০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনায় ভেন্ডার সিন্ডিকেটের কারসাজিতে স্ট্যাম্প সংকট :

খুলনায় অতিরিক্ত দামে ষ্ট্যাম্প কিনে জমি রেজিস্ট্রিসহ চরম দূর্ভোগে মানুষ

  • সুনীল দাস।।
  • প্রকাশিত সময় : ০১:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৬৯ পড়েছেন

###    খুলনায় ভেন্ডারদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে স্ট্যাম্প সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই ‍সুযোগে অতিরিক্ত দামে ষ্ট্যাম্প বিক্রি করে সাধারন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থ। সংকটের কারনে ষ্ট্যাম্প না পাওয়ায় জমির দলিল নিবন্ধন, চুক্তিপত্র, নোটারী পাবলিক, হলফনামা, বন্ধকনামা ও মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কাজে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভেন্ডারদের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের এ ‍কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে অতি জরুরী প্রয়োজনে জমিসহ বিভিন্ন রেজিস্ট্রি ও চুক্তিনামার কাজে দ্বিগুণ দামে স্ট্যাম্প কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির নেতারা ট্রেজারী থেকে সরবরাহ কম হওয়াকে সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, স্ট্যাম্প সংকটের কারণে জমিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পারায় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস ও দলিল লেখকদের সূত্রে জানা গেছে, জমির দলিল নিবন্ধন, বিভিন্ন ধরণের চুক্তিপত্র, নোটারি পাবলিক, হলফনামা, বন্ধকনামা ও মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কাজে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প প্রয়োজন হয়। আদালতে বিচার কাজে দরখাস্তের আবেদন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নকলের জন্য ডেমি স্ট্যাম্প ব্যবহার হয়। এখান থেকে সরকার প্রতি কর্মদিবসে বড় অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে থাকে। যারা সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডার তারা জেলা প্রশাসকের ট্রেজারী শাখা থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে। বিনিময়ে ভেন্ডাররা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পেয়ে থাকে সরকারের কাছ থেকে। এজন্য সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করা অবৈধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এসব কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়তি টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর এবং ০১জানুয়ারী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুলনা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস, কেসিসি মার্কেট ও কোট চত্বরে অবস্থান করে এবং স্ট্যাম্প ভেন্ডার, দলিল লেখক ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে ভোগান্তির কথা জানা গেছে। নগরীর টুটপাড়ার নাজমুল হোসেন এসেছিলেন খুলনার সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত স্ট্যাম্প না পেয়ে ঘুরে বেড়ান ভেন্ডারদের দ্বারে দ্বারে। তারপরও তিনি সরকার নির্ধারিত দামে স্ট্যাম্প কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরও জানান, জমি রেজিস্ট্রি করতে এসে এখানকার কোনো স্ট্যাম্প ভেন্ডারের কাছে ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প পাইনি। তবে বিপ্লব পাল নামের এক স্ট্যাম্প ভেন্ডার ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দাম চেয়েছে। প্রথমে ১০০ টাকার স্ট্যাম্প নেই বলে জানালেও পরে অতিরিক্ত টাকা দিলে স্ট্যাম্প পাওয়া যাবে বলে এ ভেন্ডার জানায়। স্ট্যাম্প সংকটের কারণে জমি রেজিস্ট্রি না করে ফিরে যেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। একই কথা জানান পশ্চিম বানিয়া খামার এলাকার শামিমুল আলম। তিনি জানান, কোনো যায়গায় স্ট্যাম্প না পেয়ে এক ভেন্ডারের কাছে গিয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে জমি রেজিস্ট্রি করেছি। এভাবে সবাইকে স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা সংকটের কথা বলে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে দ্বিগুণ মূল্যে স্ট্যাম্প কিনে প্রয়োজনীয় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বিষয়ে জনগণকে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি জানান। নগরীর লবনচরা এলাকার তারিক হোসেন জানান, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৪০০ টাকা দিয়েও পাচ্ছি না। পরে অনেক কষ্টে কেসিসি মার্কেট থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প কিনেছি। স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের কাছে স্ট্যাম্প মজুদ থাকলেও তারা সংকটের কথা বলে অধিক দামে বিক্রয় করছে। এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করতে গেলে স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করছে। তবেিএই ভেন্ডারদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে তাদেরকে কেউ কিছুই বলতে পারে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। খুলনা মহানগরীর মো: লিয়াকত আলী, মো: শাহাজাহান, মো: শের আলী ও বাদল তালুকদারসহ ভেন্ডারদের একটি সিন্ডিকেট নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের এ ‍কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে বলে ষ্ট্যাম্প কিনতে আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যলয় সংলগ্ন স্ট্যাম্প ভেন্ডার লিয়াকত আলী খান জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী থেকে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সরবরাহ করেনি। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা ট্রেজারীতে চালান জমা দিলেও অধিকাংশ ভেন্ডার স্ট্যাম্প পায়নি। যে কারণে স্ট্যাম্পের সংকট তৈরি হয়েছে। ভেন্ডাররা জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছে। অথচ বেশি দামে অনেকের কাছে স্ট্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। দ্রুত ট্রেজারী থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হলে সংকটের সমাধান হবে বলে তিনি জানান।খুলনা জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন জানান, ১০০ টাকার স্ট্যাম্প না থাকায় সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেই ডিসেম্বর মাসে জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য আইনগত চুক্তিপত্রের চাপ বেশি থাকে। যদিও অনেক ভেন্ডারদের কাছে স্ট্যাম্প আছে তবে অনেকেই দাম বেশি নিচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে ভেন্ডারদের সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা তিনি অস্বীখার করেন।

খুলনা জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সভাপতি রনজিত কুমার দাস জানান, গত দুই সপ্তাহ যাবত খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখা সরকারি ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা কিছু কিছু চালান জমা দিলেও ট্রেজারি শাখা থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহ পাওয়া যায়নি। এমনিতেই বছরের শেষে জমি রেজিস্ট্রি, চুক্তিনামাসহ অন্যান্য বিষয়ের নিবন্ধনের চাপ থাকে। তদুপরি স্ট্যাম্প সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সমিতিভূক্ত ৯৯জন সদস্যের কেউ অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রয় করছে না। কারো বিরুদ্ধে এ ধরণের কাজ করার অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি বর্হিভূত কেসিসি মার্কেট, খালিশপুর ও কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় কিছু কিছু ভেন্ডাররা অসৎ উদ্দেশ্যে সংকটের কথা বলে অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু সমিতির সদস্যভূক্ত না হওয়ায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুলনা জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, স্ট্যাম্পের কোন সংকট নেই। তবে ট্রেজারি থেকে সরবরাহ কম থাকায় কেউ কেউ এটাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। তিনি বিকল্প পন্থায় কম টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ তাদের জমির রেজিস্ট্রসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও জানান।

খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার জানান, স্ট্যাম্প সংকট থাকার কথা তিনি জানেন না। খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে জানান। তবে তিনি সাধারণ মানুষ যারা জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য কাজে স্ট্যাম্প ব্যবহার করেন তাদেরকে ব্যাপক পরিমাণ স্ট্যাম্প ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বনিম্ন ২০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প এবং বাকি মূল্যের পে-অর্ডারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনি অধিক সংখ্যক ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প ব্যবহার না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার রূপায়ন দেব জানান, ট্রেজারীতে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা চালান জমা দিলেই প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে কোন কোন ভেন্ডার অতি লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাজ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। সঠিক অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ভেন্ডারদের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, স্ট্যাম্প সংকটের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনার সাথে অনিয়ম ও কারসাজির কোন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

বাগেরহাটে এ্যাডভোকেট নয়নের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন

খুলনায় ভেন্ডার সিন্ডিকেটের কারসাজিতে স্ট্যাম্প সংকট :

খুলনায় অতিরিক্ত দামে ষ্ট্যাম্প কিনে জমি রেজিস্ট্রিসহ চরম দূর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত সময় : ০১:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩

###    খুলনায় ভেন্ডারদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে স্ট্যাম্প সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই ‍সুযোগে অতিরিক্ত দামে ষ্ট্যাম্প বিক্রি করে সাধারন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থ। সংকটের কারনে ষ্ট্যাম্প না পাওয়ায় জমির দলিল নিবন্ধন, চুক্তিপত্র, নোটারী পাবলিক, হলফনামা, বন্ধকনামা ও মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কাজে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভেন্ডারদের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের এ ‍কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে অতি জরুরী প্রয়োজনে জমিসহ বিভিন্ন রেজিস্ট্রি ও চুক্তিনামার কাজে দ্বিগুণ দামে স্ট্যাম্প কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির নেতারা ট্রেজারী থেকে সরবরাহ কম হওয়াকে সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, স্ট্যাম্প সংকটের কারণে জমিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পারায় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস ও দলিল লেখকদের সূত্রে জানা গেছে, জমির দলিল নিবন্ধন, বিভিন্ন ধরণের চুক্তিপত্র, নোটারি পাবলিক, হলফনামা, বন্ধকনামা ও মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কাজে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প প্রয়োজন হয়। আদালতে বিচার কাজে দরখাস্তের আবেদন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নকলের জন্য ডেমি স্ট্যাম্প ব্যবহার হয়। এখান থেকে সরকার প্রতি কর্মদিবসে বড় অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে থাকে। যারা সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডার তারা জেলা প্রশাসকের ট্রেজারী শাখা থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে। বিনিময়ে ভেন্ডাররা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পেয়ে থাকে সরকারের কাছ থেকে। এজন্য সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করা অবৈধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এসব কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়তি টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর এবং ০১জানুয়ারী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুলনা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস, কেসিসি মার্কেট ও কোট চত্বরে অবস্থান করে এবং স্ট্যাম্প ভেন্ডার, দলিল লেখক ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে ভোগান্তির কথা জানা গেছে। নগরীর টুটপাড়ার নাজমুল হোসেন এসেছিলেন খুলনার সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত স্ট্যাম্প না পেয়ে ঘুরে বেড়ান ভেন্ডারদের দ্বারে দ্বারে। তারপরও তিনি সরকার নির্ধারিত দামে স্ট্যাম্প কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরও জানান, জমি রেজিস্ট্রি করতে এসে এখানকার কোনো স্ট্যাম্প ভেন্ডারের কাছে ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প পাইনি। তবে বিপ্লব পাল নামের এক স্ট্যাম্প ভেন্ডার ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দাম চেয়েছে। প্রথমে ১০০ টাকার স্ট্যাম্প নেই বলে জানালেও পরে অতিরিক্ত টাকা দিলে স্ট্যাম্প পাওয়া যাবে বলে এ ভেন্ডার জানায়। স্ট্যাম্প সংকটের কারণে জমি রেজিস্ট্রি না করে ফিরে যেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। একই কথা জানান পশ্চিম বানিয়া খামার এলাকার শামিমুল আলম। তিনি জানান, কোনো যায়গায় স্ট্যাম্প না পেয়ে এক ভেন্ডারের কাছে গিয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে জমি রেজিস্ট্রি করেছি। এভাবে সবাইকে স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা সংকটের কথা বলে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে দ্বিগুণ মূল্যে স্ট্যাম্প কিনে প্রয়োজনীয় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বিষয়ে জনগণকে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি জানান। নগরীর লবনচরা এলাকার তারিক হোসেন জানান, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৪০০ টাকা দিয়েও পাচ্ছি না। পরে অনেক কষ্টে কেসিসি মার্কেট থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প কিনেছি। স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের কাছে স্ট্যাম্প মজুদ থাকলেও তারা সংকটের কথা বলে অধিক দামে বিক্রয় করছে। এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করতে গেলে স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করছে। তবেিএই ভেন্ডারদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে তাদেরকে কেউ কিছুই বলতে পারে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। খুলনা মহানগরীর মো: লিয়াকত আলী, মো: শাহাজাহান, মো: শের আলী ও বাদল তালুকদারসহ ভেন্ডারদের একটি সিন্ডিকেট নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের এ ‍কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে বলে ষ্ট্যাম্প কিনতে আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যলয় সংলগ্ন স্ট্যাম্প ভেন্ডার লিয়াকত আলী খান জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী থেকে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সরবরাহ করেনি। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা ট্রেজারীতে চালান জমা দিলেও অধিকাংশ ভেন্ডার স্ট্যাম্প পায়নি। যে কারণে স্ট্যাম্পের সংকট তৈরি হয়েছে। ভেন্ডাররা জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছে। অথচ বেশি দামে অনেকের কাছে স্ট্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। দ্রুত ট্রেজারী থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হলে সংকটের সমাধান হবে বলে তিনি জানান।খুলনা জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন জানান, ১০০ টাকার স্ট্যাম্প না থাকায় সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেই ডিসেম্বর মাসে জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য আইনগত চুক্তিপত্রের চাপ বেশি থাকে। যদিও অনেক ভেন্ডারদের কাছে স্ট্যাম্প আছে তবে অনেকেই দাম বেশি নিচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে ভেন্ডারদের সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা তিনি অস্বীখার করেন।

খুলনা জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সভাপতি রনজিত কুমার দাস জানান, গত দুই সপ্তাহ যাবত খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখা সরকারি ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা কিছু কিছু চালান জমা দিলেও ট্রেজারি শাখা থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহ পাওয়া যায়নি। এমনিতেই বছরের শেষে জমি রেজিস্ট্রি, চুক্তিনামাসহ অন্যান্য বিষয়ের নিবন্ধনের চাপ থাকে। তদুপরি স্ট্যাম্প সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সমিতিভূক্ত ৯৯জন সদস্যের কেউ অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রয় করছে না। কারো বিরুদ্ধে এ ধরণের কাজ করার অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি বর্হিভূত কেসিসি মার্কেট, খালিশপুর ও কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় কিছু কিছু ভেন্ডাররা অসৎ উদ্দেশ্যে সংকটের কথা বলে অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু সমিতির সদস্যভূক্ত না হওয়ায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুলনা জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, স্ট্যাম্পের কোন সংকট নেই। তবে ট্রেজারি থেকে সরবরাহ কম থাকায় কেউ কেউ এটাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। তিনি বিকল্প পন্থায় কম টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ তাদের জমির রেজিস্ট্রসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও জানান।

খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার জানান, স্ট্যাম্প সংকট থাকার কথা তিনি জানেন না। খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে জানান। তবে তিনি সাধারণ মানুষ যারা জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য কাজে স্ট্যাম্প ব্যবহার করেন তাদেরকে ব্যাপক পরিমাণ স্ট্যাম্প ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বনিম্ন ২০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প এবং বাকি মূল্যের পে-অর্ডারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনি অধিক সংখ্যক ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প ব্যবহার না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।খুলনা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার রূপায়ন দেব জানান, ট্রেজারীতে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা চালান জমা দিলেই প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে কোন কোন ভেন্ডার অতি লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাজ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। সঠিক অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ভেন্ডারদের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, স্ট্যাম্প সংকটের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনার সাথে অনিয়ম ও কারসাজির কোন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ##