
ভোট চুরি করলে দেশের জনগণ ছেড়ে দেয় না, ক্ষমা করে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি বিএনপি একটা নির্বাচন করে, ভোটারবিহীন নির্বাচন। সেই সময় তাদের ভোট কারচুপি, নানা ধরনের অপকর্মের কারণে সব দলই কিন্তু নির্বাচনটা বয়কট করেছিল। জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলেই কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে নির্বাচনকে মেনে নেয়নি। তখন তীব্র প্রতিবাদ হয়, গণআন্দোলন হয় এবং যার ফলে খালেদা জিয়ার পতন হয়। মাত্র দেড় মাসের মাথায় ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে খেলা, কারচুপি এটা কিন্তু বিএনপি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই শুরু করেছে। যেটা ৯৬ সালেও আমরা দেখলাম, ১৫ ফেব্র“য়ারির নির্বাচন। আবার ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তারা নির্বাচন করার একটা প্রহসন শুরু করলো। এ দেশের মানুষ কিন্তু কেউ ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তাদের ক্ষমা করে না, মানুষ কিন্তু ছেড়ে দেয় না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখনই ক্ষমতা এসেছে, তখনই তারা জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’
একটি মহল বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে চক্রান্ত করছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে তখনই তাদের চক্রান্ত বৃদ্ধি পায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে বুদ্ধি বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কিছু কিছু আবার বুদ্ধিজীবী প্রতিবন্ধী। এই বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবন্ধী কারণ তারা কোনও উন্নয়নই দেখে না, কীভাবে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটানো যায় সেই চক্রান্তে ব্যস্ত।
আ’লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত কেন হচ্ছে তার কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তার কারণ একটাই, যখন কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে, হয় মার্শাল ল হলো বা ওই যে ইয়াজউদ্দিন, মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দিন ওইরকম সরকার যদি আসে; যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন তারা মূল্যহীন হয় না তখন তাদের মূল্য বাড়ে।’
অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদের মূল্য খুব বেড়ে যায় উলেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ যারা এভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল অথবা মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতা দখল করে তারা তো জনগণের সমর্থন পায় না। তখন এই বুদ্ধিজীবীরা দাঁড়িয়ে পড়ে। ওই যে লেখা থাকে না ‘ইউজ মি’ মানে আমাকে ব্যবহার করুন-তো ওনারা ওই রকম জামা কাপড় ইস্ত্রি করে রেডি হয়ে যান ‘ইউজ মি’ বলে এবং ওনারা ব্যবহারই হন। যখন গণতন্ত্র আসে, গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ চলে-তখন তারা নিজেদের খুব হতাশ মনে করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের একটা কথা বলতে চাই, তারা তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিটা দেশের কল্যাণে কাজে লাগাক, অকল্যাণকর কাজের জন্য তারা কেন তাদের এই জ্ঞানটা খরচ করেন?
তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন করছি সেটা একটু দৃষ্টি খুলে দেখুক, আরও ভালো কাজ কী করা যায় সেই পরামর্শটা দিক। নির্বাচিত সরকার হটিয়ে অনির্বাচিত কাউকে আনা যায় কিনা ওই চক্রান্ত করে দেশের কোন ভালো কাজটা হবে? এটা আমার প্রশ্ন।’
বিএনপি জনগণের ভোট পাবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেছে এবং সেই নির্বাচন নিয়ে কারও কোন প্রশ্ন নেই। তো সেই নির্বাচনে বিএনপি সিট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি। ২৯ প্লাস ১, তাহলে প্রশ্ন এখানে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে সেই স্বপ্নটা কীভাবে দেখে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা (আওয়ামী লীগ) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবো। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে আ’লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় আসবে। ভোট ছাড়া, জনগণের সমর্থন ছাড়া আ’লীগ কখনও ক্ষমতায় আসেনি। কেউ এসে মার্শাল ল’ দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আ’লীগ ক্ষমতায় এসেছে নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে জনগণের হৃদয় জয় করে, তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে। এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবেÑআমরা জনগণের, জনগণ আমাদের, এই দেশ আমাদের।