১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলাপ থামছে না নিহত পুলিশ সদস্য সুমনের পরিবারের

####

খুলনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীর স্ত্রী মিতু বিশ্বাস ও তাদের ৬বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধার বিলাপ থামছেই না। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর গল্রামারীতে আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামীকে। এ খবর জানার পর থেকেই তার স্ত্রী আহাজারি করেই চলেছেন। হাসপাতালে এসে স্বামীর মরদেহ দেখে সামনে যাকে পাচ্ছেন তাকেই ধরে ধরে আহাজারি করছেন। কখনো বিলাপ করতে করতে জড়িয়ে ধরছেন অন্যকে। বিলাপের পাশাপাশি কখনো কখনও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তিনি।

ঘটনার পর শুক্রবার রাত সোয়া নয়টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক ও খুলনার ডিআইজি মঈনুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান নিহত ‍সুমন ঘরামীর মরদেহ দেখতে। এ সময় তারা সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাসকে সান্ত্বনা দেয়ার ছেস্টা করেন। পুলিশ কমিশনার সামনে যেতেই সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে থাকেন, ‘সুমন কোথায় ? খালি ডিউটি, ডিউটি করেন। আমার সুমন কোথায়? আপনাদের ডিউটি করতে গিয়ে সুমন মারা গেছে…।’ এ সময় পুলিশের অন্য কর্মকর্তার পা জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘স্যার, আমার সুমনকে এনে দেন…।

এ সময় সুমনের ৬ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা বার বার তার বাবাকে খুঁজছিল আর কান্নাকাটি করছিল। সে শুধূই বাবার কাছে যেতে চাইছিল। তার বাবাকে যে আর পাবে না সেটি কিছুতেই মানতে পারছে না ছোট্ট এ শিশুটি। হাসপাতালে উপস্থিত সুমনের স্বজনরা জানান, ‘সুমন ও তার মেয়ের প্রতিদিন সকাল শুরু হতো গান দিয়ে। মেয়েটা ওর বাবার নয়নের মণি ছিল। সুন্দর হাসিখুশি ভরা সংসারটার এখন কী হবে!ছোট্ট এই মেয়েটি এখন কিভাবেই বা বাঁচতে ও বেড়ে উঠবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার গল্লামারী এলাকায় আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে নিহত হন পুলিশ সদস্য সুমন ঘরামী। তিনি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সুশীল কুমার ঘরামী ও গীতা রানী ঘরামীর সন্তান। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নগরের বয়রা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের ২০ থেকে ৩০ জন সদস্যকে আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। কনস্টেবল সুমন ঘরামীকে তারা এমনভাবে পিটিয়ে ও আঘাত করে হত্যা করেছে যে তাঁর মাথায় ইন্টারনাল ইনজুরি হয়ে গেছে, তাঁর মাথার খুলি ভেঙে গেছে। তাঁকে এনে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এর বাইরে আমাদের অন্য একজন সদস্য আইসিইউতে আছেন। ২৫-৩০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’

সহকারী পুলিশ কমিশনার সৌমেন বিশ্বাস সাংবাদিকদেরকে জানান, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ডিউটিরত অবস্থায় সুমন ও আমি এক সঙ্গে ছিলাম। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হামলা করলে দলছুট হয়ে আমরা একটা দোকানের ভেতর আশ্রয় নিই। সেখানে সাটার লাগিয়ে দিলেও পরে দোকানদারই সাটার খুলে দেয়। সেখান থেকে যে যার মতো দৌড়ে আমি একটা ঝুপড়ির মধ্যে আশ্রয় নিই। আমি ইউনিফর্ম খুলে ফেলে একজনের কাছ থেকে তাঁর গেঞ্জিটা নিই। পরে তিনি বলে দেন যে ভেতরে পুলিশ আছে। সেকান থেকে আমি দৌড়ে এসে একটা ড্রেনের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা আটকে ছিলাম। পরে খাল দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে আসতে পেরেছি। কিন্তু সুমন একটা র্গতের মধ্যে পড়ে গিয়ে উঠতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। ’##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

বিলাপ থামছে না নিহত পুলিশ সদস্য সুমনের পরিবারের

প্রকাশিত সময় : ০৭:০১:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

####

খুলনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীর স্ত্রী মিতু বিশ্বাস ও তাদের ৬বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধার বিলাপ থামছেই না। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর গল্রামারীতে আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামীকে। এ খবর জানার পর থেকেই তার স্ত্রী আহাজারি করেই চলেছেন। হাসপাতালে এসে স্বামীর মরদেহ দেখে সামনে যাকে পাচ্ছেন তাকেই ধরে ধরে আহাজারি করছেন। কখনো বিলাপ করতে করতে জড়িয়ে ধরছেন অন্যকে। বিলাপের পাশাপাশি কখনো কখনও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তিনি।

ঘটনার পর শুক্রবার রাত সোয়া নয়টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক ও খুলনার ডিআইজি মঈনুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান নিহত ‍সুমন ঘরামীর মরদেহ দেখতে। এ সময় তারা সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাসকে সান্ত্বনা দেয়ার ছেস্টা করেন। পুলিশ কমিশনার সামনে যেতেই সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে থাকেন, ‘সুমন কোথায় ? খালি ডিউটি, ডিউটি করেন। আমার সুমন কোথায়? আপনাদের ডিউটি করতে গিয়ে সুমন মারা গেছে…।’ এ সময় পুলিশের অন্য কর্মকর্তার পা জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘স্যার, আমার সুমনকে এনে দেন…।

এ সময় সুমনের ৬ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা বার বার তার বাবাকে খুঁজছিল আর কান্নাকাটি করছিল। সে শুধূই বাবার কাছে যেতে চাইছিল। তার বাবাকে যে আর পাবে না সেটি কিছুতেই মানতে পারছে না ছোট্ট এ শিশুটি। হাসপাতালে উপস্থিত সুমনের স্বজনরা জানান, ‘সুমন ও তার মেয়ের প্রতিদিন সকাল শুরু হতো গান দিয়ে। মেয়েটা ওর বাবার নয়নের মণি ছিল। সুন্দর হাসিখুশি ভরা সংসারটার এখন কী হবে!ছোট্ট এই মেয়েটি এখন কিভাবেই বা বাঁচতে ও বেড়ে উঠবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার গল্লামারী এলাকায় আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে নিহত হন পুলিশ সদস্য সুমন ঘরামী। তিনি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সুশীল কুমার ঘরামী ও গীতা রানী ঘরামীর সন্তান। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নগরের বয়রা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের ২০ থেকে ৩০ জন সদস্যকে আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। কনস্টেবল সুমন ঘরামীকে তারা এমনভাবে পিটিয়ে ও আঘাত করে হত্যা করেছে যে তাঁর মাথায় ইন্টারনাল ইনজুরি হয়ে গেছে, তাঁর মাথার খুলি ভেঙে গেছে। তাঁকে এনে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এর বাইরে আমাদের অন্য একজন সদস্য আইসিইউতে আছেন। ২৫-৩০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’

সহকারী পুলিশ কমিশনার সৌমেন বিশ্বাস সাংবাদিকদেরকে জানান, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ডিউটিরত অবস্থায় সুমন ও আমি এক সঙ্গে ছিলাম। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হামলা করলে দলছুট হয়ে আমরা একটা দোকানের ভেতর আশ্রয় নিই। সেখানে সাটার লাগিয়ে দিলেও পরে দোকানদারই সাটার খুলে দেয়। সেখান থেকে যে যার মতো দৌড়ে আমি একটা ঝুপড়ির মধ্যে আশ্রয় নিই। আমি ইউনিফর্ম খুলে ফেলে একজনের কাছ থেকে তাঁর গেঞ্জিটা নিই। পরে তিনি বলে দেন যে ভেতরে পুলিশ আছে। সেকান থেকে আমি দৌড়ে এসে একটা ড্রেনের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা আটকে ছিলাম। পরে খাল দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে আসতে পেরেছি। কিন্তু সুমন একটা র্গতের মধ্যে পড়ে গিয়ে উঠতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। ’##