১০:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালের বাজারগুলোতে অবৈধ পলিথিনে সয়লাব

শপিং মল, চেইনশপ সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ পণ্য নিয়ন্ত্রণে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার এতটুকুও কমেনি। নির্ভরযোগ্য বিকল্পের অভাবে বাজার সয়লাব হয়ে আছে নিষিদ্ধ পলিথিনে। মাঝে হাতে ঝুলিয়ে ব্যবহার উপযোগী পলিথিন ব্যাগ বন্ধ ছিল। কিছুদিন যাবৎ সেই ব্যাগও বাজারে ফেরত এসেছে।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড, বাজার রোড, নতুনবাজার, বাংলা বাজার, বটতলা,চৌমাথা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাটজাত মোড়কের বদলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বস্তায় আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, আদা, রসুন বাজারজাত করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক, তারা তা চান না। কিন্তু পলিথিনের মতো সহজলভ্য কোনো পণ্য বাজারে নেই। বটতলা বাজারে কথা হয় শফিকুল নামের একজন ক্রেতার সাথে । তার হাতে হাতওয়ালা পলিব্যাগে জবাই করা মুরগি। পলিথিনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তিনি বললেন, দোকানদার দিলে কি করব। চারদিকেই তো পলিথিন আর পলিথিন। বন্ধ করার ব্যবস্থা তো দেখি না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঠেকাতে পলিথিনের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করা উচিত এবং তা দ্রুত করা উচিত। এ জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। সরকার আন্তরিকভাবে না চাইলে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ফল বিক্রেতা রহমান বলেন, একশ’ কাগজের ঠোঙা দুই থেকে তিনশ’ টাকায় কিনতে হয়। অন্যদিকে এক কেজি পলিথিন কেনা যায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এতে দুই থেকে আড়াইশ’ পলিথিন হয়। পলিথিন কম দামে পাওয়া যায় বলে তারা ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয় ২০০২ সালে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেই পলিথিন থেকে মুক্তি মিলছে না। উচ্চ আদালত পলিথিন এবং একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ২০ বছর ধরে পলিথিন দূষণ নিয়ে চিন্তিত।

সরকার বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ধান, চাল, ভুট্টা, সার, চিনিসহ ১৯টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তখন কিছু অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু জনবল ও তদারকির অভাবে অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ফলে সরকারের সে উদ্যোগের সুফল আর মেলেনি। এ ছাড়া রাজধানীর পুরান ঢাকার সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে কারখানা থেকে উৎপাদিত পলিথিন একটি সিন্ডেকেটের সদস্যরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বরিশালে বাজারজাত করে জমজমাট ব্যবসা করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। তবে এসব অভিযান লোক দেখানো বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে অর্থাৎ অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবসার চলছে অভিযোগ রয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, সারা দেশেই পলিথিন তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। পলিথিনের বাজারজাত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো উচিৎ। পলিথিনের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এক্ষেত্রে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। পলিথিন বন্ধেও সরকার যদি চেষ্টা করে, তাহলে সেটা সম্ভব হবে।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আঃ হালিম বলেন, পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রায় সময়ই অভিযান চালানো হয়। পরিবেশের ক্ষতি এমন জিনিসের বিরুদ্ধে অভিযান বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

dainik madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

বরিশালের বাজারগুলোতে অবৈধ পলিথিনে সয়লাব

প্রকাশিত সময় : ১১:৩৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

শপিং মল, চেইনশপ সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ পণ্য নিয়ন্ত্রণে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার এতটুকুও কমেনি। নির্ভরযোগ্য বিকল্পের অভাবে বাজার সয়লাব হয়ে আছে নিষিদ্ধ পলিথিনে। মাঝে হাতে ঝুলিয়ে ব্যবহার উপযোগী পলিথিন ব্যাগ বন্ধ ছিল। কিছুদিন যাবৎ সেই ব্যাগও বাজারে ফেরত এসেছে।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড, বাজার রোড, নতুনবাজার, বাংলা বাজার, বটতলা,চৌমাথা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাটজাত মোড়কের বদলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বস্তায় আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, আদা, রসুন বাজারজাত করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক, তারা তা চান না। কিন্তু পলিথিনের মতো সহজলভ্য কোনো পণ্য বাজারে নেই। বটতলা বাজারে কথা হয় শফিকুল নামের একজন ক্রেতার সাথে । তার হাতে হাতওয়ালা পলিব্যাগে জবাই করা মুরগি। পলিথিনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তিনি বললেন, দোকানদার দিলে কি করব। চারদিকেই তো পলিথিন আর পলিথিন। বন্ধ করার ব্যবস্থা তো দেখি না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঠেকাতে পলিথিনের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করা উচিত এবং তা দ্রুত করা উচিত। এ জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। সরকার আন্তরিকভাবে না চাইলে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ফল বিক্রেতা রহমান বলেন, একশ’ কাগজের ঠোঙা দুই থেকে তিনশ’ টাকায় কিনতে হয়। অন্যদিকে এক কেজি পলিথিন কেনা যায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এতে দুই থেকে আড়াইশ’ পলিথিন হয়। পলিথিন কম দামে পাওয়া যায় বলে তারা ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয় ২০০২ সালে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেই পলিথিন থেকে মুক্তি মিলছে না। উচ্চ আদালত পলিথিন এবং একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ২০ বছর ধরে পলিথিন দূষণ নিয়ে চিন্তিত।

সরকার বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ধান, চাল, ভুট্টা, সার, চিনিসহ ১৯টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তখন কিছু অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু জনবল ও তদারকির অভাবে অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ফলে সরকারের সে উদ্যোগের সুফল আর মেলেনি। এ ছাড়া রাজধানীর পুরান ঢাকার সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে কারখানা থেকে উৎপাদিত পলিথিন একটি সিন্ডেকেটের সদস্যরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বরিশালে বাজারজাত করে জমজমাট ব্যবসা করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। তবে এসব অভিযান লোক দেখানো বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে অর্থাৎ অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবসার চলছে অভিযোগ রয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, সারা দেশেই পলিথিন তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। পলিথিনের বাজারজাত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো উচিৎ। পলিথিনের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এক্ষেত্রে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। পলিথিন বন্ধেও সরকার যদি চেষ্টা করে, তাহলে সেটা সম্ভব হবে।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আঃ হালিম বলেন, পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রায় সময়ই অভিযান চালানো হয়। পরিবেশের ক্ষতি এমন জিনিসের বিরুদ্ধে অভিযান বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।