### অগ্নিঝরা মার্চ’র ২০তম দিন আজ। অগ্নিঝরা ইতিহাস, বিষাদ ও বেদনার মাস এই মার্চ মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ’র মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু। স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭১ সালের এই মার্চেই রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা, শঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি। অবরুদ্ধ গণমানুষ ইতোমধ্যে প্রস্তুত চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ঐক্য সুদৃঢ় হচ্ছিল প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের ‘স্বাধীনতা’র দুর্বার আকাঙ্খার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। বাংগালীর ইতিহাসের ৭১’র আজকের দিনের ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায় মুজিব এবং ইয়াহিয়ার চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠক সামরিক সরকার ব্যর্থ হয়ে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন। ‘স্বাধীনতা’র দুর্বার আকাঙ্খায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত।
অসহযোগ আন্দোলনের ১৯তম দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাক্তন নৌসেনাদের অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানান। এখবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙালীদের ‘স্বাধীনতা’র দুর্বার আকাঙ্খায় আরো বেড়ে যায়। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ সকালে কঠোর সামরিক প্রহরা পরিবেষ্টিত রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ছয় শীর্ষ সহযোগী - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে এসে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন। তিনি এর বেশী কিছু বলাতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, সময় এলে অবশ্যই আমি সব কিছু বলব। মুক্তিপাগল মানুষের দৃপ্ত পদচারণা আজ রাজধানী টালমাটাল হয়ে ওঠে। মিছিলের পর মিছিল এগিয়ে চলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে শপথ গ্রহণের শেষে একের পর এক শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনে গিয়ে সমবেত হয়। বঙ্গবন্ধু সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দৃঢ়তার সাথে বলেন, মুক্তি পাগল সাড়ে সাতকোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোন শক্তিই রুখতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাইরে এলেন, তখন শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তাঁকে আচ্ছন্ন করে। এই দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দেশজুড়ে স্বাধীনতার দাবিতে সভা-শোভাযাত্রা চলে। ৭১’র এদিন রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে একটি অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। জয়দেবপুরে সেদিনও সান্ধ্য আইন অব্যাহত ছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌসুলী এ.কে.ব্রোহি সকালে করাচী থেকে ঢাকায় আসেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দীক সালিকের বই থেকে জানা যায়, এদিন ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্বপাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ পদস্থ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এদিকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ছয়টি থেকে ১৭টি পর্যন্ত পিআইএ ফ্লাইটে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কয়েকটি জাহাজে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি। এ খবওে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তিনি লন্ডন পরিকল্পনা যা ১৯৬৯ সালে লন্ডনে বসে শেখ মুজিব, খান আবদুল ওয়ালী খান ও মিয়া মমতাজ মোহম্মদ খান দৌলতানা কর্তৃক প্রণীত তা মানবেন না। তিনি বলেন ঐ পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ প্রধান কর্তৃক ঘোষিত ৬-দফার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।##
অফিস : ৬৯/৭০ কেসিসি সুপার মার্কেট ( ২য় তলা ) খুলনা সদর, খুলনা। প্রকাশক - সম্পাদক : সুনীল দাস বার্তা সম্পাদক : তরিকুল ইসলাম ডালিম চিফ রিপোর্টার : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । যোগাযোগ : dainikmadhumati@gmail.com, newsdainikmadhumoti@gmail.com Office No : Editor : 01712680702 / 01912067948
© All rights reserved by www.dainikmadhumati.com (Established in 2022)