০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনায় নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ওএমএস-এর ট্যাগ অফিসার:

ওএমএস ডিলারদের অনিয়মে চাল পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা, বাড়ছে ক্ষোভ

###

খুলনায় নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ওএমএস চাল-আটাসহ পন্য  বিক্রয় কার্যক্রমে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকসহ অফিসারদের দিয়ে তদারকির দায়িত্ব পালনের স্থালে এসব নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে।ফলে মহানগরীর ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য পন্য বিক্রির কার্যক্রমের যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে থাকায় ওএমএস ডিলাররা তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রি নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এমনকি ওএমএসের বরাদ্দকৃত চাল ও আটা হতদরিদ্রদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করারও অহরহ অভিযোগ রয়েছে। এতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ওএমএসের চাল-আটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা। ফলে বর্তমান সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে কমমূল্যে খাদ্য বিক্রয়ের মহতি উদ্যোগ খাদ্য বিভাগের অবহেলা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দূর্নীতির কারণে নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকারের প্রতি ওএমএসের খাদ্য ক্রয় বঞ্চিত হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী যতাযথ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের নেয়া নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় খুলনা মহানগরী এলাকার ওএমএস ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ৩৭জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আট খোলা বাজারে বিক্রয় করা হয়। এর মধ্যে ২৪জন ডিলার স্থায়ী দোকানে দেড় টন চাল ও ১টন আটা এবং ১৩জন ডিলার ট্রাক সেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ২টন চাল-আটা খোলা বাজারের বিক্রয় করে। ওএমএসের প্রতিটি স্থায়ী দোকানে এবং ট্রাক সেলের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে বিক্রয় কার্যক্রম তদারকি করতে ১জন করে তদারকী কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ওএমএস ডিলার সঠিক নিয়মে ও সুষ্ঠুভাবে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত খাদ্য পরিদর্শক এবং উপ-খাদ্য পরিদর্শক বা সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা তদারকির দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে খাদ্য পরিদর্শক ও উপ-খাদ্য পরিদর্শকদের স্থলে ২০তম গ্রেডের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকির কাজ করাচ্ছে। এতে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রিতে ডিলাররা নিন্ম পদমর্যাদার তদারকি কর্মকর্তাকে পাত্তা না দিয়ে যথেচ্ছ অনিয়ম ও দূর্নীতি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রতিদিনের ওএমএসের চাল-আটা বিক্রয় কার্যক্রম ও তদারকির কর্মকর্তার তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তালিকার তথ্যানুযায়ী, গত ১৬ মার্চ পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে ওএমএস ডিলার মের্সার্স অঞ্জন ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুর রশীদ গাজীকে, রায়পাড়া ক্রসরোড মুসলমানপাড়া পয়েন্টে মিসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা গাড়ী সহকারী মো. মিজান শেখ, বানগাতী বাজারে মেসার্স মঞ্জুয়ারা এন্টারপ্রাইজের ও চানমারী বাজারে মেসার্স রুমানা ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. সেলিম উদ্দিন, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডে মেসার্স শারাফাত এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী শেখ আসাদ উল ইসলাম, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী এলাকায় মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী হারান চন্দ্র বিশ্বাস, নুর নগরমোড় ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন মেসার্স রহিমা ট্রেডার্স বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী আবু হোসেন অপু, সোনাডাঙ্গা তেলের পাম্প সংলগ্ন এলাকায় মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী অহিদ মোল্লাকে তদারকি কর্মকর্তা(ট্যাগ অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই ভাবে চলতি মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে অন্যান্য দিনের তালিকা থেকে দেখা গেছে বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকির জন্য নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গাড়ী সহকারীসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিন্ম পদমর্যাদার কর্মচারীদেরকে দিয়ে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির তদারকি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসডিলারদেরকে অনিয়ম-র্নীতি করার ‍সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর ওএমএস ডিলাররা যেখানে খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের তদারকি কার্যক্রমের তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দুর্নীতি করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে। সেখানে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকি কতোটা কার্যকরী তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত ৬ মার্চ ওএমএস ডিলার মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিএল কলেজ দ্বিতীয় গেটে কাশিপুর এলাকায় ওএমএস’র সম্পূর্ণ চাল বিতরণ না করে বাহিরে বিক্রয় করায় ১৫জন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দেয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসব নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের তদারকির কোন অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন কিছু কিছু ডিলাররা অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।ফলে সরকারের নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য বান্ধব একটি জনকল্যানমূলক কার্যক্রম নষ্ট হচ্ছে। একই সাথে খাদ্য বঞ্চিত হয়ে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুসের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন খাদ্য পরিদর্শক জানান, ওএমএসের বিক্রয় কার্যক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকী কর্মকর্তা নিয়োগ করায় আমরাও বিব্রত বোধ করছি। কারণ এসব কাজে তাদের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় মাঝে মধ্যেই নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম জানান, আমরা নিরুপায় হয়ে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করাচ্ছি। প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে আমরা তদারকি কর্মকর্তা দিচ্ছি। খাদ্য বিভাগে পরিদর্শক কর্মকর্তা পদের এতো লোক আমাদের নেই। বতর্মানে আমাদের মঞ্জুরিকৃত পদই অনেক কম আছে। লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।তবে এর ফলে ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে তিনি কোন জবাব দেননি।

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে ১জন করে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) দেয়া হচ্ছে। আমরা কোন পয়েন্ট কোনভাবেই খালি রাখতে পারছি না। তাই এসব কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে অচিরেই নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন পরিদর্শক আসবে। তখন হয়তো এ সমস্যা থাকবে না। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা রয়েছে। আর এই কার্যক্রম কোনভাবেই তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে করানো উচিত নয়। কারণ এতে করে ওএমএস ডিলাররা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা।এসব বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর যথাযথ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন এ নাগরিক নেতা। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন 

খুলনায় নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ওএমএস-এর ট্যাগ অফিসার:

ওএমএস ডিলারদের অনিয়মে চাল পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা, বাড়ছে ক্ষোভ

প্রকাশিত সময় : ১২:৪৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

###

খুলনায় নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ওএমএস চাল-আটাসহ পন্য  বিক্রয় কার্যক্রমে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকসহ অফিসারদের দিয়ে তদারকির দায়িত্ব পালনের স্থালে এসব নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে।ফলে মহানগরীর ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য পন্য বিক্রির কার্যক্রমের যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে থাকায় ওএমএস ডিলাররা তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রি নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এমনকি ওএমএসের বরাদ্দকৃত চাল ও আটা হতদরিদ্রদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করারও অহরহ অভিযোগ রয়েছে। এতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ওএমএসের চাল-আটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা। ফলে বর্তমান সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে কমমূল্যে খাদ্য বিক্রয়ের মহতি উদ্যোগ খাদ্য বিভাগের অবহেলা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দূর্নীতির কারণে নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকারের প্রতি ওএমএসের খাদ্য ক্রয় বঞ্চিত হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী যতাযথ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের নেয়া নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় খুলনা মহানগরী এলাকার ওএমএস ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ৩৭জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আট খোলা বাজারে বিক্রয় করা হয়। এর মধ্যে ২৪জন ডিলার স্থায়ী দোকানে দেড় টন চাল ও ১টন আটা এবং ১৩জন ডিলার ট্রাক সেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ২টন চাল-আটা খোলা বাজারের বিক্রয় করে। ওএমএসের প্রতিটি স্থায়ী দোকানে এবং ট্রাক সেলের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে বিক্রয় কার্যক্রম তদারকি করতে ১জন করে তদারকী কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ওএমএস ডিলার সঠিক নিয়মে ও সুষ্ঠুভাবে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত খাদ্য পরিদর্শক এবং উপ-খাদ্য পরিদর্শক বা সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা তদারকির দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে খাদ্য পরিদর্শক ও উপ-খাদ্য পরিদর্শকদের স্থলে ২০তম গ্রেডের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকির কাজ করাচ্ছে। এতে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রিতে ডিলাররা নিন্ম পদমর্যাদার তদারকি কর্মকর্তাকে পাত্তা না দিয়ে যথেচ্ছ অনিয়ম ও দূর্নীতি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রতিদিনের ওএমএসের চাল-আটা বিক্রয় কার্যক্রম ও তদারকির কর্মকর্তার তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তালিকার তথ্যানুযায়ী, গত ১৬ মার্চ পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে ওএমএস ডিলার মের্সার্স অঞ্জন ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুর রশীদ গাজীকে, রায়পাড়া ক্রসরোড মুসলমানপাড়া পয়েন্টে মিসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা গাড়ী সহকারী মো. মিজান শেখ, বানগাতী বাজারে মেসার্স মঞ্জুয়ারা এন্টারপ্রাইজের ও চানমারী বাজারে মেসার্স রুমানা ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. সেলিম উদ্দিন, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডে মেসার্স শারাফাত এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী শেখ আসাদ উল ইসলাম, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী এলাকায় মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী হারান চন্দ্র বিশ্বাস, নুর নগরমোড় ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন মেসার্স রহিমা ট্রেডার্স বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী আবু হোসেন অপু, সোনাডাঙ্গা তেলের পাম্প সংলগ্ন এলাকায় মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী অহিদ মোল্লাকে তদারকি কর্মকর্তা(ট্যাগ অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই ভাবে চলতি মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে অন্যান্য দিনের তালিকা থেকে দেখা গেছে বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকির জন্য নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গাড়ী সহকারীসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিন্ম পদমর্যাদার কর্মচারীদেরকে দিয়ে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির তদারকি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসডিলারদেরকে অনিয়ম-র্নীতি করার ‍সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর ওএমএস ডিলাররা যেখানে খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের তদারকি কার্যক্রমের তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দুর্নীতি করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে। সেখানে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকি কতোটা কার্যকরী তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত ৬ মার্চ ওএমএস ডিলার মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিএল কলেজ দ্বিতীয় গেটে কাশিপুর এলাকায় ওএমএস’র সম্পূর্ণ চাল বিতরণ না করে বাহিরে বিক্রয় করায় ১৫জন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দেয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসব নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের তদারকির কোন অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন কিছু কিছু ডিলাররা অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।ফলে সরকারের নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য বান্ধব একটি জনকল্যানমূলক কার্যক্রম নষ্ট হচ্ছে। একই সাথে খাদ্য বঞ্চিত হয়ে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুসের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন খাদ্য পরিদর্শক জানান, ওএমএসের বিক্রয় কার্যক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকী কর্মকর্তা নিয়োগ করায় আমরাও বিব্রত বোধ করছি। কারণ এসব কাজে তাদের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় মাঝে মধ্যেই নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম জানান, আমরা নিরুপায় হয়ে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করাচ্ছি। প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে আমরা তদারকি কর্মকর্তা দিচ্ছি। খাদ্য বিভাগে পরিদর্শক কর্মকর্তা পদের এতো লোক আমাদের নেই। বতর্মানে আমাদের মঞ্জুরিকৃত পদই অনেক কম আছে। লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।তবে এর ফলে ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে তিনি কোন জবাব দেননি।

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে ১জন করে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) দেয়া হচ্ছে। আমরা কোন পয়েন্ট কোনভাবেই খালি রাখতে পারছি না। তাই এসব কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে অচিরেই নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন পরিদর্শক আসবে। তখন হয়তো এ সমস্যা থাকবে না। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা রয়েছে। আর এই কার্যক্রম কোনভাবেই তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে করানো উচিত নয়। কারণ এতে করে ওএমএস ডিলাররা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা।এসব বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর যথাযথ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন এ নাগরিক নেতা। ##