
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৯নং ভাটখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ
কেটে আত্নসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হান্নান হাওলাদারের বিরুদ্বে বিভাগীয়
মামলা ও শোকজ করা হয়েছে। গত ১২ডিসেম্বর-২২ এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয়
মামলা দায়ের করেন খুলনার উপপরিচালক মো: মোসলেম উদ্দিন। তবে শোকজ
নোটিশ ও মামলার দায়েরর ২০দিন অতিবাহিত হলেও অজ্ঞাত কারনে মামলা ও
শোকজ নোটিশের কপি অভিযুক্ত শিক্ষকের হাতে পৌছায়নি বলে দাবী করেছেন
তিনি।এদিকে, বিভাগীয় উপপরিচালকের শোকজ নোটিশ ও মামলার কপি মোরেলগঞ্জ
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার গোপন করে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাচাতে মরিয়া
হয়েউঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সরকারী আদেশ এড়িয়ে গিয়ে ঘটনা
ধামাচাপা দিচ্ছেন বলেও কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এ
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৯নং ভাটখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
গাছখেকো প্রধান শিক্ষক হান্নান হাওলাদার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের
হয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে টাকা আত্নসাত করে। পরে গাছ কাটার
খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে গত ১২ডিসেম্বর তার বিরুদ্বে বিভাগীয়
মামলা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ মোসলেম
উদ্দিন। পত্রের সূত্রে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক হান্নান হাওলাদার বিদ্যালয়ের সীমানা
প্রাচীর নির্মানস্থলের চারটি বড়গাছ এবং আরও ৩/৪টি নারকেল গাছ উর্দ্ধতন
কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এসএমসির রেজুলেশনের মাধ্যমে কেটে বিক্রি করেন। এ ধরনের
কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি
৩(খ) ও ৩(ঘ) ধারা অনুযায়ী অসদাচরণ ও দৃর্নীতির আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ
বিধায় তার বিুরদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হলো। একই সাথে প্রধান শিক্ষককে
শোকজ করে পত্র প্রাপ্তির ১০কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত ১৯নং ভাটখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হান্নান হাওলাদার
মুঠোফোনে জানান, ‘আমার বিরুদ্বে যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে তার কোন কপি
উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমি পাইনি। আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনেছি যে
বিভাগীয় মামলা হয়েছে। কোন নোটিশ ও বিভাগীয় মামলার পত্র পাইনি’।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান সোমবার
মুঠোফোনে জানান, তিনি ১৯ডিসেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব গ্রহন
করেছেন। বিভাগীয় মামলা ও শোকজের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এক প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, ‘আমি পুটিখালী ক্লাষ্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবেও
এমন পত্র আমি পাইনি’। তবে উপজেলার পুটিখালী ক্লাষ্টারের আওতায় ১৯নং ভাটখালী
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এই ক্লাষ্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মোঃ মনিরুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা
জানান, যেখানে উপপরিচালক বিভাগীয় মামলা ও শোকজ করেছে সেখানে উপজেলা
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে বাচাঁতে মরিয়া হয়ে লেগেছেন।
তিনি উপপরিচালকের শোকজ নোটিশ ও মামলার কপি গোপন করে সরকারী আদেশ
এড়িয়ে গিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া
সরকারী সম্পত্তি এভাবে কেউ কাটতে ও বিক্রী করতে পারে না। যারা সরকারী
সম্পত্তি আত্মসাত ও বিক্রীর সাথে জড়িত এবং প্রধান শিক্ষককে বাচাতে প্রচেষ্টকারীদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা।
এ বিষয়ে বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ মোসলেম উদ্দিন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের
জানান, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৯নং ভাটখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ
কাটার ঘটনায় ১২ডিসেম্বর-২০২২ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হান্নান হাওলাদারের বিরুদ্বে
বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ তাকে শেকজ করা হয়েছে। ১০কার্য দিবসের মধ্যে তার
জবাব দেওয়ার কথা ছিল। তবে আজ পর্যন্ত জবাব দেয়নি। তিনি আরো জানান, গাছ
কেটে যে অপরাধ করেছে তার চেয়ে শোকজের জবাব না দেওয়া আরো বড় অপরাধ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে শোকজের নোটিশ পৌছানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া
আমার বিভাগীয় অফিস থেকে মামলা ও শোকজ পত্র রেজিষ্ট্রি ডাকে স্বক্ষরিত পত্রের
অনুলিপির ৪নং স্মারকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা
অফিসারকে পত্র দেওয়া হয়েছে। যার রশিদও অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। ডাক বিভাগ
প্রাপককে না পেলে চিঠি ফেরত দিবে। আজ পর্যন্ত চিঠি ফেরত আসেনি প্রধান শিক্ষক
অবশ্যই চিঠি পেয়েছে। তিনি বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে দেখবে বলে জানান। ##