে বাড়ি করে দখলে রেখেছেন। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টির সভাপতি থাকায় অবৈধ দখল পাকাপোক্ত করেন। সে সময়ে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটিও তার দখলে ছিলো। যেটাকে তিনি নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবেও দীর্ঘদিন ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার বিকল্প রাস্তা থাকলেও বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে তিনি ও তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী মিছিল-মিটিং ও সমাবেশের লোকজন নিয়ে অহরহ চলাচল করে থাকে। এতে করে বিদ্যালয়টির পাঠদান যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির নিরপত্তাও। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ফরিদ আহমেদকে মৌখিকভাবে বিভিন্ন সময় একাধিকবার বললেও তিনি কর্ণপাত না করে জমি দখলে রেখেছেন।

অন্যদিকে, ফরিদ আহমেদ মোল্লা যে বাড়িটিতে বসবাস করেন তা তিনি ও তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ রেলওয়ের নিকট থেকে বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিয়েছেন। ফরিদ মোল্লা রেলওয়ের  পাকশি স্টেট বিভাগের জ ১নং ৩২৯২৫৫ লাইসেন্স মোতাবেক বাৎসরিক ১৬ হাজার ৮শত টাকায় ২০০ বর্গফুট এবং স্ত্রী তাহমিনা আহমেদ রেলওয়ের পাকশি স্টেট বিভাগের জ ১নং ৩২৯২৫০ লাইসেন্স মোতাবেক বাৎসরিক ২৮ হাজার ৫৬০ টাকায় ৩৪০ বর্গফুট জায়গা বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দের নিয়মনীতি না মেনে তারা অবৈধভাবে ছাদসহ বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে। যা রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাদের বরাদ্দ নেয়া জমি ছাড়াও তারা হ্যানে রেলওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধ দখল করে বসতবাড়ী নির্মাণ করেছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার স্কুলের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেয়া ও রেলওয়ের নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা ভবন অপসারণের নোটিশ দিলেও তিনি ক্ষমতা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে এখনও দখল রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বর্তমান সরকারের সময় কিভাবে বিএনপির একজন নেতা সরকারী স্কুলের জায়গা বছরে পর বছর দখলে রেখেছে তা বিস্ময়ের ব্যাপার। একই সাথে স্কুলের জায়গায় বসবাস এবং স্কুলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড করায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনেক কমে গেছে। স্কুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জায়গা অবৈধ দখল থেকে অবমুক্ত ও দখলকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বেগম বলেন, স্কুলের জমি দখল করে বসতঘর নির্মান করার বিষয়টি নিয়ে তিনি তেমন কিছুই জানতেন না। বিষয়টি জানার পর নানান কারনে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তবে এটা নিয়ে কথা উঠলে গত এপ্রিল মাসে তিনি সদর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলামকে অবহিত করেছেন।এছাড়া স্কুল পরিচালনা কমিটির নতুন সভাপতি খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানার নজরে এনেছেন বলেও তিনি জানান। বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এমরানুল হক বাবু জানান, স্কুলের জমির দখল করে নিজের বসতভিটা নির্মাণ করা অবশ্যই একটি অপরাধ। স্কুলের শিক্ষক বা অন্য যেই হোক না কেন দীর্ঘদিন ধরে জায়গা দখলে রাখায় তিনি অন্যায় করেছেন। অবশ্যই যে কোন মূল্যে স্কুলের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা জানান, “ আমার শ্বশুর হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন পাশের রেলওয়ের জমি বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন যাবত আমরা সেই বাড়ীতে বসবাস করে আসছি। আমি স্কুলের ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। স্থানীয় ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছি। রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্কুলের জমির কিছু অংশে বাউন্ডারী ওয়ালসহ ঘর নির্মাণ ও সিসি ক্যামারে স্থাপন করেছি। ইতিপূর্বে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা পরিচালনা পরিষদ কখনও জায়গা ছেড়ে দেয়ার কথা বলেনি। সেজন্য আগে থেকে যেভাবে আছে সেভাবে বসবাস করছি। তবে স্কুলের জায়গায় ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ সঠিক হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।”

রেলওয়ের খুলনার ১৮নং কাচারীর কানুনগো মো. মনোয়ার হোসেন জানান, স্কুলের জায়গা দখলকারী বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লাকে মৌখিকভাবে দখলকৃত জায়গা অবমুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। ফরিদ মোল্লা স্থাপনা ভেঙ্গে অবৈধ দখলে রাখা স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম জানান, তিনি মাত্র কয়েকদিন পূর্বে খুলনায় যোগদান করেছেন। হ্যানে রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। তবে স্কুলের সরকারী জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে সুষ্ঠু লেখাপড়ার পরিবেশ রাখতে আইনগত সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। হ্যানে রেলওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নতুন সভাপতি এমডিএ বাবুল রানা জানান, বর্তমান সরকার দেশের ভবিষ্যত কর্ণধর শিশুদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে অনেক উন্নয়নমূখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে সরকারী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা কেউ দখল করে থাকলে অবশ্যই সেটা দখলমুক্ত করা উচিত। তিনি স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, সরকারী স্কুলের জায়গায় যদি কেউ ব্যক্তিগত বসতবাড়ী নির্মাণ করে থাকলে সেটা অবশ্যই আইন বহির্ভূত। সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি অবহিত করেননি। তারা বিষয়টি অবহিত করলে বা কোন অভিযোগ পেলে জেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে দখল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, একটি সরকারী স্কুলের জায়গা দখল করে বসত ঘর নির্মান করে তিনি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। তবে এ বিষয়ে স্কুল কতৃর্পক্ষ ও শিক্ষা বিভাগ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদেরও  দায় রয়েছে। দ্রুত স্কুলের জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং একই সাথে ভোগদখলের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব আদায় করার ব্যবস্থার দাবীও জানান তিনি। ##