১০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কৃষি জমি ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের প্রতিবাদ :

ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের হুমকিতে ৫শতাধিক পরিবার বিতাড়িত, চরম হুমকিতে বাসযোগ্য পরিবেশ

####

বাগেরহাট সদরের ভৈরব নদীর তীরের চাপাতরা গ্রামে একের পর এক কৃষি জমি ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কারখানা স্থাপনের নামে ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের হুমকিতে ৫শতাধিক পরিবার বিতাড়িত হয়েছে। আরও শতাধিক পরিবার জমি ও ঘরবাড়ী থেকে ‍ুএচ্ছদের হুমকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষি জমি শ্রেণী পরিবর্তন ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের প্রতিবাদে ফুসে ‍উঠেছে এলাকাবাসী। ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের এ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ও এলাকার বাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষায় ১০দফা দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ ‍ুসরক্সা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে খুলনা পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ ও বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো: নজরুল ইসলাম। সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিভিন্ন উত্তর দেন খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক এড. কুদরত-ই খুদা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাট জেলায় জলাভূমি ভরাট, ভূমি দখল, কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার ফলে বাসযোগ্য ভূমি, ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র।গত কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সবুজ গাছপালা ঘেরা শান্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রাম “চাপাতলা” গ্রাম।এ গ্রামে এক একরের বেশী আয়তনের “সিড়ি পুকুর” নামে একটি পুকুরে গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায় ধর্মীয় পূজা এবং শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ পালন করতেন। সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত সেই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া একটি জনবসতি ও পরিবেশ ভারসাম্যপূর্ণ গ্রামে কোন রকম পরিবেশ ও সামাজিক সমীক্ষা ও ঘোষণা ছাড়াই একের পর এক কৃষি কিনে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। যা ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ। কারখানার প্রচুর ধোয়া ও কাঠের গুড়ো এলাকার বিদ্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চসহ সব ধরণের আসবাবপত্র দুষিত করছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাও ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা থেকে আসা গন্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। একই মাথে স্থানীয় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিবিড় বসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানা স্থাপনের ফলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা এসে আশে পাশে বসবাস করায় বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা শিল্পাঞ্চলেই শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কোনভাবেই কৃষিজমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। কিন্তু এসব না মেনে ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী চক্র একের পর এক কৃষি জমি,বসত ভিটা ও বাগ বাগিচা শ্রেণী পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠছে। এতে ধীরে ধীরে ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে মানব জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। সরকার ঘোষিত শিল্পাঞ্চল ব্যতিত যত্রতত্র কৃষিজমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখনই বন্ধ করা উচিৎ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাক বা নতুন করে তৈরি হবে না তা তারা চায় না, তবে এ ক্ষেত্রে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষ নিধন, জলাভূমি ভরাট ও ভূমি শ্রেণী পরিবর্তনসহ সব ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যদি এখনই প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজনন্ম পড়বে ঝুঁকির মুখে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা ১০ দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। দাবীনামাগুরো হলো-ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, শিল্পায়নের নামে কোনভাবেই কৃষি জমি ও জলাভূমি ধ্বংস করা যাবে না; ল্যান্ড জোনিং করতে হবে; বানিজ্যিক খাতে জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রয়কৃত জমি ব্যবহারের কারণ অবহিত করতে হবে; শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ বন্ধ করতে হবে; কারখানা হতে নির্গত কাঠের গুড়া, ছাই ও আঠার গন্ধ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে; স্থানীয়দের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে: প্রতিটি প্রকল্পের জন্য এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট ও সোস্যাল ইস্পার্ক এসেসমেন্ট করতে হবে; প্রকল্প শুরুর সাথে সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য জনসম্মুখে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য অজান্তা দাস, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, মেরিনা যুথি, জয়, খলিলুর রহমান সুমন, বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির শেখ মাহাবুবুর রহমান, শেখ আঃ গনি, সাবেক ইউপি মেম্বর মনিন্দ্রনাথ রায় প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

কৃষি জমি ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের প্রতিবাদ :

ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের হুমকিতে ৫শতাধিক পরিবার বিতাড়িত, চরম হুমকিতে বাসযোগ্য পরিবেশ

প্রকাশিত সময় : ০১:৪৫:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০২৪

####

বাগেরহাট সদরের ভৈরব নদীর তীরের চাপাতরা গ্রামে একের পর এক কৃষি জমি ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কারখানা স্থাপনের নামে ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের হুমকিতে ৫শতাধিক পরিবার বিতাড়িত হয়েছে। আরও শতাধিক পরিবার জমি ও ঘরবাড়ী থেকে ‍ুএচ্ছদের হুমকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষি জমি শ্রেণী পরিবর্তন ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের প্রতিবাদে ফুসে ‍উঠেছে এলাকাবাসী। ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের এ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ও এলাকার বাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষায় ১০দফা দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ ‍ুসরক্সা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে খুলনা পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ ও বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো: নজরুল ইসলাম। সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিভিন্ন উত্তর দেন খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক এড. কুদরত-ই খুদা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাট জেলায় জলাভূমি ভরাট, ভূমি দখল, কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার ফলে বাসযোগ্য ভূমি, ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র।গত কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সবুজ গাছপালা ঘেরা শান্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রাম “চাপাতলা” গ্রাম।এ গ্রামে এক একরের বেশী আয়তনের “সিড়ি পুকুর” নামে একটি পুকুরে গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায় ধর্মীয় পূজা এবং শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ পালন করতেন। সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত সেই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া একটি জনবসতি ও পরিবেশ ভারসাম্যপূর্ণ গ্রামে কোন রকম পরিবেশ ও সামাজিক সমীক্ষা ও ঘোষণা ছাড়াই একের পর এক কৃষি কিনে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। যা ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ। কারখানার প্রচুর ধোয়া ও কাঠের গুড়ো এলাকার বিদ্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চসহ সব ধরণের আসবাবপত্র দুষিত করছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাও ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা থেকে আসা গন্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। একই মাথে স্থানীয় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিবিড় বসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানা স্থাপনের ফলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা এসে আশে পাশে বসবাস করায় বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা শিল্পাঞ্চলেই শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কোনভাবেই কৃষিজমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। কিন্তু এসব না মেনে ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী চক্র একের পর এক কৃষি জমি,বসত ভিটা ও বাগ বাগিচা শ্রেণী পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠছে। এতে ধীরে ধীরে ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে মানব জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। সরকার ঘোষিত শিল্পাঞ্চল ব্যতিত যত্রতত্র কৃষিজমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখনই বন্ধ করা উচিৎ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাক বা নতুন করে তৈরি হবে না তা তারা চায় না, তবে এ ক্ষেত্রে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষ নিধন, জলাভূমি ভরাট ও ভূমি শ্রেণী পরিবর্তনসহ সব ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যদি এখনই প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজনন্ম পড়বে ঝুঁকির মুখে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা ১০ দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। দাবীনামাগুরো হলো-ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, শিল্পায়নের নামে কোনভাবেই কৃষি জমি ও জলাভূমি ধ্বংস করা যাবে না; ল্যান্ড জোনিং করতে হবে; বানিজ্যিক খাতে জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রয়কৃত জমি ব্যবহারের কারণ অবহিত করতে হবে; শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ বন্ধ করতে হবে; কারখানা হতে নির্গত কাঠের গুড়া, ছাই ও আঠার গন্ধ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে; স্থানীয়দের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে: প্রতিটি প্রকল্পের জন্য এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট ও সোস্যাল ইস্পার্ক এসেসমেন্ট করতে হবে; প্রকল্প শুরুর সাথে সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য জনসম্মুখে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য অজান্তা দাস, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, মেরিনা যুথি, জয়, খলিলুর রহমান সুমন, বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির শেখ মাহাবুবুর রহমান, শেখ আঃ গনি, সাবেক ইউপি মেম্বর মনিন্দ্রনাথ রায় প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ##