### খুলনায় জেলখানায় থাকা দূর্ধর্ষ আসামীদের বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনসহ ৫৮টি আদালতের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে ছিটিয়ে দুই উগ্রবাদী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর সারাদেশের আদালতগুলোতে রেড এল্যার্ট জারি করা হয়েছে। এরসূত্র ধরে খুলনার আদালতগুলোতে বিশেষ এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, বিভাগীয় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী বিশেষ আদালতসহ সবগুলো আদালতে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশও। এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিমের সদস্যদের আদালত প্রাঙ্গণে টহল ও নজরদারি করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা আদালত প্রাঙ্গণে নজরদারি করছে। আদালতে আসামীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।একই সাথে আদালত এলাকার ময়লা-আর্জনাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোট পুলিশের এক কর্মকর্তা এ সময় জানান, কতৃর্পক্ষ আমাদেরকে বাড়তি সতর্কতার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আদালতে আসা লোকজনদের প্রতি বাড়তি নজদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কভাবে কাজ করছি।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক নিম্ন আদালতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের বিষয়ে জানতে খুলনার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন বক্তব্য না দিয়ে মিডিয়া অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসারের মুঠোফোনে বারবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুলনার আদালতগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা স্বীখার করে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান জানান, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনগণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কারাগার এবং জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আদালতে আসামি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
খুলনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দ বাগচী জানান, আদালতের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার বিষয়ে খুলনার পুলিশ প্রশাসনের সাথেও আমরা আলোচনা করেছি। আদালতগুলোর যথাযথ নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া দূর্ধর্ষ ধরণের বন্দী ও আসামীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সাথে সম্বন্বিতভাবে আদালত ও আসামীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
আদালতের নিরাপত্তার বিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে আসামী ছিনতাইয়ের ঘটনার পর খুলনার আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানালেও আদালতের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়া উচিত। তিনি আরও জানান, প্রশাসন যতই বলুক দেশে জঙ্গী নির্মূল করা হয়েছে। আসলে জঙ্গী দেশ থেকে নির্মূল হয়নি। জঙ্গী দমনে র্যাবের কিছু ভূমিকা থাকলেও তা সম্পূর্ণরূপে দমন করা সম্ভব হয়নি। জঙ্গীরা যদি সংগঠিত না-ই থাকে, তাহলে এ ধরণের পরিকল্পনা তারা কিভাবে করলো। এখন মনে হচ্ছে প্রযুক্তিগত দিক থেকেও এরা অনেক অগ্রসর হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ফাঁসির আসামীদের কোর্টে নেওয়ার সময় নাটকীয়ভাবে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অপ্রত্যাশীত। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত। সেই সাথে খুলনাসহ সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা এবং সমস্ত আদালত প্রাঙ্গণ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০নভেম্বর দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা চার ব্যক্তি পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে লেখক অভিজিৎ রায় ও জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। ছিনিয়ে নেয়া আসামিরা হলো-সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম এবং লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। এর পরপরই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক দেমের সকল আদালতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে। ##
অফিস : ৬৯/৭০ কেসিসি সুপার মার্কেট ( ২য় তলা ) খুলনা সদর, খুলনা। প্রকাশক - সম্পাদক : সুনীল দাস বার্তা সম্পাদক : তরিকুল ইসলাম ডালিম চিফ রিপোর্টার : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । যোগাযোগ : dainikmadhumati@gmail.com, newsdainikmadhumoti@gmail.com Office No : Editor : 01712680702 / 01912067948
© All rights reserved by www.dainikmadhumati.com (Established in 2022)