০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রূপসায় ০৩ খালের পলি অপসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি :

খালের মাটি কেটে চলাচলের রাস্তা বন্ধ, চরম বিপাকে কয়েক গ্রামের মানুষ, শাস্তি দাবী

###    খুলনার রূপসায় শুকুরমারী খাল, হরিঘোষ খাল ও নোয়াশিয়া খালের পলি অপসারণসহ রেফারেন্স লাইন সেকশন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জাবুসা বিল উপপ্রকল্পের আওতায় সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রমের ঠিকাদার জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা পলি মাটি অপসারণ কাজ একেবারেই যেনতেনভাবে করা হয়েছে। একইসাথে খালের পলি মাটি কেটে নির্দিষ্ট দুরে ফেরার কতা থাকলেও তা খালপাড় সংলগ্ন সরকারি একমাত্র সড়কের উপর ফেলে এলাকাবাসীর একমাত্র চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদাররা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ। গ্রামের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকেই খালের মধ্যে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।  এছাড়া, খালের কাটা মাটি বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও ঠিকাদাররা পার্শ্ববর্তী সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী খালের পলি মটি অপসারণ কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি, মাটি দিয়ে সরকারী রাস্তা বন্ধ এবং মাটি বিক্রির ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

বৃহষ্পতিবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের জাবুসা বিল উপপ্রকল্পের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব বাজেটের অধীনে সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রমের আওতায় শুকুরমারী খাল, হরিঘোষ খাল ও নোয়াশিয়া খালের পলি অপসারণসহ রেফারেন্স লাইন সেকশন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী পায় জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা। তিনটি খালের পলি অপসারণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যাদেশ অনুযায়ী তিনটি খালের মোট ২হাজার ৫০০মিটার পলি ২০২২সালের ২৫ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। এ কাজ ২০২৩ সালের ১২মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই তিনটি খালের পলি মাটি অপসারণ করে ঠিকাদাররা নির্দিষ্ট দুরে না রেখে অনিয়ম করে গত ২-৩মাস ধরে সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস হাইস্কুলের সাইনবোর্ড থেকে হরিঘোষ খালের শেষ গেট পর্যন্ত সরকারী রাস্তার উপর স্তুপাকারে রাখা হয়েছে। ঠিকাদাররা যেনতেনভাবে পলি মাটি অপসারন করে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষের একমাত্র চলাচলের ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খালের পলিমাটি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা খালের পলি অপসারণের ঠিকাদারদের বিচার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

স্থানীয় ভূক্তভোগি ইলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ‘হরিঘোষ খালের পলি অপসারণ করতে গিয়ে খালের মাটি কেটে দীর্ঘদিন ধরে খালপাড়ে রাস্তার উপর ফেলে রাখা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী ও জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ‘সরকারি সড়কের উপর মাটি স্তুপাকারে রাখায় মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে না পেরে পায়ে হেটে যেতে হচ্ছে। এভাবে জনসাধারণ চলাচলের রাস্তা মাটি দিয়ে আটকে রাখা এটা খুবই দুঃখজনক। যারা এ কাজ করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

ভূক্তভোগি ভ্যান চালক মোঃ কামাল শেখ বলেন, ‘খালের পলি অপসারণ করতে যেয়ে মাটি কেটে খালপাড়ে মেইন রাস্তার উপর রাখা হয়েছে। একমাস ধরে এলাকার মানুষ খুব সমস্যায় রয়েছে। মাটি কেটে দীর্ঘদিন রাস্তার উপর রেখে দেওয়ায় ভ্যান নিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারছেন না তিনি। এমনকি মোটর সাইকেল, চোটখাটো গাড়িও চলাচল করতে পারছে না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া-আসা করতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।’

জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খালের পলিমাটি অপসারণে চরম অনিয়ম-দূর্নীতি করে দায়সারাভাবে হরিঘোষ খালের পলিমাটি কেটে অপসারণ করা হচ্ছে। খালের পলি কেটে মাস দুয়েক ধরে খালপাড়ে সরকারি সড়কের উপর রাখা হয়েছে। এতে জনসাধারণের চলাচলে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। এছাড়া পলিমাটি কেটে সাবরিনা মেমোরিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। রাস্তার উপর পলিমাটি রেখে দেওয়ায় ভ্যান, সাইকেল যেতে পাটছে না। এলাকার হাইস্কুল, প্রাইমারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করছে। বিশেষ করে প্রাইমারী স্কুলের কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা খালে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়ে বিষন্নতায় থাকতে হয় অভিভাবক মহলের। তিনি বলেন, কেউ অসুস্থ হলে ভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়া যায় না। খুবই দুঃখজনক ও আইনবিরোধী কাজ করেছে ঠিকাদাররা। তাদের বিচার ও মাস্তি হওয়া দরকার।’ জাবুসা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান চালক আব্দুল জলিল শরীফ বলেন, ‘হরিঘোষ খালপাড়ে সরকারি রাস্তার উপর খালের পলি কেটে রাখা হয়েছে। তিনি ভ্যান নিয়ে বাড়ি যাওয়া-আসা করতে পারছেন না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই পা পিছলে খালে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। রাস্তা মাটি দিয়ে বন্ধ করার ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান তিনি।

রূপসার জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ শাহাজান শেখ বলেন, ‘সরকারি রাস্তার উপর খালের পলি মাটি রাখা এবং যদি  মাটি বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটা সঠিক হয়নি। এছাড়া রাস্তার উপর মাটি রেখে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ঠিক হয়নি। আমি অসুস্থ থাকার কারণে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খালের পলিমাটি অপসারনের বিষয়টি দেখা শোনার দায়িত্বে আছেন। তিনিই বিষয়টি ভারো বরতে পারবেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পলি মাটি কেটে সরকারি রাস্তার উপর রাখা এটা নিয়ম বহির্ভূত কাজ। তিনি রাস্তা বন্ধ করে এ জনদুর্ভোগের বিষয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, খালের পলি মাটি অপসারণের খালপাড়ে রাখার নিয়ম থাকলেও রাস্তার উপর রাখা হয়েছে। যেটা ঠিক হয়নি। এতে জনসাধারণ চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ফলে খুব শিগগির পলি সরিয়ে ফেলে রাস্তা পরিষ্কার করা হবে বলে তিনি জানান।’তবে মাটি বিক্রি কনে করেছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস স্কুলের সহকারী সমন্বয়কারি মোঃ মোসলেম ফকির বলেন, ‘খালের অপসারিত পলি মাটি ক্রয়ের ব্যাপারে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সাথে কথা হয়েছিলো। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু টাকাও দিয়েছিলো।মাটি পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে এখনো সরানো সম্ভব হয়নি।’

রূপসা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘খালের পলি অপসারণের পর পলি রাখার তেমন জায়গা না থাকায় খাল পাড়ে সড়কের উপর রাখা হয়েছে। সড়ক বন্ধ হওয়ায় এলাকার মানুষের চরাচলের সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানান।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামান বলেন, ‘খালের পলি মাটি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে যদি কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এমনি বিবেচনা করা যেতে পারে। মাটি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের চলাচলের রাস্তায় মাটি রাখার কোন নিয়ম নেই। যদি সেটা করে থাকে এবং পলিমাটি অপসারণে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। #

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন 

রূপসায় ০৩ খালের পলি অপসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি :

খালের মাটি কেটে চলাচলের রাস্তা বন্ধ, চরম বিপাকে কয়েক গ্রামের মানুষ, শাস্তি দাবী

প্রকাশিত সময় : ০২:১০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

###    খুলনার রূপসায় শুকুরমারী খাল, হরিঘোষ খাল ও নোয়াশিয়া খালের পলি অপসারণসহ রেফারেন্স লাইন সেকশন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জাবুসা বিল উপপ্রকল্পের আওতায় সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রমের ঠিকাদার জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা পলি মাটি অপসারণ কাজ একেবারেই যেনতেনভাবে করা হয়েছে। একইসাথে খালের পলি মাটি কেটে নির্দিষ্ট দুরে ফেরার কতা থাকলেও তা খালপাড় সংলগ্ন সরকারি একমাত্র সড়কের উপর ফেলে এলাকাবাসীর একমাত্র চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদাররা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ। গ্রামের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকেই খালের মধ্যে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।  এছাড়া, খালের কাটা মাটি বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও ঠিকাদাররা পার্শ্ববর্তী সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী খালের পলি মটি অপসারণ কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি, মাটি দিয়ে সরকারী রাস্তা বন্ধ এবং মাটি বিক্রির ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

বৃহষ্পতিবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের জাবুসা বিল উপপ্রকল্পের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব বাজেটের অধীনে সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রমের আওতায় শুকুরমারী খাল, হরিঘোষ খাল ও নোয়াশিয়া খালের পলি অপসারণসহ রেফারেন্স লাইন সেকশন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী পায় জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা। তিনটি খালের পলি অপসারণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যাদেশ অনুযায়ী তিনটি খালের মোট ২হাজার ৫০০মিটার পলি ২০২২সালের ২৫ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। এ কাজ ২০২৩ সালের ১২মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই তিনটি খালের পলি মাটি অপসারণ করে ঠিকাদাররা নির্দিষ্ট দুরে না রেখে অনিয়ম করে গত ২-৩মাস ধরে সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস হাইস্কুলের সাইনবোর্ড থেকে হরিঘোষ খালের শেষ গেট পর্যন্ত সরকারী রাস্তার উপর স্তুপাকারে রাখা হয়েছে। ঠিকাদাররা যেনতেনভাবে পলি মাটি অপসারন করে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষের একমাত্র চলাচলের ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খালের পলিমাটি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা খালের পলি অপসারণের ঠিকাদারদের বিচার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

স্থানীয় ভূক্তভোগি ইলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ‘হরিঘোষ খালের পলি অপসারণ করতে গিয়ে খালের মাটি কেটে দীর্ঘদিন ধরে খালপাড়ে রাস্তার উপর ফেলে রাখা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী ও জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ‘সরকারি সড়কের উপর মাটি স্তুপাকারে রাখায় মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে না পেরে পায়ে হেটে যেতে হচ্ছে। এভাবে জনসাধারণ চলাচলের রাস্তা মাটি দিয়ে আটকে রাখা এটা খুবই দুঃখজনক। যারা এ কাজ করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

ভূক্তভোগি ভ্যান চালক মোঃ কামাল শেখ বলেন, ‘খালের পলি অপসারণ করতে যেয়ে মাটি কেটে খালপাড়ে মেইন রাস্তার উপর রাখা হয়েছে। একমাস ধরে এলাকার মানুষ খুব সমস্যায় রয়েছে। মাটি কেটে দীর্ঘদিন রাস্তার উপর রেখে দেওয়ায় ভ্যান নিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারছেন না তিনি। এমনকি মোটর সাইকেল, চোটখাটো গাড়িও চলাচল করতে পারছে না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া-আসা করতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।’

জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খালের পলিমাটি অপসারণে চরম অনিয়ম-দূর্নীতি করে দায়সারাভাবে হরিঘোষ খালের পলিমাটি কেটে অপসারণ করা হচ্ছে। খালের পলি কেটে মাস দুয়েক ধরে খালপাড়ে সরকারি সড়কের উপর রাখা হয়েছে। এতে জনসাধারণের চলাচলে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। এছাড়া পলিমাটি কেটে সাবরিনা মেমোরিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। রাস্তার উপর পলিমাটি রেখে দেওয়ায় ভ্যান, সাইকেল যেতে পাটছে না। এলাকার হাইস্কুল, প্রাইমারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করছে। বিশেষ করে প্রাইমারী স্কুলের কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা খালে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়ে বিষন্নতায় থাকতে হয় অভিভাবক মহলের। তিনি বলেন, কেউ অসুস্থ হলে ভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়া যায় না। খুবই দুঃখজনক ও আইনবিরোধী কাজ করেছে ঠিকাদাররা। তাদের বিচার ও মাস্তি হওয়া দরকার।’ জাবুসা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান চালক আব্দুল জলিল শরীফ বলেন, ‘হরিঘোষ খালপাড়ে সরকারি রাস্তার উপর খালের পলি কেটে রাখা হয়েছে। তিনি ভ্যান নিয়ে বাড়ি যাওয়া-আসা করতে পারছেন না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই পা পিছলে খালে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। রাস্তা মাটি দিয়ে বন্ধ করার ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান তিনি।

রূপসার জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ শাহাজান শেখ বলেন, ‘সরকারি রাস্তার উপর খালের পলি মাটি রাখা এবং যদি  মাটি বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটা সঠিক হয়নি। এছাড়া রাস্তার উপর মাটি রেখে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ঠিক হয়নি। আমি অসুস্থ থাকার কারণে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খালের পলিমাটি অপসারনের বিষয়টি দেখা শোনার দায়িত্বে আছেন। তিনিই বিষয়টি ভারো বরতে পারবেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাবুসা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পলি মাটি কেটে সরকারি রাস্তার উপর রাখা এটা নিয়ম বহির্ভূত কাজ। তিনি রাস্তা বন্ধ করে এ জনদুর্ভোগের বিষয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, খালের পলি মাটি অপসারণের খালপাড়ে রাখার নিয়ম থাকলেও রাস্তার উপর রাখা হয়েছে। যেটা ঠিক হয়নি। এতে জনসাধারণ চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ফলে খুব শিগগির পলি সরিয়ে ফেলে রাস্তা পরিষ্কার করা হবে বলে তিনি জানান।’তবে মাটি বিক্রি কনে করেছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এন্ড গার্লস স্কুলের সহকারী সমন্বয়কারি মোঃ মোসলেম ফকির বলেন, ‘খালের অপসারিত পলি মাটি ক্রয়ের ব্যাপারে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সাথে কথা হয়েছিলো। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু টাকাও দিয়েছিলো।মাটি পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে এখনো সরানো সম্ভব হয়নি।’

রূপসা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘খালের পলি অপসারণের পর পলি রাখার তেমন জায়গা না থাকায় খাল পাড়ে সড়কের উপর রাখা হয়েছে। সড়ক বন্ধ হওয়ায় এলাকার মানুষের চরাচলের সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানান।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামান বলেন, ‘খালের পলি মাটি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে যদি কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এমনি বিবেচনা করা যেতে পারে। মাটি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের চলাচলের রাস্তায় মাটি রাখার কোন নিয়ম নেই। যদি সেটা করে থাকে এবং পলিমাটি অপসারণে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। #