রিপন বিশ্বাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনটি পদে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ সরকারি বিধি বহির্ভূত, অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকারের বিরুদ্ধে। অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগ বাতিল করতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন মৌসুমী আক্তার নামে এক প্রার্থী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা দুইটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহেদ শাহান অভিযোগের তদন্ত করেন। এসময় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্য, স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা, অভিযোগকারী ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগষ্ট ২০২২ জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় গলাচিপা উপজেলার বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনটি পদে (অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে আবেদন করেন মৌসুমি আক্তার। পরে তাকে সহ আটজন প্রার্থীকে গত ০৭ অক্টোবর ২০২২ সালে স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকার স্বাক্ষরিত প্রবেশ পত্র দেয়া হয় ১৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে নির্ধারিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। নিয়োগ পরীক্ষাটি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থাকলেও কোন কারণ ছাড়াই সেদিন পরীক্ষা স্থগিত করে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকার ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: শোয়েব সাদিক। গত ২৫ অক্টোবর ২২ আবেদনকারী ৯ জন প্রার্থীকে না জানিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে ৩ জন প্রার্থীর পরীক্ষা নেয় নিয়োগ কমিটি। পরে তিনটি পদে মো: শাহিন (নৈশপ্রহরী), মো: নান্নু (অফিস সহকারী), মো: সাকিব (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলেন মৌসুমী আক্তার সহ আরও ৮ জন প্রার্থী। গত ৩০ অক্টোবর ২০২২ অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন মৌসুমী আক্তার নামে ওই প্রার্থী।
অভিযোগকারী প্রার্থী মোসা: মৌসুমী আক্তার বলেন, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে স্থায়ী চাকুরির আশ্বাসে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে নিয়োগ দেয় প্রধান শিক্ষক। তিনি প্রায় এক বছর দক্ষতার সঙ্গে ওই পদে চাকরি করেন। বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি স্থায়ী ও এমপিভুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দেন।
গত ২৫ অক্টোবর ২০২২ নিয়োগ পরীক্ষার আগে তার কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকার চাকুরীতে স্থায়ী নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোট বিভিন্ন অংকে মোট তিন লক্ষ টাকা নেয়। পরে নিয়োগ পরীক্ষার সময় আরো বেশি টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মৌসুমী আক্তার বলেন, অন্যজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২৫ অক্টোবর ২০২২ নিয়োগ পরীক্ষায় আমি যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারি তার জন্য বিকেল ৩ টায় পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক আমাকে দুপুর ২ টা ১৬ মিনিটে মেসেজ দেয়। যেখানে আমার বাসা থেকে পটুয়াখালী পরীক্ষার হল এর দুরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশি। আমার পক্ষে কোনভাবেই ৩০ মিনিটে ৫০ কিলোমিটার পথ গিয়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করা সম্ভব হয়নী, তাই আমি অবৈধ নিয়োগ বাতিল চাই।
স্থায়ী চাকুরির আশ্বাসে নৈশপ্রহরী হিসেবে প্রায় এক বছর চাকরি করেন মো: কামরুজ্জামান। এ নিয়োগে তাকেও বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকার বলেন, আমি কোন অনিয়ম করি নাই। আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট বলে দাবি করেন।
উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহেদ শাহান বলেন, নিয়োগ দূর্নীতির একটি অভিযোগে তদন্ত করা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে যাচাই—বাছাই শেষে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।