### খুলনা মহানগরীর ৬নং ওয়ার্ডে ওএমএস ট্রাক সেল ডিলার মান্ত এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে সরকারি চাউল হতদরিত্রদের মাঝে বিক্রি না করে খোলা বাজারে বিক্রিসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এলাকার গরিব সাধারণ দিনমজুর ও হতদরিদ্রদের জন্য কমমূল্যে ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করতে সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই চাউল গরিবদেরকে পুরোপুরি না দিয়ে বাজারে বিক্রির করে দেয়া হয়েছে বলে ওএমএসের চাউল নিতে আসা ১৫ জন হতদরিদ্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ ০৬মার্চ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে জমা দিয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ওএমএস ডিলার জেসমিন আক্তারের মালিকানাধীন মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজের ট্রাক সেলের জন্য গত ৬ই মার্চ বিএল কলেজ দ্বিতীয় গেটে কাশিপুরে সকাল থেকে চাউল বিতরণ শুরু করে। বেলা বারোটা অতিক্রম করার সাথে সাথেই ১০বস্তা চাউল নিয়ে চাউল বিক্রির ট্রাকটি অন্যত্র চলে যায়। তখনও চাউলের জন্য ঘটনাস্থলে ২৫ থেকে ৩০জন হতদরিদ্র মানুষ চাউল কেনার জন্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে চাউল না দিয়ে ডিলার শান্তা এন্টারপ্রাইজের লোকজন ১০/১২বস্তা চাউল ভর্তি ট্রাকটি নিয়ে চলে যায়।এ সময় অনেক হতদরিদ্র মানুষ কম দামে চাউল কিনতে না পেরে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিএল কলেজ রোড কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা নাজনীন ইসলাম, শারমিন বেগম, হেনা বেগম, মোহাম্মদ নোমান ও মোহাম্মদ শাকিল জানান, দুপুর ১২টার সময় আমরা চাউল নিতে গেলে ডিলারের নামের যে প্যানাটি সেটি পেচানো ছিল। তখন মহিলা পুরুষসহ ২৫-৩০জন মানুষ চাউল কেনার জন্য উপস্থিত ছিলেন। তখনও গাড়ির মধ্যে ১০/১২ বস্তা চাউল ছিল। উপস্থিত সবাই চাউল চাইলে ডিলারের লোকজন তাদেরকে চাউল না দিয়ে ট্রাক নিয়ে চলে যায়। তখন আমরা উচ্চস্বরে চিৎকার-চেচামেচি করলেও তারা আমাদের কথা শোনেনি। কম দামের চাউল না পেয়ে খালি হাতে আমাদেরকে ফিরে যেতে হয়েছে।
স্থানীয় সিডিসির ক্লাষ্টার সাধারণ সম্পাদক হেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তিনিও ওএমএস ডিলারের লোকজনকেেউপস্থিত হতদরিদ্র মানুষদেরকে চাউল দিতে সুপারিশ করেন। কিন্তু ডিলারের লোকজন তাকে ধমক দিয়ে বেশি কথা বলে চাউল না দিয়ে চলে যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব মানুষের জন্য এই চাউল বরাদ্দ দিলেও সেই চাউল সম্পূর্ণ গরিব মানুষরা পাচ্ছে না। ডিলাররা এই চাউল নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে বেশী রাভের জন্য। এছাড়া ডিলারের কিছু পরিচিত মুখচেনা লোক এসে একেক জনে দুই থেকে তিনবার চাউল নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির চিফনের পাশ থেকে তাদেরকে চাউল দিয়ে দিচ্ছে কিন্তু আমরা ০৬নং ওয়ার্ডের আইডি কার্ড নিয়ে এসে ঘন্টার পর দাঁড়িয়ে থেকেও চাউল পাইনি। বরং ওএমএস ডিলার ১০/১২ বস্তা চাউল নিয়ে ট্রাকে করে চলে গিয়েছে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান তরফদার মিজা জানান, তিনি বারোটার একটু পরে বিএল কলেজের ওইখান থেকে কাজ সেরে আসতে ছিলাম তখন ট্রাকে চার/পাচ বস্তার মত চাউল দেখেছি। বিএল কলেজ রোড এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ জুলফিকার হোসেন জানান, চাউলের ট্রাক চলে যাওয়ার পরে অসহায় মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে কষ্টের কথা ভেবে কয়েকজনকে কিছু চাউল আমি নিজে কিনে দিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নোমান ও শাকিল জানান, তারা আইডি কার্ড নিয়ে আসার পরেও চাউল পাইনি। তাদেরকে চাউল না দিয়ে চাউল ভর্তি ট্রাক নিয়ে ডিলাররা চলে গিয়েছে। এ সমস্ত ডিলারদের বিুরদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব মানুষের জন্য কম দামে চাউল বিতরণ করছেন যাতে যারা বাজার থেকে বেশী দামে চাউল না কিনতে পারে তাদের জন্য। কিন্তু ডিলাররা সেই চাউল গরীবদের মাঝে বিক্রি না করে ট্রাকে নিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে জাবারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত ডিলোরের বিচারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজের মালিক জেসমিন আক্তার বলেন,আমি ওএমএসের চাউল বিতরনে কোন অনিয়ম করিনি।সঠিক ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নগরীর ০৬নং ওয়ার্ডের বিএল কলেজ গেইটে ট্রাক সেলের দায়িত্ব পালনকারী তদারকি কর্মকর্তা(ট্যাগ অফিসার)খাদ্য পরিদর্শক মো: জামাল হোসেন জানান, গত ০৬মার্চ বিএল কলেজ গেইটে তিনি ট্রাক সেলের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। ওএমএস ডিলারের কোন অনিয়ম তিনি দেখেননি। লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে তিনি জানান, হয়তো ট্রাক সেলের কাজ করা লোকজন তাদের খাওয়ার জন্য ১/২বস্তা চাউল নিজেদের জন্য রাখতে পারে। তবে ১০বস্তা াচউল থাকা অবস্থায় চলে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে তার মধ্যেও কোন অনিয়ম হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি কতৃর্পক্ষকে জানাবেন বলে জানান।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: তাজুল ইসলাম জানান, তিনি এখনও অভিযোগের বিষয়টি হাতে পাননি। ওএমএসের চাউল বিতরনের সময়ে প্রতিটি ডিলারে স্পটে খাদ্য বিভাগের একজন ট্যাগ অফিসার থাকেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মাঝে মধ্যে মনিটোরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়ে থাকে কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার জন্য। তারপরেও কোন কোন ডিলার কিছু অনিয়ম করে থাকেন। সে বিষয়গুলো নিয়ে খাধ্য বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করছে। তারপরেও কোন ডিলারের বিরুদ্ধে যে কোন রকমের অনিয়মের অভিযোগ তাকলে সেটার তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। ##