০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরীর উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জোয়ারে খালেক, প্রতিদ্বন্দীতায় ধারে কাছে নেই অন্য চার প্রার্থী

###    খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। শনিবার শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ততম দিন পার করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। খুলনা সিটিতে অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো উতপ্ততা যেমন নেই, তেমনি ভোটের মাঠের লড়াইও ঠিক তেমন জমেনি। ভোটের আমেজও নেই। নগরীর প্রায় সাড়ে ৫লাখ ভোটারের  অধিকাংশেরই ধারনা এবারের নির্বাচনে বিশেষ করে মেয়র পদে লড়াই  জমবে না। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ছাড়া আরও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি ও একজন স্বতন্ত্রসহ চারজন প্রার্থী রয়েছেন তারা সাধারন ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন সাড়া ফেলতেই পারেননি। এদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের আ: আউয়াল ও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু দলীয়ভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছুটা প্রচার-প্রচারনায় নামলেও তেমন জোরালো না থাকায় নগরীর ৪৫কিমি আয়তনের সব প্রান্তের ভোটারের কাছে পৌছাতেই পারেনি। তাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা ও নেতার্মীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোরা সম্ভব হয়নি। ফলে তালুকদার খালেকের প্রতিদ্বন্দ্বি চারজন প্রার্থীই অনেক পিছিয়ে রয়েছেন বলে ভোটাররা মনে করছেন। তবে তালুকদার খালেক নগরীর নারী, শ্রমিক, বস্তিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গের ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে বেশ জোরেশোরে কাজ করেছেন। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায় তার সমর্থনে সব কর্মসূচিতেই লোকজনের ব্যাপক উপস্থিতিও দেখা গেছে। প্রচার-প্রচারনা ও গনসংযোগের সময় সাধারণ মানুষের সাড়া ও সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলের ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রচার-প্রচারনায়। একইসাথে স্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনজীবি, নারী ও স্বেচ্চাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সমিতি, গনমাধ্যমের সাংবাদিক, কমিউনিটি উন্নয়ন সংগঠন(সিডিসি)সহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও জনকল্যানমূলক সংগঠন তালুকদার খালেকের পক্ষে গনসংযোগ, সভা ও মতবিনিময় করে প্রচারণা চালাচ্ছে। তালুকদার খালেকের পক্ষে নগরীর অধিকাংশ মানুষের বিপুল এই সমর্থনের পিছনে মূলত: কাজ করছে নগরবাসীর কাঙ্খিত ‘উন্নয়ন ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের প্রত্যাশা”।একই সাথে সাবেক নগর পিতার কঠোর দৃঢ়চেতা মানসিকতা। যা গত  ৫‘বছরে নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে তালুকদার খালেক মেয়র হওয়ার পর খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ৬০৭কোটি ৫৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় ৫শ’ ৭১টি সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৪শ’ ১৮টি সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  চলমান আছে ১শ’ ১৪টি এবং টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমান আছে ৩৯টি সড়কের কাজ। এছাড়া খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে  ৮শ’ ২৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬ হাজার টাকয় মহানগরীর ২শ’ ৬টি ড্রেন উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে ৫২টি ড্রেনের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং চলমান আছে ৮৫টি ড্রেনের কাজ ও  টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমান ৭২টি। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ইতোমধ্যে ৬শ’ ৪৭টি প্রকল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে এবং চলমান আছে আরও ১শ’ ২৪টি প্রকল্প। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় বিগত ৫ বছরে ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫শ ৮৭টি পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা প্রদানসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের বসতি এলাকায় ৪৯.১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রায় ১হাজার ৩শটি সড়কসহ ড্রেন ও ১২টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন এবং ১হাজার ৫শ’ ৪টি পারিবারিক ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রাক-আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে ৬৮টি পরিবারের জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ শহীদ হাদিস পার্কে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। জার্মান কো-অপারেশনের (জিআইজেড) অর্থায়নে ১শ’ ১৪টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ৬শ’ ৪৩টি ছাগল বিতরণসহ ছাগল পালনের অবকাঠামোগত সুবিধাও প্রদান এবং’জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি মোকাবেলায় খুলনা শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর দৌলতপুর ও মহেশ্বরপাশায় শহর রক্ষা বাঁধ, রূপসায় রিভার ফ্রন্ট পার্ক, দেয়ানায় চৌধুরী খাল খনন ও পাড় বাঁধাইসহ নবীনগর, বাস্তুহারা কলোনী ও সোনাডাঙ্গা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ড্রেন উন্নয়ন, আলুতলা সুইচ গেট আধুনিকায়ন, নিরালা খাল খনন, পাড় বাঁধাই ও দু’ পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ ২৩টি পুকুরের উন্নয়নে ৪শ’ ৯১ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকার প্রকল্প ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ‘একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কোভিড সংক্রমণের কারণে প্রায় ৩ বছর কাজ বন্ধ থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।এর পরেও যে উন্নয়ণ হয়েছে তা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টু নগরবাসীর।  তবে এজণ্য নগরবাসীকে হয়তো কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে খুলনা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশা করেন নগরীর অধিকাংশ মানুষ। যদিও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু এরশাদের সময়কার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নগরীর দৃশ্যমান উন্নয়নে ২২দফা ইশতেহার ঘোষনা করে ভোটারদের ভোট কামনা করে প্রচারনা করছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আওয়াল অনিয়ম-দূর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী ও জলাবদ্ধতা দুরীকরন এবং পরিচ্ছন্ন ও ন্যায়ের শাসনের নগরী গড়তে ২৮দফা ইশতেহার ঘোষনা করে প্রচারনা করেছেন।

অন্যদিকে, ২০১৮সালের মত প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় তালুকদার খালেক বিজয়ী হবেন এটা এক প্রকার নিশ্চিত হিসেবে নিচ্ছেন ভোটাররা। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্তাভাজন তালুকদার খালেক ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হলে খুলনা নগরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন যেমন হবে না। তেমনি মহানগরীর উন্নয়ন কাজও থেমে যাবে। তাই তালুকদার খালেকের বিকল্প কাউকে চিন্তায় আনতে চাইছেন না তারা। খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাযর নানান বয়সের  ও শ্রেনী-পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের লবনচরা বান্দা বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করাই ভালো। কারন বিরোধী দলের কেউ জিতলে সার্বিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারে না। বিরোধী দলের প্রার্থী জিতলে সরকারীভাবে তাকে অসহযোগিতা করা হয়। ২০১৩সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র মো: মনিরুজ্জামান মনি জিতেছিল। কিন্তু তিনি তেমন কোন কাজই করতে পারেননি। কাজেই বর্তমান সরকারী দলের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করা উচিত।  হাজী আব্দুল মালেক ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক এসএম সোহেল ইসহাক বলেন, বিগত ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর পাচ বছরের মধ্যে করোনার কারণে প্রায় তিন বছর কেসিসির তেমন কোন কাজই করতে পারেনি। যদিও সরকার আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিল। যার অনেক কাজই করা সম্ভব হয়নি। এসব কাজ সম্পন্ন করতে হলে বর্তমান মেয়র তালুকদার খালেককেই ভোট দেয়া উচিত। তাছাড়া অন্য যে প্রার্থীরা রয়েছে তারা কেউই খালেকের বিকল্প হতে পারবে না বলে আমি মনে করি। নিরালা এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মো: হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেন, এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকের অবস্থান বেশ শক্ত। তিনি মেয়র থাকাকালে অনেক ভালো কাজ করেছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে আপোসহীনভাবে  নিয়ন্ত্রণ করেছেন। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বেশির ভাগ মানুষ তালুকদার খালেকের রয়েছে মনে হচ্ছে। নগরীর দৌলতপুর এলাকার তরুন ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ‍উদ্যোক্তা মো: রুহুল আমীন বলেন, তালুকদার খালেক তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তা এবং ট্যাক্স-লাইসেন্স ফিস কমানোর কথা বলেছেন। এছাড়া আধুনিক স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একাজগুরো তিনি অতি সহজেরই ইচ্ছে করলেই করতে পারবেন। এজন্য সরকারের উপর তাকিয়ে থাকতে হবে না। গত নির্বাচনেও তিনি নতুনদের জন্য যে কথা দিয়েছিলেন সেসব কথার অধিকাংশ বিশেষ করে করোনাকালীন সমস্যায় তিনি তরুন ও নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে কথা  রেখেছেন। এজন্য আমি মনে করি যোগ্য হিসেবে তাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করা ‍উচেত।  রায়পাড়া এলাকার গৃহবধূ শর্মিলী দাস ও সুলতানা রহমান বলেন, এবারে যে ৫’জন মেয়র প্রার্থী আছেন তাদের মধ্যে তালুকদার খালেকই সবচেয়ে যোগ্য। তিনি গত ৫বছর খুলনার উন্নয়নে অসাধারন কাজ করেছেন। তিনি এবার কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার কথা, আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল এবং সিটি করপোরেশনে মায়েদের জন্য পৃথক সেবার ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়ে কাজ করেন। তাই ভোট দিয়ে তাকেই বিজয়ী করতে চাই। বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মিলন রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নগরীতে তালুকদার খালেকের বিগত সময়ে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্তা বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক কাজ হয়েছে। অনেক অনুন্নত এলাকায়ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় জলাবদ্ধতা কমেছে। এখনও অনেক এলাকায় কাজ চলছে। ২০১৩সালে বিএনপির নেতা মনিরুজ্জামান মনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরীতে উন্নয়নের কোন কাজ করতে পারিননি। তিনি শুধূই বিধি মোতাবেক ব্যবস্তা গড়ে ‍তুলেছিলেন। তালুকদার খালেক নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারন মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।

অন্যদিকে, নগরীর শিল্পাঞ্চল খ্যাত খালিশপুর-দৌলতপুরের পাটকলগুলি বিগত বিএনপির সময়ে বন্ধ হওয়ায় স্তানীয় শ্রমিক ভোটাররা ক্ষিপ্ত ছিল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে খালিশপুর জুটমিলসহ কয়েকটি মিল চালু করলেও বর্তমান সরকার দেশের ২৫টি সরকারী পাটকল বন্ধ করায় ক্ষোভ রয়েছে পাটকল শ্রমকিদের। তবে শ্রমিকদের জন্য স্তানীয় এমপি ও শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান ‍সুফিয়ান অনেক সহায়তা দেওয়ায় শ্রমিক ভোটাররাও তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তালুকদার খালেককে আবারও ‍সুযোগ দিতে চায়। ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক মো: নুর ইসলাম, দীন মোহাম্মদ, আব্দুস সুবরসহ অনেকেই বলেন, মিলের শ্রমিকরা বরাবরই আওয়ামীলীগের সরকারের উপর খুশী। তারপেরও বর্তমান মেয়াদে সরকার ২৫টি মিল বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের বিপাকে ফেলেছে। শিল্পাঞ্চলের লক্ষাধিক শ্রমিক ভোটার জুটমিল চালুর প্রত্যাশায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলনও করে মিল চালুর জন্য দাবী করেছে। কিন্তু তিনমাসের কথা বলে বন্ধ করলেও আড়াই বছরেও চালু হয়নি। এ কারনে মিলের শ্রমিকরা আওয়ামীলীগের উপর অনেকটাই ক্ষিপ্ত  রয়েছে।  তবুও খুলনার উন্নয়নে তালুকদার খালেক যে কাজ করেছেন সেটাতে শ্রমিকরা খুশী। তবে তারা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান ‍সুফিয়ান ও তালুকদার খালেকের দেয়া প্রতিশ্রুতি জুটমিল চালুর ওয়াদা বাস্তবায়নে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার কথা ভাবছেন শ্রমিকরা বলে মনে করেন। নগরীর ময়রাপোতা এলাকার ইজিবাইক চালক আলামিন বলেন, তালুকদার খালেক একজন ভালো মানুষ। সেকারনে নৌকাতেই ভোট দেব। কারন পুলিশ ও প্রশাসন ইজিবাইক বন্ধ করতে চাইলেও তিনি নগরীতে ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে আইনসম্মতভাবে চরাচলের ব্যবস্তা করেছেন। মানুষের জন্য কাজ করছেন, রাস্তাঘাটে সংস্কার করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনো কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে একটা সুন্দর শহর পাবো।

খুলনার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আহবায়ক এ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, মেয়র পদে তালুকদার খালেক ছাড়া কেউই নগরীল উন্নয়নকামী মানুষের প্রত্যাশা পুরনের মত প্রার্থী নেই। তিনি বিগত সময়ে অনেক ভালো কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে অনেক মানুষের বিরাগভাজনও হয়েছেন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি এটাই তার সবচেয়ে পজিটিভ পয়েন্ট। সেজন্য খুলনার উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ শান্তিতে বসবাসের  পরিবেশ পাবে নগরবাসী। সুতরাং উন্নয়নসহ সার্বিক বিচারে তাকেই ভোট দেয়া উচিত বরে তিনি মনে করেন।

খুলনা সিটির এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৯। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬। এবার ৪২ হাজার ৪৩৬ জন ভোটার বেড়েছে। এই তরুণ ভোটারদের টানতে সব মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারেও নানান প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মহানগর  আওয়ামী লীগের সাদারন সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, এবারের নির্বাচনে নতুন প্রায় ৪৩ হাজার ভোটার রয়েছে। তাই সবগুলো ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ,শ্রমিকলীগ, স্বেচ্চাসেবকলীগ  ও অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটের সমর্থন আদায়ে ক্যাম্পেইন করছে। নতুন ভোটাররা ভোট দিতে আসার ব্যাপারে সব সময়ই বেশী উৎসাহী হয়। এছাড়া নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসতেও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ভোটের দিন বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতার্মীরা কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, মহানগরের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং কেন্দ্রীয় নেতারাও নৌকার পক্ষে খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও এসএম কামাল হোসেন নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খুলনা ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধূ আইনজীবী পরিষদ, ন্যাপ ভাসানী, হাজী কল্যান ফাউন্ডেশন, বরিশাল সমিতি, বাগেরহাট সমিতি, স্বাধীনতা সাংবাদিক প্রচারনা কমিটি ও সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টার ঐক্য পরিষদ, নারী ‍উদ্যোক্তা এসোসিয়েশনসহ শতাধিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রচার-প্রচারনা করছেন। এ সকল সংগঠন খুলনার উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীর পক্সে বোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছেন।

আগামী ১২জুনের নির্বাচনে ৫জন মেয়র, ১৩৬জন সাধারন কাউন্সিলর ও ৩৯জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১৮৯টি ভোট কেন্দ্রের সবকয়টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহন করা হবে।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন 

নগরীর উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জোয়ারে খালেক, প্রতিদ্বন্দীতায় ধারে কাছে নেই অন্য চার প্রার্থী

প্রকাশিত সময় : ০৮:৪২:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩

###    খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। শনিবার শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ততম দিন পার করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। খুলনা সিটিতে অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো উতপ্ততা যেমন নেই, তেমনি ভোটের মাঠের লড়াইও ঠিক তেমন জমেনি। ভোটের আমেজও নেই। নগরীর প্রায় সাড়ে ৫লাখ ভোটারের  অধিকাংশেরই ধারনা এবারের নির্বাচনে বিশেষ করে মেয়র পদে লড়াই  জমবে না। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ছাড়া আরও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি ও একজন স্বতন্ত্রসহ চারজন প্রার্থী রয়েছেন তারা সাধারন ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন সাড়া ফেলতেই পারেননি। এদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের আ: আউয়াল ও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু দলীয়ভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছুটা প্রচার-প্রচারনায় নামলেও তেমন জোরালো না থাকায় নগরীর ৪৫কিমি আয়তনের সব প্রান্তের ভোটারের কাছে পৌছাতেই পারেনি। তাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা ও নেতার্মীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোরা সম্ভব হয়নি। ফলে তালুকদার খালেকের প্রতিদ্বন্দ্বি চারজন প্রার্থীই অনেক পিছিয়ে রয়েছেন বলে ভোটাররা মনে করছেন। তবে তালুকদার খালেক নগরীর নারী, শ্রমিক, বস্তিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গের ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে বেশ জোরেশোরে কাজ করেছেন। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায় তার সমর্থনে সব কর্মসূচিতেই লোকজনের ব্যাপক উপস্থিতিও দেখা গেছে। প্রচার-প্রচারনা ও গনসংযোগের সময় সাধারণ মানুষের সাড়া ও সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলের ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রচার-প্রচারনায়। একইসাথে স্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনজীবি, নারী ও স্বেচ্চাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সমিতি, গনমাধ্যমের সাংবাদিক, কমিউনিটি উন্নয়ন সংগঠন(সিডিসি)সহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও জনকল্যানমূলক সংগঠন তালুকদার খালেকের পক্ষে গনসংযোগ, সভা ও মতবিনিময় করে প্রচারণা চালাচ্ছে। তালুকদার খালেকের পক্ষে নগরীর অধিকাংশ মানুষের বিপুল এই সমর্থনের পিছনে মূলত: কাজ করছে নগরবাসীর কাঙ্খিত ‘উন্নয়ন ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের প্রত্যাশা”।একই সাথে সাবেক নগর পিতার কঠোর দৃঢ়চেতা মানসিকতা। যা গত  ৫‘বছরে নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে তালুকদার খালেক মেয়র হওয়ার পর খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ৬০৭কোটি ৫৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় ৫শ’ ৭১টি সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৪শ’ ১৮টি সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  চলমান আছে ১শ’ ১৪টি এবং টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমান আছে ৩৯টি সড়কের কাজ। এছাড়া খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে  ৮শ’ ২৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬ হাজার টাকয় মহানগরীর ২শ’ ৬টি ড্রেন উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে ৫২টি ড্রেনের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং চলমান আছে ৮৫টি ড্রেনের কাজ ও  টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমান ৭২টি। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ইতোমধ্যে ৬শ’ ৪৭টি প্রকল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে এবং চলমান আছে আরও ১শ’ ২৪টি প্রকল্প। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় বিগত ৫ বছরে ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫শ ৮৭টি পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা প্রদানসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের বসতি এলাকায় ৪৯.১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রায় ১হাজার ৩শটি সড়কসহ ড্রেন ও ১২টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন এবং ১হাজার ৫শ’ ৪টি পারিবারিক ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রাক-আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে ৬৮টি পরিবারের জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ শহীদ হাদিস পার্কে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। জার্মান কো-অপারেশনের (জিআইজেড) অর্থায়নে ১শ’ ১৪টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ৬শ’ ৪৩টি ছাগল বিতরণসহ ছাগল পালনের অবকাঠামোগত সুবিধাও প্রদান এবং’জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি মোকাবেলায় খুলনা শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর দৌলতপুর ও মহেশ্বরপাশায় শহর রক্ষা বাঁধ, রূপসায় রিভার ফ্রন্ট পার্ক, দেয়ানায় চৌধুরী খাল খনন ও পাড় বাঁধাইসহ নবীনগর, বাস্তুহারা কলোনী ও সোনাডাঙ্গা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ড্রেন উন্নয়ন, আলুতলা সুইচ গেট আধুনিকায়ন, নিরালা খাল খনন, পাড় বাঁধাই ও দু’ পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ ২৩টি পুকুরের উন্নয়নে ৪শ’ ৯১ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকার প্রকল্প ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ‘একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কোভিড সংক্রমণের কারণে প্রায় ৩ বছর কাজ বন্ধ থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।এর পরেও যে উন্নয়ণ হয়েছে তা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টু নগরবাসীর।  তবে এজণ্য নগরবাসীকে হয়তো কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে খুলনা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশা করেন নগরীর অধিকাংশ মানুষ। যদিও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু এরশাদের সময়কার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নগরীর দৃশ্যমান উন্নয়নে ২২দফা ইশতেহার ঘোষনা করে ভোটারদের ভোট কামনা করে প্রচারনা করছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আওয়াল অনিয়ম-দূর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী ও জলাবদ্ধতা দুরীকরন এবং পরিচ্ছন্ন ও ন্যায়ের শাসনের নগরী গড়তে ২৮দফা ইশতেহার ঘোষনা করে প্রচারনা করেছেন।

অন্যদিকে, ২০১৮সালের মত প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় তালুকদার খালেক বিজয়ী হবেন এটা এক প্রকার নিশ্চিত হিসেবে নিচ্ছেন ভোটাররা। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্তাভাজন তালুকদার খালেক ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হলে খুলনা নগরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন যেমন হবে না। তেমনি মহানগরীর উন্নয়ন কাজও থেমে যাবে। তাই তালুকদার খালেকের বিকল্প কাউকে চিন্তায় আনতে চাইছেন না তারা। খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাযর নানান বয়সের  ও শ্রেনী-পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের লবনচরা বান্দা বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করাই ভালো। কারন বিরোধী দলের কেউ জিতলে সার্বিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারে না। বিরোধী দলের প্রার্থী জিতলে সরকারীভাবে তাকে অসহযোগিতা করা হয়। ২০১৩সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র মো: মনিরুজ্জামান মনি জিতেছিল। কিন্তু তিনি তেমন কোন কাজই করতে পারেননি। কাজেই বর্তমান সরকারী দলের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করা উচিত।  হাজী আব্দুল মালেক ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক এসএম সোহেল ইসহাক বলেন, বিগত ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর পাচ বছরের মধ্যে করোনার কারণে প্রায় তিন বছর কেসিসির তেমন কোন কাজই করতে পারেনি। যদিও সরকার আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিল। যার অনেক কাজই করা সম্ভব হয়নি। এসব কাজ সম্পন্ন করতে হলে বর্তমান মেয়র তালুকদার খালেককেই ভোট দেয়া উচিত। তাছাড়া অন্য যে প্রার্থীরা রয়েছে তারা কেউই খালেকের বিকল্প হতে পারবে না বলে আমি মনে করি। নিরালা এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মো: হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেন, এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকের অবস্থান বেশ শক্ত। তিনি মেয়র থাকাকালে অনেক ভালো কাজ করেছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে আপোসহীনভাবে  নিয়ন্ত্রণ করেছেন। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বেশির ভাগ মানুষ তালুকদার খালেকের রয়েছে মনে হচ্ছে। নগরীর দৌলতপুর এলাকার তরুন ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ‍উদ্যোক্তা মো: রুহুল আমীন বলেন, তালুকদার খালেক তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তা এবং ট্যাক্স-লাইসেন্স ফিস কমানোর কথা বলেছেন। এছাড়া আধুনিক স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একাজগুরো তিনি অতি সহজেরই ইচ্ছে করলেই করতে পারবেন। এজন্য সরকারের উপর তাকিয়ে থাকতে হবে না। গত নির্বাচনেও তিনি নতুনদের জন্য যে কথা দিয়েছিলেন সেসব কথার অধিকাংশ বিশেষ করে করোনাকালীন সমস্যায় তিনি তরুন ও নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে কথা  রেখেছেন। এজন্য আমি মনে করি যোগ্য হিসেবে তাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করা ‍উচেত।  রায়পাড়া এলাকার গৃহবধূ শর্মিলী দাস ও সুলতানা রহমান বলেন, এবারে যে ৫’জন মেয়র প্রার্থী আছেন তাদের মধ্যে তালুকদার খালেকই সবচেয়ে যোগ্য। তিনি গত ৫বছর খুলনার উন্নয়নে অসাধারন কাজ করেছেন। তিনি এবার কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার কথা, আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল এবং সিটি করপোরেশনে মায়েদের জন্য পৃথক সেবার ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়ে কাজ করেন। তাই ভোট দিয়ে তাকেই বিজয়ী করতে চাই। বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মিলন রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নগরীতে তালুকদার খালেকের বিগত সময়ে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্তা বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক কাজ হয়েছে। অনেক অনুন্নত এলাকায়ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় জলাবদ্ধতা কমেছে। এখনও অনেক এলাকায় কাজ চলছে। ২০১৩সালে বিএনপির নেতা মনিরুজ্জামান মনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরীতে উন্নয়নের কোন কাজ করতে পারিননি। তিনি শুধূই বিধি মোতাবেক ব্যবস্তা গড়ে ‍তুলেছিলেন। তালুকদার খালেক নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারন মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।

অন্যদিকে, নগরীর শিল্পাঞ্চল খ্যাত খালিশপুর-দৌলতপুরের পাটকলগুলি বিগত বিএনপির সময়ে বন্ধ হওয়ায় স্তানীয় শ্রমিক ভোটাররা ক্ষিপ্ত ছিল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে খালিশপুর জুটমিলসহ কয়েকটি মিল চালু করলেও বর্তমান সরকার দেশের ২৫টি সরকারী পাটকল বন্ধ করায় ক্ষোভ রয়েছে পাটকল শ্রমকিদের। তবে শ্রমিকদের জন্য স্তানীয় এমপি ও শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান ‍সুফিয়ান অনেক সহায়তা দেওয়ায় শ্রমিক ভোটাররাও তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তালুকদার খালেককে আবারও ‍সুযোগ দিতে চায়। ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক মো: নুর ইসলাম, দীন মোহাম্মদ, আব্দুস সুবরসহ অনেকেই বলেন, মিলের শ্রমিকরা বরাবরই আওয়ামীলীগের সরকারের উপর খুশী। তারপেরও বর্তমান মেয়াদে সরকার ২৫টি মিল বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের বিপাকে ফেলেছে। শিল্পাঞ্চলের লক্ষাধিক শ্রমিক ভোটার জুটমিল চালুর প্রত্যাশায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলনও করে মিল চালুর জন্য দাবী করেছে। কিন্তু তিনমাসের কথা বলে বন্ধ করলেও আড়াই বছরেও চালু হয়নি। এ কারনে মিলের শ্রমিকরা আওয়ামীলীগের উপর অনেকটাই ক্ষিপ্ত  রয়েছে।  তবুও খুলনার উন্নয়নে তালুকদার খালেক যে কাজ করেছেন সেটাতে শ্রমিকরা খুশী। তবে তারা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান ‍সুফিয়ান ও তালুকদার খালেকের দেয়া প্রতিশ্রুতি জুটমিল চালুর ওয়াদা বাস্তবায়নে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার কথা ভাবছেন শ্রমিকরা বলে মনে করেন। নগরীর ময়রাপোতা এলাকার ইজিবাইক চালক আলামিন বলেন, তালুকদার খালেক একজন ভালো মানুষ। সেকারনে নৌকাতেই ভোট দেব। কারন পুলিশ ও প্রশাসন ইজিবাইক বন্ধ করতে চাইলেও তিনি নগরীতে ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে আইনসম্মতভাবে চরাচলের ব্যবস্তা করেছেন। মানুষের জন্য কাজ করছেন, রাস্তাঘাটে সংস্কার করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনো কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে একটা সুন্দর শহর পাবো।

খুলনার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আহবায়ক এ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, মেয়র পদে তালুকদার খালেক ছাড়া কেউই নগরীল উন্নয়নকামী মানুষের প্রত্যাশা পুরনের মত প্রার্থী নেই। তিনি বিগত সময়ে অনেক ভালো কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে অনেক মানুষের বিরাগভাজনও হয়েছেন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি এটাই তার সবচেয়ে পজিটিভ পয়েন্ট। সেজন্য খুলনার উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ শান্তিতে বসবাসের  পরিবেশ পাবে নগরবাসী। সুতরাং উন্নয়নসহ সার্বিক বিচারে তাকেই ভোট দেয়া উচিত বরে তিনি মনে করেন।

খুলনা সিটির এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৯। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬। এবার ৪২ হাজার ৪৩৬ জন ভোটার বেড়েছে। এই তরুণ ভোটারদের টানতে সব মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারেও নানান প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মহানগর  আওয়ামী লীগের সাদারন সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, এবারের নির্বাচনে নতুন প্রায় ৪৩ হাজার ভোটার রয়েছে। তাই সবগুলো ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ,শ্রমিকলীগ, স্বেচ্চাসেবকলীগ  ও অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটের সমর্থন আদায়ে ক্যাম্পেইন করছে। নতুন ভোটাররা ভোট দিতে আসার ব্যাপারে সব সময়ই বেশী উৎসাহী হয়। এছাড়া নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসতেও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ভোটের দিন বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতার্মীরা কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, মহানগরের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং কেন্দ্রীয় নেতারাও নৌকার পক্ষে খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও এসএম কামাল হোসেন নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খুলনা ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধূ আইনজীবী পরিষদ, ন্যাপ ভাসানী, হাজী কল্যান ফাউন্ডেশন, বরিশাল সমিতি, বাগেরহাট সমিতি, স্বাধীনতা সাংবাদিক প্রচারনা কমিটি ও সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টার ঐক্য পরিষদ, নারী ‍উদ্যোক্তা এসোসিয়েশনসহ শতাধিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রচার-প্রচারনা করছেন। এ সকল সংগঠন খুলনার উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীর পক্সে বোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছেন।

আগামী ১২জুনের নির্বাচনে ৫জন মেয়র, ১৩৬জন সাধারন কাউন্সিলর ও ৩৯জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১৮৯টি ভোট কেন্দ্রের সবকয়টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহন করা হবে।##