০২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

০১ অক্টোবর জানা যাবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা, আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন উপদেষ্টা, সুন্দরবনে বাঘ বাড়ার প্রত্যাশা বন কর্মকর্তাদের

  • ।। সুনীল দাস ।।
  • প্রকাশিত সময় : ১১:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১২ পড়েছেন

####

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাঘ গণনার ফলাফল আগামী ০১অক্টোবর প্রকাশ করা হবে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পালাবদলের কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাঘ গণনা শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে এ গণনার ফল গত ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ঘোষণার কথা থাকলেও তা হয়নি। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও ছবি-ভিডিও পর্যালোচনা শেষে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর আগামী ০১অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বন মন্ত্রণালয় ও বন অধিদপ্তর আগামী ০১অক্টোবর বাঘ গননার ফলাফল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছে। এদিন অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা করবেন। শনিবার খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এবং বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মো: মোহসীন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজে সময় লেগেছে। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, ইন্টারনেট সমস্যা, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জরিপ তথ্য পর্যালোচনায় একটু বেশী সময় লেগেছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরই সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা হবে, সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিন অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ র্ঘূনিঝড় রিমালের আঘাতের আগেই সম্পন্ন হয়। সে কারণে জরিপের ফলাফলে রিমালের আঘাতের কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ বাঘ সাঁতার কাটতে পারে। তাই র্ঘূনিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দরবন তলিয়ে গেলেও বাঘের কোনও ক্ষতির আলামত পাওয়া যায়নি। সুন্দরবেন ১৩৯টি মৃত হরিণ পাওয়া গেলেও কোন মৃত বাঘ পাওয়া যায়নি। সবশেষ ২০২৩ সালের মার্চে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং সম্পন্ন হয়। আর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পূর্ববিভাগের অংশে ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু হয়ে ২০২৪ সালের র্মাচে শেষ হয়। বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে ১২টি টিলা স্থাপন করা হয়েছে। অভয়ারণ্যের বাইরে আরও ১২টি টিলা স্থাপন করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২সালে পাগর্মাক জরিপে ৪২৫টি বাঘের অস্তিত্ব সনাক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানান জরিপকারীরা। ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানা যায়। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।

পরবর্তীতে ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০০৪ সালের জরিপে সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে বলা হয়। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত আধুনিক ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয়বার ক্যামেরা ট্রাপিং হয়। এ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টিতে উন্নীত হয়।

তিনি জানান, ২০২২সালে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বাঘ গণনার কাজে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাঘ শুমারির জন্য ২০২৩ সালের ০১ জানুয়ারি প্রথমে সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের কালাবগি এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনের ৬টি ব্লকে ৬৬৫টি স্থানে ক্যামেরা স্থাপন করে ৩ মাস বাঘ গণনা করা হয়। সুন্দরবনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হয়েছে। অর্থাৎ বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাকেই জরিপের আওতায় নেয়া হয়েছে।

সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের মোট ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের র্পূব সুন্দরবন ও পশ্চিম সুন্দরবন নামে দুই বিভাগে ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে শিকারীদের হানা, গ্রামবাসীর পিটুনী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ বিভিন্ন কারনে ৭৯টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮০ থেকে ২০০০সাল পর্যন্ত ২০বছরে ৩৩টি এবং ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২৩’বছরে ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বনবিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৯৮২ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গেওয়া অপারেশন এলাকায় থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৯৮৩ সালে  ঢাংমারী এলাকা থেকে ১টি, কাশিয়াবাদ এলাকায় ১টি ও বুড়িগোয়ালীনি এলাকা থেকে ১টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৬ সালে কাশিয়াবাদ ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি ও কদমতলা এলাকা থেকে ১টি, ১৯৮৭ সালে বানিয়াখালি ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার করে বনকর্মীরা। ১৯৮৮ সালে ঢাংমারী ষ্টেশন এলাকায় ১টি, ১৯৮৯ সালে বানিয়াখালি ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার হয়। এ বাঘগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারীদের গুলিতে মারা পড়ে।

সূত্র মতে, ১৯৯০  সালে চাঁদপাই এলাকায় ১টি ও কাটাখালি এলাকায় ১টি বাঘ জনতার বেপরোয়া পিটুনিতে নিহত হয়। গত ৩১ বছরের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ঘটে। ১৯৯১ সালে গনপিটুনিতে ১টি ও শিকারীদের গুলিতে আরও ৩টি বাঘ প্রান হারায়। ১৯৯২ সালে একটি মৃত বাঘের চামড়া উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। ১৯৯৪ সালে ২টি, ১৯৯৬ সালে ৫টি এবং ১৯৯৭ সালে ৬টি বাঘ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করলে গ্রামবাসীর গনপিটুনিতে নিহত হয়। ১৯৯৮ সালে বনবিভাগের কর্মীরা ২টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। ১৯৯৯ সালে শিকারীর পাতা ফাঁদে পড়ে ১টি, শিকারীর গুলিতে ১টি ও গনপিটুনিতে ১টি বাঘ মারা যায়। একই সালে বনরক্ষীরা আরও একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। ২০০০ সালে বার্ধক্যজনিত কারনে ১টি ও গনপিটুনিতে ১টি বাঘ মারা যায়। এ সময়ে বনবিভাগের কর্মীরা আরও একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে।

এছাড়া ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এরমধ্যে প্রাকৃতিক কারণে ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সময় শিকারিদের হাতে বাঘ মারা গেছে ১৩টি। লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে ৫ বাঘ। এছাড়া, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা গেছে এক বাঘ। বিভিন্ন সময় দুর্বৃ্ত্তদের হাতে মারা যাওয়া ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ জানিয়েছে, গত ২০১৮সালের জরিপ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে গত ১৩’বছরে পূর্ব সুন্দরবনে ১৬টি বাঘকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে ২০০১ সালের ২০ নভেম্বর শরনখোলার কচিখালিতে একটি মাদি বাঘের মৃতদেহ পাওয়া যায়, একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জে একটি পুরুষ বাঘের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া টহল ফাড়ির কাছে পাখিমারা খালের পাড়ে বনদস্যুদের সাথে বন্দুক যুদ্ধের সময় গুলিতে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। ২০০৩ সালের ২৮ মে ধানসাগর এলাকায় গ্রামবাসীর পিটুনিতে নিহত হয় একটি পুরুষ বাঘ, একই সালের ১৯ অক্টোবর শরনখোলার চালিতাবুনিয়া গ্রামে গ্রামবাসী পিটিয়ে আরেকটি বাঘকে হত্যা করে এবং ২১ ডিসেম্বর আমুরবুনিয়া গ্রমে আরও একটি বাঘকে এলাকার লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে। ২০০৪ সালের ২৫ আগষ্ট চরদোয়ানীর কাঠালতলা গ্রামের বেলায়েতের বাড়ী থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়। ২০০৪ সালে সুন্দরবনে বিজ্ঞান ভিত্তিক বাঘ শুমারী পরিচালনার অংশ হিসেবে পূর্ব সুন্দরবনে ‘জামতলার রাণী’ নাম দিয়ে একটি বাঘিনীর গলায় রেডিও কলার বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে ২০০৫ সালের ২৬ অক্টোবর বলেশ্বর নদীর পাড়ে গবেষনার কাজে ব্যবহৃত গলায় রেডিও কলার  পরিহিত জামতলার রানী নামের বাঘটির মৃত দেহ পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের ২নভেম্বর শরনখোলার উত্তর সোনাতলা গ্রামের চোরা শিকারী নুরুজ্জামান শেখের বাড়ী থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়, ২০০৭ সালের ২’মে হাড়বাড়িয়া টহল ফাড়ির পুকুর পাড়ে একটি ও একই বছর ১৫ নভেম্বর ঘুর্নিঝড় সিডরে দুটি বাঘের মৃত্যু হয়। পরে ১৬ নভেম্বর ঢাংমারী ফরেষ্ট ষ্টেশনের খাগড়ামারী খালের পাশে একটি এবং করমজল এলাকায় বাঘ দুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০০৯ সালের ২জুলাই শরনখোলার দাসেরভারানী এলাকার দক্সিণ রাজাপুর গ্রামে এলাকাবাসী পিটিয়ে ১টি স্ত্রী বাঘকে হত্যা করে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারী শরনখোলা উপজেলার পশ্চিম খাদা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ী থেকে তিন পাচারকারীসহ তিনটি বাঘের চামড়াসহ হাড়গোড় উদ্ধার করে বনবিভাগের কর্মীরা।

অন্যদিকে, ২০০১সাল থেকে ২০২৩সাল র্পযন্ত পশ্চিম সূন্দরবন বিভাগে ১৮টি বাঘের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের লোকালয়ে এলে গ্রামবাসীর পিটুনিতে ৩টি বাঘের মৃত্যু হয়।২০০৯ সালের ২জুলাই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খলিসাবুনিয়া গ্রামে পিটিয়ে ১টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ২০ জুন রাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবন সংলগ্ন কদমতলা গ্রামে বাঘের হামলায় তিন ব্যক্তিকে নিহত হলে জনগণ পুরুষ বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে গাছে ঝুলিযে রাখে। ২০০৭ সালের ১৯ডিসেম্বর সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ফরেষ্ট অফিসের নিকটবর্তী লোকালয়ে এসে জনতার পিটুনিতে প্রাণ হারায় একটি বাঘিনী। একই বছরের ১০ নভেম্বর একই ফরেষ্ট অফিসের নিকটবর্তী ভ্রমরখোলা নামক স্থান থেকে বনকর্মীরা একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করে।এ ছাড়া ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট সাতক্ষীরা রেঞ্জের সন্নাসীর চর নামক স্থান থেকে চামড়া ছোলা অবস্থায় একটি বাঘের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ২৮ নভেম্বর খুলনা রেঞ্জের বানিয়াখালী এলাকা থেকে বন কর্মীরা একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করে।২০০৩ সালের ২২মার্চ খুলনা রেঞ্জের কয়রা থানার জোড় শিং গ্রামে গণপ্রহারে একটি বাঘ মারা যায়।২০০২ সালের ১২ জুন সাতক্ষীরা রেঞ্জের হরিনগর এলাকার লোকলয়ে এসে একটি বাঘ বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে প্রাণ হারায়। ২০০২সালের ১১জানুয়ারী সাতক্ষীরা রেঞ্জের শ্যামনগর গ্রামে জনতার পিটুনি ও ধারালো অস্ত্রাঘাতে একটি বাঘের মৃত্যু হয়।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘বাঘ গণনার জন্য প্রথমে নদী-খাল জরিপ করে ও বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এলাকা নির্ধারণ করে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তুলে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বার বার বাঘ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তবে গণনার ফল প্রকাশের পর সঠিক সংখ্যা বলা যাবে। সুন্দবনের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে বাঘের গুরুত্বই প্রধান বলে তিনি উল্লেখ করেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

০১ অক্টোবর জানা যাবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা, আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন উপদেষ্টা, সুন্দরবনে বাঘ বাড়ার প্রত্যাশা বন কর্মকর্তাদের

প্রকাশিত সময় : ১১:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

####

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাঘ গণনার ফলাফল আগামী ০১অক্টোবর প্রকাশ করা হবে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পালাবদলের কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাঘ গণনা শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে এ গণনার ফল গত ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ঘোষণার কথা থাকলেও তা হয়নি। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও ছবি-ভিডিও পর্যালোচনা শেষে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর আগামী ০১অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বন মন্ত্রণালয় ও বন অধিদপ্তর আগামী ০১অক্টোবর বাঘ গননার ফলাফল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছে। এদিন অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা করবেন। শনিবার খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এবং বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মো: মোহসীন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজে সময় লেগেছে। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, ইন্টারনেট সমস্যা, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জরিপ তথ্য পর্যালোচনায় একটু বেশী সময় লেগেছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরই সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা হবে, সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিন অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ গননার ফলাফল ঘোষনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ র্ঘূনিঝড় রিমালের আঘাতের আগেই সম্পন্ন হয়। সে কারণে জরিপের ফলাফলে রিমালের আঘাতের কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ বাঘ সাঁতার কাটতে পারে। তাই র্ঘূনিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দরবন তলিয়ে গেলেও বাঘের কোনও ক্ষতির আলামত পাওয়া যায়নি। সুন্দরবেন ১৩৯টি মৃত হরিণ পাওয়া গেলেও কোন মৃত বাঘ পাওয়া যায়নি। সবশেষ ২০২৩ সালের মার্চে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং সম্পন্ন হয়। আর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পূর্ববিভাগের অংশে ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু হয়ে ২০২৪ সালের র্মাচে শেষ হয়। বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে ১২টি টিলা স্থাপন করা হয়েছে। অভয়ারণ্যের বাইরে আরও ১২টি টিলা স্থাপন করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২সালে পাগর্মাক জরিপে ৪২৫টি বাঘের অস্তিত্ব সনাক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানান জরিপকারীরা। ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানা যায়। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।

পরবর্তীতে ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০০৪ সালের জরিপে সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে বলা হয়। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত আধুনিক ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয়বার ক্যামেরা ট্রাপিং হয়। এ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টিতে উন্নীত হয়।

তিনি জানান, ২০২২সালে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বাঘ গণনার কাজে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাঘ শুমারির জন্য ২০২৩ সালের ০১ জানুয়ারি প্রথমে সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের কালাবগি এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনের ৬টি ব্লকে ৬৬৫টি স্থানে ক্যামেরা স্থাপন করে ৩ মাস বাঘ গণনা করা হয়। সুন্দরবনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হয়েছে। অর্থাৎ বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাকেই জরিপের আওতায় নেয়া হয়েছে।

সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের মোট ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের র্পূব সুন্দরবন ও পশ্চিম সুন্দরবন নামে দুই বিভাগে ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে শিকারীদের হানা, গ্রামবাসীর পিটুনী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ বিভিন্ন কারনে ৭৯টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮০ থেকে ২০০০সাল পর্যন্ত ২০বছরে ৩৩টি এবং ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২৩’বছরে ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বনবিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৯৮২ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গেওয়া অপারেশন এলাকায় থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৯৮৩ সালে  ঢাংমারী এলাকা থেকে ১টি, কাশিয়াবাদ এলাকায় ১টি ও বুড়িগোয়ালীনি এলাকা থেকে ১টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৬ সালে কাশিয়াবাদ ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি ও কদমতলা এলাকা থেকে ১টি, ১৯৮৭ সালে বানিয়াখালি ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার করে বনকর্মীরা। ১৯৮৮ সালে ঢাংমারী ষ্টেশন এলাকায় ১টি, ১৯৮৯ সালে বানিয়াখালি ষ্টেশন এলাকা থেকে ১টি মৃত বাঘ উদ্ধার হয়। এ বাঘগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারীদের গুলিতে মারা পড়ে।

সূত্র মতে, ১৯৯০  সালে চাঁদপাই এলাকায় ১টি ও কাটাখালি এলাকায় ১টি বাঘ জনতার বেপরোয়া পিটুনিতে নিহত হয়। গত ৩১ বছরের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ঘটে। ১৯৯১ সালে গনপিটুনিতে ১টি ও শিকারীদের গুলিতে আরও ৩টি বাঘ প্রান হারায়। ১৯৯২ সালে একটি মৃত বাঘের চামড়া উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। ১৯৯৪ সালে ২টি, ১৯৯৬ সালে ৫টি এবং ১৯৯৭ সালে ৬টি বাঘ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করলে গ্রামবাসীর গনপিটুনিতে নিহত হয়। ১৯৯৮ সালে বনবিভাগের কর্মীরা ২টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। ১৯৯৯ সালে শিকারীর পাতা ফাঁদে পড়ে ১টি, শিকারীর গুলিতে ১টি ও গনপিটুনিতে ১টি বাঘ মারা যায়। একই সালে বনরক্ষীরা আরও একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। ২০০০ সালে বার্ধক্যজনিত কারনে ১টি ও গনপিটুনিতে ১টি বাঘ মারা যায়। এ সময়ে বনবিভাগের কর্মীরা আরও একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে।

এছাড়া ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এরমধ্যে প্রাকৃতিক কারণে ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সময় শিকারিদের হাতে বাঘ মারা গেছে ১৩টি। লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে ৫ বাঘ। এছাড়া, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা গেছে এক বাঘ। বিভিন্ন সময় দুর্বৃ্ত্তদের হাতে মারা যাওয়া ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ জানিয়েছে, গত ২০১৮সালের জরিপ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে গত ১৩’বছরে পূর্ব সুন্দরবনে ১৬টি বাঘকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে ২০০১ সালের ২০ নভেম্বর শরনখোলার কচিখালিতে একটি মাদি বাঘের মৃতদেহ পাওয়া যায়, একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জে একটি পুরুষ বাঘের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া টহল ফাড়ির কাছে পাখিমারা খালের পাড়ে বনদস্যুদের সাথে বন্দুক যুদ্ধের সময় গুলিতে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। ২০০৩ সালের ২৮ মে ধানসাগর এলাকায় গ্রামবাসীর পিটুনিতে নিহত হয় একটি পুরুষ বাঘ, একই সালের ১৯ অক্টোবর শরনখোলার চালিতাবুনিয়া গ্রামে গ্রামবাসী পিটিয়ে আরেকটি বাঘকে হত্যা করে এবং ২১ ডিসেম্বর আমুরবুনিয়া গ্রমে আরও একটি বাঘকে এলাকার লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে। ২০০৪ সালের ২৫ আগষ্ট চরদোয়ানীর কাঠালতলা গ্রামের বেলায়েতের বাড়ী থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়। ২০০৪ সালে সুন্দরবনে বিজ্ঞান ভিত্তিক বাঘ শুমারী পরিচালনার অংশ হিসেবে পূর্ব সুন্দরবনে ‘জামতলার রাণী’ নাম দিয়ে একটি বাঘিনীর গলায় রেডিও কলার বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে ২০০৫ সালের ২৬ অক্টোবর বলেশ্বর নদীর পাড়ে গবেষনার কাজে ব্যবহৃত গলায় রেডিও কলার  পরিহিত জামতলার রানী নামের বাঘটির মৃত দেহ পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের ২নভেম্বর শরনখোলার উত্তর সোনাতলা গ্রামের চোরা শিকারী নুরুজ্জামান শেখের বাড়ী থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়, ২০০৭ সালের ২’মে হাড়বাড়িয়া টহল ফাড়ির পুকুর পাড়ে একটি ও একই বছর ১৫ নভেম্বর ঘুর্নিঝড় সিডরে দুটি বাঘের মৃত্যু হয়। পরে ১৬ নভেম্বর ঢাংমারী ফরেষ্ট ষ্টেশনের খাগড়ামারী খালের পাশে একটি এবং করমজল এলাকায় বাঘ দুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০০৯ সালের ২জুলাই শরনখোলার দাসেরভারানী এলাকার দক্সিণ রাজাপুর গ্রামে এলাকাবাসী পিটিয়ে ১টি স্ত্রী বাঘকে হত্যা করে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারী শরনখোলা উপজেলার পশ্চিম খাদা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ী থেকে তিন পাচারকারীসহ তিনটি বাঘের চামড়াসহ হাড়গোড় উদ্ধার করে বনবিভাগের কর্মীরা।

অন্যদিকে, ২০০১সাল থেকে ২০২৩সাল র্পযন্ত পশ্চিম সূন্দরবন বিভাগে ১৮টি বাঘের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের লোকালয়ে এলে গ্রামবাসীর পিটুনিতে ৩টি বাঘের মৃত্যু হয়।২০০৯ সালের ২জুলাই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খলিসাবুনিয়া গ্রামে পিটিয়ে ১টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ২০ জুন রাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবন সংলগ্ন কদমতলা গ্রামে বাঘের হামলায় তিন ব্যক্তিকে নিহত হলে জনগণ পুরুষ বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে গাছে ঝুলিযে রাখে। ২০০৭ সালের ১৯ডিসেম্বর সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ফরেষ্ট অফিসের নিকটবর্তী লোকালয়ে এসে জনতার পিটুনিতে প্রাণ হারায় একটি বাঘিনী। একই বছরের ১০ নভেম্বর একই ফরেষ্ট অফিসের নিকটবর্তী ভ্রমরখোলা নামক স্থান থেকে বনকর্মীরা একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করে।এ ছাড়া ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট সাতক্ষীরা রেঞ্জের সন্নাসীর চর নামক স্থান থেকে চামড়া ছোলা অবস্থায় একটি বাঘের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ২৮ নভেম্বর খুলনা রেঞ্জের বানিয়াখালী এলাকা থেকে বন কর্মীরা একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করে।২০০৩ সালের ২২মার্চ খুলনা রেঞ্জের কয়রা থানার জোড় শিং গ্রামে গণপ্রহারে একটি বাঘ মারা যায়।২০০২ সালের ১২ জুন সাতক্ষীরা রেঞ্জের হরিনগর এলাকার লোকলয়ে এসে একটি বাঘ বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে প্রাণ হারায়। ২০০২সালের ১১জানুয়ারী সাতক্ষীরা রেঞ্জের শ্যামনগর গ্রামে জনতার পিটুনি ও ধারালো অস্ত্রাঘাতে একটি বাঘের মৃত্যু হয়।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘বাঘ গণনার জন্য প্রথমে নদী-খাল জরিপ করে ও বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এলাকা নির্ধারণ করে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তুলে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বার বার বাঘ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তবে গণনার ফল প্রকাশের পর সঠিক সংখ্যা বলা যাবে। সুন্দবনের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে বাঘের গুরুত্বই প্রধান বলে তিনি উল্লেখ করেন। ##