০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে হাইকোর্টের তিরষ্কার

  • ঢাকা অফিস।।
  • প্রকাশিত সময় : ০১:১৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
  • ৩৫ পড়েছেন

###    খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক(বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তিরষ্কার করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত খুলনা বারের সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলংক না, আপনি খুলনার কলংক। আপনি বিচারকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন কোনো সভ্য সমাজের মানুষ এ আচরণ করতে পারে না। মঙ্গলবার(২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। শুনানির শুরুতে খুলনা বারের সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। এ সময় আদালত সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনা সভ্য লোক কি বিচারকের সঙ্গে এ ধরণের আচরণ করতে পারে? তিনি কি আইনজীবী সমিতির সভাপতি হয়ে আদালতে দাপট দেখাচ্ছেন। আপনারা কেন এসব মানুষের পক্ষ নিয়ে আদালতে আসেন? আপনারা ডিপেন্ড করতে আসলে আমরা বিব্রত হই। বার কাউন্সিল চরের লোকদের সনদ দিয়ে আইনজীবী বানাচ্ছে। মানুষ কতটা নিচু হলে একজন বিচারকের সঙ্গে এ ধরণের ভাষা ব্যবহার করতে পারে। এ সময় খুলনা বারের সভাপতিকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলংক না। আপনি খুলনার কলংক। আপনি কি নিজেকে খুলনার মহানায়ক মনে করেন।

আদালতের বক্তেব্যের পর খুলনা বারের সভাপতি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা লজ্জিত তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি বলেন, এটা সত্যি অভিযোগ পড়তে লজ্জা লাগে। রেপ ভিকটিমের জবানবন্দির মতো মনে হয়।

আদালত আরও বলেন, আইনজীবীরা যদি আদালতের সঙ্গে এ রকম আচরণ করেন তাহলে আদালত, বার কিছুই থাকবে না। তারা ক্রিমিনাল অফেন্স করেছেন। এ সময় তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু আদালতকে বলেন, এবারের মত ক্ষমা করে দেন। আর কখনও এমন হবে না। তখন আদালত বলেন, যারা আদালত অবমাননা করে, বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আপনারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসবেন না। তাদেরকে আশ্রয় দিবেন না। আপনারা তাদের পক্ষে দাঁড়ালে সমাজে ভুল ম্যাসেজ যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি আর কখনও এমন ভুল হবে না। তখন আদালত বলেন,আপনারা ভুল করেননি। অপরাধ করেছেন। এ সময় আদালত খুলনার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে আদালত বলেন, আপনি এর আগে কি করতেন ? তখন তিনি বলেন, ব্যবসা করতাম। আদালত বলেন, আপনার আচরণ আইনজীবীর মতো না। বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ক্ষেতেও আপনি মেইন রোল প্লে করেছেন। আপনাদের মত ব্যবসায়ীরা এসে আইন পেশাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। খুলনার আরেক আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেনকেও ভৎর্সনা করেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ০১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত। ২২নভেম্বর তাদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অপর দুজন হলেন—আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেন ও অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু। বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়।চিঠির একাংশে বলা হয়, গত ০২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। একপর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয় পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন নামঞ্জুর করলেন আমাকে বলতে হবে। তখন বিচারক বলেন, ‘সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ উনি বলেন, ‘কীভাবে পারি। কোনভাবে জানবো বলেন।’ বিচারক বলেন, ‘আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি না-মঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নেবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।’ তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না।’ তিনি আবার বলেন, ‘আপনি টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে বেআইনিভাবে কাজ করে…’ তিনি (সংশ্লিষ্ট বিচারক) বলেন, ‘না না, এভাবে বলতে পারেন না।’ ওই আইনজীবী ধমক দিয়ে বলেন, ‘দাঁড়ান আপনি।’ তখন তার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা ধমকা-ধমকি করেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি দরখাস্ত নেবেন না মানে কি? এখানে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আমরা বলছি, আপনি নেবেন না কেন।’ বিচারক বলেন, ‘দরখাস্ত তো নেওয়া হয়েছে। দরখাস্ত শুনানি করে নামঞ্জুর হয়েছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কেন, আপনি কি মনে করেন, আপনি এই খুলনা অঞ্চলের শাসক হয়েছেন। আপনার ইচ্ছামতো চলবে কোর্ট, তাই আপনি মনে করেন নাকি।’ বিচারক বলেন, ‘না না, কোর্ট আইন অনুযায়ী চলবে।’ তিনি বলেন, ‘কোর্ট আইন অনুযায়ী চালান না আপনি। আপনি অসৎ মানুষ, ঘুষখোর মানুষ, দুর্নীতিবাজ মানুষ, আপনি আমাদের ওপর ৪০/৫০ হাজার মামলা দিয়ে খুলনা অঞ্চলের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে রাখছেন।’ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি কত শক্তিশালী, আমরা দেখতে চাই।’ গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২২নভেম্বর(মঙ্গলবার) বিষয়টি হাইকোর্টের কার্য তালিকায় আসে।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে হাইকোর্টের তিরষ্কার

প্রকাশিত সময় : ০১:১৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

###    খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক(বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তিরষ্কার করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত খুলনা বারের সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলংক না, আপনি খুলনার কলংক। আপনি বিচারকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন কোনো সভ্য সমাজের মানুষ এ আচরণ করতে পারে না। মঙ্গলবার(২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। শুনানির শুরুতে খুলনা বারের সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। এ সময় আদালত সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনা সভ্য লোক কি বিচারকের সঙ্গে এ ধরণের আচরণ করতে পারে? তিনি কি আইনজীবী সমিতির সভাপতি হয়ে আদালতে দাপট দেখাচ্ছেন। আপনারা কেন এসব মানুষের পক্ষ নিয়ে আদালতে আসেন? আপনারা ডিপেন্ড করতে আসলে আমরা বিব্রত হই। বার কাউন্সিল চরের লোকদের সনদ দিয়ে আইনজীবী বানাচ্ছে। মানুষ কতটা নিচু হলে একজন বিচারকের সঙ্গে এ ধরণের ভাষা ব্যবহার করতে পারে। এ সময় খুলনা বারের সভাপতিকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলংক না। আপনি খুলনার কলংক। আপনি কি নিজেকে খুলনার মহানায়ক মনে করেন।

আদালতের বক্তেব্যের পর খুলনা বারের সভাপতি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা লজ্জিত তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি বলেন, এটা সত্যি অভিযোগ পড়তে লজ্জা লাগে। রেপ ভিকটিমের জবানবন্দির মতো মনে হয়।

আদালত আরও বলেন, আইনজীবীরা যদি আদালতের সঙ্গে এ রকম আচরণ করেন তাহলে আদালত, বার কিছুই থাকবে না। তারা ক্রিমিনাল অফেন্স করেছেন। এ সময় তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু আদালতকে বলেন, এবারের মত ক্ষমা করে দেন। আর কখনও এমন হবে না। তখন আদালত বলেন, যারা আদালত অবমাননা করে, বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আপনারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসবেন না। তাদেরকে আশ্রয় দিবেন না। আপনারা তাদের পক্ষে দাঁড়ালে সমাজে ভুল ম্যাসেজ যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি আর কখনও এমন ভুল হবে না। তখন আদালত বলেন,আপনারা ভুল করেননি। অপরাধ করেছেন। এ সময় আদালত খুলনার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে আদালত বলেন, আপনি এর আগে কি করতেন ? তখন তিনি বলেন, ব্যবসা করতাম। আদালত বলেন, আপনার আচরণ আইনজীবীর মতো না। বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ক্ষেতেও আপনি মেইন রোল প্লে করেছেন। আপনাদের মত ব্যবসায়ীরা এসে আইন পেশাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। খুলনার আরেক আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেনকেও ভৎর্সনা করেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ০১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত। ২২নভেম্বর তাদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অপর দুজন হলেন—আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেন ও অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু। বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়।চিঠির একাংশে বলা হয়, গত ০২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। একপর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয় পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন নামঞ্জুর করলেন আমাকে বলতে হবে। তখন বিচারক বলেন, ‘সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ উনি বলেন, ‘কীভাবে পারি। কোনভাবে জানবো বলেন।’ বিচারক বলেন, ‘আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি না-মঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নেবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।’ তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না।’ তিনি আবার বলেন, ‘আপনি টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে বেআইনিভাবে কাজ করে…’ তিনি (সংশ্লিষ্ট বিচারক) বলেন, ‘না না, এভাবে বলতে পারেন না।’ ওই আইনজীবী ধমক দিয়ে বলেন, ‘দাঁড়ান আপনি।’ তখন তার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা ধমকা-ধমকি করেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি দরখাস্ত নেবেন না মানে কি? এখানে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আমরা বলছি, আপনি নেবেন না কেন।’ বিচারক বলেন, ‘দরখাস্ত তো নেওয়া হয়েছে। দরখাস্ত শুনানি করে নামঞ্জুর হয়েছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কেন, আপনি কি মনে করেন, আপনি এই খুলনা অঞ্চলের শাসক হয়েছেন। আপনার ইচ্ছামতো চলবে কোর্ট, তাই আপনি মনে করেন নাকি।’ বিচারক বলেন, ‘না না, কোর্ট আইন অনুযায়ী চলবে।’ তিনি বলেন, ‘কোর্ট আইন অনুযায়ী চালান না আপনি। আপনি অসৎ মানুষ, ঘুষখোর মানুষ, দুর্নীতিবাজ মানুষ, আপনি আমাদের ওপর ৪০/৫০ হাজার মামলা দিয়ে খুলনা অঞ্চলের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে রাখছেন।’ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি কত শক্তিশালী, আমরা দেখতে চাই।’ গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২২নভেম্বর(মঙ্গলবার) বিষয়টি হাইকোর্টের কার্য তালিকায় আসে।##