০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইমাদ পরিবহন শিবচরে খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা ২০: আহত ৪০

###    খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইমাদ পরিবহনের একটি বাস মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২০ জন, আহত হয়েছেন ৪০ জন। রোববার (১৯ মার্চ) ভোর চারটায় শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মাসেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এসময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত বাসের মধ্যে থেকে ১৪ জনের মতো যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বাসটির বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, মূল সড়ক থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার আগে বাসটি উল্টে যায়। এরপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহতার কথা কেউ ঠিকমতো বলতে পারেনি ।বাসটিতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেওয়া মহারাজ নামে এক যাত্রী বলেন, চলতে চলতে দেখলাম হঠাৎ গাড়ি বামে মোড় নিয়েছে। এসময় লোকজন চিৎকার শুরু করে। এরপর গাড়ি উল্টে গেল।বাস কতবার উল্টিয়েছে নিজেও বলতে পারি না। এরপর বাস খাদে পড়ে যায়।কীভাবে কী হয়ে গেল বলতে পারছি না।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে আসা যুবক উজ্জল বলেন, ‘শুরু থেকেই বাস দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিল। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত আর লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থ্যবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দুমড়েমুচড়ে গেছে।’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মো. আরিফ নামের এক যুবক বলেন, ‘হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল বাসটি আকাশে উঠে যাচ্ছে। বাসটি উল্টে বিকট শব্দে নিচে পড়ে পল্টি খায়। বাসের মধ্যে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। রক্তের বন্যা বয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের রক্তও শরীরে লেগে ভিজে ছিল। চারপাশে লাশ আর লাশ!’ যাত্রীদের মধ্যে বাগেরহাটের মোল্লারহাট থেকে শিশু সাজ্জাদকে (৭) নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন আনোয়ারা বেগম (২৭) নামের এক যাত্রী। তারা অক্ষত আছেন। আনোয়ারা বলেন, ‘যেন চোখের পলকে সব ঘটে গেলো! আমি আমার সন্তানকে বুকে চেপে রেখেছিলাম। বাসের মধ্য থেকে বের হবার পরও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে বেঁচে আছি, সুস্থ আছি! কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সারাক্ষণ আল্লাহকে ডেকেছি।

’ফায়ার সার্ভিস ফরিদপুর জোনের উপসহকারী-পরিচালক শিপলু আহম্মেদ বলেন, ‘বাসটিতে মোট ৫৪টি আসন রয়েছে। প্রতিটি আসন এবং সামনের ইঞ্জিনের কাভারেও যাত্রী ছিল। এর মধ্যে যারা সামনের দিকে বসেছিল তাদের মৃত্যুই বেশি ঘটেছে।‘ বাসে কমপক্ষে ৬০ জন যাত্রী ছিল জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীদের প্রায় সকলেই আহত হয়েছে। আমরা খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে এসে ১৪ জনকে মৃত হিসেবে শনাক্ত করি। তাদের উদ্ধারের পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। হাসপাতালে নেওয়ার পরে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখানে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট কাজ করছে। আমাদের উদ্ধার কাজ এখনো চলমান হয়েছে।’রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৪০ জন। এদিকে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ওসি আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক জানান, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক । আহতদের উদ্ধার করে আশপাশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন 

খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইমাদ পরিবহন শিবচরে খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা ২০: আহত ৪০

প্রকাশিত সময় : ০১:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩

###    খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইমাদ পরিবহনের একটি বাস মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২০ জন, আহত হয়েছেন ৪০ জন। রোববার (১৯ মার্চ) ভোর চারটায় শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মাসেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এসময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত বাসের মধ্যে থেকে ১৪ জনের মতো যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বাসটির বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, মূল সড়ক থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার আগে বাসটি উল্টে যায়। এরপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহতার কথা কেউ ঠিকমতো বলতে পারেনি ।বাসটিতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেওয়া মহারাজ নামে এক যাত্রী বলেন, চলতে চলতে দেখলাম হঠাৎ গাড়ি বামে মোড় নিয়েছে। এসময় লোকজন চিৎকার শুরু করে। এরপর গাড়ি উল্টে গেল।বাস কতবার উল্টিয়েছে নিজেও বলতে পারি না। এরপর বাস খাদে পড়ে যায়।কীভাবে কী হয়ে গেল বলতে পারছি না।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে আসা যুবক উজ্জল বলেন, ‘শুরু থেকেই বাস দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিল। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত আর লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থ্যবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দুমড়েমুচড়ে গেছে।’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মো. আরিফ নামের এক যুবক বলেন, ‘হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল বাসটি আকাশে উঠে যাচ্ছে। বাসটি উল্টে বিকট শব্দে নিচে পড়ে পল্টি খায়। বাসের মধ্যে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। রক্তের বন্যা বয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের রক্তও শরীরে লেগে ভিজে ছিল। চারপাশে লাশ আর লাশ!’ যাত্রীদের মধ্যে বাগেরহাটের মোল্লারহাট থেকে শিশু সাজ্জাদকে (৭) নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন আনোয়ারা বেগম (২৭) নামের এক যাত্রী। তারা অক্ষত আছেন। আনোয়ারা বলেন, ‘যেন চোখের পলকে সব ঘটে গেলো! আমি আমার সন্তানকে বুকে চেপে রেখেছিলাম। বাসের মধ্য থেকে বের হবার পরও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে বেঁচে আছি, সুস্থ আছি! কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সারাক্ষণ আল্লাহকে ডেকেছি।

’ফায়ার সার্ভিস ফরিদপুর জোনের উপসহকারী-পরিচালক শিপলু আহম্মেদ বলেন, ‘বাসটিতে মোট ৫৪টি আসন রয়েছে। প্রতিটি আসন এবং সামনের ইঞ্জিনের কাভারেও যাত্রী ছিল। এর মধ্যে যারা সামনের দিকে বসেছিল তাদের মৃত্যুই বেশি ঘটেছে।‘ বাসে কমপক্ষে ৬০ জন যাত্রী ছিল জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীদের প্রায় সকলেই আহত হয়েছে। আমরা খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে এসে ১৪ জনকে মৃত হিসেবে শনাক্ত করি। তাদের উদ্ধারের পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। হাসপাতালে নেওয়ার পরে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখানে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট কাজ করছে। আমাদের উদ্ধার কাজ এখনো চলমান হয়েছে।’রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৪০ জন। এদিকে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ওসি আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক জানান, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক । আহতদের উদ্ধার করে আশপাশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। ##