০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি থেকে জামায়াতের সুধী সমাবেশে খুলনা ওয়াসার এমডি, তোলপাড়

  • মধুমতি ডেক্স :
  • প্রকাশিত সময় : ১০:২৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫ পড়েছেন

####

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ খুলনার সভাপতি এবং টানা ১৫ বছর ধরে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি পদে থাকা মো. আব্দুল্লাহ ভোল বদল করে জামায়াতে ইসলামীর সুধী সমাবেশে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে মো. আবদুল্লাহ ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আনোয়ারুল ইকবাল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান ফখরুদ্দীন সরকারের উপদেষ্টা হলে তারই প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিসিএস বা ক্যাডার সার্ভিসের লোক না হয়েও, পানিসম্পদ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকলেও ২০০৯ সালে ২৫ অক্টোবর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মো. আব্দুল্লাহ। খুলনা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে দুই বারের বেশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি বিগত সরকার দলীয় সমর্থনে চার দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। তার আগে তিনি তিতাস গ্যাসে চাকরি করতেন। সেখানে অবসরের পর দলীয় বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক খুলনা ওয়াসার এমডি হিসেবে যোগদান করেন।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। তার এই সময়কালে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী হতে মিষ্টি পানি এনে খুলনা সরবরাহ প্রকল্প বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে খুলনাবাসী তার কোন সুফল পাচ্ছে না। প্রকল্প কাজ শুরুর আগেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গবেষক ড. দিলীপ কুমার দত্ত গবেষণা পত্রে বলেছিলেন, এই প্রকল্প সফলতার মুখ দেখবে না। বর্তমানে খুলনা ওয়াসার অধীনে শহরে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের ৩৫ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।

গত ১৫ বছর ওয়াসা সিবিএ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মো. আব্দুল্লাহর ছবি পোস্টারে দেখা যেত।

দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ বাণিজ্য আর টেন্ডারে অনিয়ম বিষয় দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। যা তিনি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। উচ্চ আদালতেও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিট করেছিল ওয়াসার পাম্প অপারেটার নুরুল আলম। যে কারণে তাকে হয়রানিমূলক পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। ওয়াসা এমডি কৌশল করে সেই মামলার শুনানি বার বার পিছিয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াসার এমডি মো. আবদুল্লাহ দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি ইতোপূর্বে পদোন্নতি বঞ্চিত জামায়াতপন্থি সিবিএ নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাব ব্যাংকুয়েট হলে জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানের সুধী সমাবেশে ওয়াসার এমডি প্রথম সারিতে অবস্থান নেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি এই সমাবেশ ছিলেন। সমাবেশস্থলে ওয়াসার এমডির সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে তিনি বলেন, ‘এলাম মিটিং শুনতে।’ পরে কথা বলবেন বললেও আর কথা বলেননি। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি ধরেননি বা কোন জবাব দেননি।

১৫ বছর আগে খুলনা ওয়াসার সিবিএর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আব্দুল গাফফার সাংবাদিকদের  জানান, এই এমডি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি না দিয়ে হয়রানিমূলক পোস্টিং দিয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তাকে দিয়ে দারোয়ানির কাজও করিয়েছেন। এখন তিনি আবার তাদের কাছে টেনে নিয়ে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। অনেকের মতো এমডি ভোল বদল করে এখন জামায়াতে ইসলামীর সুধী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ খুলনার একাধিক নেতাকে মুঠোফোনে কল দিলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াসার এমডি সরকারি কর্মকর্তা। তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে কিনা, তা আমি জানি না।

অপরদিকে খুলনা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সেলিম খান জানান, এমডি স্যার জামায়াতের মিটিংয়ে গেছেন কিনা তা জানা নেই। এমডি স্যার খুলনা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ছিলেন বলে তিনি জানতেন।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ হোসেন রনি জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি থেকে জামায়াতের সুধী সমাবেশে খুলনা ওয়াসার এমডি, তোলপাড়

প্রকাশিত সময় : ১০:২৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

####

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ খুলনার সভাপতি এবং টানা ১৫ বছর ধরে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি পদে থাকা মো. আব্দুল্লাহ ভোল বদল করে জামায়াতে ইসলামীর সুধী সমাবেশে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে মো. আবদুল্লাহ ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আনোয়ারুল ইকবাল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান ফখরুদ্দীন সরকারের উপদেষ্টা হলে তারই প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিসিএস বা ক্যাডার সার্ভিসের লোক না হয়েও, পানিসম্পদ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকলেও ২০০৯ সালে ২৫ অক্টোবর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মো. আব্দুল্লাহ। খুলনা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে দুই বারের বেশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি বিগত সরকার দলীয় সমর্থনে চার দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। তার আগে তিনি তিতাস গ্যাসে চাকরি করতেন। সেখানে অবসরের পর দলীয় বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক খুলনা ওয়াসার এমডি হিসেবে যোগদান করেন।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। তার এই সময়কালে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী হতে মিষ্টি পানি এনে খুলনা সরবরাহ প্রকল্প বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে খুলনাবাসী তার কোন সুফল পাচ্ছে না। প্রকল্প কাজ শুরুর আগেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গবেষক ড. দিলীপ কুমার দত্ত গবেষণা পত্রে বলেছিলেন, এই প্রকল্প সফলতার মুখ দেখবে না। বর্তমানে খুলনা ওয়াসার অধীনে শহরে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের ৩৫ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।

গত ১৫ বছর ওয়াসা সিবিএ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মো. আব্দুল্লাহর ছবি পোস্টারে দেখা যেত।

দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ বাণিজ্য আর টেন্ডারে অনিয়ম বিষয় দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। যা তিনি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। উচ্চ আদালতেও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিট করেছিল ওয়াসার পাম্প অপারেটার নুরুল আলম। যে কারণে তাকে হয়রানিমূলক পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। ওয়াসা এমডি কৌশল করে সেই মামলার শুনানি বার বার পিছিয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াসার এমডি মো. আবদুল্লাহ দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি ইতোপূর্বে পদোন্নতি বঞ্চিত জামায়াতপন্থি সিবিএ নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাব ব্যাংকুয়েট হলে জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানের সুধী সমাবেশে ওয়াসার এমডি প্রথম সারিতে অবস্থান নেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি এই সমাবেশ ছিলেন। সমাবেশস্থলে ওয়াসার এমডির সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে তিনি বলেন, ‘এলাম মিটিং শুনতে।’ পরে কথা বলবেন বললেও আর কথা বলেননি। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি ধরেননি বা কোন জবাব দেননি।

১৫ বছর আগে খুলনা ওয়াসার সিবিএর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আব্দুল গাফফার সাংবাদিকদের  জানান, এই এমডি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি না দিয়ে হয়রানিমূলক পোস্টিং দিয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তাকে দিয়ে দারোয়ানির কাজও করিয়েছেন। এখন তিনি আবার তাদের কাছে টেনে নিয়ে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। অনেকের মতো এমডি ভোল বদল করে এখন জামায়াতে ইসলামীর সুধী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ খুলনার একাধিক নেতাকে মুঠোফোনে কল দিলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াসার এমডি সরকারি কর্মকর্তা। তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে কিনা, তা আমি জানি না।

অপরদিকে খুলনা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সেলিম খান জানান, এমডি স্যার জামায়াতের মিটিংয়ে গেছেন কিনা তা জানা নেই। এমডি স্যার খুলনা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ছিলেন বলে তিনি জানতেন।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ হোসেন রনি জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই।