বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব শাহরিয়ার কবির বঙ্গবন্ধুর ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র যে দর্শন তা ইতিহাসে অনন্য হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তিনি স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার ওপর জোর দিয়েছেন এবং একই সাথে বলেছেন ধর্মের পবিত্রতা রক্ষায় রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে তা দূরে থাকবে যাতে ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্মের সুযোগ নিয়ে এদেশের ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও প্রগতিকে খামচে ধরার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তিনি ধর্মপ্রাণ সকল শক্তির ঐক ̈বদ্ধতা কামনা করেন এবং ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অব্যাহত সংগ্রাম পরিচালনার ওপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অতি দ্রুত তা বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে এর খেসারত আগামী নির্বাচনে সরকারকে দিতে হবে। নাট্যজন মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠী সবসময়ই পাকিস্তানকে অনুসরণ করে। এটি হল আমাদের সমস্যার ধারাবাহিকতা। পাকিস্থান হল সংবিধান সংশোধনের পরীক্ষাগার। তাদের মত আমাদের দেশেও সংবিধান সংশোধন হয়েছে, স্থগিতও হয়েছে। সেখানেই ঢুকে গেছে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। তিনি বলেন, আজকে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকার কথা না। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি হলে সংবিধান সংশোধন করা যায়। পঞ্চদশ সংশোধনের পরেও রাষ্ট্রধর্মও থাকলো আবার জিয়াউর রহমানের বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম থাকলো কেন? এ প্রশ্নের জবাব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে দিতে হবে। নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ আরও বলেন, আদিবাসীদের বলা হল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তাদের আমরা উপেক্ষা করতে পারিনা। শান্তিচুক্তি হওয়ার পরেও আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আজও মিললো না। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রণেতাদের সম্মানিত করা হয়েছে। কিন্তু জনগণকে এবং স্বাধীনতাকে সম্মানিত করা হবে কবে ?
বিশিষ্ট নারী নেত্রী ডা. ফৌজিয়া মোসলেম দুঃখ করে বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহারে বর্ণিত সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার যা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য তা থেকে দেশ অনেক দূরে সরে এসেছে। দারিদ্র কমে আসলেও ধনবৈষম অনেক বেড়ে গেছে, সাম্যের প্রশ্ন অনেক দূরে সরে গেছে, মর্যাদার প্রশ্নও উপেক্ষিত। মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে রাষ্ট্রও চার মূলনীতি থেকেও অনেক দূরে সরে গেছে। তিনি বলেন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকার সুযোগ নিয়েই সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তারাও আপোষের পথে হেঁটেছেন। কে কত বড় ধার্মিক তা প্রমাণের প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। ধার্মিক হওয়ার চেয়ে মানবিক হওয়া এখন অনেক বেশি জরুরী।
স্বাগত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কথায় কথায় বলেন সংবিধানে সংখ্যা গুরু-সংখ্যা লঘু বলতে কিছু নেই। বাস্তবতায় রাষ্ট্রধর্ম শুধু ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালী জাতিসত্তায় বিভাজন টানেনি ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগণের ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হওয়ায় এদেশের ধর্মীয়-
জাতিগত সংখ্যালঘুরা কার্যত রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। অথচ তা হওয়ার জন্যে এরা ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। সীমাহীন আত্মত্যাগও করেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধোঁয়া তুলে রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে জিইয়ে রেখে আর যাই হোক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনও কোনদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। সংবিধানে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই-এ কথাটি আপ্তবাক্যের মত আওড়িয়ে রাজনীতিবিদরা দেশের তাবৎ জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, ৭২-র সংবিধান পাকিস্থানী মোড়কের সংবিধানের অনুরূপে আজও
আবর্তিত। রাষ্ট্র, রাজনীতি, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, প্রশাসন সবটাই আজ মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে। বিগত ১৩ (তের) বছরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সরকারে অবস্থানে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু আপামর বাঙ্গালী জাতি মননে-মানসিকতায় ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে এবং এর করুণ পরিণতি আজকে মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী সকল নাগরিক হতাশায় ও বিষ্ময়ে প্রত্যক্ষ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া আজ আর কোন বিকল্প নেই। ##
অফিস : ৬৯/৭০ কেসিসি সুপার মার্কেট ( ২য় তলা ) খুলনা সদর, খুলনা। প্রকাশক - সম্পাদক : সুনীল দাস বার্তা সম্পাদক : তরিকুল ইসলাম ডালিম চিফ রিপোর্টার : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । যোগাযোগ : dainikmadhumati@gmail.com, newsdainikmadhumoti@gmail.com Office No : Editor : 01712680702 / 01912067948
© All rights reserved by www.dainikmadhumati.com (Established in 2022)