০২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুমুরিয়া সদরের জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেই, হতাশ সাধারণ মানুষ 

####

বিল ডাকাতিয়া-সহ সমগ্র ডুমুরিয়া উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে নানামুখি প্রচেষ্টার ফলে ১০ ভেন্টের শোলমারী রেগুলেটর দিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় কিছুটা আশা জেগেছে। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের জল-নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থাই চোখে পড়ছে না।
গত ১ মাসের টানা বর্ষায় সমগ্র বিল ডাকাতিয়া-সহ ডুমুরিয়া উপজেলার সকল বিল-খাল-রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ অ লের জন-মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উপজীব্য মিষ্টি পানির চিংড়ি চাষ, সাথে ওই ঘেরের আইলে নানা প্রজাতির সবজি চাষ। সাম্প্রতিক অতি বর্ষণে প্রায় সকল চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পাশাপাশি ওইসব ঘেরের আইলে জন্মানো সকল প্রকার সবজি ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা কোটি-কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিল ডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথই হলো ১০ ভেন্টের শোলমারী রেগুলেটর। কিন্তু ওই রেগুলেটরের সামনের খাল ও সংশ্লিষ্ট শোলমারী নদীতে বিপুল পরিমান পলি জমে-জমে বিল এলাকা থেকে নদীর তলদেশ উচু হয়ে গেছে। এ কারণে প্রতি বছর বর্ষা-মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা মুক্তির আশায় বিশেষ করে উপজেলার রংপুর-রঘুনাথপুর-গুটুদিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে শোলমারী গেটের সামনে থেকে পলি অপসারণ করে বাঁচার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু দিনে-দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেওয়ায় চলতি বছর দীর্ঘ সময় ধরে লাগাতর বর্ষার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মাছ ও সবজির ঘেরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরেও পানি জমে আছে। আর অধিকাংশ রাস্তাঘাটও তলিয়ে রয়েছে। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে ও মাঠে পানি জমে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এবারের পানি নিষ্কাশনে নানামুখি প্রচেষ্টায় আশানুরুপ ফল না পেয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলাকার জননেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২টি ভাসমান স্কেভেটর দিয়ে গেটের সামনের পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়। তারা দিন-রাত কাজ করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে ছোট আকারের একটা ক্যানেল তৈরি করে নদীতে পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাতে আশানুরুপ পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে শোলমারী নদীর ভেতরেও খনন অব্যহত রেয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানির প্রবাহ বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সমরেশ মন্ডল বলেন, গত শনিবার থেকে গেট দিয়ে পানি বের হওয়া শুরু হলেও আমাদের এলাকায় এখনও দৃশ্যমান হয়নি। তবে শোলমারী নদীর ভেতর আরও কাঁটতে(ক্যানেল) পারলে দ্রæতই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। আর শোলমারী গেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মোটামুটি পানি বের হচ্ছে। তবে শোলমারী নদীর ভেতর আরও খনন অব্যহত রয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমার অবস্থা দেখতে পাবেন।
শোলমারী গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় বিল ডাকাতিয়া-সহ বিরাট অ লের মানুষের মনে আশা জাগলেও ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ, সামনে জোয়ারের বিল, ভেলকামারী বিল-সহ আশ-পাশের পানি মুক্তির কোনোই আশা দেখা যাচ্ছেনা। কারণ এসব অ লের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হলে সালতা নদী। পাউবো ২০১৮ সালে অর্ধ-শত কোটি টাকা খরচ করে সালতা ও ভদ্রা নদী খননের পর জোয়ার-ভাটার কারণে নদীতে পলি জমে-জমে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া নদীর পাশের অসংখ্য মানুষ তার সোজাসুজি চর ভরাট করে বা ভেড়ি দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করে দখলও করেছে।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া অ লের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, উপজেলা সদর এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হলো সালতা নদী। কিন্তু পলি পড়ে সম্পূর্ণ ভরাট হওয়ায় শালতা নদী তলদেশ থেকে ওই এলাকা ও বিলগুলো অনেক নিচু হওয়ায় পানি বের হওয়া অসম্ভব। তবে একমাত্র বিকল্প, ইলেকট্রিক পাম্প। সেটার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
ডুমুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হুমায়ুন কবির বুলু বলেন, ডুমুরিয়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য আমি ও গুটুদিয়া’র চেয়ারম্যান থেকে ইলেট্রিক পাম্প কেনার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সফল হয়নি। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উদ্যোগ নিলে হতো। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মত আল-আমিন বলেন, আমি দ্রæতই সমাধানের উদ্যোগ নেবো। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

ডুমুরিয়া সদরের জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেই, হতাশ সাধারণ মানুষ 

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

####

বিল ডাকাতিয়া-সহ সমগ্র ডুমুরিয়া উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে নানামুখি প্রচেষ্টার ফলে ১০ ভেন্টের শোলমারী রেগুলেটর দিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় কিছুটা আশা জেগেছে। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের জল-নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থাই চোখে পড়ছে না।
গত ১ মাসের টানা বর্ষায় সমগ্র বিল ডাকাতিয়া-সহ ডুমুরিয়া উপজেলার সকল বিল-খাল-রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ অ লের জন-মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উপজীব্য মিষ্টি পানির চিংড়ি চাষ, সাথে ওই ঘেরের আইলে নানা প্রজাতির সবজি চাষ। সাম্প্রতিক অতি বর্ষণে প্রায় সকল চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পাশাপাশি ওইসব ঘেরের আইলে জন্মানো সকল প্রকার সবজি ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা কোটি-কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিল ডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথই হলো ১০ ভেন্টের শোলমারী রেগুলেটর। কিন্তু ওই রেগুলেটরের সামনের খাল ও সংশ্লিষ্ট শোলমারী নদীতে বিপুল পরিমান পলি জমে-জমে বিল এলাকা থেকে নদীর তলদেশ উচু হয়ে গেছে। এ কারণে প্রতি বছর বর্ষা-মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা মুক্তির আশায় বিশেষ করে উপজেলার রংপুর-রঘুনাথপুর-গুটুদিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে শোলমারী গেটের সামনে থেকে পলি অপসারণ করে বাঁচার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু দিনে-দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেওয়ায় চলতি বছর দীর্ঘ সময় ধরে লাগাতর বর্ষার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মাছ ও সবজির ঘেরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরেও পানি জমে আছে। আর অধিকাংশ রাস্তাঘাটও তলিয়ে রয়েছে। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে ও মাঠে পানি জমে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এবারের পানি নিষ্কাশনে নানামুখি প্রচেষ্টায় আশানুরুপ ফল না পেয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলাকার জননেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২টি ভাসমান স্কেভেটর দিয়ে গেটের সামনের পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়। তারা দিন-রাত কাজ করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে ছোট আকারের একটা ক্যানেল তৈরি করে নদীতে পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাতে আশানুরুপ পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে শোলমারী নদীর ভেতরেও খনন অব্যহত রেয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানির প্রবাহ বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সমরেশ মন্ডল বলেন, গত শনিবার থেকে গেট দিয়ে পানি বের হওয়া শুরু হলেও আমাদের এলাকায় এখনও দৃশ্যমান হয়নি। তবে শোলমারী নদীর ভেতর আরও কাঁটতে(ক্যানেল) পারলে দ্রæতই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। আর শোলমারী গেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মোটামুটি পানি বের হচ্ছে। তবে শোলমারী নদীর ভেতর আরও খনন অব্যহত রয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমার অবস্থা দেখতে পাবেন।
শোলমারী গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় বিল ডাকাতিয়া-সহ বিরাট অ লের মানুষের মনে আশা জাগলেও ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ, সামনে জোয়ারের বিল, ভেলকামারী বিল-সহ আশ-পাশের পানি মুক্তির কোনোই আশা দেখা যাচ্ছেনা। কারণ এসব অ লের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হলে সালতা নদী। পাউবো ২০১৮ সালে অর্ধ-শত কোটি টাকা খরচ করে সালতা ও ভদ্রা নদী খননের পর জোয়ার-ভাটার কারণে নদীতে পলি জমে-জমে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া নদীর পাশের অসংখ্য মানুষ তার সোজাসুজি চর ভরাট করে বা ভেড়ি দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করে দখলও করেছে।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া অ লের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, উপজেলা সদর এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হলো সালতা নদী। কিন্তু পলি পড়ে সম্পূর্ণ ভরাট হওয়ায় শালতা নদী তলদেশ থেকে ওই এলাকা ও বিলগুলো অনেক নিচু হওয়ায় পানি বের হওয়া অসম্ভব। তবে একমাত্র বিকল্প, ইলেকট্রিক পাম্প। সেটার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
ডুমুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হুমায়ুন কবির বুলু বলেন, ডুমুরিয়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য আমি ও গুটুদিয়া’র চেয়ারম্যান থেকে ইলেট্রিক পাম্প কেনার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সফল হয়নি। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উদ্যোগ নিলে হতো। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মত আল-আমিন বলেন, আমি দ্রæতই সমাধানের উদ্যোগ নেবো। ##