১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ময়ূরসহ সংযুক্ত নদী খননের দাবীতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

  • মধুমতি ডেক্স :
  • প্রকাশিত সময় : ০৭:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬ পড়েছেন

####
খুলনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর ২০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ খননের দাবীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা শাখার উদ্যোগে পনিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) বিতান কুমার মন্ডলের নিকট বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় প্রদান করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডঃ মোঃ বাবুল হাওলাদার, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহŸায়ক মুনির চৌধুরী সোহেল, দক্ষিণ অঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের মহাসচিব ইঞ্জিঃ রূহুল আমিন হাওলাদার, সিপিবি নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড নিতাই পাল, কে এইচ ফাউন্ডেশনের খ ম শাহীন হোসেন, ছায়াবৃক্ষের মাহাবুব আলম বাদশা, নারী নেত্রী সুজনা জলি প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সারা দেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিশেষতঃ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-জলাশয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রুগ্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বলা চলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অনেক নদী ইতিপূর্বে অস্তিত্ব হারিয়েছে, অনেক নদী বিশেষ করে নদীর সংযুক্ত খাল সমূহ স্থায়ীভাবে মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যু-জমিখেকো-লুটেরাদের প্রধান লক্ষ্য খাল, নদী ও জলাশয়। যত্রতত্র, যথেচ্ছা অপরিকল্পিত নগরায়ন এ অমূল্য সম্পদ বিলিন হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। খুলনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ুর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। রয়েছে প্রায় ২২ টি সংযুক্ত খাল। মূলত এখন আমরা এ নদটি খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বললেও রূপসা, ভৈরব এবং ময়ূর নদকে কেন্দ্র করেই খুলনা মহানগরীর গোড়াপত্তন। বড় শহর হিসেবে গড়ে ওঠার নেপথ্যে এক সময়কার প্রশস্ত, খর¯্রােতা এ ময়ূর নদীটির ভূমিকা ছিল অন্যন্য। প্রচলিত আছে, সৌন্দর্যের কারণেই এ নদটির নাম ময়ূর হয়ে ওঠে। স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্যদের নিকট আমরা এ নদটিতে লঞ্চ, স্টিমারসহ সব ধরণের নৌযান চলাচলের কথা শুনতে পাই। ইতিহাসও তাই সাক্ষ্য দেয়। তকৎকালীন খুলনা শহরে ধান, পাট, সুপারী, নারিকেল, কৃষিজাত পণ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল গেওয়া, সুন্দরী, গরান, বাঁশ, মধু, মাছ প্রভৃতির একটা বড় অংশ এ নদের মাধ্যমে আসত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিক জনসংখ্যা, মানুষের স্বার্থপরতা, লোলুপ-লেলিহান দৃষ্টি, অসচেতনতা প্রভৃতির ফলশ্রæতিতে এ নদটি এখন দু’পারের বিশেষ করে খুলনা নগরবাসীর বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নেই কোন প্রবাহ, জোয়ার ভাটার লেশমাত্র। রূপসা নদীর সাথে এ নদটির মিলনস্থল বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা মৌজার আলুতলা নামক স্থানে অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত ¯øুইচ গেইট (১০ গেইট) এর যথাযথ পরিচালনার অভাবে এ নদটির করুণ দশা সৃষ্টির কাজটি আরো বেশী ত্বরান্বিত হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন “জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন” প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদ ও সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী এবং হাতিয়া নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্য হতে “ময়ূর নদ” নামীয় অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটি নদ বা নদীর আংশিক খনন করে সেটি পুনরুদ্ধার বা রক্ষা মোটেই বিজ্ঞান সম্মত নয়। এতে করে এই নদটি রক্ষা তো সম্ভবই নয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনেও তেমন কোনো কাজে আসবে না। বরং রাষ্ট্র তথা জনগনের অর্থ অপচয়ই হবে, যা ইতিপূর্বে প্রমাণিত। এই নদটি খুলনা-যশোরের বিল ডাকাতিয়া হতে উৎপত্তি হয়ে ক্ষেত্রখালী/খুদিয়া নাম ধারণ করে বটিয়াঘাটা বুড়ো মৌলভীর দরগা সংলগ্ন ত্রিমোহনীতে পুনরায় নাম পরিবর্তিত হয়ে হাতিয়া নাম ধারণ ধারণ করে আলুতলা এলাকায় রূপসা নদীতে মিশেছে। স্মারকলিপিতে, এই নদটি রক্ষায় ২০ কিলোমিটার এবং সংযুক্ত খালসমূহ একটি সমন্বিত প্রকল্পের আওতায় এনে খনন করে প্রবাহ তথা স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা নিশ্চিত করে সংরক্ষণ করতে পারলে এ অঞ্চলের পরিবেশ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে উল্লেখ করা হয়।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা দু’গ্রুপের হাতাহাতিতে ভন্ডুল

ময়ূরসহ সংযুক্ত নদী খননের দাবীতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

প্রকাশিত সময় : ০৭:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

####
খুলনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর ২০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ খননের দাবীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা শাখার উদ্যোগে পনিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) বিতান কুমার মন্ডলের নিকট বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় প্রদান করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডঃ মোঃ বাবুল হাওলাদার, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহŸায়ক মুনির চৌধুরী সোহেল, দক্ষিণ অঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের মহাসচিব ইঞ্জিঃ রূহুল আমিন হাওলাদার, সিপিবি নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড নিতাই পাল, কে এইচ ফাউন্ডেশনের খ ম শাহীন হোসেন, ছায়াবৃক্ষের মাহাবুব আলম বাদশা, নারী নেত্রী সুজনা জলি প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সারা দেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিশেষতঃ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-জলাশয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রুগ্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বলা চলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অনেক নদী ইতিপূর্বে অস্তিত্ব হারিয়েছে, অনেক নদী বিশেষ করে নদীর সংযুক্ত খাল সমূহ স্থায়ীভাবে মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যু-জমিখেকো-লুটেরাদের প্রধান লক্ষ্য খাল, নদী ও জলাশয়। যত্রতত্র, যথেচ্ছা অপরিকল্পিত নগরায়ন এ অমূল্য সম্পদ বিলিন হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। খুলনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ুর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। রয়েছে প্রায় ২২ টি সংযুক্ত খাল। মূলত এখন আমরা এ নদটি খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বললেও রূপসা, ভৈরব এবং ময়ূর নদকে কেন্দ্র করেই খুলনা মহানগরীর গোড়াপত্তন। বড় শহর হিসেবে গড়ে ওঠার নেপথ্যে এক সময়কার প্রশস্ত, খর¯্রােতা এ ময়ূর নদীটির ভূমিকা ছিল অন্যন্য। প্রচলিত আছে, সৌন্দর্যের কারণেই এ নদটির নাম ময়ূর হয়ে ওঠে। স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্যদের নিকট আমরা এ নদটিতে লঞ্চ, স্টিমারসহ সব ধরণের নৌযান চলাচলের কথা শুনতে পাই। ইতিহাসও তাই সাক্ষ্য দেয়। তকৎকালীন খুলনা শহরে ধান, পাট, সুপারী, নারিকেল, কৃষিজাত পণ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল গেওয়া, সুন্দরী, গরান, বাঁশ, মধু, মাছ প্রভৃতির একটা বড় অংশ এ নদের মাধ্যমে আসত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিক জনসংখ্যা, মানুষের স্বার্থপরতা, লোলুপ-লেলিহান দৃষ্টি, অসচেতনতা প্রভৃতির ফলশ্রæতিতে এ নদটি এখন দু’পারের বিশেষ করে খুলনা নগরবাসীর বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নেই কোন প্রবাহ, জোয়ার ভাটার লেশমাত্র। রূপসা নদীর সাথে এ নদটির মিলনস্থল বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা মৌজার আলুতলা নামক স্থানে অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত ¯øুইচ গেইট (১০ গেইট) এর যথাযথ পরিচালনার অভাবে এ নদটির করুণ দশা সৃষ্টির কাজটি আরো বেশী ত্বরান্বিত হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন “জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন” প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদ ও সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী এবং হাতিয়া নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্য হতে “ময়ূর নদ” নামীয় অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটি নদ বা নদীর আংশিক খনন করে সেটি পুনরুদ্ধার বা রক্ষা মোটেই বিজ্ঞান সম্মত নয়। এতে করে এই নদটি রক্ষা তো সম্ভবই নয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনেও তেমন কোনো কাজে আসবে না। বরং রাষ্ট্র তথা জনগনের অর্থ অপচয়ই হবে, যা ইতিপূর্বে প্রমাণিত। এই নদটি খুলনা-যশোরের বিল ডাকাতিয়া হতে উৎপত্তি হয়ে ক্ষেত্রখালী/খুদিয়া নাম ধারণ করে বটিয়াঘাটা বুড়ো মৌলভীর দরগা সংলগ্ন ত্রিমোহনীতে পুনরায় নাম পরিবর্তিত হয়ে হাতিয়া নাম ধারণ ধারণ করে আলুতলা এলাকায় রূপসা নদীতে মিশেছে। স্মারকলিপিতে, এই নদটি রক্ষায় ২০ কিলোমিটার এবং সংযুক্ত খালসমূহ একটি সমন্বিত প্রকল্পের আওতায় এনে খনন করে প্রবাহ তথা স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা নিশ্চিত করে সংরক্ষণ করতে পারলে এ অঞ্চলের পরিবেশ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে উল্লেখ করা হয়।