১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ফেনীতে বন্যা হয়নি

  • মধুমতি ডেক্স :
  • প্রকাশিত সময় : ০৯:৫০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • ১২ পড়েছেন

####

ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ফেনীতে বন্যা হয় নি? না, ডম্বুর বাঁধের সাথে ফেনীর কোন সংযোগ নেই। কিন্তু কিভাবে? আপনারা জেঞ্জি জেনারেশন তাই আপনার পড়াশোনা কেবল ফেসবুকে। নিজ দেশের ভৌগলিক অবস্থান নিয়েও আপনাদের ধারণা শূন্য। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ সাদমান রাফিদ তার ফেসুবকে পোষ্ট দিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। নীচে তার মূল পোস্ট তুলে ধরা হলো :

চলুন বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি। ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে না। কারণ, ডম্বুর বাঁধের অবস্থান ত্রিপুরার গোমতী নদীর উপরে। অর্থাৎ, বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে ডম্বুর লেকের পানি গোমতী নদী দিয়ে ত্রিপুরার ভিতর দিয়ে কুমিল্লায় প্রবেশ করে দেবীদ্বার, মুরাদনগর, দাউদকান্দি হয়ে মেঘনা নদীতে পড়বে। ফেনী নদী বা মুহুরী নদীর সাথে এই গোমতী নদীর কোনো সংযোগ নাই। তাই ডম্বুর বাঁধ খোলার ফলে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উপর ভৌগলিকভাবেই কোনো প্রভাব পড়ছে না।

তাহলে ফেনীতে বন্যা কেন হচ্ছে?

বন্যা হওয়ার কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের ত্রিপুরায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রদত্ত উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর পরশুরামে ৩০৪ মিলিমিটার, খাগড়াছড়ির রামগড়ে ১৪৫ মিলিমিটার, নোয়াখালীতে ১৫৪ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ২১০ মিলিমিটার, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ২৩৮ মিলিমিটার, কামালগঞ্জে ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একইসাথে ত্রিপুরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বাগাফায় সর্বোচ্চ ৩৭৫ মিলিমিটার ও বিলোনিয়ায় ৩২৪ মিলিমিটার এবং গোমতী জেলার অমরপুরে ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অতিভারী বৃষ্টিপাত গতকালও অব্যাহত ছিলো, আজ এবং আগামীকালও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৬০ ঘণ্টা অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বন্যার পানি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এদিকে বাংলাদেশের ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণ এর সাথে পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি শহর প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে চৌদ্দগ্রামে পাহাড়ি ঢল নয় বরং জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, নোয়াখালীতে একই অবস্থা। সেখানে খাল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভারী বর্ষণের পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণের মুহুরী ও ফেনী নদীর পর উত্তরের সোনাই, ধলাই, খোয়াই, মনু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা কবলিত হচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, আজ (২১ আগস্ট ২০২৪) দুপুর ৩টায় কুমিল্লা পয়েন্টে গোমতী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

পোস্টে দুইটা চিত্র যুক্ত করলাম, উপরের চিত্রে ডম্বুর বাঁধ থেকে কুমিল্লা শহর পর্যন্ত গোমতী নদীর গতিপথ দেখানো হয়েছে। নিচের ছবিতে গোমতী নদীর বেসিন এলাকা দেখানো হয়েছে। মূলত ত্রিপুরার মধ্যাঞ্চলে মার্ক করা ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের যত অতিরিক্ত পানি (ডম্বুর লেক থেকে ছাড়া পানিসহ) তা গোমতি নদী হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়বে, ফেনী জেলা গোমতী নদীর বেসিনের বাইরে। সুতরাং ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে-এই তথ্যটি ভুল।

তাহলে ফেসবুকে ভুল প্রচার হচ্ছে না কেন? কারণ ফেসবুক চালায় পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে সচিবালয় ঘেরাও করা জেঞ্জি জেনারেশন।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

ভারত ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ফেনীতে বন্যা হয়নি

প্রকাশিত সময় : ০৯:৫০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

####

ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ফেনীতে বন্যা হয় নি? না, ডম্বুর বাঁধের সাথে ফেনীর কোন সংযোগ নেই। কিন্তু কিভাবে? আপনারা জেঞ্জি জেনারেশন তাই আপনার পড়াশোনা কেবল ফেসবুকে। নিজ দেশের ভৌগলিক অবস্থান নিয়েও আপনাদের ধারণা শূন্য। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ সাদমান রাফিদ তার ফেসুবকে পোষ্ট দিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। নীচে তার মূল পোস্ট তুলে ধরা হলো :

চলুন বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি। ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে না। কারণ, ডম্বুর বাঁধের অবস্থান ত্রিপুরার গোমতী নদীর উপরে। অর্থাৎ, বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে ডম্বুর লেকের পানি গোমতী নদী দিয়ে ত্রিপুরার ভিতর দিয়ে কুমিল্লায় প্রবেশ করে দেবীদ্বার, মুরাদনগর, দাউদকান্দি হয়ে মেঘনা নদীতে পড়বে। ফেনী নদী বা মুহুরী নদীর সাথে এই গোমতী নদীর কোনো সংযোগ নাই। তাই ডম্বুর বাঁধ খোলার ফলে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উপর ভৌগলিকভাবেই কোনো প্রভাব পড়ছে না।

তাহলে ফেনীতে বন্যা কেন হচ্ছে?

বন্যা হওয়ার কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের ত্রিপুরায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রদত্ত উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর পরশুরামে ৩০৪ মিলিমিটার, খাগড়াছড়ির রামগড়ে ১৪৫ মিলিমিটার, নোয়াখালীতে ১৫৪ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ২১০ মিলিমিটার, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ২৩৮ মিলিমিটার, কামালগঞ্জে ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একইসাথে ত্রিপুরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বাগাফায় সর্বোচ্চ ৩৭৫ মিলিমিটার ও বিলোনিয়ায় ৩২৪ মিলিমিটার এবং গোমতী জেলার অমরপুরে ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অতিভারী বৃষ্টিপাত গতকালও অব্যাহত ছিলো, আজ এবং আগামীকালও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৬০ ঘণ্টা অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বন্যার পানি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এদিকে বাংলাদেশের ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণ এর সাথে পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি শহর প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে চৌদ্দগ্রামে পাহাড়ি ঢল নয় বরং জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, নোয়াখালীতে একই অবস্থা। সেখানে খাল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভারী বর্ষণের পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণের মুহুরী ও ফেনী নদীর পর উত্তরের সোনাই, ধলাই, খোয়াই, মনু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা কবলিত হচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, আজ (২১ আগস্ট ২০২৪) দুপুর ৩টায় কুমিল্লা পয়েন্টে গোমতী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

পোস্টে দুইটা চিত্র যুক্ত করলাম, উপরের চিত্রে ডম্বুর বাঁধ থেকে কুমিল্লা শহর পর্যন্ত গোমতী নদীর গতিপথ দেখানো হয়েছে। নিচের ছবিতে গোমতী নদীর বেসিন এলাকা দেখানো হয়েছে। মূলত ত্রিপুরার মধ্যাঞ্চলে মার্ক করা ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের যত অতিরিক্ত পানি (ডম্বুর লেক থেকে ছাড়া পানিসহ) তা গোমতি নদী হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়বে, ফেনী জেলা গোমতী নদীর বেসিনের বাইরে। সুতরাং ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে-এই তথ্যটি ভুল।

তাহলে ফেসবুকে ভুল প্রচার হচ্ছে না কেন? কারণ ফেসবুক চালায় পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে সচিবালয় ঘেরাও করা জেঞ্জি জেনারেশন।