১০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি :

বাঘ জরিপ-২০২৪ এর ফলাফল ঘোষনা : সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি

  • মধুমতি ডেক্স।।
  • প্রকাশিত সময় : ০১:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ৫ পড়েছেন

####

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জরিপে ১১টি বাঘ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’ এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪।’উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক বাঘ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয় এবং এ জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮টি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে বাঘ জরিপ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়। উক্ত বাঘ জরিপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে চারটি ব্লকে ৬০৫টি গ্রিডে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রতিটি গ্রিডে বাঘের গতিপথ, বিচরণ, অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে দুটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ৬০৫টি গ্রিডে পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা মোট ৩১৮ দিন রেখে দেওয়া হয় এবং ৩৬৮টি গ্রিডের ক্যামেরায় বাঘের ছবি পাওয়া যায়। ১০ লাখ ছবি ও ভিডিও থেকে শুধুমাত্র বাঘের ছবি পাওয়া যায় ৭ হাজার ২৯৭ টি। এত বিপুল সংখ্যক বাঘের ছবি ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। ক্যামেরা ট্র্যাপিং এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রীয়ভাবে বাঘের ছবি তোলার মূল উদ্দেশ্য হলো বাঘের দেহে যে ডোরাকাটা দাগ আছে তা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা। বাঘের ডোরাকাটা দাগ ও দেহের বিভিন্ন অংশের ছবি বিশ্লেষণ করে একক ও অনন্য বাঘের ছবি সনাক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, জরিপকালে প্রাপ্ত বাঘের ছবি ও অন্যান্য তথ্য উপাত্তসমূহ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে নিয়োজিত বাঘ বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক বিশ্লেষণ ও যাচাই বাছাই করে বাঘের সংখ্যা ও বাঘের ঘনত্ব নিরূপণ করা হয়।

এছাড়া জরিপের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর ভারত, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মতামত গ্রহণ করা হয়।

সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫ টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪।

২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া ২০২৩-২৪ সালের বাঘজরিপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া যায়। তবে বাঘ শাবকের সংখ্যা জরিপের ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ ছোট থেকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাঘ শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশী হয়ে থাকে। ২০২৩-২৪ সালের বাঘজরিপে ২১ টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ ও ২০১৮ সালের বাঘজরিপে মাত্র ৫ টি করে বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।

বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশে বনের ৫৩.৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে, সেখান থেকে সকল ধরণের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব হ্রাসে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভিতরে ১২ টি মাটির উচু কিল্লা/ডিবি নির্মাণ করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘ সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানি প্রদান করা হচ্ছে। লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেবার জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯ টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্ব বাঘ দিবস পালনসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ক্যামেরা ট্রাপিংএর মাধ্যমে বাঘ জরিপে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দেশের সকলের জন্য আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ। বাঘ যেহেতু অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং বাঘের জন্য এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেহেতু বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী।

আইইউসিএন কর্তৃক বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে বর্তমানে ১০ টি দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, রাশিয়া, চীন থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাঘ রয়েছে। অবশিষ্ট ৩ টি দেশ অর্থাৎ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের বনাঞ্চল হতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বাঘের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৮৪০ টি।

সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাঘ জরিপের মাধ্যমে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ, বনে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি বাঘ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক বাঘ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়, এবং উক্ত জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬ টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে ২য় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪ টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮ টি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন-সহ অন্যান্য অতিরিক্ত সচিব, বন অধিপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমএ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রমুখ। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি :

বাঘ জরিপ-২০২৪ এর ফলাফল ঘোষনা : সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি

প্রকাশিত সময় : ০১:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

####

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জরিপে ১১টি বাঘ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’ এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪।’উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক বাঘ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয় এবং এ জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮টি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে বাঘ জরিপ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়। উক্ত বাঘ জরিপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে চারটি ব্লকে ৬০৫টি গ্রিডে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রতিটি গ্রিডে বাঘের গতিপথ, বিচরণ, অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে দুটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ৬০৫টি গ্রিডে পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা মোট ৩১৮ দিন রেখে দেওয়া হয় এবং ৩৬৮টি গ্রিডের ক্যামেরায় বাঘের ছবি পাওয়া যায়। ১০ লাখ ছবি ও ভিডিও থেকে শুধুমাত্র বাঘের ছবি পাওয়া যায় ৭ হাজার ২৯৭ টি। এত বিপুল সংখ্যক বাঘের ছবি ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। ক্যামেরা ট্র্যাপিং এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রীয়ভাবে বাঘের ছবি তোলার মূল উদ্দেশ্য হলো বাঘের দেহে যে ডোরাকাটা দাগ আছে তা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা। বাঘের ডোরাকাটা দাগ ও দেহের বিভিন্ন অংশের ছবি বিশ্লেষণ করে একক ও অনন্য বাঘের ছবি সনাক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, জরিপকালে প্রাপ্ত বাঘের ছবি ও অন্যান্য তথ্য উপাত্তসমূহ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে নিয়োজিত বাঘ বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক বিশ্লেষণ ও যাচাই বাছাই করে বাঘের সংখ্যা ও বাঘের ঘনত্ব নিরূপণ করা হয়।

এছাড়া জরিপের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর ভারত, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মতামত গ্রহণ করা হয়।

সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫ টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪।

২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া ২০২৩-২৪ সালের বাঘজরিপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া যায়। তবে বাঘ শাবকের সংখ্যা জরিপের ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ ছোট থেকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাঘ শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশী হয়ে থাকে। ২০২৩-২৪ সালের বাঘজরিপে ২১ টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ ও ২০১৮ সালের বাঘজরিপে মাত্র ৫ টি করে বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।

বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশে বনের ৫৩.৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে, সেখান থেকে সকল ধরণের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব হ্রাসে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভিতরে ১২ টি মাটির উচু কিল্লা/ডিবি নির্মাণ করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘ সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানি প্রদান করা হচ্ছে। লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেবার জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯ টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্ব বাঘ দিবস পালনসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ক্যামেরা ট্রাপিংএর মাধ্যমে বাঘ জরিপে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দেশের সকলের জন্য আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ। বাঘ যেহেতু অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং বাঘের জন্য এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেহেতু বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী।

আইইউসিএন কর্তৃক বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে বর্তমানে ১০ টি দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, রাশিয়া, চীন থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাঘ রয়েছে। অবশিষ্ট ৩ টি দেশ অর্থাৎ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের বনাঞ্চল হতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বাঘের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৮৪০ টি।

সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাঘ জরিপের মাধ্যমে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ, বনে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি বাঘ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক বাঘ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়, এবং উক্ত জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬ টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে ২য় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪ টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮ টি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন-সহ অন্যান্য অতিরিক্ত সচিব, বন অধিপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমএ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রমুখ। ##