####
খুলনা-৬ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন ৪জানুয়ারী পর্যন্তও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: আকতারুজ্জামান বাবুর সমর্থক পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগামী ৭জানুয়ারীর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মো: রশীদুজ্জামানের নৌকাকে ডোবাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জিএম মাহবুবুল আলমের ঈগল প্রতীকের পক্ষ নিয়েছেন তারা। এ আসনে মো: রশীদুজ্জামান, ও মাহবুবুল আলম ছাড়াও বিএনএমের মনোনীত নোঙর প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, জাতীয় পার্টির শফিকুল আলম মধু, এনপিপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম, জাকের পার্টি মনোনীত শেখ মর্তুজা আল মামুন ও তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদির উদ্দিন রয়েছেন।
তবে সবকিছুকেই ছাপিয়ে আরোচনায় রয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যের বিভক্তি। এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামানের বিরোধীতা করছেন বর্তমান এমপি। তিনি নৌকাকে ডোবাতে সবকিছুই করছেন বলে নৌকার প্রার্থী নিজেই অভিযোগ করেছেন। তবে তা প্রকাশ্যে নয়। স্থানীয় এমপির সমর্থক নেতাকর্মীরা গোপনে সভা-সমাবেশ ও গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের জিএম মাহবুবুল আলমের পক্ষে। তিনি পাইকগাছায় মামাবাড়ীর লোকজন ছাড়াও আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভক্তি করার চেষ্টা করে বেশী সুবিধা করতে না পারলেও কয়রা উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে যাদেরকে বৈধ-অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন তারা এবার ঈগলের পক্ষে এমপির ঋণ শোধ করতে নেমেছেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়ে বর্তমান সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু ও তার অনুসারীরা নৌকার প্রার্থী মো: রশিদুজ্জামানকে নতুন, অপরিচিত ও জনপ্রিয়তাহীন বলে প্রোপগন্ডা ছাড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ভোটারদের কাছে নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরছেন। একাজে কয়রা উপজেলায় স্থানীয় এমপির কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম শফিকুল ইসলাম প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া কয়রা উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের এমপির পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ৪নং মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ.কে.এম ফজলুল হক, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর ছাত্তার পাড়, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ও তাদের অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলমের ঈগল মার্কার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও এমপির অনুসারী কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সরদার, ১নং আমাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অব্দুর সবুর ঢালী, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বুলবুল তরফদার,৩নং ওয়ার্ড কয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফফার ঢালী,উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য কারিম,কয়রা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর গাজী, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহুরুল হক বাচ্চু, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সদস্য হাবিবুর রহমান, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সদস্য শাহাবুদ্দীন মালী, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সদস্য আহ্বাফুর রহমান দুদু, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সদস্য আব্দুস সালাম পাড়, কয়রা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও যুবলীগ সদস্য মাসুম বিল্লাহ, ৪নং মহেশ্বরীপুর ইউপি সদস্য ও যুবলীগের সদস্য মহশিষ, কয়রা উপজেলা যুবলীগের সদস্য আক্তারুজ্জামান খোকন, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন নৌকাকে ডোবাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে জানা গেছে।
অণ্যদিকে, পাইকগাছা উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় এখানে বিভক্তির চেষ্টা করেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি না এমপি বাবু।এ উপজেলায় অবশ্য বর্তমান এমপির সাথে যুক্ত হয়েছেন সাবেক এমপি শেখ নুরুল হকের ছেলে মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ রাশেদুজ্জামান রাসেল।পাইকগাছা উপজেলায় আকতারুজ্জামান বাবু ও শেখ রাশেদুজ্জামান রাসেলের অনুসারীদের মধ্যে লতা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল, গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান আ. ছালাম কেরু, রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এসএম সামছুর রহমান, দেলুটি ইউনিয়ন সভাপতি নির্মল কান্তি মন্ডলের ছেলে ভল্টন মন্ডল, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা মশিউর রহমানেরর শশুড়বাড়ি চাঁদখালী ইউনিয়নের মোঃ আক্তারুজ্জামান সুজা ও তাদের সহযোগীরা নৌকার বিরোধীতা করে ঈগলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সুত্রে জানা গেছে। এদিকে, পাইকগাছা উপজেলায় এমপি বাবু গত ৫বছরে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করতে দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের কমিটি গঠন না করার ক্ষোভও নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে নেতাকর্মীদের অনেকেই ধারনা করছেন।
তবে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সবাই নৌকার পক্ষে জোরেসোরে নেমেছেন। এ উপজেলায় দলের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইকবাল মন্টু ও সাধারন সম্পাদক মো: কামরুল ইসলাম। তারা আরও জানান, এখানে নৌকার বাইরে কেউ যাবে না। যদিও স্থানীয় এমপি আকতারুজ্জামান বাবুকে মাত্র একদিন নৌকার একটি সভায় দেখা গেছে। তিনি আর কখনও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা নেই। তবে স্থানীয় এমপির একান্তভাজন যারা রয়েছেন তারাই নৌকার বিরোধীতা করে ঈগলের পক্ষে কাজ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেটাতে নৌকার বিজয়ে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলেও জানান তারা।
কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমপির অনুসারী বলে পরিচিত আব্দুস সাত্তার পাড় সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম. মাহবুবুল আলম প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে। নৌকার পক্ষে নেতাকর্মীর ঐক্য দেখা গেলেও ভোটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। তবে কয়রা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মহসীন রেজা ও সাধারন সম্পাদক নীশিত কুমার মিস্ত্রি জানান, আমরা বঙ্গ্ন্ধুর আদর্শের কর্মী। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকার বাইরে কোন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নৌকাকে বিজয়ী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বর্তমান এমপি আকতারুজ্জামান বাবুর কিছু অনুসারী যারা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মানুষের উপর নানান অথ্যাচার-র্যাতন করেছেন। এমপির পক্ষ নিয়ে অপকমর্করেছেন তারাই এখন নৌকার বিরোধীতা করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে আগামী ০৭জানুয়ারী কয়রার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।
এদিকে, সাধারন ভোটাররা বেলছেন, কয়রায় আওয়ামীলীগের বিভক্তির সুযোগ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুব আলম বেশকিছুটা এগিয়েছেন। তবে একানে জয়-পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করছে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটারদের উপর। বিএনপি-জামায়াত যৌথভাবে নির্বাচন বিরোধী আন্দোলনে রয়েছে। তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে না বলেছে। কিন্তু তাদের সাধারন সমর্থকরা যদি ভোট দিতে আসে তবেই হয়তো নৌকাকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে নৌকার ভোটের বিভক্তি নৌকারে জন্য দু:সংবাদও হতে পারে। অন্যদিকে, পাইকগাছার সাধারন ভোটাররা বলছেন, এ আসনে গত নির্বাচনে পাইকগাছার কেউ প্রার্থী ছিল না। এবার পাইকগাছার সন্তান প্রার্থী হওয়ায় তারা আনন্দিত। সে কারনে তারা সবাই নৌকার প্রার্থীকেই বেছে নিতে চান। এখানে নৌকার ভোটের সেবাবে বিভক্তি না থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে নৌকা। তবে জয়-রাজয়ের বিষয়টির জন্য আগামী ০৭জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তবে খুলনা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো: আকতারুজ্জামান বাবু সাংবাদিকদের জানান, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছেন। যারা বিরোধীতার কথা বলছেন তারা সঠিক কথা বরছেন না। তিনিও নৌকার বিজয় কামনা করেন। #