০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর

###    দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান। কষ্ট ও ক্লান্তির পর রোজাদারের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর এক মহানন্দের দিন। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রেখে যাওয়া কবিতা আজো আকাশে বাতাসে সুরের ঝংকার তোলে “ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ।” চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও সমাপ্তির নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। আজ শুক্রবার পবিত্র রমযান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর চাঁদ দেখা না গেলে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আজ সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভা কক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ঈদের দিন চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন নাম্বারে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টেলিফোন নাম্বার : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৯৬৪৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭ । এছাড়া ৯৫৬৩৩৯৭ ও ৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করেও জানানো যাবে।

এদিকে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে সকলের মাঝে বইতে শুরু করবে আনন্দের বন্যা। রাত পোহালেই শুরু হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে ঈদের উৎসব। রাজ প্রাসাদ থেকে কুঁড়ে ঘর পর্যন্ত খুশীর বণ্যা বয়ে যাবে। ঈদগাহে নামাজ আদায়, একে অন্যের সাথে কুশলাদি মিনিময় আর ফিরনী সেমাই খাওয়ার ধুম থেকে বাদ যাবে না কেউই। ঘুম থেকে ওঠার পরই শুরু হয়ে যাবে এসব আয়োজন। ইতোমধ্যে সকলেই ঈদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন। প্রত্যেকেই জামাকাপড়সহ পছন্দের জিনিস-পত্র ক্রয় করেছেন। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মিয়-স্বজনদের মাঝে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদ কার্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যম ফেসবুক, ম্যসেঞ্জার, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে মনের কথা লিখে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত সবাই। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে আত্মিয়-স্বজনদের নিকট ছুটছেন। এজন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা, দূরপাল্লার বাসে টিকিট কাটার জন্য এবার ছিল চরম হুড়োহুড়ি। লঞ্চ, যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে মানুষ চিরাচরিত সেই দৃশ্য এবারও চোখে পড়ার মতো। পবিত্র ঈদ সকল মুসলিম একই বন্ধনে আবদ্ধ এ কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। সকল ভেদাভেদ ভূলে হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকারসহ সকল পাপাচার মুছে দিয়ে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে এক কাতারে শামিল করিয়ে দেয়। ঈদ আনন্দ একেকজন একেকভাবে উপভোগ করে থাকে। বিশেষ করে ছোট ও তরুণ তরুণীদের আনন্দ উপভোগটা সবারই নজরে পড়ে। তারা ঈদের নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে। মধ্যম বয়সী যুগলদের জন্য ঈদের রাতকে চাঁদ রাত নামে অভিহিত করা হয়। শ্বশুর বাড়ীতে তাদের জন্য বিশেষ আযোজন করা হয়। তাদের জন্য থাকে নানান উপহার সামগ্রী এবং উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা। বয়স্করা থাকেন আপ্যায়ন আতিথীয়তায় ব্যস্ত।

খুলনায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ঈদ-উল-ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল আটটায় খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে। টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহম্মদ সালেহ এ জামাতে ইমামতি করবেন। সকাল সাড়ে আটটায় আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে এবং সকাল নয়টায় টাউন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য মসজিদ ও ঈদগাহসমূহে পরিচালনা কমিটি জামাতের সকল প্রস্তুতি সর্ম্পণ করেছেন। ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সময় মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্য খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম সংরক্ষিত থাকবে। অযুর জন্য পর্যপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদুল ফিতরের জামাত পূর্ব বয়ানে বছরের বাকি এগারো মাস ইবাদত বন্দেগীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরবেন। ঈদগাহ ও মসজিদে মসজিদে মহান আল্লাহর অশেষ নৈকট্য হাসিল, গুনা মাফ জান্নাত লাভ দেশ জাতির উন্নতি সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন নগরীর সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবনে যথাযথভাবে সঠিক রঙ ও মাপের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামানো হবে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কসমূহ ও গুরুত্বপূর্ণ চত্বর, সড়কদ্বীপ ও সার্কিট হাউস ময়দান জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক (বাংলা ও আরবী) খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে এ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের পরে সুবিধাজনক দিন ও সময়ে শহিদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় নীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঈদের দিন বিকেলে শিশু পার্কসমূহে দু:স্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন উদ্যোগে ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বিষয়ক সেমিনার ও আলোচনা সভা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ঈদ পুনর্মিলনী এবং জেলা শিশু একাডেমি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশু আনন্দমেলার আয়োজন করবে।

ঈদে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহানগর ও মহানগরের বাইরের বিভিন্ন স্পটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদুল ফিতরের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, রাস্তা বন্ধ করে স্টল তৈরি, উচ্চস্বরে মাইক, ড্রাম বাজানো, রঙিন পানি ছিটানো এবং বেপরোয়াভাবে মটর সাইকেল চালানো উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ঈদের সময় অজ্ঞান ও মলম পার্টি, ছিনতাইকারী ও পকেটমারদের তৎপরতা বন্ধে টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, রেলস্টেশন, বাস ও নৌযান টার্মিনালসমূহে সাদা পোষকধারী পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা অব্যহত রয়েছে। এছাড়া জাল টাকার বিস্তাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাস, লঞ্চ, স্টিমারে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে না পারে এবং বেপরোয়াভাবে যান চলাচল করতে না পারে তার জন্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। জেলার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘেœর কোন সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭৭১০৬৯৯-এ জাননো যাবে।

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। উপজেলা সমূহেও স্থানীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি পালিনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সর্ম্পন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাসমূহ তিন দিন বন্ধ থাকবে। এই উৎসবেই ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র সবাই ভালোবাসা-মমতার বাহুডোরে অনাবিল আনন্দ-উৎসবে মিলেমিশে যায়। কবি নজরুলের ভাষায়, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।/ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ আমাদের সকল পাঠক, সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনদাতা, কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা; ঈদ মোবারক।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর

প্রকাশিত সময় : ০৯:৪৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০২৩

###    দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান। কষ্ট ও ক্লান্তির পর রোজাদারের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর এক মহানন্দের দিন। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রেখে যাওয়া কবিতা আজো আকাশে বাতাসে সুরের ঝংকার তোলে “ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ।” চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও সমাপ্তির নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। আজ শুক্রবার পবিত্র রমযান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর চাঁদ দেখা না গেলে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আজ সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভা কক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ঈদের দিন চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন নাম্বারে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টেলিফোন নাম্বার : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৯৬৪৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭ । এছাড়া ৯৫৬৩৩৯৭ ও ৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করেও জানানো যাবে।

এদিকে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে সকলের মাঝে বইতে শুরু করবে আনন্দের বন্যা। রাত পোহালেই শুরু হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে ঈদের উৎসব। রাজ প্রাসাদ থেকে কুঁড়ে ঘর পর্যন্ত খুশীর বণ্যা বয়ে যাবে। ঈদগাহে নামাজ আদায়, একে অন্যের সাথে কুশলাদি মিনিময় আর ফিরনী সেমাই খাওয়ার ধুম থেকে বাদ যাবে না কেউই। ঘুম থেকে ওঠার পরই শুরু হয়ে যাবে এসব আয়োজন। ইতোমধ্যে সকলেই ঈদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন। প্রত্যেকেই জামাকাপড়সহ পছন্দের জিনিস-পত্র ক্রয় করেছেন। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মিয়-স্বজনদের মাঝে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদ কার্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যম ফেসবুক, ম্যসেঞ্জার, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে মনের কথা লিখে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত সবাই। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে আত্মিয়-স্বজনদের নিকট ছুটছেন। এজন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা, দূরপাল্লার বাসে টিকিট কাটার জন্য এবার ছিল চরম হুড়োহুড়ি। লঞ্চ, যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে মানুষ চিরাচরিত সেই দৃশ্য এবারও চোখে পড়ার মতো। পবিত্র ঈদ সকল মুসলিম একই বন্ধনে আবদ্ধ এ কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। সকল ভেদাভেদ ভূলে হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকারসহ সকল পাপাচার মুছে দিয়ে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে এক কাতারে শামিল করিয়ে দেয়। ঈদ আনন্দ একেকজন একেকভাবে উপভোগ করে থাকে। বিশেষ করে ছোট ও তরুণ তরুণীদের আনন্দ উপভোগটা সবারই নজরে পড়ে। তারা ঈদের নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে। মধ্যম বয়সী যুগলদের জন্য ঈদের রাতকে চাঁদ রাত নামে অভিহিত করা হয়। শ্বশুর বাড়ীতে তাদের জন্য বিশেষ আযোজন করা হয়। তাদের জন্য থাকে নানান উপহার সামগ্রী এবং উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা। বয়স্করা থাকেন আপ্যায়ন আতিথীয়তায় ব্যস্ত।

খুলনায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ঈদ-উল-ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল আটটায় খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে। টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহম্মদ সালেহ এ জামাতে ইমামতি করবেন। সকাল সাড়ে আটটায় আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে এবং সকাল নয়টায় টাউন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য মসজিদ ও ঈদগাহসমূহে পরিচালনা কমিটি জামাতের সকল প্রস্তুতি সর্ম্পণ করেছেন। ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সময় মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্য খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম সংরক্ষিত থাকবে। অযুর জন্য পর্যপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদুল ফিতরের জামাত পূর্ব বয়ানে বছরের বাকি এগারো মাস ইবাদত বন্দেগীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরবেন। ঈদগাহ ও মসজিদে মসজিদে মহান আল্লাহর অশেষ নৈকট্য হাসিল, গুনা মাফ জান্নাত লাভ দেশ জাতির উন্নতি সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন নগরীর সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবনে যথাযথভাবে সঠিক রঙ ও মাপের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামানো হবে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কসমূহ ও গুরুত্বপূর্ণ চত্বর, সড়কদ্বীপ ও সার্কিট হাউস ময়দান জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক (বাংলা ও আরবী) খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে এ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের পরে সুবিধাজনক দিন ও সময়ে শহিদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় নীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঈদের দিন বিকেলে শিশু পার্কসমূহে দু:স্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন উদ্যোগে ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বিষয়ক সেমিনার ও আলোচনা সভা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ঈদ পুনর্মিলনী এবং জেলা শিশু একাডেমি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশু আনন্দমেলার আয়োজন করবে।

ঈদে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহানগর ও মহানগরের বাইরের বিভিন্ন স্পটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদুল ফিতরের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, রাস্তা বন্ধ করে স্টল তৈরি, উচ্চস্বরে মাইক, ড্রাম বাজানো, রঙিন পানি ছিটানো এবং বেপরোয়াভাবে মটর সাইকেল চালানো উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ঈদের সময় অজ্ঞান ও মলম পার্টি, ছিনতাইকারী ও পকেটমারদের তৎপরতা বন্ধে টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, রেলস্টেশন, বাস ও নৌযান টার্মিনালসমূহে সাদা পোষকধারী পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা অব্যহত রয়েছে। এছাড়া জাল টাকার বিস্তাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাস, লঞ্চ, স্টিমারে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে না পারে এবং বেপরোয়াভাবে যান চলাচল করতে না পারে তার জন্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। জেলার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘেœর কোন সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭৭১০৬৯৯-এ জাননো যাবে।

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। উপজেলা সমূহেও স্থানীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি পালিনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সর্ম্পন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাসমূহ তিন দিন বন্ধ থাকবে। এই উৎসবেই ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র সবাই ভালোবাসা-মমতার বাহুডোরে অনাবিল আনন্দ-উৎসবে মিলেমিশে যায়। কবি নজরুলের ভাষায়, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।/ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ আমাদের সকল পাঠক, সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনদাতা, কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা; ঈদ মোবারক।##