১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেবহাটায় জামায়াত সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কার্যদিবসে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারী এমপির উপস্থিতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

####

স্বর্ণ চোরাকারবারী, জামায়াতের ডোনার ও তালিকাভুক্ত চোরাকারবারী আল ফেরদৌস আলফা দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রথম কর্মদিবস শুরুতে। আর এই প্রথম কর্মদিবসে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। জামায়াতপন্থী চোরাকারবারী একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবসে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ও একজন সংসদ সদস্যের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্ষমতাশীল নেতৃবৃন্দের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ জেলার আরো ৫ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তাদের প্রথম কার্যদিবসে জেলা আওয়ামী লীগের কোন শীর্ষ নেতাকে দেখা যায় নি। এ ধরণের নজিরবিহিন ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ কি চোরাকারবারীর পকেটে ঢুকে পড়েছে?
সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেবহাটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আল ফেরদৌস আলফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা নির্বাচনে জামায়াতপন্থী আল ফেরদৌস আলফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনকে ঘিরে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসমর্থকরা একাধিকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্রকাশ্যে ও গোপনে আলফাকে সমর্থন করে। যার ফলশ্রুতিতে দেবহাটা উপজেলার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবর রহমান পরাজিত হয়। এ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে আলফার ছবি দিয়ে অভিনন্দন জানান। শুরু হয় কানাঘুষা। একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী জামায়াতের ডোনার আল ফেরদৌস আলফার প্রথম কার্যদিবসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম অতিথি হিসাবে উপস্থিত হওয়ায় সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে। তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতির উপস্থিতিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা সংবাদিকদের জানান, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যানের কর্মদিবসে তাদের মোঃ নজরুল ইসলাম ও লায়লা পারভীন সেজুতির উপস্থিতি কোন দলীয় সিদ্ধান্ত না। এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আলফা আওয়ামী লীগের কেউ না। আলফাকে এনারাই চেয়ারম্যান বানিয়েছে এজন্য তারা প্রথম কার্যদিবসে উপস্থিত হয়েছে। আলফার মত বিতর্কিত ব্যক্তির সাথে গোপনে সম্পর্ক রাখা যায়, কিন্তু প্রকাশ্যে সম্পর্ক রাখলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। আলফা তো টাকা বানানোর মেশিন এজন্য যাদের টাকা দরকার তারা তো যাবেই কোন ভদ্রলোক তো আর যাবে না।
জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মুজিবর রহমান জানান, “জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপির দেবহাটায় আগমনের বিষয়ে আমি জানি না। তারা আমাকে কিছু জানান নি।”
জেলা আওয়ামী লীগের আরেক দায়িত্বশীল নেতা জানান, “আলফা আওয়ামী লীগের সদস্য না। তার প্রথম কার্যদিবসে নজরুল সাহেবের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি নেপথ্যে থেকে আলফাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। তারা দেবহাটায় গিয়েছে সেটা উপজেলা আওয়ামী লীগ জানে না। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ চরম ক্ষুব্ধ।”
স্থানীয়রা জানান, আল ফেরদৌস আলফা শৈশবে দারিদ্রতার কারণে বেশি লেখাপড়া শিখতে পারে নি। কৈশরে সাইকেলে করে চালের বস্তা বয়ে জীবিকা নির্বাহ করত সে। তার আবব্বা অন্যর ঘেরে বেতন ভূক্ত কমচারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সীমান্ত চোরাচালাতে জড়িয়ে পড়ে আলফা। ভারত থেকে ফেন্সিডিল ও কাপড় চোরাচালানের মাধ্যমে চোরাকারবারী হিসাবে তার পরিচয় ঘটে। গত এক দশকে সে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে। এসব করে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক ও চোরাচালান মামলা। এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত চোরাকারবারী আলফা। এসব কারণে র‌্যাব, পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে আটক হয়ে একাধিকবার জেল খেটেছেন তিনি। উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে খুলনায় তার স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামী হন আলফা। দুই দিন যেতে না যেতে তাকে আবার জেলে ঢুকতে হলো। সে আবার উচ্চ আদালত থেকে জামিনের বিষয়ে আশাবাদী উপজেলা চেয়ারম্যান। দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল- ফেরদৌস আলফা খুলনার জেলহাজতে রয়েছেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

দেবহাটায় জামায়াত সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কার্যদিবসে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারী এমপির উপস্থিতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত সময় : ১০:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

####

স্বর্ণ চোরাকারবারী, জামায়াতের ডোনার ও তালিকাভুক্ত চোরাকারবারী আল ফেরদৌস আলফা দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রথম কর্মদিবস শুরুতে। আর এই প্রথম কর্মদিবসে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। জামায়াতপন্থী চোরাকারবারী একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবসে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ও একজন সংসদ সদস্যের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্ষমতাশীল নেতৃবৃন্দের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ জেলার আরো ৫ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তাদের প্রথম কার্যদিবসে জেলা আওয়ামী লীগের কোন শীর্ষ নেতাকে দেখা যায় নি। এ ধরণের নজিরবিহিন ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ কি চোরাকারবারীর পকেটে ঢুকে পড়েছে?
সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেবহাটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আল ফেরদৌস আলফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা নির্বাচনে জামায়াতপন্থী আল ফেরদৌস আলফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনকে ঘিরে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসমর্থকরা একাধিকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্রকাশ্যে ও গোপনে আলফাকে সমর্থন করে। যার ফলশ্রুতিতে দেবহাটা উপজেলার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবর রহমান পরাজিত হয়। এ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে আলফার ছবি দিয়ে অভিনন্দন জানান। শুরু হয় কানাঘুষা। একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী জামায়াতের ডোনার আল ফেরদৌস আলফার প্রথম কার্যদিবসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম অতিথি হিসাবে উপস্থিত হওয়ায় সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে। তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতির উপস্থিতিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা সংবাদিকদের জানান, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যানের কর্মদিবসে তাদের মোঃ নজরুল ইসলাম ও লায়লা পারভীন সেজুতির উপস্থিতি কোন দলীয় সিদ্ধান্ত না। এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আলফা আওয়ামী লীগের কেউ না। আলফাকে এনারাই চেয়ারম্যান বানিয়েছে এজন্য তারা প্রথম কার্যদিবসে উপস্থিত হয়েছে। আলফার মত বিতর্কিত ব্যক্তির সাথে গোপনে সম্পর্ক রাখা যায়, কিন্তু প্রকাশ্যে সম্পর্ক রাখলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। আলফা তো টাকা বানানোর মেশিন এজন্য যাদের টাকা দরকার তারা তো যাবেই কোন ভদ্রলোক তো আর যাবে না।
জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মুজিবর রহমান জানান, “জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপির দেবহাটায় আগমনের বিষয়ে আমি জানি না। তারা আমাকে কিছু জানান নি।”
জেলা আওয়ামী লীগের আরেক দায়িত্বশীল নেতা জানান, “আলফা আওয়ামী লীগের সদস্য না। তার প্রথম কার্যদিবসে নজরুল সাহেবের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি নেপথ্যে থেকে আলফাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। তারা দেবহাটায় গিয়েছে সেটা উপজেলা আওয়ামী লীগ জানে না। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ চরম ক্ষুব্ধ।”
স্থানীয়রা জানান, আল ফেরদৌস আলফা শৈশবে দারিদ্রতার কারণে বেশি লেখাপড়া শিখতে পারে নি। কৈশরে সাইকেলে করে চালের বস্তা বয়ে জীবিকা নির্বাহ করত সে। তার আবব্বা অন্যর ঘেরে বেতন ভূক্ত কমচারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সীমান্ত চোরাচালাতে জড়িয়ে পড়ে আলফা। ভারত থেকে ফেন্সিডিল ও কাপড় চোরাচালানের মাধ্যমে চোরাকারবারী হিসাবে তার পরিচয় ঘটে। গত এক দশকে সে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে। এসব করে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক ও চোরাচালান মামলা। এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত চোরাকারবারী আলফা। এসব কারণে র‌্যাব, পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে আটক হয়ে একাধিকবার জেল খেটেছেন তিনি। উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে খুলনায় তার স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামী হন আলফা। দুই দিন যেতে না যেতে তাকে আবার জেলে ঢুকতে হলো। সে আবার উচ্চ আদালত থেকে জামিনের বিষয়ে আশাবাদী উপজেলা চেয়ারম্যান। দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল- ফেরদৌস আলফা খুলনার জেলহাজতে রয়েছেন। ##