০৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডেরও অভিযোগ :

নগরীতে স্কুলের শ্রেণীকক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও পরিবারসহ বসবাস

####

খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় অবস্থিত সরকারী এমপিওভূক্ত পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের ৩টি শ্রেণীকক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন মর্নিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল। একই সাথে বিদ্যালয়ের আরও ৩টি শ্রেনীকক্ষ দখল করে  তার স্ত্রী একই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান(সহকারী শিক্ষক)রুনা আক্তারসহ পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত প্রায় তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন অনিয়ম করে ও প্রভাব খাটিয়ে এ অবৈধ কাযর্ক্রম করে যাচ্ছেন। এতে স্কুল কম্পাউন্ডে দিন-রাত সব সময় বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধিতে শিক্ষার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি নিরাপত্তাহীনতা ও বিব্রতকর অবস্তায় পড়ছেন শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা। ফলে স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ, গুনগত মান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাযর্ক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এমনকি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত মারমুখী আচরণ, দুর্ব্যবহার ও মারপিট, ছুটির দিনে নানা অজুহাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া, বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক সংগঠনের নেতা হওয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের সংগঠিত করে সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বিরোধী প্রচার-প্রচারনা চালানো এবং স্কুলে স্কুলে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও স্কুলের ছেলে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেনের এসব অনিয়ম, অবৈধ ও নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নাগরিক নেতারা।

পিডব্লিউডি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ১লা জানুয়ারি বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়। এ সময়ে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন এমপিওভূক্তির জন্য অর্থ ব্যয়ের কথা বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরে গত প্রায় ০৩ বছর ধরে বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ৩টি কক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেই সাথে বিদ্যালয় ভবনটির দোতলায় ৩টি শ্রেণীকক্ষে মনিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালাচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন স্ত্রী পরিবারসহ বিদ্যালয়ের ৩য় তলার দক্ষিণ দিকের তিনটি কক্ষ ব্যবহারের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা করে রেখেছেন। দক্ষিন দিকের ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটও ব্যবহার করছেন প্রধান শিক্ষকের পরিবার। তাদের পাশের কক্ষেই ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ চলছে। ভবনটির দোতলার ৩টি কক্ষ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে মনিং বি কিডস স্কুল নামের কিন্ডার গার্টেন। ৩টি কক্ষের ১টি অফিস হিসেবে এবং অন্য ২টি কিন্ডার গার্টেনের শ্রেণী কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্ডার গার্টেন স্কুলটির প্রধান হিসেবে মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন বহিরাগতকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের জন্য কোনো বাসভবন নেই। তিনি স্কুল ভবনের শ্রেণীকক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এতে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শ্রেণী কক্ষের সংকট থাকলেও প্রধান শিক্ষক কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এবং স্কুলে কিন্ডার গার্টেন পরিচালনা করছেন। প্রধান শিক্ষক কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার জন্য মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন বহিরাগত ব্যক্তিকে স্কুলের ভিতরে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন। যে কারণে স্কুলে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের বাসভবনে ৩টি ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ৩টিসহ মোট ৬টি ক্লাশ রুম জবর দখলে ব্যবহার করার কারণে শ্রেণী কক্ষের সংকট আরো বেড়েছে। অভিভাবকরা এ ব্যাপারে আপত্তি জানালেও স্কুল পরিচালনা কমিটি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা আরো জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন খুলনা অঞ্চলের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতা করেছেন। তার বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে কর্মকান্ড এখনও থেমে নেই। তিনি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের শিক্ষকদের সংগঠিত করে খুলনায় আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। এমনকি শিক্ষকদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে খুলনায় বিক্ষোভ-মানববন্ধন এবং ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশে যোগদানে বাধ্য করেছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের নতুন মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলামের বিরোধীতা করে প্রচার প্রচারনায় লিপ্ত রয়েছেন। বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও স্কুলের ছেলে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলছেন। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম, দূর্নীতি ও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের কারণে বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন থেকে প্রধান শিক্ষকের আবাসন ও কিন্ডার গার্টেন অপসারণ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুষ্টু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি ও সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত মারমুখী আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। ছুটির দিনেও নানা অজুহাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুলে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি ব্যক্তিগত কাজও তাদেরকে দিয়ে করান। এ বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক তাদেরকে গালিগালাজ ও মারপিট করেন। তার প্রভাব ধরে রাখতে অনুগত শিক্ষক-কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এসব কাজ করছেন। ইতিপূর্বে ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুলের অফিস সহকারী মো. আলমগীর কবিরকে মারধর করেন। পরে গণপূর্ত উপ-বিভাগ-৩ খুলনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একে এম ফজলুর রহমান ও গণপূর্ত বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব কুন্ডুর নেতৃত্বে কর্তৃপক্ষের তদন্তে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। সে সময়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক তার নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিকে আড়াল করতে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর মারমুখি আচরণ করেন এবং প্রায়ঃশ বাইরের সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আস্থাভাজন বিএসসি শিক্ষক কমলেশ রায় ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বেপরোয়া মারপিট করে। যা নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন ও বিএসসি শিক্ষক কমলেশ রায়কে স্কুল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। যা ওই সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় একাধিক সহকারী শিক্ষককে হুমকি ধামকি, শোকজ, বেতন কর্তন, টাইমস্কেল বন্ধ ও বিষয়ভিত্তিক ক্লাশ বন্ধ করাসহ বহিরাগতদের দিয়ে প্রাণ নাশের হুমকিও দিয়েছেন। এসব কাজে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেনকে সহায়তা করেন স্কুলের পার্ট টাইম কর্মরত ৪জন সহকারী শিক্ষক ও অনুগত আরো কয়েকজন শিক্ষকের একটি সিন্ডিকেট। প্রধান শিক্ষকের এসব অপকর্মের কারনে তার বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষক আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরীসহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় উপপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারপরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। প্রতিটি ঘটনায় অদৃশ্য কারণে নানান কুটকৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। দ্রুততার সাথে তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম, অবৈধ কর্মকান্ড ও আইন বর্হিভূত কাজের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীও জানিয়েছেন তারা।

মর্নিং বি কিডস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় বিদ্যালয়েল দ্বিতীয় তলায় ৩টি শ্রেনীকক্ষে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করছেন। তিনি স্কুলের সার্বিক বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। তবে তিনি মর্নিং বি কিডস কিন্ডার গার্টেন স্কুল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রধান শিক্ষক মো: লিয়াকত হোসেনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো: লিয়াকত হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ভবনে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের কোন লিখিত অনুমতি নেয়া হয়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং সভাপতিসহ সবাই অবগত আছেন। সবার অনুমতি নিয়ে আমি স্কুলের ৩টি শ্রেনীকক্ষ নিয়ে বসবাস করছি। এছাড়া স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৩টি শ্রেনীকক্ষ নিয়ে মর্নিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার বিষয়ে স্কুল কমিটির অনুমোদন রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য শ্রেণী কক্ষের সংকট সত্ত্বেও কেন শ্রেণীকক্ষে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন,এ বিষয়ে জানতে এসে আপনারা আমার সরকারী কাজে বাঁধা দিচ্ছেন। আমার সময় নষ্ট করছেন। আমি আপনাদের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই। এ সময় তিনি এই প্রতিবেদকসহ উপস্থিত দুই সাংবাদিকের সাথেও অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণ করেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে সাংবাদিকরা সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের সহায়তা নিলে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন শান্ত হন। একই সাথে তিনি স্কুলের শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে মারমুখী আচরন ও বহিরাগতদের দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে স্কুলের কর্মচারী মো. আলমগীর কবির ও ৮ম শ্রেনীর ছাত্রীদেরকে মারপিটের ঘটনায় তদন্ত শেষে অভিযুক্ত হলেও পরে মিমাংসা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, পিডব্লিউডি বিদ্যালয়ের ভবনে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সে বিষয়টি আমার জানা নেই।সরকারী এমপিওভূক্ত বিদ্যালয় হিসেবে কোন শিক্ষকেরই বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করার নিয়ম নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এছাড়া বিদ্যালয় ভবনে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমি পিডব্লিউডি স্কুলের সভাপতি হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করতে পারিনি। সে কারণে এমপিওভূক্ত স্কুলের মধ্যে কিন্ডার গার্টেন স্কুল (মনিং বি কিডস স্কুল) পরিচালনার বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত নই। সরকারী অনুমোদন ছাড়া একটি স্কুলের মধ্যে আরেকটি স্কুল পরিচালনা করা অনিয়ম এবং আইন বহির্ভূত। সেটা হয়ে থাকলে এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক) খুলনার সভাপতি এ্যাড. কুতরত-ই-খুদা জানান, এমপিওভূক্ত কোন বিদ্যালয়ের ভবনে কোন শিক্ষকের পরিবার নিয়ে বসবাস করা নিয়ম বর্হিভূত। এখানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সম্মতি থাকলেও তা অবশ্যই অন্যায় ও অনিয়ম। বুঝতে হবে এখানে দু-পক্ষের যোগসাজস রয়েছে। আর যদি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সেই সাথে এমপিওভূক্ত বিদ্যালয়ের ভবনে অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা দূর্নীতির নামান্তর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কিন্ডার গার্টেন স্কুল দ্রুত উচ্ছেদসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কায্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন এ নাগরিক নেতা।

খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন জানান, আমি যতদূর জানি নগরীর পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠান। এমপিওভূক্ত স্কুলের ভবনে সরকারী অনুমোদন ছাড়া কোন শিক্ষকের পরিবার নিয়ে বসবাস করা নিয়ম বর্হিভূত। এছাড়া কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করা সরকারের এমপিও নীতিমালার পরিপন্থী। আমাদের দপ্তরে এখনও এ বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ জানালে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডেরও অভিযোগ :

নগরীতে স্কুলের শ্রেণীকক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও পরিবারসহ বসবাস

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

####

খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় অবস্থিত সরকারী এমপিওভূক্ত পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের ৩টি শ্রেণীকক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন মর্নিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল। একই সাথে বিদ্যালয়ের আরও ৩টি শ্রেনীকক্ষ দখল করে  তার স্ত্রী একই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান(সহকারী শিক্ষক)রুনা আক্তারসহ পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত প্রায় তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন অনিয়ম করে ও প্রভাব খাটিয়ে এ অবৈধ কাযর্ক্রম করে যাচ্ছেন। এতে স্কুল কম্পাউন্ডে দিন-রাত সব সময় বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধিতে শিক্ষার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি নিরাপত্তাহীনতা ও বিব্রতকর অবস্তায় পড়ছেন শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা। ফলে স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ, গুনগত মান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাযর্ক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এমনকি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত মারমুখী আচরণ, দুর্ব্যবহার ও মারপিট, ছুটির দিনে নানা অজুহাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া, বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক সংগঠনের নেতা হওয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের সংগঠিত করে সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বিরোধী প্রচার-প্রচারনা চালানো এবং স্কুলে স্কুলে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও স্কুলের ছেলে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেনের এসব অনিয়ম, অবৈধ ও নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নাগরিক নেতারা।

পিডব্লিউডি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ১লা জানুয়ারি বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়। এ সময়ে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন এমপিওভূক্তির জন্য অর্থ ব্যয়ের কথা বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরে গত প্রায় ০৩ বছর ধরে বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ৩টি কক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেই সাথে বিদ্যালয় ভবনটির দোতলায় ৩টি শ্রেণীকক্ষে মনিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালাচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন স্ত্রী পরিবারসহ বিদ্যালয়ের ৩য় তলার দক্ষিণ দিকের তিনটি কক্ষ ব্যবহারের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা করে রেখেছেন। দক্ষিন দিকের ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটও ব্যবহার করছেন প্রধান শিক্ষকের পরিবার। তাদের পাশের কক্ষেই ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ চলছে। ভবনটির দোতলার ৩টি কক্ষ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে মনিং বি কিডস স্কুল নামের কিন্ডার গার্টেন। ৩টি কক্ষের ১টি অফিস হিসেবে এবং অন্য ২টি কিন্ডার গার্টেনের শ্রেণী কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্ডার গার্টেন স্কুলটির প্রধান হিসেবে মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন বহিরাগতকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের জন্য কোনো বাসভবন নেই। তিনি স্কুল ভবনের শ্রেণীকক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এতে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শ্রেণী কক্ষের সংকট থাকলেও প্রধান শিক্ষক কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এবং স্কুলে কিন্ডার গার্টেন পরিচালনা করছেন। প্রধান শিক্ষক কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার জন্য মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন বহিরাগত ব্যক্তিকে স্কুলের ভিতরে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন। যে কারণে স্কুলে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের বাসভবনে ৩টি ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ৩টিসহ মোট ৬টি ক্লাশ রুম জবর দখলে ব্যবহার করার কারণে শ্রেণী কক্ষের সংকট আরো বেড়েছে। অভিভাবকরা এ ব্যাপারে আপত্তি জানালেও স্কুল পরিচালনা কমিটি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা আরো জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন খুলনা অঞ্চলের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতা করেছেন। তার বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে কর্মকান্ড এখনও থেমে নেই। তিনি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের শিক্ষকদের সংগঠিত করে খুলনায় আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। এমনকি শিক্ষকদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে খুলনায় বিক্ষোভ-মানববন্ধন এবং ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশে যোগদানে বাধ্য করেছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের নতুন মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলামের বিরোধীতা করে প্রচার প্রচারনায় লিপ্ত রয়েছেন। বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও স্কুলের ছেলে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলছেন। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম, দূর্নীতি ও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের কারণে বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন থেকে প্রধান শিক্ষকের আবাসন ও কিন্ডার গার্টেন অপসারণ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুষ্টু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি ও সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত মারমুখী আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। ছুটির দিনেও নানা অজুহাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুলে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি ব্যক্তিগত কাজও তাদেরকে দিয়ে করান। এ বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক তাদেরকে গালিগালাজ ও মারপিট করেন। তার প্রভাব ধরে রাখতে অনুগত শিক্ষক-কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এসব কাজ করছেন। ইতিপূর্বে ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুলের অফিস সহকারী মো. আলমগীর কবিরকে মারধর করেন। পরে গণপূর্ত উপ-বিভাগ-৩ খুলনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একে এম ফজলুর রহমান ও গণপূর্ত বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব কুন্ডুর নেতৃত্বে কর্তৃপক্ষের তদন্তে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। সে সময়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক তার নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিকে আড়াল করতে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর মারমুখি আচরণ করেন এবং প্রায়ঃশ বাইরের সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আস্থাভাজন বিএসসি শিক্ষক কমলেশ রায় ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বেপরোয়া মারপিট করে। যা নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেন ও বিএসসি শিক্ষক কমলেশ রায়কে স্কুল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। যা ওই সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় একাধিক সহকারী শিক্ষককে হুমকি ধামকি, শোকজ, বেতন কর্তন, টাইমস্কেল বন্ধ ও বিষয়ভিত্তিক ক্লাশ বন্ধ করাসহ বহিরাগতদের দিয়ে প্রাণ নাশের হুমকিও দিয়েছেন। এসব কাজে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেনকে সহায়তা করেন স্কুলের পার্ট টাইম কর্মরত ৪জন সহকারী শিক্ষক ও অনুগত আরো কয়েকজন শিক্ষকের একটি সিন্ডিকেট। প্রধান শিক্ষকের এসব অপকর্মের কারনে তার বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষক আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরীসহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় উপপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারপরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। প্রতিটি ঘটনায় অদৃশ্য কারণে নানান কুটকৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। দ্রুততার সাথে তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম, অবৈধ কর্মকান্ড ও আইন বর্হিভূত কাজের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীও জানিয়েছেন তারা।

মর্নিং বি কিডস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় বিদ্যালয়েল দ্বিতীয় তলায় ৩টি শ্রেনীকক্ষে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করছেন। তিনি স্কুলের সার্বিক বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। তবে তিনি মর্নিং বি কিডস কিন্ডার গার্টেন স্কুল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রধান শিক্ষক মো: লিয়াকত হোসেনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো: লিয়াকত হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ভবনে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের কোন লিখিত অনুমতি নেয়া হয়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং সভাপতিসহ সবাই অবগত আছেন। সবার অনুমতি নিয়ে আমি স্কুলের ৩টি শ্রেনীকক্ষ নিয়ে বসবাস করছি। এছাড়া স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৩টি শ্রেনীকক্ষ নিয়ে মর্নিং বি কিডস স্কুল নামে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার বিষয়ে স্কুল কমিটির অনুমোদন রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য শ্রেণী কক্ষের সংকট সত্ত্বেও কেন শ্রেণীকক্ষে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন,এ বিষয়ে জানতে এসে আপনারা আমার সরকারী কাজে বাঁধা দিচ্ছেন। আমার সময় নষ্ট করছেন। আমি আপনাদের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই। এ সময় তিনি এই প্রতিবেদকসহ উপস্থিত দুই সাংবাদিকের সাথেও অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণ করেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে সাংবাদিকরা সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের সহায়তা নিলে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন শান্ত হন। একই সাথে তিনি স্কুলের শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে মারমুখী আচরন ও বহিরাগতদের দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে স্কুলের কর্মচারী মো. আলমগীর কবির ও ৮ম শ্রেনীর ছাত্রীদেরকে মারপিটের ঘটনায় তদন্ত শেষে অভিযুক্ত হলেও পরে মিমাংসা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, পিডব্লিউডি বিদ্যালয়ের ভবনে প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সে বিষয়টি আমার জানা নেই।সরকারী এমপিওভূক্ত বিদ্যালয় হিসেবে কোন শিক্ষকেরই বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করার নিয়ম নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এছাড়া বিদ্যালয় ভবনে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনার বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমি পিডব্লিউডি স্কুলের সভাপতি হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করতে পারিনি। সে কারণে এমপিওভূক্ত স্কুলের মধ্যে কিন্ডার গার্টেন স্কুল (মনিং বি কিডস স্কুল) পরিচালনার বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত নই। সরকারী অনুমোদন ছাড়া একটি স্কুলের মধ্যে আরেকটি স্কুল পরিচালনা করা অনিয়ম এবং আইন বহির্ভূত। সেটা হয়ে থাকলে এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক) খুলনার সভাপতি এ্যাড. কুতরত-ই-খুদা জানান, এমপিওভূক্ত কোন বিদ্যালয়ের ভবনে কোন শিক্ষকের পরিবার নিয়ে বসবাস করা নিয়ম বর্হিভূত। এখানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সম্মতি থাকলেও তা অবশ্যই অন্যায় ও অনিয়ম। বুঝতে হবে এখানে দু-পক্ষের যোগসাজস রয়েছে। আর যদি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সেই সাথে এমপিওভূক্ত বিদ্যালয়ের ভবনে অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা দূর্নীতির নামান্তর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কিন্ডার গার্টেন স্কুল দ্রুত উচ্ছেদসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কায্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন এ নাগরিক নেতা।

খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন জানান, আমি যতদূর জানি নগরীর পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠান। এমপিওভূক্ত স্কুলের ভবনে সরকারী অনুমোদন ছাড়া কোন শিক্ষকের পরিবার নিয়ে বসবাস করা নিয়ম বর্হিভূত। এছাড়া কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনে কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করা সরকারের এমপিও নীতিমালার পরিপন্থী। আমাদের দপ্তরে এখনও এ বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ জানালে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। ##