১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদারের মৃত্যু, খুলনা আর্ট একাডেমির শোক

  • অফিস ডেক্স।।
  • প্রকাশিত সময় : ০২:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
  • ৪৭ পড়েছেন

###    একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদার ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০বছর।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শামীম সিকদার নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার তার আপন বড় ভাই। শামীম শিকদার বগুড়ায় মহাস্থানগড়ের চিংগাশপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ২২ আগস্ট জন্ম গ্রহন করেন। শিক্ষা জীবনে শামীম শিকদার ৩বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন ভাস্কর্যের ওপরে। ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন মিস্টার সিভিস্কি যিনি একজন বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভাস্কর। ১৯৭৬ সালেলন্ডনের স্যার জন স্কুল অব কাস থেকে তিনি একটি সনদ অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে চীনে মিস্টার লি ডুলি নামের একজন বিখ্যাত ভাস্করের সাথে কাজ করেন এক বছরের মতো। কর্মজীবনে শামীম শিকদার ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনষ্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে। এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ভাস্কর শামীম শিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

তিনি বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে অসংখ্য কৃতিত্ব রেখে গেছেন।একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম সিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক অধ্যাপক। এই গুণী শিল্পী যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতেন সেগুলো হলো সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টীল ও গ্লাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করেন। তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম ১৯৭৪ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ।১৯৮৮সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার সহকারী ছিলেন শিল্পী হিমাংশু রায়। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫শে মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত।২০০০ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য উদ্যানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ইস্কাটনে অবস্থিত জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারিতে নির্মাণ করেন তিনি যেখানে আছে বিশ্বের অন্যান্য ব্যক্তিদের ভাস্কর্য, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু এবং ভয়ংকর রাজাকারদের ভাস্কর্য। জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারির প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি খুলে দেওয়া হয়েছিল দর্শনার্থীদের জন্য। শুরুতে সকাল-সন্ধ্যা সবার জন্য খোলা থাকত। পরে নানা কারণে এটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন দিন-রাতই দরজা বন্ধ থাকে।’স্ট্রাগলিং ফোর্স’ ১৯৮২সালে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ‘একটি মধুর স্বপ্ন’ ভাস্কর্যটি চারুকলা ইনসস্টিটিউটে রাখা আছে যা ১৯৮৩ সালে তার নির্মিত। আশা ও উদ্দীপনার একটি পাখি নামের ভাস্কর্যটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত। মাদার তেরেসা চ্যারিটি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তার নির্মিত ভাস্কর্য রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনোয়ার পাশায় তার নির্মিত অনেক ভাস্কর্য আছে। খুলনা আর্ট একাডেমির পক্ষ থেকে এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে।তার রেখে যাওয়া পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং সকল চারু শিল্পী ভক্তবৃন্দরা যেন এই শোক কাটিয়ে পরিবারের সকলের সুস্থ্যতা কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদারের মৃত্যু, খুলনা আর্ট একাডেমির শোক

প্রকাশিত সময় : ০২:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

###    একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদার ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০বছর।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শামীম সিকদার নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার তার আপন বড় ভাই। শামীম শিকদার বগুড়ায় মহাস্থানগড়ের চিংগাশপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ২২ আগস্ট জন্ম গ্রহন করেন। শিক্ষা জীবনে শামীম শিকদার ৩বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন ভাস্কর্যের ওপরে। ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন মিস্টার সিভিস্কি যিনি একজন বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভাস্কর। ১৯৭৬ সালেলন্ডনের স্যার জন স্কুল অব কাস থেকে তিনি একটি সনদ অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে চীনে মিস্টার লি ডুলি নামের একজন বিখ্যাত ভাস্করের সাথে কাজ করেন এক বছরের মতো। কর্মজীবনে শামীম শিকদার ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনষ্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে। এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ভাস্কর শামীম শিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

তিনি বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে অসংখ্য কৃতিত্ব রেখে গেছেন।একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম সিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক অধ্যাপক। এই গুণী শিল্পী যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতেন সেগুলো হলো সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টীল ও গ্লাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করেন। তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম ১৯৭৪ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ।১৯৮৮সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার সহকারী ছিলেন শিল্পী হিমাংশু রায়। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫শে মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত।২০০০ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য উদ্যানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ইস্কাটনে অবস্থিত জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারিতে নির্মাণ করেন তিনি যেখানে আছে বিশ্বের অন্যান্য ব্যক্তিদের ভাস্কর্য, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু এবং ভয়ংকর রাজাকারদের ভাস্কর্য। জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারির প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি খুলে দেওয়া হয়েছিল দর্শনার্থীদের জন্য। শুরুতে সকাল-সন্ধ্যা সবার জন্য খোলা থাকত। পরে নানা কারণে এটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন দিন-রাতই দরজা বন্ধ থাকে।’স্ট্রাগলিং ফোর্স’ ১৯৮২সালে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ‘একটি মধুর স্বপ্ন’ ভাস্কর্যটি চারুকলা ইনসস্টিটিউটে রাখা আছে যা ১৯৮৩ সালে তার নির্মিত। আশা ও উদ্দীপনার একটি পাখি নামের ভাস্কর্যটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত। মাদার তেরেসা চ্যারিটি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তার নির্মিত ভাস্কর্য রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনোয়ার পাশায় তার নির্মিত অনেক ভাস্কর্য আছে। খুলনা আর্ট একাডেমির পক্ষ থেকে এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে।তার রেখে যাওয়া পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং সকল চারু শিল্পী ভক্তবৃন্দরা যেন এই শোক কাটিয়ে পরিবারের সকলের সুস্থ্যতা কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন।##