০২:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় দুর্গাপূজা করতে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি : হুমকি দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে চিঠি

  • মধুমতি ডেক্স :
  • প্রকাশিত সময় : ১১:২৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৭ পড়েছেন

####

খুলনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব আসন্ন র্দূগাপূঁজাকে ঘিরে চাঁদা দাবী ও হুমকি দিয়ে বিভিন্ন মন্দিরে চিঠি দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা পূঁজা করতে হলে ৫লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে এমন চিঠি পেয়েছেন। একই সঙ্গে এ কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে কচুকাটা করা হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার বিভিন্ন মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই চিঠি আসা শুরু হয়। দুর্গাপূজা মণ্ডপের উদ্দেশে হুমকি ও চাঁদা চেয়ে পাঠানো চিঠিতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, পূজারী ও মন্দির কমিটির লোকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। দাকোপ উপজেলার কয়েকটি মন্দিরের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন মন্দিরে চাঁদা চেয়ে ও হুমকি দিয়ে চিঠি পাওয়ার পর কোনও কোনও মন্দির পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদযাপন কমিটির নেতারা।

দাকোপের চালনা, সুতারখালী, কৈলাশগঞ্জ ও বাজুয়ার কয়েকটি মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডাকযোগে চিঠি পাওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও ভীতি কাজ করছে। বুধবার ও বৃহষ্পতিবার একাধিক মন্দিরে চিঠি পাওয়ার পর আমরা রাতে এলাকার মানুষকে নিয়ে সভা করেছি। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ পূজা না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারপরও হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে সবাই মিলে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। একই সাথে মন্দির ও প্রতিমা সুরক্ষায় এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি মন্দির কমিটি এবার পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে দাকোপের কামারখোলা দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, চলতি বছর সামগ্রিক পরিস্তিতি বিবেচনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা না করে ছোট পরিসরে শাস্ত্রীয় পূজা করার বিষয়ে কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে গত দুই দিনে এ ধরনের চাঁদা দাবী ও হুমকি দিয়ে চিঠি পাওয়ার পর আমাদের সদস্যরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ বছর পূজাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সবগুলো মন্দিরে পাঠানো চিঠিতে দেখা গেছে সব চিঠির বক্তব্য একই। সবগুলো খাম হলুদ খাম এবং তার উপরে মন্দিরের সভাপতি-সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে প্রাপক হিসেবে মন্দির কমিটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রেরকের নাম-ঠিকানা দেয়া হয়নি। চিঠিতে এক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে বলেও লেখা রয়েছে।’

উপজেলার কামারখোলা, শ্রীনগর ও ‍সুতারখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়ি ঘেরে প্রজেক্টে ব্যাপক লুটপাট চালায় দূর্বৃত্তরা। বেশ কয়েকদিন ধরে চলে সে লুটপাট। যা এখনও চলমান রয়েছে।

দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, মন্দিরগুলোতে পাঠানো উড়ো চিঠির বিষয়ে শুক্রবার চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। আমাদের পক্ষ থেকে মন্দির সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টিমসহ থানা থেকেও পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়ন ভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তারা সব সময় টহলে রয়েছেন। কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

খুলনায় দুর্গাপূজা করতে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি : হুমকি দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে চিঠি

প্রকাশিত সময় : ১১:২৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

####

খুলনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব আসন্ন র্দূগাপূঁজাকে ঘিরে চাঁদা দাবী ও হুমকি দিয়ে বিভিন্ন মন্দিরে চিঠি দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা পূঁজা করতে হলে ৫লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে এমন চিঠি পেয়েছেন। একই সঙ্গে এ কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে কচুকাটা করা হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার বিভিন্ন মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই চিঠি আসা শুরু হয়। দুর্গাপূজা মণ্ডপের উদ্দেশে হুমকি ও চাঁদা চেয়ে পাঠানো চিঠিতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, পূজারী ও মন্দির কমিটির লোকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। দাকোপ উপজেলার কয়েকটি মন্দিরের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন মন্দিরে চাঁদা চেয়ে ও হুমকি দিয়ে চিঠি পাওয়ার পর কোনও কোনও মন্দির পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদযাপন কমিটির নেতারা।

দাকোপের চালনা, সুতারখালী, কৈলাশগঞ্জ ও বাজুয়ার কয়েকটি মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডাকযোগে চিঠি পাওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও ভীতি কাজ করছে। বুধবার ও বৃহষ্পতিবার একাধিক মন্দিরে চিঠি পাওয়ার পর আমরা রাতে এলাকার মানুষকে নিয়ে সভা করেছি। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ পূজা না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারপরও হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে সবাই মিলে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। একই সাথে মন্দির ও প্রতিমা সুরক্ষায় এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি মন্দির কমিটি এবার পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে দাকোপের কামারখোলা দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, চলতি বছর সামগ্রিক পরিস্তিতি বিবেচনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা না করে ছোট পরিসরে শাস্ত্রীয় পূজা করার বিষয়ে কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে গত দুই দিনে এ ধরনের চাঁদা দাবী ও হুমকি দিয়ে চিঠি পাওয়ার পর আমাদের সদস্যরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ বছর পূজাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সবগুলো মন্দিরে পাঠানো চিঠিতে দেখা গেছে সব চিঠির বক্তব্য একই। সবগুলো খাম হলুদ খাম এবং তার উপরে মন্দিরের সভাপতি-সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে প্রাপক হিসেবে মন্দির কমিটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রেরকের নাম-ঠিকানা দেয়া হয়নি। চিঠিতে এক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে বলেও লেখা রয়েছে।’

উপজেলার কামারখোলা, শ্রীনগর ও ‍সুতারখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়ি ঘেরে প্রজেক্টে ব্যাপক লুটপাট চালায় দূর্বৃত্তরা। বেশ কয়েকদিন ধরে চলে সে লুটপাট। যা এখনও চলমান রয়েছে।

দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, মন্দিরগুলোতে পাঠানো উড়ো চিঠির বিষয়ে শুক্রবার চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। আমাদের পক্ষ থেকে মন্দির সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টিমসহ থানা থেকেও পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়ন ভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তারা সব সময় টহলে রয়েছেন। কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। ##