০১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

  • অফিস ডেক্স :
  • প্রকাশিত সময় : ১০:০৯:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
  • ১০ পড়েছেন

####

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৭ আগস্ট) তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই আমন্ত্রণ জানান। ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুবচনবাদী গণতন্ত্র রূপান্তর নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান গ্লোবাল সাউথের তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনটি শূন্যের একটি বিশ্ব গঠনে গ্লোবাল সাউথের নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিধর ‘গ্লোবাল সাউথ’ খুবই সময়োপযোগী ও উপযুক্ত। এ অঞ্চলের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনটি শূন্য—শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ ঘনত্ব এবং শূন্য বেকারত্বের বিশ্ব গড়ার একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমরা শুরু করতে পারি। সামাজিক ব্যবসার মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করতে পারি। তিনটি শূন্যের একটি বিশ্ব গড়তে আমাদের পথ নির্ধারণ করতে পারি। সামাজিক ব্যবসার মধ্য দিয়ে পরিবেশগত এবং সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় গ্লোবাল সাউথের নেতাদের এক সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানাই। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে এটি একটি বিশাল শক্তিতে পরিণত হতে পারে।

ওয়েবিনারে যুক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমি এই ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের তৃতীয় সংস্করণে’ যোগ দিতে পেরে আনন্দিত। আমি ১৫ আগস্ট পালিত হওয়া ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের জন্য ভারতের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ভূ-রাজনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯-এর প্রভাবের কারণে বিশ্বের বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের ভবিষ্যৎ একটি জটিল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশ গত ৫ আগস্ট একটি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বীর ছাত্ররা একটি গণঅভ্যুত্থান করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের চায়। তাদের আকাঙ্ক্ষা জনগণকে প্রভাবিত করেছে। তারা একটি অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করেছে। আমাদের সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথ সৃজনশীল তরুণ জনসংখ্যায় সমৃদ্ধ। সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তাকে একত্রিত করে অলৌকিক কিছু করা যেতে পারে। আমরা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমাদের তরুণ জনসংখ্যার সৃজনশীলতা এবং শক্তি উন্মোচন করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণে কিছু সাধারণ সুবিধার প্রস্তাব করতে চাই।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে এই বৈঠকে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারআগে এই সামিটে যোগ দেয়ার জন্য ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান মোদি। শুক্রবার দুই দেশের নেতার মধ্যে এক ফোনালাপে এই আমন্ত্রণ জানান তিনি। তখনই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয়ে রাজি হন প্রধান উপদেষ্টা।

ফোনালাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান মোদি। অন্তর্বর্তী সরকারকে শুভকামনা জানিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা ব্যক্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন তিনি। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

ফোনালাপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করলে ড. ইউনূস জানান, সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর অতিরঞ্জিত করা হয়েছে জানিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে সংবাদ প্রকাশ করতে ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান ড. ইউনূস।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

প্রকাশিত সময় : ১০:০৯:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

####

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৭ আগস্ট) তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই আমন্ত্রণ জানান। ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুবচনবাদী গণতন্ত্র রূপান্তর নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান গ্লোবাল সাউথের তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনটি শূন্যের একটি বিশ্ব গঠনে গ্লোবাল সাউথের নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিধর ‘গ্লোবাল সাউথ’ খুবই সময়োপযোগী ও উপযুক্ত। এ অঞ্চলের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনটি শূন্য—শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ ঘনত্ব এবং শূন্য বেকারত্বের বিশ্ব গড়ার একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমরা শুরু করতে পারি। সামাজিক ব্যবসার মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করতে পারি। তিনটি শূন্যের একটি বিশ্ব গড়তে আমাদের পথ নির্ধারণ করতে পারি। সামাজিক ব্যবসার মধ্য দিয়ে পরিবেশগত এবং সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় গ্লোবাল সাউথের নেতাদের এক সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানাই। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে এটি একটি বিশাল শক্তিতে পরিণত হতে পারে।

ওয়েবিনারে যুক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমি এই ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের তৃতীয় সংস্করণে’ যোগ দিতে পেরে আনন্দিত। আমি ১৫ আগস্ট পালিত হওয়া ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের জন্য ভারতের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ভূ-রাজনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯-এর প্রভাবের কারণে বিশ্বের বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের ভবিষ্যৎ একটি জটিল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশ গত ৫ আগস্ট একটি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বীর ছাত্ররা একটি গণঅভ্যুত্থান করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের চায়। তাদের আকাঙ্ক্ষা জনগণকে প্রভাবিত করেছে। তারা একটি অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করেছে। আমাদের সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথ সৃজনশীল তরুণ জনসংখ্যায় সমৃদ্ধ। সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তাকে একত্রিত করে অলৌকিক কিছু করা যেতে পারে। আমরা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমাদের তরুণ জনসংখ্যার সৃজনশীলতা এবং শক্তি উন্মোচন করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণে কিছু সাধারণ সুবিধার প্রস্তাব করতে চাই।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে এই বৈঠকে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারআগে এই সামিটে যোগ দেয়ার জন্য ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান মোদি। শুক্রবার দুই দেশের নেতার মধ্যে এক ফোনালাপে এই আমন্ত্রণ জানান তিনি। তখনই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয়ে রাজি হন প্রধান উপদেষ্টা।

ফোনালাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান মোদি। অন্তর্বর্তী সরকারকে শুভকামনা জানিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা ব্যক্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন তিনি। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

ফোনালাপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করলে ড. ইউনূস জানান, সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর অতিরঞ্জিত করা হয়েছে জানিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে সংবাদ প্রকাশ করতে ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান ড. ইউনূস।