০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাকোপে বিনা চাষে আলু আবাদ, বদলে যাচ্ছে উপকুলের কৃষি

###   খুলনার দাকোপের কৃষিতে নতুন সংযোজন বিনা চাষে আলু। পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়ে সফল হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। এলাকার অন্য চাষিরাও আলুর বাম্পার ফলন দেখে হয়েছেন অবাক। আগামী রবি মৌসুমে অধিক জমিতে এ আলু লাগানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এ এলাকার চাষিরা। সেই আবাদমহল থেকে দাকোপের কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে শুধু রোপা আমনের চাষ হত এরপর সারাবছর এমনি পড়ে থাকত মাঠ। আশির দশক থেকে এ অঞ্চলে রবিশস্যের ব্যাপক চাষ শুরু হয় এবং পীরক্ষামূলকভাবে লাগিয়ে তরমুজের ভাল ফলন পাওয়া যায়। তরমুজ এ এলাকার সবথেকে অর্থকরি ফসল হিসেবে কৃষকদের কাছে এখনও সমাদ্রিত।রবিশস্যের ব্যাপক প্রসার ঘটায় দাকোপ ইতমধ্যে কৃষি ভান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এবছর যুক্ত হয়েছে বিনা চাষে গোল আলু উৎপাদন।
চাষীদের সুত্রে জানা যায়, জার্মান সরকারের অর্থায়নে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রদ্বীপন ও আন্তর্জাতীক আলু গভেষনা কেন্দ্র বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।সংস্থাটি প্রথমে এ এলাকার ৪ শত ২০ জন আলু চাষিকে বিনা চাষে আলু লাগানোর প্রশিক্ষণ দেয় এবং তাদেরকে পীরক্ষামূলকভাবে লাগানোর জন্য কৃষক প্রতি ২০ কেজি করে লবন ও ক্ষরা সহিষ্ণু বারি ৭২ জাতের আলুর বীজ বিনা মূল্যে সরবারাহ করে। কৃষকরাও অতি উৎসাহিত হয়ে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী মাঠে আলুর বীজ রোপন করে এবং আশাতীত আলুর ফলন দেথতে পায়। আর সাথে সাথে এ এলাকার জন্য খুলে যায় কৃষির একটি নতুন দুয়ার। প্রদ্বীপনের কৃষিবিদ দূর্গাপদ সরকারের মাধ্যমে জানাযায় কিভাবে এ আলু রোপন করতে হয়। তিনি বলেন,আমন ধান কাটার পর জমির খড় কুটা ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে।মাটি সামান্য শুক্না হলে (পায়ে কাদা লাগবে না অথচ নরম থাকবে) এ অবস্থায় ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে আলু রোপন শুরু করতে হবে। আলুর গজ ভালোভাবে বের হলে প্রতিটি বীজ আলু ৩ ভাগের একভাগ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এরপর আলুটি পচা গোবর অথবা জৈব সার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দূরত্ব হবে আলু থেকে আলু ২০ সেঃমিঃ এবং সারি থেকে সারি ৪০ সেঃমিঃ। দুই সারির মাঝ বরাবর প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ছিটিয়ে গোটা ক্ষেতটি কুটা দিয়ে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে দিতে হবে। আলু লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর দেখতে হবে রোপনকৃত মাঠ শুকিয়েছে কি না। যদি শুকিয়ে যায় তাহলে হালকা সেচ দিতে হবে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর শতক প্রতি ৬’শ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫’শ গ্রাম এম ও পি সার উপরি প্রয়োগ করে ভালোভাবে সেচ দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে এক দুইবার সেচ দিলে যথেষ্ট। গাছ গজানোর পর যদি লাগে কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ অবধি মাঠ থেকে আলু তোলার সময় হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান উক্ত পদ্ধতিতে আলু লাগিয়ে এবার ফসল তোলার পর তথ্যানুযায়ী প্রতি বিঘা জমিতে ৮৫ থেকে ৯০ মন এবং প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ২৭ টন গোল আলু উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। আলু চাষি মশামারি গ্রামের সুব্রত রায় ও তমা মন্ডল বলেন,এক বিঘা জমিতে আলু লাগাতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা সেখানে লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। চরডাঙার চাষি অমল বৈরাগী জানান, এবার ৩ শতক জমিতে পরিক্ষামূলকভাবে আলু লাগিয়ে ভালো সুফল পেয়েছি ,ব্যয় কম পরিশ্রমও কম তাই আগামী বছর আরও বেশী করে গোল আলু লাগাব। ঠিক একই কথা জানান তিলডাঙার লক্ষী রানী ও মিরা বৈরাগী। আলুর বাম্পার ফলন দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও আগামীতে আলূ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম মাকসুদুন্নবী বলেন, আমি বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রকল্পের কয়েকটি মাঠ দেখেছি। আলুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। এটা একটি লাভজনক ফসল তাই আগামীতে আলু লাগানোর জন্য আমরাও কৃষকদের পরামর্শ দিব। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

দাকোপে বিনা চাষে আলু আবাদ, বদলে যাচ্ছে উপকুলের কৃষি

প্রকাশিত সময় : ১১:১২:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

###   খুলনার দাকোপের কৃষিতে নতুন সংযোজন বিনা চাষে আলু। পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়ে সফল হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। এলাকার অন্য চাষিরাও আলুর বাম্পার ফলন দেখে হয়েছেন অবাক। আগামী রবি মৌসুমে অধিক জমিতে এ আলু লাগানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এ এলাকার চাষিরা। সেই আবাদমহল থেকে দাকোপের কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে শুধু রোপা আমনের চাষ হত এরপর সারাবছর এমনি পড়ে থাকত মাঠ। আশির দশক থেকে এ অঞ্চলে রবিশস্যের ব্যাপক চাষ শুরু হয় এবং পীরক্ষামূলকভাবে লাগিয়ে তরমুজের ভাল ফলন পাওয়া যায়। তরমুজ এ এলাকার সবথেকে অর্থকরি ফসল হিসেবে কৃষকদের কাছে এখনও সমাদ্রিত।রবিশস্যের ব্যাপক প্রসার ঘটায় দাকোপ ইতমধ্যে কৃষি ভান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এবছর যুক্ত হয়েছে বিনা চাষে গোল আলু উৎপাদন।
চাষীদের সুত্রে জানা যায়, জার্মান সরকারের অর্থায়নে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রদ্বীপন ও আন্তর্জাতীক আলু গভেষনা কেন্দ্র বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।সংস্থাটি প্রথমে এ এলাকার ৪ শত ২০ জন আলু চাষিকে বিনা চাষে আলু লাগানোর প্রশিক্ষণ দেয় এবং তাদেরকে পীরক্ষামূলকভাবে লাগানোর জন্য কৃষক প্রতি ২০ কেজি করে লবন ও ক্ষরা সহিষ্ণু বারি ৭২ জাতের আলুর বীজ বিনা মূল্যে সরবারাহ করে। কৃষকরাও অতি উৎসাহিত হয়ে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী মাঠে আলুর বীজ রোপন করে এবং আশাতীত আলুর ফলন দেথতে পায়। আর সাথে সাথে এ এলাকার জন্য খুলে যায় কৃষির একটি নতুন দুয়ার। প্রদ্বীপনের কৃষিবিদ দূর্গাপদ সরকারের মাধ্যমে জানাযায় কিভাবে এ আলু রোপন করতে হয়। তিনি বলেন,আমন ধান কাটার পর জমির খড় কুটা ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে।মাটি সামান্য শুক্না হলে (পায়ে কাদা লাগবে না অথচ নরম থাকবে) এ অবস্থায় ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে আলু রোপন শুরু করতে হবে। আলুর গজ ভালোভাবে বের হলে প্রতিটি বীজ আলু ৩ ভাগের একভাগ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এরপর আলুটি পচা গোবর অথবা জৈব সার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দূরত্ব হবে আলু থেকে আলু ২০ সেঃমিঃ এবং সারি থেকে সারি ৪০ সেঃমিঃ। দুই সারির মাঝ বরাবর প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ছিটিয়ে গোটা ক্ষেতটি কুটা দিয়ে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে দিতে হবে। আলু লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর দেখতে হবে রোপনকৃত মাঠ শুকিয়েছে কি না। যদি শুকিয়ে যায় তাহলে হালকা সেচ দিতে হবে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর শতক প্রতি ৬’শ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫’শ গ্রাম এম ও পি সার উপরি প্রয়োগ করে ভালোভাবে সেচ দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে এক দুইবার সেচ দিলে যথেষ্ট। গাছ গজানোর পর যদি লাগে কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ অবধি মাঠ থেকে আলু তোলার সময় হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান উক্ত পদ্ধতিতে আলু লাগিয়ে এবার ফসল তোলার পর তথ্যানুযায়ী প্রতি বিঘা জমিতে ৮৫ থেকে ৯০ মন এবং প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ২৭ টন গোল আলু উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। আলু চাষি মশামারি গ্রামের সুব্রত রায় ও তমা মন্ডল বলেন,এক বিঘা জমিতে আলু লাগাতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা সেখানে লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। চরডাঙার চাষি অমল বৈরাগী জানান, এবার ৩ শতক জমিতে পরিক্ষামূলকভাবে আলু লাগিয়ে ভালো সুফল পেয়েছি ,ব্যয় কম পরিশ্রমও কম তাই আগামী বছর আরও বেশী করে গোল আলু লাগাব। ঠিক একই কথা জানান তিলডাঙার লক্ষী রানী ও মিরা বৈরাগী। আলুর বাম্পার ফলন দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও আগামীতে আলূ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম মাকসুদুন্নবী বলেন, আমি বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রকল্পের কয়েকটি মাঠ দেখেছি। আলুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। এটা একটি লাভজনক ফসল তাই আগামীতে আলু লাগানোর জন্য আমরাও কৃষকদের পরামর্শ দিব। ##