০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে ও দায় চাপাতে সাজানো অভিযোগ ও প্রতিবেদন দাখিল :

ফলোআপ : বেরিয়ে আসছে নির্বাহী প্রকৌশলীর বহুমুখী অনিয়ম-দূর্নীতির অজানা কাহিনী

###    খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বেরিয়ে আসছে আরও ভয়ংকর অনিয়ম-দূর্নীতির নানান কাহিনী। এলজিইডি সংশ্লিষ্ঠ অনেক ঠিকাদার ও সরবরাহকারী অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের চরম অনিয়ম ও দূর্নীতি এবং কমিশন বানিজ্যের বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে গেলে অফিসিয়াল নানান রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা এবং ঠিকাদারী কাজে সুবিধা গ্রহনকারী রাজনৈতিক দূর্বৃত্তদের দিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করতেন তিনি। এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে লুটে নেয়া অর্ধশতাধিক কোটি টাকার অভিযোগের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পোষ্য কয়েকজন ঠিকাদারকে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করিয়েছেন। এমনকি দুইজন ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার করে এলজিইডির নিন্মপদস্থ কর্মকারী ও অভিযোগকারী ঠিকাদারদের উপর দায় চাপাতে পাল্টা সাজানো অভিযোগ এবং প্রধান প্রকৌশলী বরাবর মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে এসব করেও শেষ রক্ষা হয়নি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের। গত ২৪নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসীন স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে খুলনা থেকে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয়েছে।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার ঘনিষ্টিজন বলে পরিচিত বাগেরহাটের চিতলমারীর ঠিকাদার ও সাতক্ষীরার তালার ঠিকাদারের যৌথ কাজসহ কয়েকজন ঠিকাদারকে অনিয়ম করে অগ্রিম ও অতিরিক্ত বিল প্রদান করেছেন। এসব তল্পিবাহক ঠিকাদার ও কিছু নামসর্বস্ব পত্রিকার কথিত সাংবাদিককেও তিনি অনিয়ম-দূর্নীতি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এরমধ্যে কেডিআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় কেডিআরআইডিপি-খুলনা/ডব্লিউ-১১৩নং প্যাকেজের কয়রা উপজেলার হদুবুনিয়া চান্নিরচক সড়কের দুই কিলোমিটার বিসি দ্বারা উন্নয়ণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাকা-সিয়াম জেভিকে অনিয়ম করে কাজের টাইম ও পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) না থাকা সত্ত্বেও ২১লাখ টাকা দ্বিতীয় চলতি বিল প্রদান করেছেন। এছাড়া কেডিএস-আরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় কেডিএস-আরআইডিপি-খুলনা/ভিআর-১৩.৩ প্যাকেজের রূপসা উপজেলার তিলক বায়েশ সরদারের বাড়ী পশ্চিমপাড়া মসজিদ সড়কের ৩৪০মি কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জোহরা ট্রেডার্সকে অনিয়মের মাধ্যমে দ্বিতীয় চলতি আংশিক বিল বাবদ ৫লাখ টাকা,, সিএএফডিআরআইআরপি প্রকল্পের আওতায় সিএএফডিআরআইআরপি-খুলনা/ইউজেডআর/ডব্লিউ-১২/২১-২২নং প্যাকেজের রূপসা উপজেলার থানা হেডকোয়ার্র্টার আলাইপুর হাট শেখপুরা জিসি রূপসা অংশের সড়কের ০-২৫০০ এবং ৪০০০-৭৫০০মিটার মেরামত কাজের ঠিকাদার এটিসি-এসআরটি জেভিকে অনিয়মের মাধ্যমে তৃতীয় চলতি বিলের এককোটি ২৪লাখ টাকা পূবালী ব্যাংকের খুলনার আপার যশোর রোড শাখার হিসাব নং-০৮৮৬-৯০১-৩৯৪১৩ মারফত প্রদান করা হয়েছে। এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের জেলা কার্যালয় সমূহের অনুন্নয়ণ বাজেটের মেরামত ও সংরক্ষনের অধীন অনাবাসিক ভবন মেরামত প্রকল্পের আওতায় আরএফকিউ নোটিস নং-০১ প্যাকেজের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলনা মহানগরীর ৩৩/২রূপসা ষ্ট্যান্ড রোডের মল্লিক কনষ্ট্রাকশনকে প্রথম চলতি বিল বাবদ চার লাখ ৭৮হাজার টাকা বিল প্রদান করেছেন। এছাড়াও সার্পোটিং রুরাল ব্রীজ প্রকল্পের আওতায় আনুসঙ্গিক বিলের এক লাখ ৩৮হাজার টাকা গত ২১নভেম্বর সোনালী ব্যাংক সাউথ সেন্ট্রাল রোড শাখার এলজিইডির অফিসের হিসাব থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে তিনি সেই টাকা থেকে খুলনার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অফিস ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা নেওয়ায় ফার্নিচার ক্রয়ের জন্য সহকারী প্রকৌশলী আ: কাদেরের মাধ্যমে উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এভাবে তিনি প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার ঘনিষ্টিজন বলে পরিচিত বাগেরহাটের চিতলমারীর ঠিকাদারকে দাকোপ উপজেলায় রাস্তার কাজের কোনকিছুই না করার পরও অনিয়ম ও দূর্নীতি করে বিল প্রদানের জন্য দাকোপের সাবেক প্রকৌশলী ননী গোপালকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ননী গোপাল অনিয়ম করে বিল দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে বিল দিতে বাধ্য করেন। এমনকি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে পার্বত্যচট্টগ্রামে বদলী করিয়েছেন। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী কামুরজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিবাদকারী একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে খুলনা থেকে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটিয়ে বদলী করিয়ে দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।এভাবে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করতে না পারলে কামরুজ্জামান স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাদেরকে ব্যবহার করে তাদেরকে হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে দমন রাখতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি এবং হয়রানির বিরুদ্ধে যে ৬জন ঠিকাদার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, মন্ত্রনালয়ের সচিব, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলেন তাদেরকেও নির্বাহী প্রকৌশলীর পোষ্য ঠিকাদার ও নামসর্বস্ব কথিত সাংবাদিকদের দিয়েও নানাভাবে হয়রানি করিয়েছেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন।

দূর্নীতি ধামাচাপা এবং দায় চাপাতে সাজানো অভিযোগ ও প্রতিবেদন দাখিল :

খুলনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রকাশিত হওয়ার পর ধামাচাপা দিতে নানান কৌশল নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে তার ঘনিষ্টজন হিসেবে ঠিকাদার গ্রুপকে দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী ও দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর প্রকৃত ঠিকাদারদের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অভিযোগ দিয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের পক্ষে মেসার্স আনিচ ট্রেডার্স এবং মেসার্স রাকিব এন্টাপ্রাইজ নামে দুই ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজী বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজের সময় বৃদ্ধিসহ নানান অজুহাতে টাকা আদায় করতেন। বিশেষ করে জেলার ৯টি উপজেলার ২০টি প্রকল্পের কাজের সময় বৃদ্ধি করে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে টাকা দিয়ে সাহাবুদ্দিন নিজের গ্রামের গাড়ী বাগেরহাটের ফকিরহাটে জমি ও সম্পদ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগের কারনে সাহাবুদ্দিনকে খুলনা অফিস থেকে পাইকগাছায় বদলী করা হয়। কিন্তু সেসহ তার কিছু অনুসারীরা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধের মনগড়া অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর প্রকাশ করে হেনেস্থা করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, যে দুই জন ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে হিসাবরক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তা তারা অস্বীকার করেছেন। দুই ঠিকাদার মেসার্স আনিচ ট্রেডার্স-এর মালিক মো: আনিচুর রহমান এবং মেসার্স রাকিব এন্টাপ্রাইজের মালিক এম. হাসান জানিয়েছেন, তারা কোন অভিযোগ খুলনা এলজিইডির সাবেক হিসাব রক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজীর বিরুদ্ধে করেননি। সাহাবুদ্দিন গাজী এক বছর ৭মাস সুনামের সাথেই খুলনা এলজিইডিতে কাজ করেছেন। তিনি কখনও কোন সময় বৃদ্ধি ও অন্য অজুহাতে টাকা নেয়নি। তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন কাজের সময় বৃদ্ধিও করা ঞয়নি। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ও তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যবহার করা হয়েছে। এ মিথ্য অভিযোগটি মূলত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে তারই নির্দেশে এলজিইডি অফিসের হিসাব সহকারী আমিরুল ইসলাম, ফোরম্যান নরেশ চন্দ্রসহ মুষ্টিমেয় লোক যাদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ রয়েছে তারাই করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে এই দুই ঠিকাদার লিখিতভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যেই তাদের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ম্যিথা ও ভিত্তিহীন অবিযোগ দায়েরকারীদের তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও দুদকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।

এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ ঢাকতে নিজেই বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ও বানোয়াট বিষয় উল্লেখ করে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। যেখানে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ না করে এলজিইডি অফিসের কাউকে কাউকে জড়িত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। একই সাথে কয়েকজন ঠিকাদারকেও তার বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে জড়িত করেছেন। যা সম্পূর্ণ উদ্দ্যেশপ্রনোদিত ও ম্যিথাচার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারবৃন্দ।

অবশেষে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজড :

খুলনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের দূর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এনফোর্সমেন্ট ইনকোয়ারী করা হয়েছে। এসব তথ্যের সূত্র ধরে খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। গত ২৪নভেম্বর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসীণ স্বাক্ষরিত পত্রে(স্মারক নং-৪৬.০২.০০০০.০০১.৯৯.২১০.১৯.১০২০৭) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে বদলীর আদেশ প্রদান করা হয়। রবিবার তিনি খুলনায় শেষ অফিস করে নতুন নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এদিকে, একই দিন মাগুরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশল মো: শরিফুল ইসলামকে খুলনায় বদলী করা হলেও পরে সেটা বাতিল করে যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামানকে খুলনায় পদায়ন করা হয়। খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে প্রধান কার্যালয়ে ক্রোজড করায় অভিযোগকারী ঠিকাদার ও স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়েছেন হয়রানির শিষকার ঠিকাদারবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত ১৪সেপ্টম্বর খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে কমিশন ও দূর্নীতির সিন্ডিকেট : হয়রানি ও কমিশন বানিজ্যে দিশেহারা ঠিকাদাররা, দুই বছরে হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা শীর্ষক একাধিক পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়া টিভিতেও তার অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর প্রচারিত হয়। সংবাদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের নেৃতত্বে অনিয়ম, ঘুষ, কমিশন বানিজ্য ও দূর্নীতির সিন্ডিকেট নানান ভাবে সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিলের ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে এলজিইডির তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে নানান খাত ও অজুহাত দেখিয়ে অবৈধভাবে ০৩শতাংশ থেকে ১০শতাংশ কমিশন নেয়া, ঠিকাদারদের নাম ব্যবহার করে অফিসের মেরামতসহ বিভিন্ন কাজ অফিসের কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যেনতেনভাবে করিয়ে সরকারী টাকা আত্নসাত এবং বিজ্ঞাপন প্রদান ও বিল দিতে কমিশন বানিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট।। এলজিইডি অফিসের এই ঘুষ, কমিশন বানিজ্য ও দূর্নীতির সিন্ডিকেটে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে হিসাব সহকারী মো: আমিরুল ইসলাম, মাষ্টাররোল কর্মচারী কার্য-সহকারী নাসির উদ্দিন, ম্যাকানিক্যাল ফোরম্যান নরেশ চন্দ্রসহ ৬/৭জন আস্থাভাজন সরাসরি জড়িত রয়েছে। খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান যোগদান করার পর এই সিন্ডিকেট অর্ধশতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাড়ী, বাড়ীসহ বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা। সম্প্রতি খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান, তার সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসাব সহকারী আমিরুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ফোরম্যান নরেশ চন্দ্র সাহা, কার্য-সহকারী নাসির উদ্দিনসহ এই সিন্ডিকেটের হাতে হয়রানি, অত্যাচার-নির্যাতন, অমানুষিক আচরন, ঘুষ, দূর্নীতি, অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রতিকার ও বিচারের দাবীতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের সূত্র ধরে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে তার বিপুল পরিমান অনিয়মের সন্ধান পান। পরে দুদকের খুলনার উপপরিচালক মো: আ: ওয়াদুদের নেতৃত্বে তার অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে ও দায় চাপাতে সাজানো অভিযোগ ও প্রতিবেদন দাখিল :

ফলোআপ : বেরিয়ে আসছে নির্বাহী প্রকৌশলীর বহুমুখী অনিয়ম-দূর্নীতির অজানা কাহিনী

প্রকাশিত সময় : ১২:৪০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

###    খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বেরিয়ে আসছে আরও ভয়ংকর অনিয়ম-দূর্নীতির নানান কাহিনী। এলজিইডি সংশ্লিষ্ঠ অনেক ঠিকাদার ও সরবরাহকারী অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের চরম অনিয়ম ও দূর্নীতি এবং কমিশন বানিজ্যের বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে গেলে অফিসিয়াল নানান রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা এবং ঠিকাদারী কাজে সুবিধা গ্রহনকারী রাজনৈতিক দূর্বৃত্তদের দিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করতেন তিনি। এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে লুটে নেয়া অর্ধশতাধিক কোটি টাকার অভিযোগের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পোষ্য কয়েকজন ঠিকাদারকে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করিয়েছেন। এমনকি দুইজন ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার করে এলজিইডির নিন্মপদস্থ কর্মকারী ও অভিযোগকারী ঠিকাদারদের উপর দায় চাপাতে পাল্টা সাজানো অভিযোগ এবং প্রধান প্রকৌশলী বরাবর মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে এসব করেও শেষ রক্ষা হয়নি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের। গত ২৪নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসীন স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে খুলনা থেকে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয়েছে।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার ঘনিষ্টিজন বলে পরিচিত বাগেরহাটের চিতলমারীর ঠিকাদার ও সাতক্ষীরার তালার ঠিকাদারের যৌথ কাজসহ কয়েকজন ঠিকাদারকে অনিয়ম করে অগ্রিম ও অতিরিক্ত বিল প্রদান করেছেন। এসব তল্পিবাহক ঠিকাদার ও কিছু নামসর্বস্ব পত্রিকার কথিত সাংবাদিককেও তিনি অনিয়ম-দূর্নীতি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এরমধ্যে কেডিআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় কেডিআরআইডিপি-খুলনা/ডব্লিউ-১১৩নং প্যাকেজের কয়রা উপজেলার হদুবুনিয়া চান্নিরচক সড়কের দুই কিলোমিটার বিসি দ্বারা উন্নয়ণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাকা-সিয়াম জেভিকে অনিয়ম করে কাজের টাইম ও পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) না থাকা সত্ত্বেও ২১লাখ টাকা দ্বিতীয় চলতি বিল প্রদান করেছেন। এছাড়া কেডিএস-আরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় কেডিএস-আরআইডিপি-খুলনা/ভিআর-১৩.৩ প্যাকেজের রূপসা উপজেলার তিলক বায়েশ সরদারের বাড়ী পশ্চিমপাড়া মসজিদ সড়কের ৩৪০মি কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জোহরা ট্রেডার্সকে অনিয়মের মাধ্যমে দ্বিতীয় চলতি আংশিক বিল বাবদ ৫লাখ টাকা,, সিএএফডিআরআইআরপি প্রকল্পের আওতায় সিএএফডিআরআইআরপি-খুলনা/ইউজেডআর/ডব্লিউ-১২/২১-২২নং প্যাকেজের রূপসা উপজেলার থানা হেডকোয়ার্র্টার আলাইপুর হাট শেখপুরা জিসি রূপসা অংশের সড়কের ০-২৫০০ এবং ৪০০০-৭৫০০মিটার মেরামত কাজের ঠিকাদার এটিসি-এসআরটি জেভিকে অনিয়মের মাধ্যমে তৃতীয় চলতি বিলের এককোটি ২৪লাখ টাকা পূবালী ব্যাংকের খুলনার আপার যশোর রোড শাখার হিসাব নং-০৮৮৬-৯০১-৩৯৪১৩ মারফত প্রদান করা হয়েছে। এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের জেলা কার্যালয় সমূহের অনুন্নয়ণ বাজেটের মেরামত ও সংরক্ষনের অধীন অনাবাসিক ভবন মেরামত প্রকল্পের আওতায় আরএফকিউ নোটিস নং-০১ প্যাকেজের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলনা মহানগরীর ৩৩/২রূপসা ষ্ট্যান্ড রোডের মল্লিক কনষ্ট্রাকশনকে প্রথম চলতি বিল বাবদ চার লাখ ৭৮হাজার টাকা বিল প্রদান করেছেন। এছাড়াও সার্পোটিং রুরাল ব্রীজ প্রকল্পের আওতায় আনুসঙ্গিক বিলের এক লাখ ৩৮হাজার টাকা গত ২১নভেম্বর সোনালী ব্যাংক সাউথ সেন্ট্রাল রোড শাখার এলজিইডির অফিসের হিসাব থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে তিনি সেই টাকা থেকে খুলনার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অফিস ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা নেওয়ায় ফার্নিচার ক্রয়ের জন্য সহকারী প্রকৌশলী আ: কাদেরের মাধ্যমে উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এভাবে তিনি প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার ঘনিষ্টিজন বলে পরিচিত বাগেরহাটের চিতলমারীর ঠিকাদারকে দাকোপ উপজেলায় রাস্তার কাজের কোনকিছুই না করার পরও অনিয়ম ও দূর্নীতি করে বিল প্রদানের জন্য দাকোপের সাবেক প্রকৌশলী ননী গোপালকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ননী গোপাল অনিয়ম করে বিল দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে বিল দিতে বাধ্য করেন। এমনকি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে পার্বত্যচট্টগ্রামে বদলী করিয়েছেন। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী কামুরজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিবাদকারী একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে খুলনা থেকে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটিয়ে বদলী করিয়ে দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।এভাবে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করতে না পারলে কামরুজ্জামান স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাদেরকে ব্যবহার করে তাদেরকে হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে দমন রাখতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি এবং হয়রানির বিরুদ্ধে যে ৬জন ঠিকাদার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, মন্ত্রনালয়ের সচিব, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলেন তাদেরকেও নির্বাহী প্রকৌশলীর পোষ্য ঠিকাদার ও নামসর্বস্ব কথিত সাংবাদিকদের দিয়েও নানাভাবে হয়রানি করিয়েছেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন।

দূর্নীতি ধামাচাপা এবং দায় চাপাতে সাজানো অভিযোগ ও প্রতিবেদন দাখিল :

খুলনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রকাশিত হওয়ার পর ধামাচাপা দিতে নানান কৌশল নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে তার ঘনিষ্টজন হিসেবে ঠিকাদার গ্রুপকে দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী ও দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর প্রকৃত ঠিকাদারদের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অভিযোগ দিয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের পক্ষে মেসার্স আনিচ ট্রেডার্স এবং মেসার্স রাকিব এন্টাপ্রাইজ নামে দুই ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজী বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজের সময় বৃদ্ধিসহ নানান অজুহাতে টাকা আদায় করতেন। বিশেষ করে জেলার ৯টি উপজেলার ২০টি প্রকল্পের কাজের সময় বৃদ্ধি করে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে টাকা দিয়ে সাহাবুদ্দিন নিজের গ্রামের গাড়ী বাগেরহাটের ফকিরহাটে জমি ও সম্পদ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগের কারনে সাহাবুদ্দিনকে খুলনা অফিস থেকে পাইকগাছায় বদলী করা হয়। কিন্তু সেসহ তার কিছু অনুসারীরা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধের মনগড়া অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর প্রকাশ করে হেনেস্থা করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, যে দুই জন ঠিকাদারের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে হিসাবরক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তা তারা অস্বীকার করেছেন। দুই ঠিকাদার মেসার্স আনিচ ট্রেডার্স-এর মালিক মো: আনিচুর রহমান এবং মেসার্স রাকিব এন্টাপ্রাইজের মালিক এম. হাসান জানিয়েছেন, তারা কোন অভিযোগ খুলনা এলজিইডির সাবেক হিসাব রক্ষক সাহাবুদ্দিন গাজীর বিরুদ্ধে করেননি। সাহাবুদ্দিন গাজী এক বছর ৭মাস সুনামের সাথেই খুলনা এলজিইডিতে কাজ করেছেন। তিনি কখনও কোন সময় বৃদ্ধি ও অন্য অজুহাতে টাকা নেয়নি। তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন কাজের সময় বৃদ্ধিও করা ঞয়নি। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ও তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যবহার করা হয়েছে। এ মিথ্য অভিযোগটি মূলত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে তারই নির্দেশে এলজিইডি অফিসের হিসাব সহকারী আমিরুল ইসলাম, ফোরম্যান নরেশ চন্দ্রসহ মুষ্টিমেয় লোক যাদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ রয়েছে তারাই করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে এই দুই ঠিকাদার লিখিতভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যেই তাদের নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ম্যিথা ও ভিত্তিহীন অবিযোগ দায়েরকারীদের তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও দুদকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।

এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ ঢাকতে নিজেই বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ও বানোয়াট বিষয় উল্লেখ করে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। যেখানে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ না করে এলজিইডি অফিসের কাউকে কাউকে জড়িত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। একই সাথে কয়েকজন ঠিকাদারকেও তার বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে জড়িত করেছেন। যা সম্পূর্ণ উদ্দ্যেশপ্রনোদিত ও ম্যিথাচার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারবৃন্দ।

অবশেষে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজড :

খুলনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের দূর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এনফোর্সমেন্ট ইনকোয়ারী করা হয়েছে। এসব তথ্যের সূত্র ধরে খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। গত ২৪নভেম্বর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসীণ স্বাক্ষরিত পত্রে(স্মারক নং-৪৬.০২.০০০০.০০১.৯৯.২১০.১৯.১০২০৭) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে বদলীর আদেশ প্রদান করা হয়। রবিবার তিনি খুলনায় শেষ অফিস করে নতুন নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এদিকে, একই দিন মাগুরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশল মো: শরিফুল ইসলামকে খুলনায় বদলী করা হলেও পরে সেটা বাতিল করে যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামানকে খুলনায় পদায়ন করা হয়। খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানকে প্রধান কার্যালয়ে ক্রোজড করায় অভিযোগকারী ঠিকাদার ও স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়েছেন হয়রানির শিষকার ঠিকাদারবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত ১৪সেপ্টম্বর খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে কমিশন ও দূর্নীতির সিন্ডিকেট : হয়রানি ও কমিশন বানিজ্যে দিশেহারা ঠিকাদাররা, দুই বছরে হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা শীর্ষক একাধিক পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়া টিভিতেও তার অনিয়ম-দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যের খবর প্রচারিত হয়। সংবাদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের নেৃতত্বে অনিয়ম, ঘুষ, কমিশন বানিজ্য ও দূর্নীতির সিন্ডিকেট নানান ভাবে সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিলের ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে এলজিইডির তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে নানান খাত ও অজুহাত দেখিয়ে অবৈধভাবে ০৩শতাংশ থেকে ১০শতাংশ কমিশন নেয়া, ঠিকাদারদের নাম ব্যবহার করে অফিসের মেরামতসহ বিভিন্ন কাজ অফিসের কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যেনতেনভাবে করিয়ে সরকারী টাকা আত্নসাত এবং বিজ্ঞাপন প্রদান ও বিল দিতে কমিশন বানিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট।। এলজিইডি অফিসের এই ঘুষ, কমিশন বানিজ্য ও দূর্নীতির সিন্ডিকেটে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে হিসাব সহকারী মো: আমিরুল ইসলাম, মাষ্টাররোল কর্মচারী কার্য-সহকারী নাসির উদ্দিন, ম্যাকানিক্যাল ফোরম্যান নরেশ চন্দ্রসহ ৬/৭জন আস্থাভাজন সরাসরি জড়িত রয়েছে। খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান যোগদান করার পর এই সিন্ডিকেট অর্ধশতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাড়ী, বাড়ীসহ বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা। সম্প্রতি খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান, তার সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসাব সহকারী আমিরুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ফোরম্যান নরেশ চন্দ্র সাহা, কার্য-সহকারী নাসির উদ্দিনসহ এই সিন্ডিকেটের হাতে হয়রানি, অত্যাচার-নির্যাতন, অমানুষিক আচরন, ঘুষ, দূর্নীতি, অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রতিকার ও বিচারের দাবীতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের সূত্র ধরে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে তার বিপুল পরিমান অনিয়মের সন্ধান পান। পরে দুদকের খুলনার উপপরিচালক মো: আ: ওয়াদুদের নেতৃত্বে তার অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছেন। ##