০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দৈনিক মধুমতির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তালুকদার খালেক

আগামী মেয়াদেই আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করা হবে : তালুকদার আব্দুল খালেক

####

খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে তিনি নগরীর উন্নয়ন ও নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ৪০দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারও দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর এখন দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবিদের ফুলের শুভেচ্ছায় ভাসছেন। নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে তিনি সিটি করপোরেশনের চলমান উন্নয়ণ কাজ, আগামী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মধুমতির সাথে। নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের আগেই তুলে ধরেছেন নির্বাচন ও নগরীর উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে। পাঠকদের জন্য তার বিশেষ সাক্ষাতকার গ্রহন করেছেন সুনীল দাস ছৌধুরী।

মধুমতি : নির্বাচনে আপনার বিজয়কে কিবাবে ম্যূলায় করছেন?

তালুকদার আব্দুল খালেক : খুলনা নগরীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে জন্য বিশেষ করে গত ৫বছরের যে উন্নয়ণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলোকে সম্পন্ন করতে খুলনার মানুষ ভোট দিয়েছে। উন্নয়ন যেন বাস্তবায়ন হয় এবং একটি সুন্দর বাসযোগ্য নগরী হয় সেটাই দেখেছে মানুষ। নগরীর মানুষ মনে করেছে খুলনার উন্নয়ণ আমাকে দিয়েই সম্ভব হবে। কেননা বিগত দিনে যারা মেয়র হয়েছেন তারা নগরীর উন্নয়নে তেমন কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি।সেজন্য ৫বছরের মধ্যে দুই বছর করোনার সময় বাদে তিন বছরে খুলনায় যে পরিমান বরাদ্ধ এসেছে এবং যে পরিমান উন্নয়ণ কাজ হয়েছে তা কেসিসির বিগত ৩৩বছরের ইতিহাসে অন্য কেউ করতে পারেনি। এমনকি করোনাকালীন সময়েও নগরীর প্রায় ১০লাখ সাধারন মানুষকে খাদ্য, অর্থ ও ওষুধসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। এ সকল কর্মকান্ডের কথা মানুষ মনে রেখেছে। আওয়ামীলীগ সরকার ও আমাকে ভালোবেসে ভোটাররা ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। অন্যদিকে,   দল এবার সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। সিটি নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল সবস্তরের নেতার্শীদের মধ্যে একটি উদ্যোগ ও স্বত:স্ফূর্ততা ছিল। এছাড়া একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা পেয়েছি। র্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া। আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাও প্রমানিত হয়েছে। এবারের বিজয়কে তিনি নগরবাসীর জয় বলেও অভিহিত করেন। দায়িত্ব গ্রহন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নগরীর উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজগুলি সম্পন্ন করবো। চলমান কাজ শেষ হলে খুলনা মহানগরীতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা দৃশ্যমান হবে।

 

মধুমতি : প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখার এত বেশী ভোট পাওয়ার কারন কি বলে মনে করেন ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : হাতপাখা প্রতিকের প্রার্থী বেশী ভোট পাওয়ার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। ২০১৮সালের নির্বাচনে হাতপাখা ১৪হাজার ভোট পেয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিকভাবে এত শক্তিশালী নয় যে তারা এত ভোট পেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, বিএনপির কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল। তারা বহিষ্কৃত হলেও তাদের একটি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। যে কারনে একেক জন দুই বা তিন বারও কাউন্সিলর হয়েছেন। তাদের সেই ভোটারগুলি এবং বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে গিয়ে হাতপাখা, লাঙ্গল ও টেবিল ঘড়িতে ভোট দেওয়ায় তাদের ভোটের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮সালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী থাকায় হাতপাখা ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়েছিল আর লাঙ্গল পেয়েছিল ১ হাজার ৭২ ভোট। তারা এতভোট কিভাবে পায় সেটা তো সবারই জানা। ২০১৮সালে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিল এক লাখ ৯হাজার ভোট। তাদের সে ভোটগুলো সবই তো এভাবেই তিন জায়গায় ভাগ হয়ে গিয়েছে।এ ভোট তো আওয়ামীলীগের না।এ ভোট আওয়ামীলীগের এন্টি ভোট।

মধুমতি: ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা পুরন হয়নি-কারন কি ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমি প্রচার-প্রচারনার সময় সাধারন মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছিলনাম। সেটাতেই আশা করেছিলাম এবারের নির্বাচনে ৬০-৬৫শতাংশ ভোটার উপস্থিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। কারন অনেক ভোটার খুলনার বাইরে আছেন। ২০১৮সালের নির্বাচনে ৩লাখ ৯৯হাজারের বেশী ভোটার ভোট দিয়েছিল। তখন শিল্পাঞ্চল খ্যাত খালিশপুর ও দৌলতপুরের পাটকলগুলিতে দেড়লক্ষাধিক ভোটার ছিল। খালিশপুর, দৌলতপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চলের অনেক ভোটার বাড়ীতে চলে গেছে। তারা এখানের জুট মিলে কাজ করতো। মিল বন্ধের পরে সরকার তাদের পাওনা পরিশোধ করায় অনেকেই বাড়ীতে চলে গেছেন টাকা-পয়সা নিয়ে। যারা নগরীতে ভোটার ছিলেন। সেজন্য একটা অংশের ভোটার উপস্থিত হয়নি। এজন্য ভোটার তালিকার সাথে বাস্তবে একটা গ্যাপ তৈরী হয়েছে। এসব শ্রমিকদের বেশীরভাগ ভোটারই আওয়ামীলীগ সমর্থক। তারপেরও যে পরিমান ভোটার ভোট দিয়েছে সেটা আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়।

মধুমতি : গত ১০বছরে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলন কিন্তু আজও তা হয়নি, আপনি কি বলবেন ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমি কথা দিয়েছিলাম পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরী গড়ে তোলার। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার জন্য কাজ আর এগোয়নি। ইতিমধ্যেই জার্মান ডেভলমেন্ট কোঅপারেশন, জিআইজেড ও এডিবিসহ কয়েকটি সংস্থার সাথে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। তাদের সহায়তায় ও কারিগরি পরামর্শে কিভাবে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে পারি সে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর গৃহস্থালী বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সার, বিদ্যুত ও ডিজের তৈরীর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  ও নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের পাচটি স্বাস্থ্যকর শহরের তালিকায় খুলনা সিটি করপোরেশনকে অর্ন্তভুক্ত করেছে।

তিনি বলেন, আমি নতুনভাবে দায়িত্ব নেয়ার পর নগরীর ফুটপাত নগরবাসীর চলাচলের জন্য উন্মুক্থ করার ব্যবস্তা নেয়া হবে। ফুটপাথে কেউ ব্যবসা করতে বা দোকান দিতে পারবে না। অল্পদিনের মধ্যেই ঘোষনা দেয়া হবে। ফুটপাথে কেউ দোকান দিলে বা ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে বাড়ীর ময়লা একটি নিদির্ষ্ট জায়গায় ফেলার জন্য জন্য বাড়ীর মালিক, বাড়াটিয়া ও দোকানদারদেরকে বলা হবে। রাস্তায় বা ড্রেনে কোন ময়রা ফেরা চলবে না। ভালো শহর চাইতে গেলে নগরবাসীরও কিছু দায় দায়িত্ব আছে। একটা নিদির্ষ্ট স্তানে ময়লা-আবর্জনা ফেরার পর সেখনে থেকে তুলে নেয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য কেসিসি সব ধরনের প্রচারসহ নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধকরনের জন্য যা করার সেটা করা হবে। আমরা এটার জন্য কাজ শুরু করেছি। এ কাজ চলমান থাকবে।

তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্ন নগরীর গড়ার কাজটা এগোবে। খুলনায় ১৯৬১সালে খুলনা ‍উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ ও হাউজিং এস্টেট নগরীর উন্নয়নের কাজ করছে। হাউজিং হওয়ার পর খালিশপুর ও দৌলতপুরে ময়লার জন্য জায়গা রাখেনি। এই দুই দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও প্লানাররা তাদের গড়ে তোলা আবাসিক এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেরার জন্য কোন স্থান রাখেনি। যে কারনে সেখানকার বাডীর মানুষ ও এরাকাবাসী রাস্তায় ও ড্রেনে ময়লা ফেলছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন বাজার ও মার্কেটের ময়লা দোকানদাররা অসময়ে রাস্তায় ও ড্রেনে ফেলছে। এজন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ময়লার পাহাড়ে পরিনত হয়। কিন্তু পরে কেসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনেছে। যা সম্পন্ন করতে ১০বছর লাগবে। এভাবে চললে কোনদিনই একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হবে না। তাই কেসিসি শীর্ঘ্রই ঘোষনা দিয়ে রাস্তায়, ড্রেনে ও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার বিুরদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

 

মধুমতি : গত ১০বছরেও আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী গড়ে ওঠেনি, আরও কত বছর লাগবে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : হ্যা, আমি গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এবারের নির্বাচনেও কথা দিয়েছি আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী গড়ে তোলার। এটা নির্ভর করবে উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়তে নগরীর মানুষ কিভাবে ও কতটুকু সহায়তা করবে তার উপর। তবে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এরজন্য যাকিছু করার প্রয়োজন তার সবই করা হবে। তবে একটা সুখবর দিচ্ছি চায়নার একটি সংস্থার সাথে সম্প্রতি একটি প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তারা নগরীর প্রতিটি বাড়ী থেকে গৃহস্থলী বর্জ্য কালেকশন করে নিয়ে প্রকল্পে ব্যবহার করবে। নগরীর রাজবাধ এরাকায় কেসিসি একটা জমি দিয়েছে সেখানে তারা বর্জ্য ব্যবহার করে সার, বিদ্যুত ও ডিজেল তৈরী করবে। তাদের প্রতিদিন ১২০০ টন বর্জ্য প্রয়োজন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর কোথাও কোন বর্জ্য থাকবে না। আরও অতিরিক্ত বর্জ্য দরকার হতে পারে। এ বিষয়ে ২০বছরের চুক্তি হবে। মেয়াদ শেষে তারা কেসিসিকে প্রকল্প হস্তান্তর করবে। সামগ্রিক উন্নয়ণ ও ব্যবস্থাপনা কাজ পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে নিয়ে ৫বছরের মধ্যেই নগরীকে আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করা হবে।

 

মধুমতি : সরকারী বরাদ্ধ থাকলেও কাজ সঠিক সময়ে ও গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে না কি জন্য?

তালুকদার আব্দুল খালেক : বর্তমান রসকার কেসিকে বিগত তিন দশকের তুলনায় সর্বাধিক বরাদ্ধ দিয়েছে।২০১৮সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহনের আগেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৪০০ কোটি টাকারও বেশী বরাদ্ধ দিয়েছিলেন। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের কাছ থেকে একহাজার কোটি টাকাসহ মোট ২হাজার ৫০০কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু করোনার কারনে আড়াই বছর কাজ করতে না পারায় উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েও পিছিয়ে গেছে। কিন্তু উন্নয়ন কাজের জন্য কেসিসির কোন সমস্যা নেই। সমস্যা রয়েছে নগরীতে যারা বসবাস করে তাদের অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মানের জন্য বাড়ির মালিকদের। বিগত তিন বছরে ৪১৮টা রাস্তার উন্নয়ন হয়েছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনসহ উন্নয়ন কাজে ১৪০০কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ২০০-৩০০ রাস্তা, ড্রেন ও খালের পুন:খনন কাজ এবং শতাধিক কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো সমাপ্ত হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই উন্নয়ন দ্যৃশমান হবে। আগামী শুক্রবার কেসিসির ঠিকাদারদেরকে ডাকা হয়েছে। তাদের যে সকল কাজ রয়েছে সঠিক সময়ের মধ্যে করতে না পারলে তাদের কাজ বাতিল করে নতুনভাবে অন্যদেরকে কাজ দেয়া হবে। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যেই সঠিকভাবে কাজ শেষ করা হবে।

 

মধুমতি : মেয়র হিসেবে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার আগে চলমান কাজগুলো শেষ করেই তবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা হবে। ১৫০০কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া রয়েছে। আশা করছি দায়িত্ব গ্রহনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে প্রকল্পের অনুমোদ দেবেন। এই প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেলে এবং বিভিন্ন দাতাসংস্থার সাথে পাইপলাইনে যে প্রকল্পগুলি আছে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে আগামী ৫বছর সুন্দরভাবে নগরীর উন্নয়নে ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে খুলনাকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও তিলোত্তমা মহানগরীতে পরিনত করতে পারবো।

মধুমতি : কেসিসির পরিকল্পনা গ্রহনে বিশিষ্টজনদের মতামত নেবেন কিনা ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : জনগন ভোটের মাধ্যমেই তাদের মতামত আমাকে দিয়েছে। আমি ইশতেহারে বলেছি আমার প্রথম কাজ হলো অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করা। তারপরে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে কাজ করা হবে। ইশতেহারের ৪০দফা আগামী ৫বছরে যতাযথ বাস্তবায়ন করা হবে। এর অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে। বাকী পরিকল্পনার মধ্যে প্রথম কাজ হবে সিটি সিভিক সেন্টার নির্মান। এরপরে নগরীর সবুজায়নের জন্য ও জলাশয় সংরক্ষনের জন্য ২৪টি পুকুর খনন করে পাড় বাধাই করে নাগরিকদের বিনোদন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরী করা, নগরীর ২৮টি মোড় সংস্কার করে সৌন্দর্য্য বর্ধনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। নিরালা খাল খনন করে, দৌলতপুর বাজারের সংস্কার করা ও নদী সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হবে।

মধুমতি : কেসিসির কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা ?

তালুকদার আব্দুল খালেক :  সিটি করপোরেশনের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্তা রয়েছে। এটি চলমান থাকবে। তবে যারা অনৈতিকভাবে কাজ পেতে চায় এবং অনৈতিক সুবিধা নিতে দেনদরবার করে তাদের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সাংবাদিকরা লিখলে কটোর ব্যবস্তা নেবেন বলেন তিমি মতামত ব্যক্ত করেন। নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তাকে পুনরায় নির্বাচিত করায় নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

দৈনিক মধুমতির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তালুকদার খালেক

আগামী মেয়াদেই আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করা হবে : তালুকদার আব্দুল খালেক

প্রকাশিত সময় : ০৯:০৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩

####

খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে তিনি নগরীর উন্নয়ন ও নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ৪০দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারও দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর এখন দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবিদের ফুলের শুভেচ্ছায় ভাসছেন। নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে তিনি সিটি করপোরেশনের চলমান উন্নয়ণ কাজ, আগামী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মধুমতির সাথে। নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের আগেই তুলে ধরেছেন নির্বাচন ও নগরীর উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে। পাঠকদের জন্য তার বিশেষ সাক্ষাতকার গ্রহন করেছেন সুনীল দাস ছৌধুরী।

মধুমতি : নির্বাচনে আপনার বিজয়কে কিবাবে ম্যূলায় করছেন?

তালুকদার আব্দুল খালেক : খুলনা নগরীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে জন্য বিশেষ করে গত ৫বছরের যে উন্নয়ণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলোকে সম্পন্ন করতে খুলনার মানুষ ভোট দিয়েছে। উন্নয়ন যেন বাস্তবায়ন হয় এবং একটি সুন্দর বাসযোগ্য নগরী হয় সেটাই দেখেছে মানুষ। নগরীর মানুষ মনে করেছে খুলনার উন্নয়ণ আমাকে দিয়েই সম্ভব হবে। কেননা বিগত দিনে যারা মেয়র হয়েছেন তারা নগরীর উন্নয়নে তেমন কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি।সেজন্য ৫বছরের মধ্যে দুই বছর করোনার সময় বাদে তিন বছরে খুলনায় যে পরিমান বরাদ্ধ এসেছে এবং যে পরিমান উন্নয়ণ কাজ হয়েছে তা কেসিসির বিগত ৩৩বছরের ইতিহাসে অন্য কেউ করতে পারেনি। এমনকি করোনাকালীন সময়েও নগরীর প্রায় ১০লাখ সাধারন মানুষকে খাদ্য, অর্থ ও ওষুধসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। এ সকল কর্মকান্ডের কথা মানুষ মনে রেখেছে। আওয়ামীলীগ সরকার ও আমাকে ভালোবেসে ভোটাররা ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। অন্যদিকে,   দল এবার সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। সিটি নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল সবস্তরের নেতার্শীদের মধ্যে একটি উদ্যোগ ও স্বত:স্ফূর্ততা ছিল। এছাড়া একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা পেয়েছি। র্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া। আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাও প্রমানিত হয়েছে। এবারের বিজয়কে তিনি নগরবাসীর জয় বলেও অভিহিত করেন। দায়িত্ব গ্রহন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নগরীর উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজগুলি সম্পন্ন করবো। চলমান কাজ শেষ হলে খুলনা মহানগরীতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা দৃশ্যমান হবে।

 

মধুমতি : প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখার এত বেশী ভোট পাওয়ার কারন কি বলে মনে করেন ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : হাতপাখা প্রতিকের প্রার্থী বেশী ভোট পাওয়ার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। ২০১৮সালের নির্বাচনে হাতপাখা ১৪হাজার ভোট পেয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিকভাবে এত শক্তিশালী নয় যে তারা এত ভোট পেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, বিএনপির কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল। তারা বহিষ্কৃত হলেও তাদের একটি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। যে কারনে একেক জন দুই বা তিন বারও কাউন্সিলর হয়েছেন। তাদের সেই ভোটারগুলি এবং বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে গিয়ে হাতপাখা, লাঙ্গল ও টেবিল ঘড়িতে ভোট দেওয়ায় তাদের ভোটের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮সালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী থাকায় হাতপাখা ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়েছিল আর লাঙ্গল পেয়েছিল ১ হাজার ৭২ ভোট। তারা এতভোট কিভাবে পায় সেটা তো সবারই জানা। ২০১৮সালে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিল এক লাখ ৯হাজার ভোট। তাদের সে ভোটগুলো সবই তো এভাবেই তিন জায়গায় ভাগ হয়ে গিয়েছে।এ ভোট তো আওয়ামীলীগের না।এ ভোট আওয়ামীলীগের এন্টি ভোট।

মধুমতি: ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা পুরন হয়নি-কারন কি ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমি প্রচার-প্রচারনার সময় সাধারন মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছিলনাম। সেটাতেই আশা করেছিলাম এবারের নির্বাচনে ৬০-৬৫শতাংশ ভোটার উপস্থিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। কারন অনেক ভোটার খুলনার বাইরে আছেন। ২০১৮সালের নির্বাচনে ৩লাখ ৯৯হাজারের বেশী ভোটার ভোট দিয়েছিল। তখন শিল্পাঞ্চল খ্যাত খালিশপুর ও দৌলতপুরের পাটকলগুলিতে দেড়লক্ষাধিক ভোটার ছিল। খালিশপুর, দৌলতপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চলের অনেক ভোটার বাড়ীতে চলে গেছে। তারা এখানের জুট মিলে কাজ করতো। মিল বন্ধের পরে সরকার তাদের পাওনা পরিশোধ করায় অনেকেই বাড়ীতে চলে গেছেন টাকা-পয়সা নিয়ে। যারা নগরীতে ভোটার ছিলেন। সেজন্য একটা অংশের ভোটার উপস্থিত হয়নি। এজন্য ভোটার তালিকার সাথে বাস্তবে একটা গ্যাপ তৈরী হয়েছে। এসব শ্রমিকদের বেশীরভাগ ভোটারই আওয়ামীলীগ সমর্থক। তারপেরও যে পরিমান ভোটার ভোট দিয়েছে সেটা আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়।

মধুমতি : গত ১০বছরে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলন কিন্তু আজও তা হয়নি, আপনি কি বলবেন ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমি কথা দিয়েছিলাম পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরী গড়ে তোলার। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার জন্য কাজ আর এগোয়নি। ইতিমধ্যেই জার্মান ডেভলমেন্ট কোঅপারেশন, জিআইজেড ও এডিবিসহ কয়েকটি সংস্থার সাথে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। তাদের সহায়তায় ও কারিগরি পরামর্শে কিভাবে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে পারি সে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর গৃহস্থালী বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সার, বিদ্যুত ও ডিজের তৈরীর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  ও নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের পাচটি স্বাস্থ্যকর শহরের তালিকায় খুলনা সিটি করপোরেশনকে অর্ন্তভুক্ত করেছে।

তিনি বলেন, আমি নতুনভাবে দায়িত্ব নেয়ার পর নগরীর ফুটপাত নগরবাসীর চলাচলের জন্য উন্মুক্থ করার ব্যবস্তা নেয়া হবে। ফুটপাথে কেউ ব্যবসা করতে বা দোকান দিতে পারবে না। অল্পদিনের মধ্যেই ঘোষনা দেয়া হবে। ফুটপাথে কেউ দোকান দিলে বা ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে বাড়ীর ময়লা একটি নিদির্ষ্ট জায়গায় ফেলার জন্য জন্য বাড়ীর মালিক, বাড়াটিয়া ও দোকানদারদেরকে বলা হবে। রাস্তায় বা ড্রেনে কোন ময়রা ফেরা চলবে না। ভালো শহর চাইতে গেলে নগরবাসীরও কিছু দায় দায়িত্ব আছে। একটা নিদির্ষ্ট স্তানে ময়লা-আবর্জনা ফেরার পর সেখনে থেকে তুলে নেয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য কেসিসি সব ধরনের প্রচারসহ নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধকরনের জন্য যা করার সেটা করা হবে। আমরা এটার জন্য কাজ শুরু করেছি। এ কাজ চলমান থাকবে।

তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্ন নগরীর গড়ার কাজটা এগোবে। খুলনায় ১৯৬১সালে খুলনা ‍উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ ও হাউজিং এস্টেট নগরীর উন্নয়নের কাজ করছে। হাউজিং হওয়ার পর খালিশপুর ও দৌলতপুরে ময়লার জন্য জায়গা রাখেনি। এই দুই দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও প্লানাররা তাদের গড়ে তোলা আবাসিক এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেরার জন্য কোন স্থান রাখেনি। যে কারনে সেখানকার বাডীর মানুষ ও এরাকাবাসী রাস্তায় ও ড্রেনে ময়লা ফেলছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন বাজার ও মার্কেটের ময়লা দোকানদাররা অসময়ে রাস্তায় ও ড্রেনে ফেলছে। এজন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ময়লার পাহাড়ে পরিনত হয়। কিন্তু পরে কেসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনেছে। যা সম্পন্ন করতে ১০বছর লাগবে। এভাবে চললে কোনদিনই একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হবে না। তাই কেসিসি শীর্ঘ্রই ঘোষনা দিয়ে রাস্তায়, ড্রেনে ও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার বিুরদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

 

মধুমতি : গত ১০বছরেও আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী গড়ে ওঠেনি, আরও কত বছর লাগবে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : হ্যা, আমি গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এবারের নির্বাচনেও কথা দিয়েছি আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী গড়ে তোলার। এটা নির্ভর করবে উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়তে নগরীর মানুষ কিভাবে ও কতটুকু সহায়তা করবে তার উপর। তবে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এরজন্য যাকিছু করার প্রয়োজন তার সবই করা হবে। তবে একটা সুখবর দিচ্ছি চায়নার একটি সংস্থার সাথে সম্প্রতি একটি প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তারা নগরীর প্রতিটি বাড়ী থেকে গৃহস্থলী বর্জ্য কালেকশন করে নিয়ে প্রকল্পে ব্যবহার করবে। নগরীর রাজবাধ এরাকায় কেসিসি একটা জমি দিয়েছে সেখানে তারা বর্জ্য ব্যবহার করে সার, বিদ্যুত ও ডিজেল তৈরী করবে। তাদের প্রতিদিন ১২০০ টন বর্জ্য প্রয়োজন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর কোথাও কোন বর্জ্য থাকবে না। আরও অতিরিক্ত বর্জ্য দরকার হতে পারে। এ বিষয়ে ২০বছরের চুক্তি হবে। মেয়াদ শেষে তারা কেসিসিকে প্রকল্প হস্তান্তর করবে। সামগ্রিক উন্নয়ণ ও ব্যবস্থাপনা কাজ পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে নিয়ে ৫বছরের মধ্যেই নগরীকে আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করা হবে।

 

মধুমতি : সরকারী বরাদ্ধ থাকলেও কাজ সঠিক সময়ে ও গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে না কি জন্য?

তালুকদার আব্দুল খালেক : বর্তমান রসকার কেসিকে বিগত তিন দশকের তুলনায় সর্বাধিক বরাদ্ধ দিয়েছে।২০১৮সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহনের আগেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৪০০ কোটি টাকারও বেশী বরাদ্ধ দিয়েছিলেন। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের কাছ থেকে একহাজার কোটি টাকাসহ মোট ২হাজার ৫০০কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু করোনার কারনে আড়াই বছর কাজ করতে না পারায় উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েও পিছিয়ে গেছে। কিন্তু উন্নয়ন কাজের জন্য কেসিসির কোন সমস্যা নেই। সমস্যা রয়েছে নগরীতে যারা বসবাস করে তাদের অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মানের জন্য বাড়ির মালিকদের। বিগত তিন বছরে ৪১৮টা রাস্তার উন্নয়ন হয়েছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনসহ উন্নয়ন কাজে ১৪০০কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ২০০-৩০০ রাস্তা, ড্রেন ও খালের পুন:খনন কাজ এবং শতাধিক কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো সমাপ্ত হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই উন্নয়ন দ্যৃশমান হবে। আগামী শুক্রবার কেসিসির ঠিকাদারদেরকে ডাকা হয়েছে। তাদের যে সকল কাজ রয়েছে সঠিক সময়ের মধ্যে করতে না পারলে তাদের কাজ বাতিল করে নতুনভাবে অন্যদেরকে কাজ দেয়া হবে। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যেই সঠিকভাবে কাজ শেষ করা হবে।

 

মধুমতি : মেয়র হিসেবে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার আগে চলমান কাজগুলো শেষ করেই তবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা হবে। ১৫০০কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া রয়েছে। আশা করছি দায়িত্ব গ্রহনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে প্রকল্পের অনুমোদ দেবেন। এই প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেলে এবং বিভিন্ন দাতাসংস্থার সাথে পাইপলাইনে যে প্রকল্পগুলি আছে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে আগামী ৫বছর সুন্দরভাবে নগরীর উন্নয়নে ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে খুলনাকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও তিলোত্তমা মহানগরীতে পরিনত করতে পারবো।

মধুমতি : কেসিসির পরিকল্পনা গ্রহনে বিশিষ্টজনদের মতামত নেবেন কিনা ?

তালুকদার আব্দুল খালেক : জনগন ভোটের মাধ্যমেই তাদের মতামত আমাকে দিয়েছে। আমি ইশতেহারে বলেছি আমার প্রথম কাজ হলো অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করা। তারপরে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে কাজ করা হবে। ইশতেহারের ৪০দফা আগামী ৫বছরে যতাযথ বাস্তবায়ন করা হবে। এর অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে। বাকী পরিকল্পনার মধ্যে প্রথম কাজ হবে সিটি সিভিক সেন্টার নির্মান। এরপরে নগরীর সবুজায়নের জন্য ও জলাশয় সংরক্ষনের জন্য ২৪টি পুকুর খনন করে পাড় বাধাই করে নাগরিকদের বিনোদন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরী করা, নগরীর ২৮টি মোড় সংস্কার করে সৌন্দর্য্য বর্ধনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। নিরালা খাল খনন করে, দৌলতপুর বাজারের সংস্কার করা ও নদী সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হবে।

মধুমতি : কেসিসির কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা ?

তালুকদার আব্দুল খালেক :  সিটি করপোরেশনের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্তা রয়েছে। এটি চলমান থাকবে। তবে যারা অনৈতিকভাবে কাজ পেতে চায় এবং অনৈতিক সুবিধা নিতে দেনদরবার করে তাদের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সাংবাদিকরা লিখলে কটোর ব্যবস্তা নেবেন বলেন তিমি মতামত ব্যক্ত করেন। নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তাকে পুনরায় নির্বাচিত করায় নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। ##