০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালিগঞ্জে সরকারী খাস জমি কিনে ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ,৩০ বছরেও আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি

####

সাতক্ষীরায় দীর্ঘ ৩১ বছরেও জেলা জজ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা লোপাট করে ৬০ শতক সরকারি খাস জমি কিনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা জজ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় ৩৬.৩২ একর বা ১০৯ বিঘা সরকারি খাস জমি এলাকার প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন মহল ভুয়া জাল কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করে ভোগ দখল করলেও দেখার কেউ নাই। এইভাবে দীর্ঘ ৩০বছরে কালিগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার(ভূমি), জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করলেও আদালতের এ রায় কার্যকর করা হয়নি। সে সময়কার প্রভাবশালীদের যোগসাযোগে ভূমি অফিস থেকে রায়ের কাগজ গায়েব করে ফেললেও আজও সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের নিকট জানতে চাইলে তিনিও কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য ইউনুছ আলী মোড়ল গত রবিবার (৭ জুলাই) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের সূত্র এবং মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্ধকাটি গ্রামের মৃত হাজী মতিউল্লাহ মোড়লের পুত্র মৃত আশরাফ উদ্দিন মোড়ল, আব্দুল জলিলগংরা  পি,ও ৯৬/৭২ এবং পি,ও ৯৮/৭২ মতে হিসাব বিবরণী বা স্টেটমেন্ট দাখিল না করে জমি বাকি করের দাবিতে সিসি ১২/৮০-৮১ সালে নিলাম বিক্রি দেখিয়ে জনৈক গুলাল বিবি গংয়ের নামে নিলাম খরিদ করে রেকর্ড পাবলিস্ট করে। বিষয়টি জানতে পেরে কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র আহাদ আলী এবং মৃত  জোনাব আলীর পুত্র হযরত আলী বাদী হয়ে গত ১৯৯২সালের ২৯জানুয়ারী সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) বরাবর মিস ১/৯২ পি,ও ৯৮/৭২ অধ্যাদেশে মামলা করে। মামলায় প্রভাবশালী মহালের পক্ষে গেলে গত ১৯৯৩ সালের ১নভেম্বর জেলা জজ আদালতে মিস আপিল ৫৯/৯৩ মামল করে। মামলার রায়ে গত ১৯৯৪ সালের ২৮এপ্রিল আদেশে আদালত বানিয়াপাড়া মৌজার এস, এ১৪,২০,২১,২২,২৩নং খতিয়ানে ৩৬.৩২ একর বা ১০৯ বিঘা জমি খাস করা হইল। উক্ত জমি সংক্রান্ত সৃষ্ট অবৈধ সার্টিফিকেট মোকাদ্দমা ও তদপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট যাবতীয় নামপত্তন বাতিল করা হইল। খাসকৃত সম্পত্তি অবিলম্বে দখল গ্রহণ ও সরকারের পূণ্য ব্যবস্থাপনায় রাখার জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ ও তহাশিলদার জয়পত্রকাটিকে বলা হইল। কিন্তু প্রভাবশালী মহল তৎকালীন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, তহশিলদাররা আদালতের আদেশ অমান্য করে মোটা অংকের টাকা সুবিধা নিয়ে বিবাদীদের চলমান সেটেলমেন্ট জরিপে তাদের নামে রেকর্ড করে দিয়ে সরকারের জমি ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে।  এর মধ্যে হতে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে কৃষ্ণনগর বানিয়াপাড়া মৌজার এস,এ ২১ নং খতিয়ান এ আর এস ২১ খতিয়ান আর এস খারিজ খতিয়ানে ২১৪ আর এস ৩৩৬ দাগে ১,৭৭একর জমির মধ্য হতে ৬০ জমি সরকারের খাস হওয়া সত্বেও নেঙ্গী গ্রামের মৃত মোমেন গাজীর পুত্র ইউপি সদস্য জোবেদ আলী জিয়াউর জহুরুল হযরত আজিজুল কন্যা মমতাজ সমতাজ জাহানারা শাহানারা জামিলা খাতুনের নিকট হতে সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নামে গত ৩/৫/ ২০২৩ তারিখে কালিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২২৪৪ /২০২৩ নং দলিলে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এবং জয়পত্রকাটির ভূমি অফিসের যোগ সূত্রে জমির বাজার মূল্য হতে বেশি দেখিয়ে ১৫,৪৫,৬০০ টাকা ভাগবাটোয়ার করে নেওয়া হয়। ওই সময় ওই জমিতে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়হীনদের আশ্রয়হীন ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা কিনে ২৪ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। এতে করে সরকারি জমি কিনে সরকারের সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। উক্ত জমি আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে ঐ সমস্ত ভূমিদস্যু এবং তথাকথিত কথিত  ভূমি মালিকদের নিকট থেকে জমি উদ্ধার করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার জোর দাবি জানিয়েছে উপজেলা বাসী।

এ বিষয়ে কথিত সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিক ইউপি সদস্য জোবেদ গাজীর নিকট জানতে চাইলে তিনি তার বাবার নামে ভূমি আপেল বোর্ডের রায় এবং রেকর্ড আছে বলে সাংবাদিকদের জানান। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার নুরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। রায়ের কপি ভূমি অফিসে আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ করে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

খাস  জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জালাল উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, রেজিস্ট্রির আগে গুঞ্জন শুনে ইউপি সদস্য জোবেদ আলীর নিকট থেকে শর্তসাপেক্ষে ৬০ শতক জমি লিখে নেওয়া হয়। তবে এর কাগজপত্র এবং আদালতের রায়ের কপি সম্পর্কে তিনি কোন সদউত্তর দিতে পারেনি। উপজেলা সরকারি কমিশনার ভূমি এর নিকট জানতে চাইলে তিনি নতুন যোগদান করায় এ ব্যাপারে কোন কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জে অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, কথিত ডাক্তার আটক

কালিগঞ্জে সরকারী খাস জমি কিনে ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ,৩০ বছরেও আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি

প্রকাশিত সময় : ০৭:২৮:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

####

সাতক্ষীরায় দীর্ঘ ৩১ বছরেও জেলা জজ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা লোপাট করে ৬০ শতক সরকারি খাস জমি কিনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা জজ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় ৩৬.৩২ একর বা ১০৯ বিঘা সরকারি খাস জমি এলাকার প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন মহল ভুয়া জাল কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করে ভোগ দখল করলেও দেখার কেউ নাই। এইভাবে দীর্ঘ ৩০বছরে কালিগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার(ভূমি), জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করলেও আদালতের এ রায় কার্যকর করা হয়নি। সে সময়কার প্রভাবশালীদের যোগসাযোগে ভূমি অফিস থেকে রায়ের কাগজ গায়েব করে ফেললেও আজও সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের নিকট জানতে চাইলে তিনিও কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য ইউনুছ আলী মোড়ল গত রবিবার (৭ জুলাই) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের সূত্র এবং মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্ধকাটি গ্রামের মৃত হাজী মতিউল্লাহ মোড়লের পুত্র মৃত আশরাফ উদ্দিন মোড়ল, আব্দুল জলিলগংরা  পি,ও ৯৬/৭২ এবং পি,ও ৯৮/৭২ মতে হিসাব বিবরণী বা স্টেটমেন্ট দাখিল না করে জমি বাকি করের দাবিতে সিসি ১২/৮০-৮১ সালে নিলাম বিক্রি দেখিয়ে জনৈক গুলাল বিবি গংয়ের নামে নিলাম খরিদ করে রেকর্ড পাবলিস্ট করে। বিষয়টি জানতে পেরে কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র আহাদ আলী এবং মৃত  জোনাব আলীর পুত্র হযরত আলী বাদী হয়ে গত ১৯৯২সালের ২৯জানুয়ারী সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) বরাবর মিস ১/৯২ পি,ও ৯৮/৭২ অধ্যাদেশে মামলা করে। মামলায় প্রভাবশালী মহালের পক্ষে গেলে গত ১৯৯৩ সালের ১নভেম্বর জেলা জজ আদালতে মিস আপিল ৫৯/৯৩ মামল করে। মামলার রায়ে গত ১৯৯৪ সালের ২৮এপ্রিল আদেশে আদালত বানিয়াপাড়া মৌজার এস, এ১৪,২০,২১,২২,২৩নং খতিয়ানে ৩৬.৩২ একর বা ১০৯ বিঘা জমি খাস করা হইল। উক্ত জমি সংক্রান্ত সৃষ্ট অবৈধ সার্টিফিকেট মোকাদ্দমা ও তদপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট যাবতীয় নামপত্তন বাতিল করা হইল। খাসকৃত সম্পত্তি অবিলম্বে দখল গ্রহণ ও সরকারের পূণ্য ব্যবস্থাপনায় রাখার জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ ও তহাশিলদার জয়পত্রকাটিকে বলা হইল। কিন্তু প্রভাবশালী মহল তৎকালীন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, তহশিলদাররা আদালতের আদেশ অমান্য করে মোটা অংকের টাকা সুবিধা নিয়ে বিবাদীদের চলমান সেটেলমেন্ট জরিপে তাদের নামে রেকর্ড করে দিয়ে সরকারের জমি ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে।  এর মধ্যে হতে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে কৃষ্ণনগর বানিয়াপাড়া মৌজার এস,এ ২১ নং খতিয়ান এ আর এস ২১ খতিয়ান আর এস খারিজ খতিয়ানে ২১৪ আর এস ৩৩৬ দাগে ১,৭৭একর জমির মধ্য হতে ৬০ জমি সরকারের খাস হওয়া সত্বেও নেঙ্গী গ্রামের মৃত মোমেন গাজীর পুত্র ইউপি সদস্য জোবেদ আলী জিয়াউর জহুরুল হযরত আজিজুল কন্যা মমতাজ সমতাজ জাহানারা শাহানারা জামিলা খাতুনের নিকট হতে সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নামে গত ৩/৫/ ২০২৩ তারিখে কালিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২২৪৪ /২০২৩ নং দলিলে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এবং জয়পত্রকাটির ভূমি অফিসের যোগ সূত্রে জমির বাজার মূল্য হতে বেশি দেখিয়ে ১৫,৪৫,৬০০ টাকা ভাগবাটোয়ার করে নেওয়া হয়। ওই সময় ওই জমিতে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়হীনদের আশ্রয়হীন ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা কিনে ২৪ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। এতে করে সরকারি জমি কিনে সরকারের সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। উক্ত জমি আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে ঐ সমস্ত ভূমিদস্যু এবং তথাকথিত কথিত  ভূমি মালিকদের নিকট থেকে জমি উদ্ধার করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার জোর দাবি জানিয়েছে উপজেলা বাসী।

এ বিষয়ে কথিত সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিক ইউপি সদস্য জোবেদ গাজীর নিকট জানতে চাইলে তিনি তার বাবার নামে ভূমি আপেল বোর্ডের রায় এবং রেকর্ড আছে বলে সাংবাদিকদের জানান। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার নুরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। রায়ের কপি ভূমি অফিসে আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ করে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

খাস  জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জালাল উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, রেজিস্ট্রির আগে গুঞ্জন শুনে ইউপি সদস্য জোবেদ আলীর নিকট থেকে শর্তসাপেক্ষে ৬০ শতক জমি লিখে নেওয়া হয়। তবে এর কাগজপত্র এবং আদালতের রায়ের কপি সম্পর্কে তিনি কোন সদউত্তর দিতে পারেনি। উপজেলা সরকারি কমিশনার ভূমি এর নিকট জানতে চাইলে তিনি নতুন যোগদান করায় এ ব্যাপারে কোন কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।