### বাংলাদেশের মতো উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া যেকোনো কীটপতঙ্গের প্রজনন ও বৃদ্ধির উপযোগী।এদের মধ্যে মশা অন্যতম। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা চিহ্নিত হয়েছে। স্থানভেদে এই সংখ্যা একেক জেলায় একেক রকম। ঢাকায় বর্তমানে ১৬ প্রজাতির মশা দেখা যায়। প্রজাতি থেকে প্রজাতিতে মশার আচরণ, জীবন, প্রজনন ও রোগ বিস্তারের প্রকৃতি ভিন্ন। আমাদের দেশে ১২৬ প্রজাতির মশা থাকলেও সবাই রোগ ছড়ায় না। রোগ ছড়ায় মাত্র ২২ প্রজাতির মশা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ছড়ায় এডিস মশা, ম্যালেরিয়া-এনোফিলিস; ফাইলেরিয়া-কিউলেক্স; জাপানি এনসেফালাইটিস ছড়ায় কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশা। সব মশা রোগ না ছড়ালেও এদের বিরক্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের গবেষকদল নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে মশার স্বভাব, ঘনত্ব, প্রজনন ও পরিবেশের সঙ্গে এদের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে চলেছে। ঢাকার ছয়টি স্থানকে সেন্ট্রিনাল সাইট হিসেবে নিয়ে নিয়মিত লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে নিয়ে এসে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। মশার ঘনত্ব, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও প্রজনন স্থানের পানির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে মাল্টি-ভারিয়েট অ্যানালিসিস করে মশার ঘনত্ব ও এর রোগ বিস্তার ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করি। গত ৮ মাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা যে মডেল তৈরি করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে যে মার্চ মাসে মশার ঘনত্ব চরমে পৌঁছাবে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ের তুলনায় মার্চে মশার ঘনত্ব প্রায় চার-পাঁচ গুণ বাড়তে পারে। এই ঘনত্ব শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই হবে। আমাদের গবেষকদল বছরের অন্যান্য সময়ে (জুন-জুলাইয়ে) লার্ভার ঘনত্ব পেত প্রতি ডিপে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি, যেটি বর্তমানে ৫০-এর অধিক। আবার পার ম্যান পার আওয়ার উড়ন্ত মশার ঘনত্ব ওই সময় আমরা পেতাম ২০-এর কম, যা বর্তমানে গড়ে ১৫০-এর বেশি। পিএমএইচ বলতে আমরা বুঝি, একটি মানুষকে এক ঘণ্টায় কতগুলো মশা কামড়াতে পারে। এই ঘনত্ব মার্চ মাসে আরো অনেক বেশি হবে। শীত-পরবর্তী সময়ে পচা পানিতে জন্মানো কিউলেক্স মশার ঘনত্বই সবচেয়ে বেশি, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এই সময়ে কম। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিল এবং খালের পানির ঘনত্ব বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পানিতে জৈব উপাদানের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘন পানিতে থাকা এসব জৈব উপাদান মশার লার্ভার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শীতের পরে, বসন্তের শুরুতে যখন তাপমাত্রা বাড়তে থাকে তখন মশার জীবনচক্রের গতি বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতিতে যে ডিম ও লার্ভাগুলো থাকে তা দ্রুত ফুটে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হয়। তাই এই সময়ে মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। মার্চের মশার ঘনত্ব ঠেকাতে এবং মানুষকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিল ও খাল পরিষ্কার করে সেখানে লার্ভিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগ করে মশার লার্ভিকে সম্পূর্ণরূপে মেরে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বিটিআইয়ের ব্যবহার করা যেতে পারে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করে কীটনাশক প্রয়োগ করলে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসবে না। লার্ভিসাইডের পাশাপাশি উড়ন্ত মশা নিধনে ফগিং কার্যক্রমও অব্যাহত রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ভালো ফলাফল পেতে ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিলে মশাখেকো গাপ্পি মাছ দেওয়া প্রয়োজন। গাপ্পি মাছ প্রচুর বাচ্চা দেয় এবং তার দেহের ওজনের চেয়ে বেশি মশার লার্ভা খেয়ে থাকে। তাই কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে এটি পরিবেশবান্ধব কার্যকর একটি পদ্ধতি। মশা যেহেতু জমে থাকা পানিতে জন্মায়, তাই সাধারণ নাগরিকদেরও এই বিষয়ে সচেতন ও সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের বাড়ি বা বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত জমি বা নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানিতে যেন মশা জন্মাতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থেকে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ততা ও যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে মশার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।##
অফিস : ৬৯/৭০ কেসিসি সুপার মার্কেট ( ২য় তলা ) খুলনা সদর, খুলনা। প্রকাশক - সম্পাদক : সুনীল দাস বার্তা সম্পাদক : তরিকুল ইসলাম ডালিম চিফ রিপোর্টার : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । যোগাযোগ : dainikmadhumati@gmail.com, newsdainikmadhumoti@gmail.com Office No : Editor : 01712680702 / 01912067948
© All rights reserved by www.dainikmadhumati.com (Established in 2022)