০১:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় অর্ণব হত্যাকান্ডে বন্ধু আটক, ৪বিষয় নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ,শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

####

খুলনায় আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব হত্যার রহস্য উদঘাটনে বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা, অপরাধ চক্র, চাঁদাবাজি এবং প্রেমঘটিত বিষয় এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে অর্ণব হত্যাকন্ডের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অর্ণব হত্যার সাথে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে ৩ জনকে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরমধ্যে অর্ণবের বন্ধু রাব্বানীও রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চার রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে অর্ণব কুমার সরকারকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিল।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে ৪ টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। চাঁদাবাজি, প্রেমঘটিত বিষয়, বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা ও অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না এই চারটি বিষয়কে প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের তথ্য জানার জন্য রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে হত্যাকান্ডের তদন্ত সামনের দিকে নিয়ে যাবে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেকগুলো ডালপালা বের হয়। কিন্তু কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে না। অনেকে বলেছেন নিহত অর্ণব খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ‘বি কোম্পানীর’ সদস্য। কেউ বলছেন অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আবার তার বাবার ব্যবসা কেন্দ্রীক বিরোধ নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন। তাছাড়া প্রেমঘটিত বিষয়টিও সামনে আসছে। ফলে এখনই ঘটনার নেপথ্যের কারণ বলা সম্ভব নয়।

এছাড়া বাড়ি থেকে একজন যুবক অর্ণবকে ডেকে শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে নিয়ে এসেছে বলে যেটি শোনা যাচ্ছে, এমন তথ্য আমরাও শুনেছি, এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে নিহত অর্ণব কেন তেঁতুলতলা মোড়ে এসেছিল তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য বলছে এ হত্যা মিশনে প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর আরও কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রতক্ষ্যদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।

তবে একাধিক সংস্থা ও গোপন সূত্রগুলো জানায়, হত্যার মিশনে ০৭ সন্ত্রাসী ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। তাদের একজনের হাতে শর্টগান ও বাকীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। শর্টগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে একটি ও পিস্তল দিয়ে পরপর ৩টি গুলি করে। উপস্থিত অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হত্যাকারীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে চড়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে হারিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করা একজন পথচারী বলেন, খুবি ছাত্র অর্ণব রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঘটনাস্থলে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে চা পান করছিলেন। এ সময়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে। তখন অর্ণব তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন ‘আমি এর সাথে জড়িত নই’। এ কথা বলার পর একজন সন্ত্রাসী বলে, তুই তো ওই গ্রুপের সদস্য। একথা বলা মাত্র শর্টগান দিয়ে গুলি করে ওই সন্ত্রাসী। তারপর জনগণ ছত্রভঙ্গ করতে পরপর আরও ৩ রাউন্ড গুলি করা হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য খুব দ্রুত উন্মোচন হয়ে যাবে। খুলনায় সন্ত্রাসীদের দৌরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের দমনে হোন্ডা বাহিনী, চেকপোষ্ট ও গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরিই অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করেন পুলিশের এ উর্ধতন কর্মকর্তা।

এদিকে, অর্ণব হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুরে নগরীর তেতুলতলা মোড়ে নর্থ ওয়েস্টার্ন ক্যাম্পাসের সামনে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা অর্ণব হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানান।

সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো: শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে খুবি শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামী করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নিহতের বাবা নিতিশ কুমার সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর হত্যাকান্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩জনকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে পুলিশী অভিযান চলমান রয়েছে। ##

ট্যাগ :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

sunil Dhash

জনপ্রিয়

নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে পাইকগাছায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

খুলনায় অর্ণব হত্যাকান্ডে বন্ধু আটক, ৪বিষয় নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ,শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আপডেট সময় : ০২:২৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

####

খুলনায় আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব হত্যার রহস্য উদঘাটনে বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা, অপরাধ চক্র, চাঁদাবাজি এবং প্রেমঘটিত বিষয় এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে অর্ণব হত্যাকন্ডের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অর্ণব হত্যার সাথে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে ৩ জনকে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরমধ্যে অর্ণবের বন্ধু রাব্বানীও রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চার রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে অর্ণব কুমার সরকারকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিল।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে ৪ টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। চাঁদাবাজি, প্রেমঘটিত বিষয়, বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা ও অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না এই চারটি বিষয়কে প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের তথ্য জানার জন্য রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে হত্যাকান্ডের তদন্ত সামনের দিকে নিয়ে যাবে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেকগুলো ডালপালা বের হয়। কিন্তু কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে না। অনেকে বলেছেন নিহত অর্ণব খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ‘বি কোম্পানীর’ সদস্য। কেউ বলছেন অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আবার তার বাবার ব্যবসা কেন্দ্রীক বিরোধ নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন। তাছাড়া প্রেমঘটিত বিষয়টিও সামনে আসছে। ফলে এখনই ঘটনার নেপথ্যের কারণ বলা সম্ভব নয়।

এছাড়া বাড়ি থেকে একজন যুবক অর্ণবকে ডেকে শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে নিয়ে এসেছে বলে যেটি শোনা যাচ্ছে, এমন তথ্য আমরাও শুনেছি, এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে নিহত অর্ণব কেন তেঁতুলতলা মোড়ে এসেছিল তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য বলছে এ হত্যা মিশনে প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর আরও কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রতক্ষ্যদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।

তবে একাধিক সংস্থা ও গোপন সূত্রগুলো জানায়, হত্যার মিশনে ০৭ সন্ত্রাসী ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। তাদের একজনের হাতে শর্টগান ও বাকীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। শর্টগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে একটি ও পিস্তল দিয়ে পরপর ৩টি গুলি করে। উপস্থিত অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হত্যাকারীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে চড়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে হারিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করা একজন পথচারী বলেন, খুবি ছাত্র অর্ণব রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঘটনাস্থলে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে চা পান করছিলেন। এ সময়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে। তখন অর্ণব তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন ‘আমি এর সাথে জড়িত নই’। এ কথা বলার পর একজন সন্ত্রাসী বলে, তুই তো ওই গ্রুপের সদস্য। একথা বলা মাত্র শর্টগান দিয়ে গুলি করে ওই সন্ত্রাসী। তারপর জনগণ ছত্রভঙ্গ করতে পরপর আরও ৩ রাউন্ড গুলি করা হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য খুব দ্রুত উন্মোচন হয়ে যাবে। খুলনায় সন্ত্রাসীদের দৌরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের দমনে হোন্ডা বাহিনী, চেকপোষ্ট ও গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরিই অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করেন পুলিশের এ উর্ধতন কর্মকর্তা।

এদিকে, অর্ণব হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুরে নগরীর তেতুলতলা মোড়ে নর্থ ওয়েস্টার্ন ক্যাম্পাসের সামনে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা অর্ণব হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানান।

সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো: শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে খুবি শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামী করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নিহতের বাবা নিতিশ কুমার সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর হত্যাকান্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩জনকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে পুলিশী অভিযান চলমান রয়েছে। ##