### খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. মিহির রঞ্জন হালদার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর চার বছরের জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে নিয়োগ দেন এবং গত ০৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ই আগস্ট নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য শহীদদের ও ৩রা নভেম্বর জেলখানায় নিহত ৪ জাতীয় নেতাসহ ৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং আজ অবধি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা আত্মহুতি দিয়েছে তাঁদের সবাইকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৭সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালের ৩ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ নির্দেশনায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজী(বিআইটি) খুলনা এবং ২০০৩সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ করে প্রকৌশল শিক্ষায় অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে চলার লক্ষ্য অর্জনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাত্র তিনটি বিভাগ,স্নাতক পর্যায়ে ০১ জন ছাত্রীসহ ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছিলো। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ০৩টি অনুষদের আওতায় ২০টি বিভাগ, ০৩ টি ইনস্টিটিউটে ৪৮৫১ জন স্নাতক ও ১৭৭৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট, আর্কিটেকচার, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়।স্নাতক পর্যায়ে প্রতি বছর ১০৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এছাড়া ১৩টি বিভাগ ও ৩টি ইনস্টিটিউট হতে স্নাতকোত্তর অর্থাৎ মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয় ।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধশালী, গবেষণাধর্মী ও উদ্ভাবনীময় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা। এজন্য আমাদের লক্ষ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উচ্চ অবস্থানে নিয়ে আসা। এজন্য করণীয় নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করার পরিকল্পনা করবো। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আরও আধুনিক অবকাঠামো, দক্ষ জনবল, বিশ্বমানের গবেষণাগার। শিক্ষা ও গবেষণার এ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য বর্তমান সরকার ৮শত ৩৮ কোটি ৩৬ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী প্রশাসনের পশ্চাৎপদতার কারণে কাজের অগ্রগতি (মাত্র ২৮ শতাংশ) আমাদের আশাহত করেছে। সেকারণে একটি “এ” ক্যাটাগরির প্রজেক্ট এখন “বি” ক্যাটাগরির প্রজেক্টে পরিণত হয়েছে, অনেক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার খবর পাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত কোন অবকাঠামো পুরোপুরি নির্মিত হয়নি, কোন একটি কাজ সম্পন্ন হয়নি। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এর দায় নিতে হবে। এই প্রজেক্টটিকে গতিশীল করা এবং কাঙ্খিত লক্ষে পৌছানো এখন আমার কাছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
এছাড়া অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী অর্গানোগ্রামের মেয়াদ ছিলো ২০১৯-’২০ পর্যন্ত। অর্গানোগ্রামে দেওয়া নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট খোলা ও জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা থাকে। এরপর ২০২০-’২১ থেকে ২০২৯-’৩০ পর্যন্ত একটি নতুন অর্গানোগ্রামের প্রস্তাব দেয়া হলেও তা এখনও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূখী পরিকল্পনা সচল রাখতে হলে অর্গানোগ্রাম অপরিহার্য। আমি দায়িত্বগ্রহণের পর বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে এক সভার মাধ্যমে প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামের বিভিন্ন অংশ সংশোধনের নির্দেশনা পাই এবং সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি অচিরেই আমরা আগামী ১০ বছরের জন্য একটি অর্গানোগ্রাম পেয়ে যাবো।
তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের সমপর্যায়ের প্রমাণের জন্য এক্রিডিটেশন করার কাজ চলমান রয়েছে। পূর্বে আমরা দুইটি বিভাগের স্বীকৃতি পেয়েছি, ইতোমধ্যে আরো একটি বিভাগের স্বীকৃতি পাওয়ার চুড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে এবং আরো দুটি বিভাগের প্রমাণক দলিলপত্র অবিলম্বে জমা হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান প্রজেক্টের আওতায় যে সমস্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অচিরেই আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের র্যাংকিংও বেড়ে যাবে। ভাইস-চ্যান্সেলর সকলকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় কাজ করতে সকলের সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডীন প্রফেসর ড. এএনএম মিজানুর রহমান ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমান ভূঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ##
অফিস : ৬৯/৭০ কেসিসি সুপার মার্কেট ( ২য় তলা ) খুলনা সদর, খুলনা। প্রকাশক - সম্পাদক : সুনীল দাস বার্তা সম্পাদক : তরিকুল ইসলাম ডালিম চিফ রিপোর্টার : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । যোগাযোগ : dainikmadhumati@gmail.com, newsdainikmadhumoti@gmail.com Office No : Editor : 01712680702 / 01912067948
© All rights reserved by www.dainikmadhumati.com (Established in 2022)