### শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ এর উপর হামলার প্রতিবাদে খুলনায় ২৪ ঘন্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টায় খুলনার সাত রাস্তা মোড়স্থ বিএমএ ভবন কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে এক সাংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হামলাকারীদের ১২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে বুধবার (১ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনা জেলার স্বাস্থ্য সেবা সকল প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা পূর্ণকর্মবিরতি পালন করবে।লিখিত বক্তব্যে ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরীর শেখপাড়াস্থ হক নার্সিং হোমে অপারেশন চলা কালীন সময়ে রোগীর স্বজনরা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের বার্ন প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আদুল্লাহকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করে । এসময় হামলাকারীরা তাকে হত্যা করার চেষ্টাও করে।বিএমএ খুলনার সভাপতি বলেন, অপারেশন চলাকালীন সময়ে সংরক্ষিত প্রবেশ অধিকার স্থান অপারেশন থিয়েটারে ভাংচুর করা হয়েছে।পূর্বে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার অজুহাতে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা ডা. নিশাতকে জোর জবরদস্তি করে অপারেশন মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। তার উপর পৈশাচিকভাবে আক্রমন এবং শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ডা. শেখ বাহারুল আলম এ ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে, বিচার দাবী করে তিনি বলেন, সহকর্মী ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ্ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে শারিরিক ও মানুষিক অস্বস্থিতে বেঁচে আছে। বহুবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আমলাদের বোঝানো হয়েছে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুকিপূর্ণ বিধায় নিরাপত্তা বিধান করার জন্য। কখনোই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কোন কর্তৃপক্ষ।বরং চিকিৎসকদের সাথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। এবারের ঘটনা আরও মারত্নক। আইনের রক্ষক পুলিশের পোশাক পরিহিত এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা চিকিৎসকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। সভ্য সমাজে এই ধরনের পৈশাচিক ঘটনা বিরল। দীর্ঘ তিন ঘন্টা যাবত একজন চিকিৎসককে আটকে রেখে উপহাস করা হয়েছে।বিভসৎস ভাষায় গালি গালাজ আর নগ্ন আচারনের বর্ননা শুনলে গা শিউরে ওঠে। সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছে খুলনার হক নাসিং হোম। আর নির্বিকার অসহায়ভাবে চিকিৎসক সহ্য করেছেন সেই বর্ণনাতীত নির্যাতন।তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার, রোগী বা চিকিৎসা প্রত্যাশি জনগনের এই মৌলিক অধিকারপূরণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্র বা সরকারের। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুষ্ঠিত হবে। চিকিৎসকরা রাষ্ট্রের সীমিত ব্যবস্থাপনায় বহুলাংশে জনগনের এই মৌলিক অধিকারপূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ রেখে চিকিৎসকরা আর কর্মস্থলে যেতে চাই না। ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লার মত একজন সৎ নিষ্ঠাবান ও পরোপকারী সহকারী অধ্যাপক এবং একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের উপর এই ধরনের অত্যাচারের দৃশ্য দেখে সমস্ত চিকিৎসক সমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসময় বিএমএ খুলনার সভাপতি এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যে এ এস আই নাঈম ও তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনা হলে বুধবার (১ মার্চ) সকাল ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনা জেলার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (সরকারী, বেসরকারী স্বায়ত্বশাষিত) সকল প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা পূর্ণকর্ম বিরতি পালন করা ঘোষনা দেন। শুধুমাত্র মানবিক কারণে জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। এছাড়া বুধবার সকাল ১০ টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহি:বিভাগ চত্ত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে তিনি জানান।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)সকালে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলাকালীন সময়ে কোন রোগীর মৃত্যু হলে তার দায় নেয়ার প্রশ্নে উত্তরে এ চিকিৎসক নেতা বলেন, চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার, রোগী বা চিকিৎসা প্রত্যাশি জনগনের এই মৌলিক অধিকার পূরন করার দায়িত্ব রাষ্ট্র বা সরকারের। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে। চিকিৎসকরা রাষ্ট্রের সীমিত ব্যবস্থাপনায় বহুলাংশে জনগনের এই মৌলিক অধিকার পুরানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ রেখে চিকিৎসকরা আর কর্মস্থলে যেতে চায় না।
এদিকে, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডা: নিশাত আব্দুল্লাহ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি বলেন, বিষয়টির দায়িত্ব নিয়েছে বিএমএ। সুতরাং যা করার বিএমএ করবে। তবে হক নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: মো: নূরুল হক ফকির বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে একজন রোগীর মা রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে এসে ডাক্তারের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি লোকজন জড়ো করে গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা থেকেও পুলিশ আনা হয়। কিন্তু পুলিশও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। যেহেতু ডা: নিশাত আব্দুল্লাহ তখন অন্য একটি জটিল অপারেশনে ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই নারীর স্বামী পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় এসে ডাক্তারকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ ও যুগ্ম সম্পাদক ডা. নেওয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী।খুলনা বিএমএ’র প্রচার ও জন-সংযোগ সম্পাদক ডা: সাইফুল্লাহ মানছুরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।##