০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনার ডুমুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান রবি’র জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

দলীয় নেতাদের দাবী রবি হত্যাকান্ড পরিকল্পিত , স্বজনদের দাবী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার

####

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ০৮নং শরাফপুর ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি(৪২)কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শোক, ক্ষোভ-উত্তেজনা চলছে। তার সহকর্মী ও দলের নেতৃবৃন্দ বলছেন শান্ত ডুমুরিয়াকে আবারও অশান্ত করতে একটি গ্রুপ পরিকল্পিত এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে তার স্বজনরা দাবী করেছেন, রবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান রবি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।তবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন খুলনার ‍পুলিশ সুপার। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, রবিবার বিকেলে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবি‘র জানাজা শেষে শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি হত্যার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদশন করেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোন রক্তের চিহ্ন বা অন্য কোন আলামত পাওয়া যায়নি। সে কারনে প্রাথমিকভাবে সড়ক র্দূঘটনাও হতে পারে বলে মনে হয়েছিল। তবে ময়না তদন্তে হত্যার ঘটনা পরিষ্কার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কেউ কোন অভিযোগ করেনি বা মামলাও হয়নি। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে চেয়ারম্যান রবি নিহত হওয়ার কারন উদঘাটন ও জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সাথে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এলাকার তিনবারের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিকে হারিয়ে শোকাতুর হয়ে পড়েছে শরাফপুরের মানুষ। রোববার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রবির ময়নাতদন্ত গ্রামের বাড়ীতে রবি’র মরদেহ নেয়া হয়। সেখানে গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ ভিড় করেন। সবার চোখেই ছিল পানি। কান্নাজড়িত কন্ঠে অনেককে বলতে শোনা যায়, রবির কোনো শত্রু ছিল না। কেন হত্যা করা হলো এমন একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যানকে।

স্থানীয়রা জানান, তিনবারের চেয়ারম্যান হলেও খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন রবিউল। তাঁর বাড়ি শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামে। তবে পরিবার নিয়ে থাকতেন খুলনা নগরের নিরালা আবাসিক এলাকায়। তাঁর স্ত্রী সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনায় চাকরি করেন। আট ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে তাঁদের। রবিউল দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। পরিবারের লোকজন বলেন, রবিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে করে একাই চলাফেরা করতেন। প্রতিদিন সকালে ডুমুরিয়ায় নিজের এলাকায় যেতেন আর রাতে খুলনায় ফিরে আসতেন। শনিবারও ডুমুরিয়ায় দলের মিটিং শেষে রাত ১০টার দিকে খুলনার বাসায় আসার পথে গুটুদিয়ার ওয়াপদা বাঁধের কাছে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

রবিবার বিকেলে শরাফপুর ইউপি অফিস চত্বরে ও গ্রামের বাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকেই ক্সোভ প্রকাশ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাসির দাবীও জানান। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ, ভাইস-চেয়ারম্যান গোবিন্দ ঘোষ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ হোসেন জোর্য়াদ্দারসহ দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

নিহত চেয়ারম্যান রবি ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, রবি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।শরাফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ছিল। সবশেষ ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য ছিল। সে খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। কারো সাথে কখনও কোন ঝগড়া বা গন্ডগোল করেনি। এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে হয়তো কখনও দাবী-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিল। সে প্রথমবার ২০১১সালে ইউপি র্নিবাচনে চেয়ারম্যান র্নিবাচিত হন। পরে ২০১৬ সালের ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে। তবে সে র্নিবাচন নিয়েও কখনও কোথাও মারামারি বা ঝগড়া হয়নি। এলাকার উন্নয়নে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু ডুমুরিয়ায় এক সময়ে অপরাজনীতি ও চরমপন্থীদের অভয়ারন্য হয়ে যাওয়ায় গ্রামের বাড়ী ছেড়ে খুলনা শহরে চলে যায়। সে সব সময়ই সন্ত্রাস, মাদক ও সব ধরনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ছিল। এ কারনে ২০১৫ সালে একবার সে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তবে সেবার সে রক্ষা পেয়ে যায়। কিন্তু এবার সে রক্ষা পায়নি। সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে মেরে ফেললো। তিনি আরও জানান, স্থানীয় রাজনীতি ও তার জনপ্রিয়তা নিয়ে একটি পক্ষ তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। যারা তাকে রাজনীতি থেকেই নয়-দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিল। সে সর্ম্পূণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। তিনি ভাইয়ের হথ্যাকারীদের বিচার ও ফাঁসির দাবী জানান।

নিহত চেয়ারম্যান রবি দলীয় সহকর্মী শোভনা ইউপি চেয়ারম্যা সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলার একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার একই সাথে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভায় একসাথে ছিলাম। কিন্তু মিটিং শেষ হওয়ার পরে তাকে গুলি করার খবর পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু ততক্সনে সে আমাদের মাঝ থেকে নেই হয়ে গেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, র্দীঘদিন ধরে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া-ফুলতলা এলাকাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের নেতৃত্বে শান্তির এলাকা হিসেবে প্রতিষ্টিত হয়েছে। শান্ত ডুমুরিয়াকে আবারও অশান্ত ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত করতে একটি গ্রুপ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি’র হত্যাকান্ড পরিকল্পিতভাবে বলেই মনে হচ্ছে। নিহত রবি’র পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায় সন্ত্রাসীরা একাধিক ছিল। এ হত্যাকান্ডের নিন্দা ও ক্ষোভ জানান তিনি। বিগত দুটি ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে তার ওপরে অনেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তার সূত্র ধরেও এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, উপজেলার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের হত্যাকান্ড খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অতীতে এক সময়ের আতঙ্কের উপজেলা হিসেবে পরিচিত ছিল ডুমুরিয়া। কিন্তু গত প্রায় ২২ বছরে এ উপজেলায় ধরনের কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। বিগত সময় যাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন, তাঁরা এখন ছদ্মবেশে এলাকায় আছেন। তিনি চেয়ার‌ম্যান রবি’র হত্যাকরীদের দ্রুত গ্রেফতার ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও উল্লেখ করেন। ভবিষ্যেতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকার আহবান জানান।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান জানা, ডুমুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়ে পোস্টমর্টেম হওয়ার পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কারা কি কারণে এ হথ্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করে আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। যেহেতু কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তাই কীভাবে ও কারা হত্যা করেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়ার ওয়াপদা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডুমুরিয়ার ০৮নং শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারশ্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি নিহত হন। ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা শেষে মোটরসাইকেল যোগে খুলনা নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদা এলাকায় পৌছালে ৪-৫জনের একদল সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে  তার অবস্থা অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

খুলনার ডুমুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান রবি’র জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

দলীয় নেতাদের দাবী রবি হত্যাকান্ড পরিকল্পিত , স্বজনদের দাবী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার

প্রকাশিত সময় : ০১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

####

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ০৮নং শরাফপুর ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি(৪২)কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শোক, ক্ষোভ-উত্তেজনা চলছে। তার সহকর্মী ও দলের নেতৃবৃন্দ বলছেন শান্ত ডুমুরিয়াকে আবারও অশান্ত করতে একটি গ্রুপ পরিকল্পিত এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে তার স্বজনরা দাবী করেছেন, রবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান রবি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।তবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন খুলনার ‍পুলিশ সুপার। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, রবিবার বিকেলে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবি‘র জানাজা শেষে শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি হত্যার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদশন করেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোন রক্তের চিহ্ন বা অন্য কোন আলামত পাওয়া যায়নি। সে কারনে প্রাথমিকভাবে সড়ক র্দূঘটনাও হতে পারে বলে মনে হয়েছিল। তবে ময়না তদন্তে হত্যার ঘটনা পরিষ্কার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কেউ কোন অভিযোগ করেনি বা মামলাও হয়নি। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে চেয়ারম্যান রবি নিহত হওয়ার কারন উদঘাটন ও জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সাথে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এলাকার তিনবারের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিকে হারিয়ে শোকাতুর হয়ে পড়েছে শরাফপুরের মানুষ। রোববার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রবির ময়নাতদন্ত গ্রামের বাড়ীতে রবি’র মরদেহ নেয়া হয়। সেখানে গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ ভিড় করেন। সবার চোখেই ছিল পানি। কান্নাজড়িত কন্ঠে অনেককে বলতে শোনা যায়, রবির কোনো শত্রু ছিল না। কেন হত্যা করা হলো এমন একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যানকে।

স্থানীয়রা জানান, তিনবারের চেয়ারম্যান হলেও খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন রবিউল। তাঁর বাড়ি শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামে। তবে পরিবার নিয়ে থাকতেন খুলনা নগরের নিরালা আবাসিক এলাকায়। তাঁর স্ত্রী সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনায় চাকরি করেন। আট ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে তাঁদের। রবিউল দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। পরিবারের লোকজন বলেন, রবিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে করে একাই চলাফেরা করতেন। প্রতিদিন সকালে ডুমুরিয়ায় নিজের এলাকায় যেতেন আর রাতে খুলনায় ফিরে আসতেন। শনিবারও ডুমুরিয়ায় দলের মিটিং শেষে রাত ১০টার দিকে খুলনার বাসায় আসার পথে গুটুদিয়ার ওয়াপদা বাঁধের কাছে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

রবিবার বিকেলে শরাফপুর ইউপি অফিস চত্বরে ও গ্রামের বাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকেই ক্সোভ প্রকাশ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাসির দাবীও জানান। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ, ভাইস-চেয়ারম্যান গোবিন্দ ঘোষ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ হোসেন জোর্য়াদ্দারসহ দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

নিহত চেয়ারম্যান রবি ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, রবি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।শরাফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ছিল। সবশেষ ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য ছিল। সে খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। কারো সাথে কখনও কোন ঝগড়া বা গন্ডগোল করেনি। এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে হয়তো কখনও দাবী-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিল। সে প্রথমবার ২০১১সালে ইউপি র্নিবাচনে চেয়ারম্যান র্নিবাচিত হন। পরে ২০১৬ সালের ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে। তবে সে র্নিবাচন নিয়েও কখনও কোথাও মারামারি বা ঝগড়া হয়নি। এলাকার উন্নয়নে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু ডুমুরিয়ায় এক সময়ে অপরাজনীতি ও চরমপন্থীদের অভয়ারন্য হয়ে যাওয়ায় গ্রামের বাড়ী ছেড়ে খুলনা শহরে চলে যায়। সে সব সময়ই সন্ত্রাস, মাদক ও সব ধরনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ছিল। এ কারনে ২০১৫ সালে একবার সে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তবে সেবার সে রক্ষা পেয়ে যায়। কিন্তু এবার সে রক্ষা পায়নি। সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে মেরে ফেললো। তিনি আরও জানান, স্থানীয় রাজনীতি ও তার জনপ্রিয়তা নিয়ে একটি পক্ষ তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। যারা তাকে রাজনীতি থেকেই নয়-দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিল। সে সর্ম্পূণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। তিনি ভাইয়ের হথ্যাকারীদের বিচার ও ফাঁসির দাবী জানান।

নিহত চেয়ারম্যান রবি দলীয় সহকর্মী শোভনা ইউপি চেয়ারম্যা সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলার একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার একই সাথে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভায় একসাথে ছিলাম। কিন্তু মিটিং শেষ হওয়ার পরে তাকে গুলি করার খবর পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু ততক্সনে সে আমাদের মাঝ থেকে নেই হয়ে গেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, র্দীঘদিন ধরে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া-ফুলতলা এলাকাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের নেতৃত্বে শান্তির এলাকা হিসেবে প্রতিষ্টিত হয়েছে। শান্ত ডুমুরিয়াকে আবারও অশান্ত ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত করতে একটি গ্রুপ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি’র হত্যাকান্ড পরিকল্পিতভাবে বলেই মনে হচ্ছে। নিহত রবি’র পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায় সন্ত্রাসীরা একাধিক ছিল। এ হত্যাকান্ডের নিন্দা ও ক্ষোভ জানান তিনি। বিগত দুটি ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে তার ওপরে অনেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তার সূত্র ধরেও এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, উপজেলার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের হত্যাকান্ড খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অতীতে এক সময়ের আতঙ্কের উপজেলা হিসেবে পরিচিত ছিল ডুমুরিয়া। কিন্তু গত প্রায় ২২ বছরে এ উপজেলায় ধরনের কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। বিগত সময় যাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন, তাঁরা এখন ছদ্মবেশে এলাকায় আছেন। তিনি চেয়ার‌ম্যান রবি’র হত্যাকরীদের দ্রুত গ্রেফতার ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও উল্লেখ করেন। ভবিষ্যেতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকার আহবান জানান।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান জানা, ডুমুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়ে পোস্টমর্টেম হওয়ার পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কারা কি কারণে এ হথ্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করে আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। যেহেতু কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তাই কীভাবে ও কারা হত্যা করেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়ার ওয়াপদা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডুমুরিয়ার ০৮নং শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারশ্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি নিহত হন। ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা শেষে মোটরসাইকেল যোগে খুলনা নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদা এলাকায় পৌছালে ৪-৫জনের একদল সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে  তার অবস্থা অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। ##