
মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরার কারণে মৎস্য ও কৃষি চাষাবাদে লোকশানের মুখে পড়েছে চাষীরা । উপজেলার কোদালিয়া চুনখোলা, গাংনী, কুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় নয় হাজারেরও বেশি মাছের ঘেরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে পড়েছে ঘের ও চিংড়ি চাষীরা। ঘেরে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মারা যেতে শুরু করেছে মাছ। এতে চিংড়ি শিল্পের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
অন্যদিকে অনাবৃষ্টির কারনে , পাট কাটার সময় পাট ক্ষেতে ও আসপাসে পানি না থাকায় পাট পচনের জন্য নিতে হচ্ছে দূরে যেখানে পানি আছে । আবার কেউ কেউ পাট ডাঙ্গা থেকে রাস্তায় তুলে ভ্যান ও ট্রাকে করে অন্যত্রে পাঠাতে ও দেখা গেছে । এবারের মতো অতিমাত্রায় খরা ও অনাবৃষ্টি দেখেনি এখানকার কৃষকরা। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি ক্ষেত্রে ।
এ উপজেলায় সাধারনত ধান এবং চিংড়ি মাছ একই সাথে চাষাবাদ করা হয়। শীতকালে ধান রোপনোর সময় ঘেরের পানি কমিয়ে ক্যানেলে নামিয়ে রাখা হয়। কিন্তু চলমান অনাবৃষ্টি ও খড়ায় ক্যানেলের পানি শুকিয়ে গেছে। এতে ক্যানেলে মাছের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারনে ক্যানেলের পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। এতে চিংড়ি মাছসহ অন্যান্য মাছ মারা যাচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে- এ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৪ হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের রয়েছে। বাগদা চিংড়ির চাষ হয় ৪০৯৩ হেক্টর জমিতে এবং গলদা চিংড়ি চাষ হয় ৫৩১.৮৪ হেক্টর জমিতে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ উপজেলায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২২৬১ মেট্রিক টন এবং গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৮৬ মেট্রিক টন ।কিন্তু এবছর পানির অভাবে চিংড়ি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা। একই সাথে এ লোকসান কিভাবে পোষাবেন তা নিয়ে তারা আছেন দুশ্চিন্তায়।
উপজেলার কচুড়িয়া গ্রামের আতিয়ার শেখ বলেন , আমার ঘেরে ৫ হাজার রেনু পোনা ছেড়েছি বিরুপ আবহাওয়ার কারণে অনেক মাছ মারা গিয়েছে , অল্পকিছু আছে তা পানি সল্পতার কারনে তেমন বাড়েনি ।
আর সবজি চাষের জন্য ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি চলমান আবহাওয়ার কারণে গাছ মারা যাওয়ার কারণে চার বার শসা করলা গাছ রোপন করেছি । বিক্রি করেছি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা । সব মিলে লসে আছি ,
উপজেলার দারিয়ালা গ্রামের মৎস্য চাষী মোল্লা জসিম উদ্দিন তিনি ধান বিক্রি কনে ৫০ হাজার রেনু পোনা ছাড়ের তা সহ পুরানো চিংড়ি সব মারা গেছে । এছাড়া ও কুলিয়া গ্রামের মৎস্য চাষী লিটন শেখ,
বেদবাড়িয়া গ্রামের কিবরিয়া শেখ , আড়ুয়াডিহি গ্রামের পলাশ শেখ , এস এম হোসে আলি , মিষ্টার মোল্লা ,রাসেল শেখ , রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের গিরিস মন্ডল , টিটব বিশ্বাস, রামপদ রায়, কচুড়িয়া গ্রামের একুব শেখ , কুটি , জিয়া সহ অন্যান্ন ঘের ও মৎস্য চাষীরা এবারের অনাবৃষ্টি ও খরার কারনে মাছ ও সবিজ চাষে দেনা ও ক্ষতির মুখে ।
এমতো অবস্থায় গরীব চাষীরা সরকারি সাহায্য ও অনুদান পেলে ঘুরে দাড়াতে পারবে বলে তারা আশাবাদী ।
মোল্লাহাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মৎস্য চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অত্র মোল্লাহাটে ১৪ হাজারের বেশী বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজারের বেশী ঘের পানি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে মাছ এবং চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে । এ অবস্থায় আমরা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। চলমান মৌসুম শেষে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের তালিকা করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠাবো। পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের যদি সাহায্য সহযোগী করা যায় তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।
####