০৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খোলাবাজারে পেট্রল-অকটেন, প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চলছে খোলা বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির মহাউৎসব। মহাসড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারের  পাওয়া যায় অকটেন ও পেট্রোল। রাস্তার পাশে সারি সারি সাজানো কোমল পানীয় বোতলের বাহারি রং দেখলে মনে হবে সরকারি অনুমোদন নিয়েই পরিকল্পিত ব্যবসায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। আসলে বাস্তবে ভিন্ন কারন সঠিক পেট্রোল তাদের দোকানগুলোতে কম  বিভিন্নভাবে ভেজাল মেশানোর কারণে জ্বালানি তেলের রঙের পরিবর্তন হয়। আর এই ভেজাল তেল ব্যবহারকারী যানবাহনগুলো দ্রুত ইঞ্জিলের সমস্যা সৃষ্টি হয়। লাইসেন্স ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইন-১৯০৮ অনুযায়ী খোলাবাজারে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সর্বত্র ছোট-বড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে এভাবেই খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে অকটেন ও পেট্রোল। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা  রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কয়েকজন মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করে বলেন, চৌমাথা পল্লীবিদ্যুৎ রোডের সংযোগ মুখে মুদি দোকানদার শামসুল হক মোল্লা সহ একাধিক মুদি দোকানে ভেজাল পেট্রল অকটেন প্রায় ৫ বছর যাবত বিক্রি করে আসছে। জ্বালানি তেল বিক্রির মূল্যতালিকা পর্যন্ত টানানো নেই দোকানে। এছাড়ার ক্রেতাদের মাপে তেল কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
গারুড়িয়া ইউনিয়নের গারুড়িয়া বাজারে সড়কের উপর টেবিলে বিভিন্ন কালারের বোতল ভড়া জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারা দিনে অল্প কয়েক লিটার তেল বিক্রি করি। এ আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় বরিশালের এক এজেন্টদের কাছ থেকে তেল নিয়ে এসে বিক্রি করি।
সরেজমিনে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারে ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকান, সারের দোকান হতে শুরু করে চায়ের দোকান, বিকাশ রিচার্জ লোডের দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দোকান, টিনের দোকান, স্যানিটারি দোকান, কাপড়ের দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন বিক্রিসহ রাস্তার পাশে অকটেন পেট্রোল সারিবদ্ধভাবে রেখে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানের কোনটিরও পেট্রোল বিক্রি করার মতো অনুমোদনপত্র নেই। বড় পুয়াউটা কমপ্লেক্স হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রাসেল তার দোকানের সামনে টেবিলের উপর বোতল ভরে প্রেট্রোল বিক্রি করছেন। যানতে চাওয়া হয় পেট্রোল লিটার কত টাকা তিনি বলেন সরকার তো ১২৫ টাকা করে দাম নির্ধারন করেছে কিন্তু আমরা খুচরা বিক্রি করি বরিশাল এক এজেন্টদের থেকে এনে তাই ১৩০ /১৩৫ টাকা করেই বিক্রি করি।
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন। কোনো রকম নিয়ম না মেনে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবার কেউ অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই এ জ্বালানি ও পেট্রোল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এসব ব্যবসায়ীদের। জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবেই এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ, আর ঝুঁকিতে থাকছে খোদ স্থানীয় প্রশাসন। কারণ খোলা বাজারে অনুমোদনহীন দোকান থেকে পেট্রোল কিনে সরকারের বিরুদ্ধে অপশক্তিরা কিংবা দুর্বৃত্তরা ঘটাতে পারে যে কোনো অঘটন। এছাড়া অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত সরকার। তবে এখন তৎপর হওয়া সময় এসেছে প্রশাসনের। কারন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়ছে দিন দিন। বিগত দিনগুলতে দেখা গেছে রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা।
কয়েকজন ক্ষুদ্র পেট্রোল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিস-এর ছাড়পত্র ও অনুমোদন আছে। অনেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুমোদন ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে জ্বালানি তেলের ব্যাবসা চালাচ্ছে কারন প্রশাসনিক কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না তাদের।
 দাহ্য পদার্থ খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা বাকেরগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের কিছু করার নেই। এটা দেখার দায়িত্ব ভ্রাম্যমান আদালতের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হাতের নাগালে পেট্রোল বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা অহরহ পেয়ে থাকে এবং এতে খুব সহজে সন্ত্রাসীরা নাশকতার কাজে পেট্রোল ব্যবহার করতে পারে। অতি দ্রুত প্রশাসনের কাছে এ দাহ্য পদার্থ খোলা বাজা ও সড়ক পাশে বিক্রি বন্ধের দাবি জানান তারা।
Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

dainik madhumati

জনপ্রিয়

কেএমপি’র ০২ পুলিশ সদস্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত

খোলাবাজারে পেট্রল-অকটেন, প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

প্রকাশিত সময় : ০৫:০৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চলছে খোলা বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির মহাউৎসব। মহাসড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারের  পাওয়া যায় অকটেন ও পেট্রোল। রাস্তার পাশে সারি সারি সাজানো কোমল পানীয় বোতলের বাহারি রং দেখলে মনে হবে সরকারি অনুমোদন নিয়েই পরিকল্পিত ব্যবসায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। আসলে বাস্তবে ভিন্ন কারন সঠিক পেট্রোল তাদের দোকানগুলোতে কম  বিভিন্নভাবে ভেজাল মেশানোর কারণে জ্বালানি তেলের রঙের পরিবর্তন হয়। আর এই ভেজাল তেল ব্যবহারকারী যানবাহনগুলো দ্রুত ইঞ্জিলের সমস্যা সৃষ্টি হয়। লাইসেন্স ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইন-১৯০৮ অনুযায়ী খোলাবাজারে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সর্বত্র ছোট-বড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে এভাবেই খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে অকটেন ও পেট্রোল। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা  রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কয়েকজন মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করে বলেন, চৌমাথা পল্লীবিদ্যুৎ রোডের সংযোগ মুখে মুদি দোকানদার শামসুল হক মোল্লা সহ একাধিক মুদি দোকানে ভেজাল পেট্রল অকটেন প্রায় ৫ বছর যাবত বিক্রি করে আসছে। জ্বালানি তেল বিক্রির মূল্যতালিকা পর্যন্ত টানানো নেই দোকানে। এছাড়ার ক্রেতাদের মাপে তেল কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
গারুড়িয়া ইউনিয়নের গারুড়িয়া বাজারে সড়কের উপর টেবিলে বিভিন্ন কালারের বোতল ভড়া জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারা দিনে অল্প কয়েক লিটার তেল বিক্রি করি। এ আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় বরিশালের এক এজেন্টদের কাছ থেকে তেল নিয়ে এসে বিক্রি করি।
সরেজমিনে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারে ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকান, সারের দোকান হতে শুরু করে চায়ের দোকান, বিকাশ রিচার্জ লোডের দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দোকান, টিনের দোকান, স্যানিটারি দোকান, কাপড়ের দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন বিক্রিসহ রাস্তার পাশে অকটেন পেট্রোল সারিবদ্ধভাবে রেখে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানের কোনটিরও পেট্রোল বিক্রি করার মতো অনুমোদনপত্র নেই। বড় পুয়াউটা কমপ্লেক্স হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রাসেল তার দোকানের সামনে টেবিলের উপর বোতল ভরে প্রেট্রোল বিক্রি করছেন। যানতে চাওয়া হয় পেট্রোল লিটার কত টাকা তিনি বলেন সরকার তো ১২৫ টাকা করে দাম নির্ধারন করেছে কিন্তু আমরা খুচরা বিক্রি করি বরিশাল এক এজেন্টদের থেকে এনে তাই ১৩০ /১৩৫ টাকা করেই বিক্রি করি।
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন। কোনো রকম নিয়ম না মেনে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবার কেউ অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই এ জ্বালানি ও পেট্রোল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এসব ব্যবসায়ীদের। জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবেই এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ, আর ঝুঁকিতে থাকছে খোদ স্থানীয় প্রশাসন। কারণ খোলা বাজারে অনুমোদনহীন দোকান থেকে পেট্রোল কিনে সরকারের বিরুদ্ধে অপশক্তিরা কিংবা দুর্বৃত্তরা ঘটাতে পারে যে কোনো অঘটন। এছাড়া অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত সরকার। তবে এখন তৎপর হওয়া সময় এসেছে প্রশাসনের। কারন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়ছে দিন দিন। বিগত দিনগুলতে দেখা গেছে রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা।
কয়েকজন ক্ষুদ্র পেট্রোল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিস-এর ছাড়পত্র ও অনুমোদন আছে। অনেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুমোদন ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে জ্বালানি তেলের ব্যাবসা চালাচ্ছে কারন প্রশাসনিক কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না তাদের।
 দাহ্য পদার্থ খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা বাকেরগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের কিছু করার নেই। এটা দেখার দায়িত্ব ভ্রাম্যমান আদালতের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হাতের নাগালে পেট্রোল বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা অহরহ পেয়ে থাকে এবং এতে খুব সহজে সন্ত্রাসীরা নাশকতার কাজে পেট্রোল ব্যবহার করতে পারে। অতি দ্রুত প্রশাসনের কাছে এ দাহ্য পদার্থ খোলা বাজা ও সড়ক পাশে বিক্রি বন্ধের দাবি জানান তারা।