০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুমুরিয়ায় বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজারো বাগদা ও গলদা চাষি

####

খুলনার ডুমুরিয়ায় একটানা কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে ভেসে গেছে ১২ হাজার ৫৩০টি মাছের ঘের।ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৬০ কোটি টাকার উপরে। দ্রুত পানি নিষ্কাসন ও ক্ষতি পূরণের আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তার। ডুমুরিয়ায় মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৮ হাজার ৫৭৪ জন মাছচাষি। এলাকাটিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ি এবং কার্প জাতীয় মাছ চাষ হয় প্রচুর পরিমাণ। ডুমুরিয়ার উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ি খুলনা অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। ডুমুরিয়ার অধিকাংশ বাগদা চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের আধারমানিক,খলসিবুনিয়া,পুটিমারী,সুন্দরবুনিয়া,বয়ারশিং, ছোট মুড়াবুনিয়া ও মাগুরখালী ইউনিয়নের বৈঠাহারা,উচুবিল,,নয়নব্রম্মা,আলোকদিয়া,বাবলা তলার বড় বড় চিংড়ি ঘের গুলোতে। আর এ মাছ চাষের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে এ দুই ইউনিয়নের ৮৫% মাছ চাষি। সম্প্রতিক গত মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টিসহ এমাসেও কয়কদফা ভারী বৃষ্টি এবং ভদ্রা ও সালথা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে এসমস্ত মৎস্য খামারগুলো প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে এ অঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি চাষিদের স্বপ্ন।

বয়ারসিং এলাকার ঘের ব্যাবসায়ী সুনিল মন্ডল জানান, প্রায় বছর দশেক ধরে ঘের ব্যবসা করে আসছি। বৃষ্টিতে এত ক্ষতি কখনো হয়নি।আমার সাত বিঘা মাছের ঘেরের সমস্ত চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে অন্তত ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। একই এলাকার আরেক মৎস্য চাষী রবিন মন্ডল বলেন, বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি ঘেরে বাগদা রেণু ছেড়িছিলাম,মাছও হয়েছিলো পর্যাপ্ত পরিমাণ কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে দুটি ঘেরের মাছ সব ভেসে যেয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।কিভাবে আমি ঋণ পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। এছাড়াও গোলাপদহ গ্রামের দেবব্রত, আধারমজনিক গ্রামের মন্ডল, স্কুল শিক্ষক, রবিন্দ্রনাথ মন্ডলসহ একাধিক চিংড়ী চাষিরা জানায়, এক মাস অতিবাহিত হলেও দেখা য়ায়নি পাউবো কতৃক, জলামগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাসনের উদ্যোগ। দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)এর মাধ্যমে আধারমানিক স্লুইস গেইট ও খলশিবুনিয়া স্লুইস গেইটের সম্মুখভাগের পলি স্থায়ী ভাবে পূনরায় খননের মাধ্যমে সৃষ্ট বন্যার পানি নিষ্কাসন না করলে স্থায়ী জলবদ্ধতায় রুপ নিবে আটলিয়া ও মাগুরখালি অঞ্চলে।এসনটাই বলছে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও চতুরদিকে থৈথৈ করছে পানি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ঘেরগুলোর ভেঁড়িবাঁধের নিশানা না থাকায় ভেসে গেছে ১২ হাজার ৫৩০টি মাছের ঘের।ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৬০ কোটি টাকা।এর ফলে এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা হয়েছে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ। ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। বরাদ্দ না পেলে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ নেই। মৎস্য ব্যবসায়ীরা যাতে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সে জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আল আমিন বলেন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে অফিসারদের মাধ্যমে রিপোর্ট এনে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।প্রতিবেদন আকারে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার কাছে আমরা পাঠািয়েছি,ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্য চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের আওতায় আনা হবে।। তাছাড়াও পাউবোর বিভিন্ন স্লুইস গেইটেের সম্মুখে পলি অপসারণে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাশাপাশি বিএডিসির সেচের কাজও চলমান আছে আশা রাখছি এভাবে কাজ অব্যাহত থাকলে অতি দ্রুত জলবদ্ধতা থেকে ডুমুরিয়া বাসীকে মুক্ত করতে পারবো।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

ডুমুরিয়ায় পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট

ডুমুরিয়ায় বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজারো বাগদা ও গলদা চাষি

প্রকাশিত সময় : ০৬:১৭:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

####

খুলনার ডুমুরিয়ায় একটানা কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে ভেসে গেছে ১২ হাজার ৫৩০টি মাছের ঘের।ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৬০ কোটি টাকার উপরে। দ্রুত পানি নিষ্কাসন ও ক্ষতি পূরণের আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তার। ডুমুরিয়ায় মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৮ হাজার ৫৭৪ জন মাছচাষি। এলাকাটিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ি এবং কার্প জাতীয় মাছ চাষ হয় প্রচুর পরিমাণ। ডুমুরিয়ার উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ি খুলনা অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। ডুমুরিয়ার অধিকাংশ বাগদা চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের আধারমানিক,খলসিবুনিয়া,পুটিমারী,সুন্দরবুনিয়া,বয়ারশিং, ছোট মুড়াবুনিয়া ও মাগুরখালী ইউনিয়নের বৈঠাহারা,উচুবিল,,নয়নব্রম্মা,আলোকদিয়া,বাবলা তলার বড় বড় চিংড়ি ঘের গুলোতে। আর এ মাছ চাষের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে এ দুই ইউনিয়নের ৮৫% মাছ চাষি। সম্প্রতিক গত মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টিসহ এমাসেও কয়কদফা ভারী বৃষ্টি এবং ভদ্রা ও সালথা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে এসমস্ত মৎস্য খামারগুলো প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে এ অঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি চাষিদের স্বপ্ন।

বয়ারসিং এলাকার ঘের ব্যাবসায়ী সুনিল মন্ডল জানান, প্রায় বছর দশেক ধরে ঘের ব্যবসা করে আসছি। বৃষ্টিতে এত ক্ষতি কখনো হয়নি।আমার সাত বিঘা মাছের ঘেরের সমস্ত চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে অন্তত ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। একই এলাকার আরেক মৎস্য চাষী রবিন মন্ডল বলেন, বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি ঘেরে বাগদা রেণু ছেড়িছিলাম,মাছও হয়েছিলো পর্যাপ্ত পরিমাণ কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে দুটি ঘেরের মাছ সব ভেসে যেয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।কিভাবে আমি ঋণ পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। এছাড়াও গোলাপদহ গ্রামের দেবব্রত, আধারমজনিক গ্রামের মন্ডল, স্কুল শিক্ষক, রবিন্দ্রনাথ মন্ডলসহ একাধিক চিংড়ী চাষিরা জানায়, এক মাস অতিবাহিত হলেও দেখা য়ায়নি পাউবো কতৃক, জলামগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাসনের উদ্যোগ। দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)এর মাধ্যমে আধারমানিক স্লুইস গেইট ও খলশিবুনিয়া স্লুইস গেইটের সম্মুখভাগের পলি স্থায়ী ভাবে পূনরায় খননের মাধ্যমে সৃষ্ট বন্যার পানি নিষ্কাসন না করলে স্থায়ী জলবদ্ধতায় রুপ নিবে আটলিয়া ও মাগুরখালি অঞ্চলে।এসনটাই বলছে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও চতুরদিকে থৈথৈ করছে পানি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ঘেরগুলোর ভেঁড়িবাঁধের নিশানা না থাকায় ভেসে গেছে ১২ হাজার ৫৩০টি মাছের ঘের।ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৬০ কোটি টাকা।এর ফলে এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা হয়েছে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ। ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। বরাদ্দ না পেলে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ নেই। মৎস্য ব্যবসায়ীরা যাতে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সে জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আল আমিন বলেন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে অফিসারদের মাধ্যমে রিপোর্ট এনে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।প্রতিবেদন আকারে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার কাছে আমরা পাঠািয়েছি,ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্য চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের আওতায় আনা হবে।। তাছাড়াও পাউবোর বিভিন্ন স্লুইস গেইটেের সম্মুখে পলি অপসারণে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাশাপাশি বিএডিসির সেচের কাজও চলমান আছে আশা রাখছি এভাবে কাজ অব্যাহত থাকলে অতি দ্রুত জলবদ্ধতা থেকে ডুমুরিয়া বাসীকে মুক্ত করতে পারবো।