০৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পেলেন অবসর ভাতার চিঠি

####

হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পেলেন অবসর ভাতার চিঠি। অনাকাঙ্খিতভাবে অবসর ভাতার চিঠি হাতে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক হরিদাস রায়। তিনি বটিয়াঘাটার জলমা কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সোমবার (২৮আগষ্ট) দুপুরের দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে অসুস্থ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিদাস রায়কে দেখতে আসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম ও তাঁর সহকর্মীরা। এ সময় অবসর ভাতা না পেয়ে চরম দূর্ভোগ ও হতাশায় পড়া অসুস্থ্য সহকারি শিক্ষক হারিদাস রায়ের হাতে তুলে দেন অবসর ভাতার চিঠি। মূহুর্তের মধ্যেই পাল্টে যায় শিক্ষক হরিদাস রায়ের অসহায় পরিস্থিতির মলিন মুখাবয়ব। শত সংকটের কালো আধার কেটে গিয়ে দেখা দেয় আনন্দ আর উচ্ছাসের ছিলিক। এ ঘটনা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে। একই সঙ্গে বিষাদের ছায়া অপসারিত হয়ে উচ্ছ¡াসের তরঙ্গ যেন বয়ে যায় তার স্বজনদের মাঝে।
ক্লিনিকের বিছানায় শয্যাশায়ী হরিদাস রায় অবসর ভাতার চিঠি হাতে পেয়ে বলেন, জীবনের হতাশার মেঘ কেটে গিয়ে সত্যিই আমি আনন্দিত। ১৯৮৬ সালে আমি বটিয়াঘাটা জলমা কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দান করি। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে (পিআরএল) যায়। ২০২৩ সালের ২২জানুয়ারি মাসে পূর্ণাঙ্গ অবসর গ্রহন করি। এরমধ্যেই আমার অবসর ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু বিগত সাত মাস পার হলেও আমি অবসরভাতা পায়নি। কারণ হিসাবে তৎকালিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, যেহেতু কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নামজারিতে সমস্যা রয়েছে। কাজেই নামজারির বিষয় মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত অবসরভাতা বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় আমাকে এই সংকটে পড়তে হয়েছে। আমি নামজারি করার চেষ্টা করে প্রায় শেষের পথে নিয়ে এসেছি। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার চার মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারে আয়ের পথ নেই বললেই চলে। তারপওে অসুস্থ্যতা নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছি। এই ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করাও আমার জন্য কষ্টকর ছিল। এরই মধ্যে অবসর ভাতার এই উপহার পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি জেলা শিক্ষা র্কমর্কতাকে ধন্যবাদ জানাই।
খুলনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, আমি গত ২৭ আগস্ট দাকোপে অফিসিয়াল কাজে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তার পাশে স্কুল হওয়ায় হঠাৎ করেই ঠিক করলাম জলমা কচুবুনিয়া স্কুলটি পরিদর্শন করবো। পরিদর্শনকালে প্রধান শিক্ষিকা নির্মলা মন্ডল স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিদাস রায়ের অবসর ভাতা না পাওয়ার ঘটনাটি জানান এবং বলেন শিক্ষক হরিদাস রায় হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। আমি তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম আলমগীরের কাছে জানতে চাই। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে সরকারী সকল জটিলতা কাটিয়ে অবসর ভাতার চিঠি করার জন্য অফিসকে নির্দেশ দেই। সরকারী সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিক্ষক হরিদাস রায়ের অবসর ভাতার চিঠি নিয়েই সহকর্মীদের সাথে করে হাসপাতালেই তাকে দিতে এসেছি। দেশ ও জাতির মেরুদন্ড হিসেবে খ্যাত একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের অবসর ভাতার বঞ্চনার দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পেরে আমিও আনন্দিত।
বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম আলমগীর হোসেন বলেন, স্কুলের নামজারি না হওয়ায় একটু সংকট হয়েছিল। তাঁরপর আমি ২৪ আগস্ট তাঁর অবসর ভাতার বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছিলাম। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রæততার সাথে সংকটকালীন সময়ে তাকে অবসর ভাতার চিঠি প্রদান করেছেন। এটা নি:সন্দেহে একটি দৃষ্টান্তমূলক কাজ। তাকে সহায়তা করতে পেওে আমরাও খুশী হয়েছি।
নগরীর রূপসা প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস রায় বলেন, একজন শিক্ষক সারা জীবনের অর্জিত অর্থ পেতে দেরি হলে সংকটে পড়তে হয়। অবসর ভাতা সঠিক সময়ে না পেয়ে ওই শিক্ষকের পরিবার অনেক সংকটে পড়েছিলেন। হরিদাস রায় তাঁর সংকটময় মূহুর্তে যতটুকু পেল তা সত্যিই বিরল। শিক্ষক হরিদাস রায়ের কন্যা শ্রিপ্রা রায় বলেন, বাবা তাঁর ন্যায্য পাওনা পেয়েছে দেখে আমরা দারুণ খুশী। তবে আমরা যেমন দূর্ভোগে পড়েছিলাম এমন ভোগান্তিতে আর যেন কেউ না পড়–ক। সে বিষয়টি দেখার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যতটুকু শুনেছি তিনি যশোরে থাকাকালেও এমন অনেক কাজ করেছেন। কোন শিক্ষক ভবিষ্যতে যেন হরিদাস রায়ের মত যেন দূর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর সচেষ্ট থাকবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কেএমপি’র ০২ পুলিশ সদস্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত

হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পেলেন অবসর ভাতার চিঠি

প্রকাশিত সময় : ০৮:০৬:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩

####

হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পেলেন অবসর ভাতার চিঠি। অনাকাঙ্খিতভাবে অবসর ভাতার চিঠি হাতে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক হরিদাস রায়। তিনি বটিয়াঘাটার জলমা কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সোমবার (২৮আগষ্ট) দুপুরের দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে অসুস্থ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিদাস রায়কে দেখতে আসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম ও তাঁর সহকর্মীরা। এ সময় অবসর ভাতা না পেয়ে চরম দূর্ভোগ ও হতাশায় পড়া অসুস্থ্য সহকারি শিক্ষক হারিদাস রায়ের হাতে তুলে দেন অবসর ভাতার চিঠি। মূহুর্তের মধ্যেই পাল্টে যায় শিক্ষক হরিদাস রায়ের অসহায় পরিস্থিতির মলিন মুখাবয়ব। শত সংকটের কালো আধার কেটে গিয়ে দেখা দেয় আনন্দ আর উচ্ছাসের ছিলিক। এ ঘটনা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে। একই সঙ্গে বিষাদের ছায়া অপসারিত হয়ে উচ্ছ¡াসের তরঙ্গ যেন বয়ে যায় তার স্বজনদের মাঝে।
ক্লিনিকের বিছানায় শয্যাশায়ী হরিদাস রায় অবসর ভাতার চিঠি হাতে পেয়ে বলেন, জীবনের হতাশার মেঘ কেটে গিয়ে সত্যিই আমি আনন্দিত। ১৯৮৬ সালে আমি বটিয়াঘাটা জলমা কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দান করি। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে (পিআরএল) যায়। ২০২৩ সালের ২২জানুয়ারি মাসে পূর্ণাঙ্গ অবসর গ্রহন করি। এরমধ্যেই আমার অবসর ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু বিগত সাত মাস পার হলেও আমি অবসরভাতা পায়নি। কারণ হিসাবে তৎকালিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, যেহেতু কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নামজারিতে সমস্যা রয়েছে। কাজেই নামজারির বিষয় মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত অবসরভাতা বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় আমাকে এই সংকটে পড়তে হয়েছে। আমি নামজারি করার চেষ্টা করে প্রায় শেষের পথে নিয়ে এসেছি। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার চার মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারে আয়ের পথ নেই বললেই চলে। তারপওে অসুস্থ্যতা নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছি। এই ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করাও আমার জন্য কষ্টকর ছিল। এরই মধ্যে অবসর ভাতার এই উপহার পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি জেলা শিক্ষা র্কমর্কতাকে ধন্যবাদ জানাই।
খুলনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, আমি গত ২৭ আগস্ট দাকোপে অফিসিয়াল কাজে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তার পাশে স্কুল হওয়ায় হঠাৎ করেই ঠিক করলাম জলমা কচুবুনিয়া স্কুলটি পরিদর্শন করবো। পরিদর্শনকালে প্রধান শিক্ষিকা নির্মলা মন্ডল স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিদাস রায়ের অবসর ভাতা না পাওয়ার ঘটনাটি জানান এবং বলেন শিক্ষক হরিদাস রায় হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। আমি তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম আলমগীরের কাছে জানতে চাই। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে সরকারী সকল জটিলতা কাটিয়ে অবসর ভাতার চিঠি করার জন্য অফিসকে নির্দেশ দেই। সরকারী সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিক্ষক হরিদাস রায়ের অবসর ভাতার চিঠি নিয়েই সহকর্মীদের সাথে করে হাসপাতালেই তাকে দিতে এসেছি। দেশ ও জাতির মেরুদন্ড হিসেবে খ্যাত একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের অবসর ভাতার বঞ্চনার দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পেরে আমিও আনন্দিত।
বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম আলমগীর হোসেন বলেন, স্কুলের নামজারি না হওয়ায় একটু সংকট হয়েছিল। তাঁরপর আমি ২৪ আগস্ট তাঁর অবসর ভাতার বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছিলাম। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রæততার সাথে সংকটকালীন সময়ে তাকে অবসর ভাতার চিঠি প্রদান করেছেন। এটা নি:সন্দেহে একটি দৃষ্টান্তমূলক কাজ। তাকে সহায়তা করতে পেওে আমরাও খুশী হয়েছি।
নগরীর রূপসা প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস রায় বলেন, একজন শিক্ষক সারা জীবনের অর্জিত অর্থ পেতে দেরি হলে সংকটে পড়তে হয়। অবসর ভাতা সঠিক সময়ে না পেয়ে ওই শিক্ষকের পরিবার অনেক সংকটে পড়েছিলেন। হরিদাস রায় তাঁর সংকটময় মূহুর্তে যতটুকু পেল তা সত্যিই বিরল। শিক্ষক হরিদাস রায়ের কন্যা শ্রিপ্রা রায় বলেন, বাবা তাঁর ন্যায্য পাওনা পেয়েছে দেখে আমরা দারুণ খুশী। তবে আমরা যেমন দূর্ভোগে পড়েছিলাম এমন ভোগান্তিতে আর যেন কেউ না পড়–ক। সে বিষয়টি দেখার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যতটুকু শুনেছি তিনি যশোরে থাকাকালেও এমন অনেক কাজ করেছেন। কোন শিক্ষক ভবিষ্যতে যেন হরিদাস রায়ের মত যেন দূর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর সচেষ্ট থাকবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ##