১০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চিংড়ি রপ্তানিতে ধ্বস :

হতাশার বছরে ৫’মাসে রপ্তানি কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা

####

বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর ২০২৩ সাল। মহামারী করোনার সংক্রমনের পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দর পতন, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারা বছরই কেটেছে অথনৈতিক মন্দা ও টানাপোড়নে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা বছর ধরেই হতাশায় কেটেছে খুলনাঞ্চলের প্রধান রপ্তানী পন্য চিংড়ীসহ মৎস্য রপ্তানি খাত। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫মাসে শুধুমাত্র চিংড়ী রপ্তানীতে কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। আর মৎস্য খাতের রপ্তানির পরিমান কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিশ্চয়তায় মধ্যে বছর শুরু হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, খুলনা-মোংলা রেললাইন, ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশে সম্ভাবনার হাতছানি তৈরি হয়েছে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে(জুলাই- নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১১,৩৯১.৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ১১৪০ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময় রপ্তানী হয়েছিল ১৩,৮৯০.৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৫২২ কোটি টাকা। পাঁচ মাসেই মৎস্য খাতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা মূল্যের ৭,৭৪১ মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময় রপ্তানি ছিল ১০,০৪৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৪৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের পাঁচ মাসে চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। এছাড়া পাবদা, টেংরা, ভেটকি, পারসেসহ সাদা মাছের রপ্তানি কমেছে ৬৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের পাঁচ মাসে(জুলাই-নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩,১৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ২১২ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৪৮ কোটি টাকা মূল্যের ৩,০৫০ মেট্রিক টন।

খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মাণনিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চিংড়ির প্রধান বাজার ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, রাশিয়া ও চীন। কিন্তু বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চিংড়ির রপ্তানি কমার পেছনে মূল কারণ বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কম।তবে লোকাল বাজারেও এখন অনেক ভালো দামে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব অর্থণৈতিক মন্দার রেশ কেটে গেলে খুলনাঞ্চলের চিংড়ী রপ্তানীও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রোজের ফুডস এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো: হুমায়ূন কবীর বলেন, বিশ্ব মন্দা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দর পতন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংকট, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় হিমায়িত মৎস্য রপ্তানী খাত বেশ সংকটের মধ্যেই চলতি বছর অতিবাহিত করেছে। তাছাড়া অধিক উৎপাদনশীল ভেনামীর সাথে দেশীয় বাগদার বিশ্ববাজারে মার খাওয়া ও সরকারীভাবে ভেনামীর বানিজ্যিক চাষে অনুমোদন দিলেও সম্প্রসারিত না হওয়ায় কাচামালের সংকট ইত্যাদি কারনে চিংড়ী রপ্তানী হ্রাস পেয়েছে। একই সাথে বিশ্ব বাজারে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানীর টার্গেট পুরণ হয়নি। তবে সরকারের উদ্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরী হওয়ায় আগামীতে চিংড়ী ও হিমায়িত মৎস্য রপ্তানী বাড়বে বলেও তিনি আশা করেন।

বৃহত্তর খুলনা উনন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, মৎস্য খাতে রপ্তানি কমলেও বিগত কয়েক বছরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বান্ধব ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইনে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যা ডেল্টা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট নিয়ে বছরটা খারাপ কেটেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক শিল্প-বাণিজ্যে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চালু হয়েছে খুলনা-মোংলা রেল লাইন। মোংলা বন্দর থেকে এসে খুলনার ফুলতলা পয়েন্টে রেলপথটি সারাদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত, নেপাল ভুটানের সাথেও ব্যবসা-বানিজ্য বিশেষ করে খুলনাঞ্চলের চিংড়ী রপ্তানী বৃদ্ধি হয়ে কাঙ্খিত টার্গেটে পৌছাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

চিংড়ি রপ্তানিতে ধ্বস :

হতাশার বছরে ৫’মাসে রপ্তানি কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা

প্রকাশিত সময় : ০২:৫২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪

####

বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর ২০২৩ সাল। মহামারী করোনার সংক্রমনের পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দর পতন, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারা বছরই কেটেছে অথনৈতিক মন্দা ও টানাপোড়নে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা বছর ধরেই হতাশায় কেটেছে খুলনাঞ্চলের প্রধান রপ্তানী পন্য চিংড়ীসহ মৎস্য রপ্তানি খাত। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫মাসে শুধুমাত্র চিংড়ী রপ্তানীতে কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। আর মৎস্য খাতের রপ্তানির পরিমান কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিশ্চয়তায় মধ্যে বছর শুরু হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, খুলনা-মোংলা রেললাইন, ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশে সম্ভাবনার হাতছানি তৈরি হয়েছে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে(জুলাই- নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১১,৩৯১.৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ১১৪০ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময় রপ্তানী হয়েছিল ১৩,৮৯০.৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৫২২ কোটি টাকা। পাঁচ মাসেই মৎস্য খাতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা মূল্যের ৭,৭৪১ মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময় রপ্তানি ছিল ১০,০৪৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৪৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের পাঁচ মাসে চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। এছাড়া পাবদা, টেংরা, ভেটকি, পারসেসহ সাদা মাছের রপ্তানি কমেছে ৬৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের পাঁচ মাসে(জুলাই-নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩,১৬২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ২১২ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৪৮ কোটি টাকা মূল্যের ৩,০৫০ মেট্রিক টন।

খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মাণনিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চিংড়ির প্রধান বাজার ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, রাশিয়া ও চীন। কিন্তু বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চিংড়ির রপ্তানি কমার পেছনে মূল কারণ বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কম।তবে লোকাল বাজারেও এখন অনেক ভালো দামে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব অর্থণৈতিক মন্দার রেশ কেটে গেলে খুলনাঞ্চলের চিংড়ী রপ্তানীও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রোজের ফুডস এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো: হুমায়ূন কবীর বলেন, বিশ্ব মন্দা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দর পতন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংকট, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় হিমায়িত মৎস্য রপ্তানী খাত বেশ সংকটের মধ্যেই চলতি বছর অতিবাহিত করেছে। তাছাড়া অধিক উৎপাদনশীল ভেনামীর সাথে দেশীয় বাগদার বিশ্ববাজারে মার খাওয়া ও সরকারীভাবে ভেনামীর বানিজ্যিক চাষে অনুমোদন দিলেও সম্প্রসারিত না হওয়ায় কাচামালের সংকট ইত্যাদি কারনে চিংড়ী রপ্তানী হ্রাস পেয়েছে। একই সাথে বিশ্ব বাজারে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানীর টার্গেট পুরণ হয়নি। তবে সরকারের উদ্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরী হওয়ায় আগামীতে চিংড়ী ও হিমায়িত মৎস্য রপ্তানী বাড়বে বলেও তিনি আশা করেন।

বৃহত্তর খুলনা উনন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, মৎস্য খাতে রপ্তানি কমলেও বিগত কয়েক বছরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বান্ধব ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইনে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যা ডেল্টা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট নিয়ে বছরটা খারাপ কেটেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক শিল্প-বাণিজ্যে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চালু হয়েছে খুলনা-মোংলা রেল লাইন। মোংলা বন্দর থেকে এসে খুলনার ফুলতলা পয়েন্টে রেলপথটি সারাদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত, নেপাল ভুটানের সাথেও ব্যবসা-বানিজ্য বিশেষ করে খুলনাঞ্চলের চিংড়ী রপ্তানী বৃদ্ধি হয়ে কাঙ্খিত টার্গেটে পৌছাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ##