
- ### ময়মনসিংহে পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় পেটে জমজসহ প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত নগরীর ব্রাহ্মপল্লী এলাকার এ ঘটনা ঘটে। রেখা আক্তার ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া এলাকার মাহমুদুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি ১৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রেখার স্বামী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কিডনীর পাথর অপারেশনের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় কিছু দালালরা ১৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্বা রেখা আক্তারকে ব্রাহ্মপল্লীর পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। বৃহস্পতিবার রাতে রেখা আক্তারের অপারেশন করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আশরাফুল হক মোল্লা।এসময় রোগীকে এনেসথেসিয়া দেন ডাঃ আরিফ রব্বানী। তিনি অরো বলেন, অস্ত্রোপচার শুরুর পর ওটির (অস্ত্রোপচার কক্ষ) ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পাই। এর কারণ জানতে চাইলে একজন নার্স বলেন, অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। তাই, এমন চিৎকার করছেন। এরপর আমরা আরও অনেকবার ওটির ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পাই। অস্ত্রোপচার শেষে রোগীকে পোস্ট-অপারেটিভ রুমে রেখে সবাই চলে যান। পরে রাত প্রায় ৩ টার দিকে আমি পোস্ট-অপারেটিভ রুমে গিয়ে দেখি রেখা আক্তারের কোন সাড়াশব্দ নাই এবং সাথে সাথে নার্সকে বিষয়টি জানাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এ্যম্বুলেন্স ডেকে রোগীকে ময়মনসিংহ শহরতলীর চুরখাইয়ে অবস্থিত বেসরকারী কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানকার দায়িক্তরত চিকিৎসক রেখাকে মৃত ঘোষনা করেন।তথন এ্যম্বুলেন্সে করে যমজ সন্তানসহ রেখাকে পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে মরদেহ রেখে শুক্রবার সকালে বিক্ষোভসহ প্রতিবাদ জানায় স্বজনেরা। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালের চারপাশে শত শত লোকজন ভীড় জমায়। এসময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৌশলে হাসপাতালে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।রেখার বড় ভাই আব্দুল জব্বার বলেন, রেখা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার ৩ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ভুল চিকিৎসায় আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রোগীকে আরেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় তারা। এই ভুল চিকিৎসার জন্য দায়ী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।এ বিষয়ে পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, অস্ত্রোপচার কোন চিকিৎসক করেছেন তা আমার জানা নেই। রোগীর লোকজন বিষয়টি বলতে পারবেন। আমি ঢাকায় আছি। সেখান থেকে ফিরে বিস্তারিত জানানো যাবে। অভিযুক্ত এনেসথেসিওলজিষ্ট ডাঃ আরিফ রব্বানী অভিযোগ অস্বীকার করে এর দায় চাপান হাসপাতাল মালিকের ওপর। তিনি বলেন, অপারেশনের পর রোগীকে রক্তের যোগানসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক ম্যানেজমেন্ট করতে না পারায় এই মৃত্যু ঘটেছে। ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার পেটে যমজ সন্তান ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য ডাঃ আশরাফুল হক মোল্লা সার্জন না হয়েও এই রোগীকে সার্জারি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সার্জনেরা। এর আগে নানা অভিযোগে ময়মনসিংহ মেডিকেলের বর্হিবিভাগ থেকে ডাঃ আশরাফুলকে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। পরে তদবির করে ময়মনসিংহ সদরের পরাণগঞ্জ হাসপাতালে চলে আসেন তিনি।##